ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয়? আমাদের শরীরে নানাবিধ রোগের আবির্ভাব ঘটে। কখনো সেটা শরীরের বাইরের অংশের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আবার কখনো কখনো অভ্যন্তরীণ ক্ষতিসাধন করে থাকে। আজ মূলত আমরা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি এবং ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কেন হয় সে সম্পর্কে কথা বলব। তাই আপনারা যারা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয় এই সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে চান তারা আজকের আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
কেননা বর্তমান সময়ের খুবই কমন একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি, যেটা নানাভাবে আমাদের শরীরের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা পর্ব শুরু করা যাক এবং ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন গুলো ধারাবাহিকভাবে অবগত হওয়া যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি?
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হচ্ছে এক প্রকার ডায়াবেটিকস, যা আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নতুন নামে সংজ্ঞায়িত করেছে। কেননা এটি হচ্ছে ডায়াবেটিসের একটা প্রাথমিক ধরন, যার প্রতিক্রিয়ায় রোগির অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণে অতি তরল প্রসাব নিশ্রিত হয়।
তাছাড়াও ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসকে মূত্র ঘন করার হরমোন হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। কেননা এটি কিডনিতে পানি পরিশোষণ করে। কিন্তু যখন ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায় পাতলা প্রস্রাবের সাথে, যে কারণে অতিরিক্ত পিপাসা পায় এবং শরীরে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে এর অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বহুমূত্রের সমস্যা।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সমস্যা কি?
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস একটা জটিল রোগ। যার সমস্যা অনেকটাই ভয়াবহ। তবে এই রোগটি অনেকটাই বিরল প্রকৃতির। যেটা সাধারণত পুরুষ মহিলা এবং ছোট বাচ্চাদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই রোগে ঐ সকল ব্যক্তিরা অধিক বেশি আক্রান্ত হয় যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর।
মূলত ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এমন একটি প্যাথলজি, যার মধ্যে ভেসোপ্রেসিন এর ঘাটতি থাকার কারণে একজন ব্যক্তির প্রচন্ড তৃষ্ণা পায় পাশাপাশি কিডনিতে কম ঘনত্বের প্রস্রাবের একটা বর্ণিত পরিমাণ জমা হয়। এবার আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কেন হয়? ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হওয়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কেন হয়?
আমাদের দেহ যখন সঠিকভাবে পানি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস দেখা দেয়। এই সমস্যাটি মূলত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা সাধারণত জন্মগত ও পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষতি হওয়ার কারণে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয় বলে জানিয়েছেন।
তবে এর পাশাপাশি মাথায় অতিরিক্ত আঘাত লাগলে, সুপ্রাসেলার টিউমার হলে, পিটুইটারি ম্যাক্রোএডেনোমা, মাথার অপারেশনজনিতসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে ইনসিপিডাস তার কার্যক্ষমতা হারায় বলে ধারণা করা হয়। এ সম্পর্কে ইতোমধ্যে ডঃ টেরিস একটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন মানুষের ব্রেইনে এডিএইচ নামের একটি হরমোন রয়েছে। যে হরমোনটি শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। আর তাই যখন ব্রেইন পর্যাপ্ত এডিএইচ নামক হরমোনটি উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয় তখনই মূলত ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস শরীরে বাসা বাঁধে অর্থাৎ ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মূত্র ঘনত্বে পরিণত করতে পারেনা ফলে অতিরিক্ত তরল মূত্র আমাদের মানব শরীর থেকে নিঃসৃত হয়।
পাশাপাশি তিনি আরো জানিয়েছেন– এটি অটোইমিউণ রোগের সঙ্গে ও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে যেখানে ইমিউন সিস্টেম এডিএইচ উৎপাদনকারী কোষের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে। সেই সাথে অতিরিক্ত ট্রমা, স্ট্রোক এবং পিটুইটারি সার্জারি হচ্ছে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হওয়ার অন্যতম কারণ।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর লক্ষণ
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। তাই যখন মানুষ শরীরে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সমস্যাটি হয়ে থাকে তখন বেশকিছু লক্ষ্য প্রকাশ পায়। সেগুলো হলোঃ
১। প্রচন্ড তৃষ্ণা বা বারবার গলা শুকিয়ে যাওয়া ২। মুখ চোখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া ৩। ক্লান্তীয় অবসাদগ্রস্থতা ৪। মস্তিষ্ক অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পরা ৫। অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভব করা ৬। খাবার গিলতে কষ্ট হবা ৭। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করা
৮। কনুইয়ের মাংসপেশিতে টান ধরা ৯। নিতম্ব শক্ত হয়ে যাওয়া ১০। কোনই ও কব্জিতে দুর্বল অনুভব করা ১১। চোখের পাতায় বিভিন্ন ধরনের চুলকানির আবির্ভাব ১২। ঘনঘন মুহূর্ত ত্যাগ এবং কাশি ১৩। দ্রুত হৃদস্পন্দন ১৪। মনোযোগ জনিত সমস্যা এবং কনফিউশন সৃষ্টি হওয়া।
তাই আপনার মাঝে যদি এই লক্ষণগুলো দুই থেকে তিন এর অধিক প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্বর্ণপূর্ণ হওয়া জরুরী।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর দুটি লক্ষণ
ইতোমধ্যে আমরা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর বেশ কিছু লক্ষণ তুলে ধরেছি। তবে এর দুইটি প্রধান লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
১. অতিরিক্ত পানি পিপাসা পাওয়া এবং ২. প্রস্রাব অতিরিক্ত তরল হয়ে নিঃসৃত হওয়া।
অতএব আপনার যদি পর্যাপ্ত পানি খাবার পরবর্তীতেও অধিক পরিমাণ পানি পিপাসা লাগে এবং প্রস্রাবে কোনরকম গন্ডগোল হয়ে থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় আপনার ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর সমস্যা রয়েছে আর তাই এই উপসর্গগুলো আপনার মাঝে দেখা দিচ্ছে।
মনে রাখবেন এটা হচ্ছে একটা জটিল সমস্যা যেটা খুব অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝে দেখা দেয়। তাই সমস্যাটি অনেক দূর এগোনোর আগেই উপসর্গ প্রকাশ পাবার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন নেওয়া জরুরী। কেননা সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা যেকোনো জটিল সমস্যা কেউ ঠিক করতে পারে। তাই উপসর্গ বোঝার সাথে সাথে নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন গ্রহণ করুন এবং সঠিক চিকিৎসা নেবার বন্দোবস্ত করুন। এবার আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস সম্পর্কে আরো কিছু।
আরো পড়ুনঃ জরায়ু ইনফেকশনের লক্ষণ
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হওয়ার কারণ
ডায়াবেটিস এনসিপিডিস খাবার কারণ হচ্ছে ভেজোপ্রেসির নামক হরমোনের স্বল্পতা। কেননা বৃক্কজ উদকমেহ বা নেফ্রজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয় যখন বৃক্ক ভেজোপ্রেসিন নামক হরমোনের প্রতি যথাযথ সাড়া প্রদান করে না অর্থাৎ হাইপোথ্যালামাসের তৃষ্ণা কেন্দ্রে কোনো ক্ষতির কারণে তৃষ্ণাসৃষ্টিকারী উদকমেহ বা ডিপসোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হয়।
ডায়াবেটিস মেলিটাস ও ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর পার্থক্য
ডায়াবেটিস মেলিটাস ও ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হচ্ছে ডায়াবেটিসের দুইটি ধরন। এদের মধ্যে মূলত যে সকল পার্থক্য রয়েছে সেগুলো জানতে নিচের টেবিলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর মধ্যে সাধারণত এই পার্থক্যগুলোই পরিলক্ষিত হয়। যথাঃ
ডায়াবেটিস মেলিটাস | ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস |
---|---|
১. ডায়াবেটিস মেলিটাস হচ্ছে মধুমেহ | ১. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হলো বহুমূত্র |
২. ডায়াবেটিস মেলিটাস ইনসুলিন এর অভাবে হয়ে থাকে | ২. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোনের অভাবে হয়ে থাকে |
৩. ডায়াবেটিস মেলিটাস মূত্রের সঙ্গে গ্লুকোজ নির্গত করে | ৩. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস মূত্রের সঙ্গে গ্লুকোজ নির্গত করে না |
৪. ডায়াবেটিস মেলিটাস শর্করা প্রোটিন ও ফ্যাটের বিপাক প্রভাবিত করে | ৪. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বিপাকক্রিয়াকে প্রভাবিত করে না |
৫. ডায়াবেটিস মেলিটাস দুই প্রকার | ৫. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর কোন প্রকারভেদ নেই |
৬. ডায়াবেটিস মেলিটাস মূত্রের স্বাদ মিষ্টি হয় | ৬. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস মূত্র স্বাদবিহীন |
৭. ডায়াবেটিস মেলিটাস মূত্র হালকা হলুদ বর্ণের হয় | ৭. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস মূত্র বর্ণহীন অথবা পাতলা পানির মত হয় |
৮. ডায়াবেটিস মেলিটাস বিরল রোগ নয় | ৮. ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস একটি অজানা বিরল রোগ |
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কোন হরমোনের অভাবে হয়?
ইতোমধ্যে আমরা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হবার কারণ উল্লেখ করেছি। তাই আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কোন হরমোনের অভাবে হয় তা পেয়ে যাবেন। তবুও সুবিধার্থে আবারও উল্লেখ করছি ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস মূলত এডিএস নামক হরমোনের অভাবে হয়ে থাকে, যে হরমোনকে ভেজোপ্রোসিন নামেও সম্বোধন করা হয়।
Disclaimer - দাবিত্যাগঃ এই আর্টিকেলে উল্লিখিত তথ্য এবং পদ্ধতি গুলিকে শুধুমাত্র পরামর্শ হিসাবে গ্রহণ করুন, টেকনিকাল কেয়ার বিডি সেগুলি নিশ্চিত করে না। এই ধরনের কোনো চিকিৎসা/ঔষধ/খাদ্য অনুসরণ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Follow Our Google News
পরিশেষে: ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয় তা নিয়ে
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস কি ও কেন হয় এ সম্পর্কিত আলোচনার আজ এখানেই ইতি টানছি। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পাইয়ে দেবে। তোর পাঠক বন্ধুরা যদি কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য রিলেটেড আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।