ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম - ভবিষ্যতে আর্থিক সচ্ছলতার কথা ভেবে আমরা অনেকেই টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে রাখি। এছাড়াও আমরা অনেক জায়গায় বিনিয়োগ করে রাখি মুনাফা লাভের আশায়। যদি আপনি একজন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তবে ঝুঁকি এড়িয়ে নিশ্চিত মুনাফা লাভের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনার জন্য ফিক্সড ডিপোজিট হবে সেরা চয়েজ হতে পারে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে ফিক্সড ডিপোজিট কি? কেন ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়? ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম সহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব তাই আপনি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তবে চলুন জেনে নেই ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম নিয়ে কিছু কথা
মানুষ যখন আর্থিক সংকটে পড়ে তখন তার ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙ্গে ফেলেন। ব্যবসায়িক ঝুকি এড়াতে এবং নিশ্চিত মুনাফা লাভের জন্য আপনি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারেন। কারণ আপনার অর্থ ব্যবসায়িক বা অন্য কোথাও বিনিয়োগ করলে মুনাফা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
কিন্তু, যদি আপনি ফিক্সড ডিপোজিট করেন তবে আপনি নিশ্চিতভাবেই মুনাফাসহ বিনিয়োগের অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত পাবেন। আজকে আমরা ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। তাই এই পোস্ট-টি আপনি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ফিক্সড ডিপোজিট কি?
ফিক্সড ডিপোজিট হলো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কিংবা ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখা এবং মেয়াদ শেষে আসল অর্থের সাথে কিছু সুদ বা মুনাফা প্রাপ্তিকেই ফিক্সড ডিপোজিট বলে। ফিক্সড ডিপোজিট করার আগে আমাদের প্রত্যকরই ফিক্সড ডিপোজিট কি এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। আশা করি আপনি বুঝতে পারলে ফিক্সড ডিপোজিট সম্পর্কে।
অন্য পোষ্ট পড়ুনঃ সহজ কিস্তিতে লোন নেওয়ার নিয়ম | সহজ কিস্তিতে লোন
কেন ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়?
ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত মানুষ তার ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের জন্য করে থাকেন। যদি কোন ব্যক্তি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করে এতে তার মুনাফা লাভ হতে ও পারে আবার নাও হতে পারে তাই এই ঝুকি এড়াতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত মুনাফা লাভের আশায় মানুষ ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখে। যদি আপনি সঞ্চয়ী হিসাবের চাইতে এই হিসাবে টাকা রাখেন তবে ব্যাংক আপনাকে বেশি পরিমাণ সুদ/মুনাফা দিবে।
তবে মনে রাখবেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গা যায় না, আবার ভাঙ্গা গেলেও আপনি সম্পূর্ণ সুদ/মুনাফা পাবেন না। তবে আপনি আপনার পছন্দ মত মেয়াদে টাকা জমা রাখতে পারবেন। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক বর্তমানে ১ মাসের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করার সুবিধা দিচ্ছে।
তাছাড়াও আপনি চাইলে ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর কিংবা ৩ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্যও ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারবেন। যত বেশী মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট করবেন তত আপনার সুদের/মুনাফার পরিমাণ বাড়বে। বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংক ৮%-৯% হারে সুদ দিচ্ছে। তাই আপনি অধিক মুনাফা লাভ করতে চাইলে ফিক্সে ডিপোজিট করতে পারেন।
বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়?
বাংলাদেশের প্রায় সকল ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়। তবে আপনি যে ব্যাংকে সুদের/মুনাফার পরিমাণ বেশী শতাংশ পাবেন সেই ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করবেন। আপনার অর্থ আপনি ভালো ব্যাংকে রাখবেন এটা আমাদের কাম্য। নিচে বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- অগ্রণী ব্যাংক
- বেসিক ব্যাংক
- বিডিবিএল ব্যাংক
- জনতা ব্যাংক
- রুপালি ব্যাংক লিমিটেড
- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
- এবি-ব্যাংক
- আল আরাফা
- ব্যাংক এশিয়া
- ব্রাক ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক
- ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
- ইবিএল ব্যাংক
- এক্সিম ব্যাংক
- ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক
- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক
- আইএফআইসি ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে লিমিটেড
- যমুনা ব্যাংক
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক
- মেঘনা ব্যাংক
- হাবিব ব্যাংক
- এইচএসবিসি ব্যাংক
- কমার্সিয়াল ব্যাংক
- ইউসিবিএল ব্যাংক
- ট্রাস্ট ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
উপরোক্ত ব্যাংকগুলো ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক ব্যাংক আছে যে ব্যাংকগুলোতে ভালো পরিমাণ সুদের ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়।
অন্য পোষ্ট পড়ুনঃ গ্রামীণ ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
ফিক্সড ডিপোজিট করার জন্য ভালো ব্যাংক কোনটি?
যদি আপনি ফিক্সড ডিপোজিট করতে চান তবে আপনাকে ফিক্সড ডিপোজিট করার জন্য কোন কোন ব্যাংক সবচেয়ে ভালো এই সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা আপনি কখনোই চাইবেন না কম সুদে কোন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করার। আপনি সব সময় চাইবেন বেশী সুদ/মুনাফা দেয় এমন কোন ভালো ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করার।
তবে চলুন জেনে নেই। আপনি বাংলাদেশের সকল ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা যায়। তাছাড়াও পোস্ট অফিসেও ফিক্সড ডিপোজিট করা। কিন্তু এখানে সুদের হার অনেক কম। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তুলনায় কিছু বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বেশি সুদ দিয়ে থাকে। যদি আপনার ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ বেশি হয় তবে ঢাকা ব্যাংক ৮% হারে সুদ দিয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যন্য ব্যাংকও প্রায় একই হারে সুদ দিয়ে থাকে।
আর যদি আপনি একজন ইসলামিক মন-মানসিকতার মানুষ হয়ে থাকেন তবে আপনাকে সুদ এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ সুদ ইসলাম ধর্মে হারাম করা হয়েছে। তাই আপনি ফিক্সড করতে চাইলে ইসলামীক ব্যাংক গুলোতে ফিক্সড ডিপোজিট করা আপনার উপযুক্ত হবে।
দেশে প্রচলিত ইসলামীক ব্যাংক গুলোর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বেশি মুনাফা দিয়ে থাকে। তাই আপনি চিন্তা-ভাবণা করে ফিক্সড ডিপোজিট করবেন এটাই আমাদের কাম্য।
ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম ২০২৩
যদি আপনি এই মুহূর্তে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার কথা চিন্তা করে থাকেন। তবে আপনি আজকের পোস্টের এই অংশটুকু পড়ুন। কেননা আজকের এই পোস্টের এই অংশে আপনি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
অনেকেই বেশি সুদের আশায় কোনো কিছু না ভেবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ফিক্সড ডিপোজিট করে। অনেকের তা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। যাদের কয়েক মাস বা বছর পর পর একবারে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় তাদের দীর্ঘ মেয়াদের জন্য কোন ভাবেই ফিক্সড ডিপোজিট করা উচিত নয়।
ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ পূর্তির আগে ডিপোজিট ভাঙ্গার অনুমতি ব্যাংক দেয়না অনেক ব্যাংক। যে সব ব্যাংক এই অনুমতি দেয় তারা আপনাকে ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য সুদ নির্ধারিত ছিল তা না দিয়ে সঞ্চয়ী হিসাবের সুদ অনুযায়ী আপনাকে মুনাফা প্রদান করবে।
আবার অনেক ব্যাংক চলতি হিসাবের সুদ অনুযায়ী আবার অনেক ব্যাংক কোনো সুদ প্রদান করে না। ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার জন্য আপনাকে সর্ব প্রথম ব্যাংক ম্যানেজার কাছে প্রথমে একটি আবেদন করতে হবে এবং আপনি কি কারণে এই ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গতে চাচ্ছেন তা ভালোভাবে উল্লেখ করতে হবে।
ফিক্সড ডিপোজিট এর সুদের হার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। অনেকে ডিপোজিটের মেয়াদ শেষে একবারে মুনাফাসহ আসল ফেরত নেয়। আবার অনেকে প্রতি মাসে বা ৩ মাস পর পর সুদ/মুনাফা নিয়ে থাহে। এই দুই ক্ষেত্রের জন্য ডিপোজিট ভাঙ্গার পর সুদ প্রাপ্তির জন্য আলাদা নিয়ম রয়েছে। আশা করি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।
অন্য পোষ্ট পড়ুনঃ সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় | ব্যাংক লোন পাওয়ার সহজ উপায়
ইসলামে ফিক্সড ডিপোজিট কি হারাম
ইসলামে ফিক্সড ডিপোজিট করা হারাম কি না তা অনেকেই জানতে চান। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে ফিক্সড ডিপোজিট করার আগে জেনে নেবেন যে কীসের ভিত্তিতে আপনি এটি করছেন। আপনি যে ভিত্তিতে আপনি ফিক্সড ডিপোজিট করছেন, সে ভিত্তি যদি স্পষ্ট হয় এবং তারা এটি স্পষ্ট করে দেবে যে এটি শরিয়াহ ভিত্তি কীভাবে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনি ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মনে রাখবেন ইসলামে সুদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই।
শেষ কথাঃ ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম
মানুষ আর্থিক সংকটে পড়লে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙ্গে ফেলে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে ফিক্সড ডিপোজিট কি, কেন ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়, ফিক্সড ডিপোজিট করা কি ইসলামে হারাম, ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গার নিয়ম নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যদি এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনার পরিচিতদের জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।