ইতিহাসের সেরা ফুটবলার কে - উত্তর: "পেলে (pele)"। কেন? চলুন শুনে আসি। "পেলে (pele)", পুরোনাম এদসোঁ আরাচঁ দু নাসিমেতু। ডাকনাম পেলে। ২৩শে অক্টোবর ১৯৪০ সালে ক্রেস কোরাকোয়েস শহির ব্রাজিলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
৫ ফুট ৮ইঞ্চি উচ্চতার পেলে মাঠে নামলেই কয়েক গুণ বড় মনে হতো। জুলাই মাসের ৭ তারিখ, সাল ১৯৫৭, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেন "পেলে (pele)"। ব্রাজিলের বিশ্বস্ততা নিয়ে এই অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার ৭৭ টি গোল করতে সময় নেয় ৯২ ম্যাচ। যা ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড। "পেলে (pele)" তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৩৬৩টি গোল করেছেন মোট ১২৮১টি ম্যাচ খেলে।
ক্লাব: সাল ১৯৫৬, পেশাদার সান্তোস এফসি তে খেলার জন্য "পেলে (Pele)" কে " সাও পাওলোর" কাছে অবস্থিত বন্দর শহর সান্তোসে নিয়ে গেলে সান্তোসের পরিচালকদের ১৫ বছর বয়সি পেলেকে দেখিয়ে বলা হয় "সে একদিন বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে"।
পেলেও তার ট্রায়ালের সময় পায়ের যাদু দেখিয়ে মুগ্ধ করেন সবাইকে। অবশেষে ১৯৫৬ সালের জুন মাসে "পেলে (pele)" "সান্তোস" ক্লাবে খেলতে চুক্তিবদ্ধ হন। ১৯৫৬ সালের ৭ই সেপ্টেম্বরে "কারিন্থিয়ান্স দ্যা সান্তো আন্দ্রে" র বিপক্ষে ১৫ বছর বয়সি "পেলে(Pele)"র অভিষেক হয়। অভিষেক ম্যাচে পেলের দল জিতে যায় ৭-১ ব্যবধানে। উক্ত ম্যাচে "পেলে (pele)" তার খেলোয়াড়ি কর্মজীবনের সূচনাস্বরূপ প্রথম গোলটি করেন।
আন্তর্জাতিক: "পেলে (pele)" তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ৭ই জুলাই,১৯৫৭ সালে।
ভেন্যু: মারাকানা স্টেডিয়াম, আর্জেন্টিনা। অবশ্য সেই ম্যাচে পেলের "ব্রাজিল" হেরে যায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে; ২-১ ব্যবধানে। সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে পেলে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখান। জার্সি নাম্বার-১০।
বিশ্বকাপে: সুইডেন বিশ্বকাপ ১৯৫৮ - পেলে ম্যাচ খেলেন মোট ৪টি; গোল করেন ৬ টি। শিরোপা জেতে তার দল ব্রাজিল।
চিলি বিশ্বকাপ ১৯৬২ - পেলে ম্যাচ খেলেন মোট ২টি গোল করেন ১টি। শিরোপা জেতে তার দল ব্রাজিল।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ১৯৬৬ - পেলে ম্যাচ খেলেন মোট ২টি গোল করেন ১টি। তার দল ব্রাজিল (১১তম)।
মেক্সিকো বিশ্বকাপ১৯৭০ - পেলে ম্যাচ খেলেন মোট ৬টি গোল করেন ৪টি। শিরোপা জেতে তার দল ব্রাজিল।
পেলে তার সর্বমোট ৪টি বিশ্বকাপে ১৪টি ম্যাচ খেলে ১২টি গোল করেন এবং তার দল "ব্রাজিল" চ্যাম্পিয়ন হয় ৩ বার।
"পেলে (pele)"র শৈল্পিকতা: "পেলে (pele)" অবিশ্বাস্যস্য দ্রুততা, চমৎকার দক্ষতা এবং টেকনিক্যাল দক্ষতা দিয়ে পরিচিত ছিলেন। তিনি অনেক সহজে প্রতিপক্ষদের অতিক্রম করে ড্রিবলিং করতে পারতেন এবং প্রায় যেকোনো কোণ থেকে গোল করতে পারতেন। পেলের খেলার শৈলীকে সৃষ্টিশীলতা, ফ্লেয়ার এবং শোম্যানতা চরিত্র দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। তিনি "বানানা কিক" এর মাস্টার হওয়ার কারণে, যা তিনি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষদের গোলবক্স রাজ করতেন।
"পেলে (pele)" তার শেষ বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৭১ সালে। এর পরপরই তিনি অবসরের ঘোষণা জানিয়ে দেন। ফুটবল খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পরে, পেলে (pele) একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসাবে পদার্পন করেন।
তিনি FI (এফ,আই) এর রাজদূত হিসাবে কাজ করেছেন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করেছেন। "pele pele (পেলে পেলে)" ফাউন্ডেশনও একটি সহায়তামূলক প্রচেষ্টায় সম্প্রসারিত হয়েছে, যা অনন্য কমিউনিটিতে শিক্ষামূলক এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করে।
এজন্য "pele" কে GOAT (গ্রেট অফ অল টাইম) মনে করা হয়। এই মহারথীর জীবনকে কেন্দ্র করে তাই ২০১৬ সালে নির্মিত হয় "পেলে: বার্থ অব অ্যা লিজেন্ড" নাম চলচ্চিত্র। যাতে তার উত্থান- পতন ও সকল অর্জন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে "পেলে" (pele) একজন বিশ্ব ফুটবলের মানসপুত্র।
তার সুক্ষ্ম ও দক্ষতা এবং উৎসাহ ও প্রভাব তাকে কিংবদন্তিদেরও আইকন হিসেবে পরিচিত করে তুলেছেন। একজন "পেলে (pele)" এসেছিলেন এবং ফুটবল বিশ্ব মাতিয়েছিলেন।
পরিশেষে অন্যান্য ফুটবল অনুরাগী ও খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে গেলেন এবং যাচ্ছেন। "পেলে (pele)" 'র উন্থানের গল্প এটাই প্রমান করে দেয় যে "কাজের মনোবল,পরিশ্রম, অনুশীলন ও বিশ্বাস থাকলে সফলতা আসবেই। কিংবদন্তি "পেলে (pele)" যেন তা জীবনভর প্রমাণ করে গেছেন।
মৃ- ত্যু: সবুজ গালিচাকে বিদায় জানালেও এবার পুরো পৃথিবীকে বিদায় জানানোর পালা। ২০২২ সালের ২৯ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে "কোলন ক্যান্সারে" আক্রান্ত হয়ে মৃ- ত্যু বরণ করেন সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার। ইতহাস তাকে মনে রাখবে যুগ যুগ। ভালো থাকবেন হে লিজেন্ড।