বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম - ইসলামে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

হাসিবুর
লিখেছেন -
0

আমাদের মধ্যে অনেকেই যে বিষয়টি নিয়ে বেশি সার্চ করে থাকেন সেটি হচ্ছে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম কি। বিষয়টি হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। যার ফলে পিতার সম্পত্তি ভাগাভাগি করার সময় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সকলের কথা মাথায় রেখে আজ আমরা হাজির হয়েছি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম নিয়ে। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার পরে আপনিও জানতে পারবেন কিভাবে বাবার সম্পত্তি ভাগ করতে হবে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম কি।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার উত্তরাধিকারগণ কিছু নির্দিষ্ট নিয়মে তার বাবার সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্ত্রী, পুত্র কিংবা কন্যা সন্তান উভয়েই ইসলামী আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তির ভাগ পাবে। মৃ- ত ব্যক্তির শুধু সন্তান থাকলে তার জন্য সম্পত্তির সম্পূর্ণ ভাগ, শুধু কন্যা সন্তান থাকলে তার জন্য সম্পত্তির ১/২ অংশ। 

আর পুত্র-কন্যা উভয়ই থাকলে পুত্র-কন্যা ২:১ অনুপাতে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম। বাবার সম্পত্তি বন্টন করার আরো বেশ কিছু বিস্তারিত নিয়ম রয়েছে যেটা আলোচনা করা হয়েছে নিচের দিকে। বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন সম্পূর্ণ পোস্টে।

বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম কিভাবে করা হয় তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো। সাধারণত কোন মৃ- ত ব্যক্তির সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হয়। চার শ্রেণীর মানুষ ওয়ারিশ হয়ে থাকে যেমনঃ ১। স্ত্রীগণ ২। কন্যা সন্তান ৩। পুত্র সন্তান ৪। আসাবাগণ (যে সকল ব্যক্তি ওয়ারিশ হিসাবে, মৃ- ত ব্যক্তির ত্যাক্ত সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ (নিকট আত্মীয়ের অংশ) বন্টনের পর অবশিষ্টাংশ প্রাপ্ত হন, তাদেরকে আসাবা বলে। যেমনঃ মৃ- তের ছেলের ছেলে)

যে পদ্ধতিতে মৃ- ত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ সম্পত্তির ভাগ পাবেন

১। যদি মৃ- ত ব্যক্তির শুধু একজন স্ত্রী ও কন্যা সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী সম্পত্তি পাবে মোট সম্পত্তির ১/৮ অংশ এবং কন্যা সন্তান পাবে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ। সম্পত্তির বাকি অংশ আসাবা হিসেবে মৃ- ত ব্যক্তির পিতা, ভাই, বোন যারা জীবিত রয়েছে তারা পাবে। আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, বাবার সম্পত্তি ছেলেরা বেশি পেয়ে থাকে এবং মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পেয়ে থাকে। এরকম কোন নিয়ম নেই।

২। মৃ- ত ব্যক্তির যদি একাধিক কন্যা থাকে এবং একজন স্ত্রী থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে এবং কন্যা পাবে মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ যেটা কন্যাদের সমানভাবে ভাগ করে দিতে হবে। সম্পত্তির বাকি অংশ অথবা হিসেবে মৃ- ত ব্যক্তির পিতা, ভাই, বোন জীবিত রয়েছে তারা পাবে।

৩। মৃ- ত ব্যক্তির শুধু স্ত্রী থাকলে এবং কোন সন্তান না থাকলে মৃ- ত ব্যক্তির মোট সম্পত্তি দুই ভাগে ভাগ হবে। মৃ- ত ব্যক্তির স্ত্রী পাবে ১/৪ অংশ সম্পত্তি। সম্পত্তির বাকি অংশ অথবা হিসেবে মৃ- ত ব্যক্তির পিতা, ভাই, বোন জীবিত রয়েছে তারা পাবে।

৪। পিতার সম্পত্তিতে পুত্রের সম্পূর্ণ অংশীদার রয়েছে। তবে যদি একজন পুত্র সন্তান থাকে তাহলে সম্পূর্ণ সম্পত্তি সেই একাই ভোগ করতে পারবে। এটি বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম। আর একাধিক পুত্র সন্তান থাকলে সবাই বাবার সম্পত্তির সমানভাগে ভাগ পাবে।

৫। মৃ- ত ব্যক্তির একজন পুত্রের কন্যা থাকলে, পুত্রের কন্যা পাবে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ। তবে দুই বা ততোধিক পুত্রের কন্যা থাকলে ২/৩ অংশ সম্পত্তি পাবে। পুত্রের ২/৩ অংশ সম্পত্তি সকলকে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে। তবে যদি মৃ- ত ব্যক্তির কেবলমাত্র একজন কন্যা থাকে তাহলে পুত্রের কন্যা সম্পত্তির ভাগ পাবে ১/৬ অংশ। 

৬। মৃ- ত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, পিতা ইত্যাদি কেউ না থাকলে মৃ- ত ব্যক্তির আপন বোন শেয়ারার হিসেবে সম্পত্তির ভাগ পাবে। একজন আপন বোন থাকলে তিনি মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ ভাগ পাবে। তবে যদি একাধিক আপন বোন থাকে তাহলে তারা মোট সম্পত্তির ২/৩ অংশ সমান ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। 

৭। মৃ- ত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, আপন বোন, পিতা বৈমাত্রেয় ভাই ইত্যাদি কেউ না থাকলে বৈমাত্রেয় বোন একজন থাকলে সে মোট সম্পত্তির ১/২ অংশ সম্পত্তি পাবে। তবে একাধিক হলে ২/৩ অংশ সম্পত্তি পাবে।

ইসলামে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। আমাদের এদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইসলামী নিয়ম অনুসরণ করে বাবার সম্পত্তি ভাগাভাগি করা হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বন্টন করার ক্ষেত্রে ওয়ারিশদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দিয়ে থাকে। এর জের কখনো কখনো আদালত পর্যন্ত চলে যায়। 

যদি সবাই পারিবারিক আইন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা বহন করত তাহলে এরকম বিবাদ আমাদের সমাজ থেকে অনেক অংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। এছাড়াও একজন মুসলিমের উচিত ইসলামিক উত্তরাধিকারী আইন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখা।

ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ভিত্তিতে মৃ- ত ব্যক্তির সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়মকে ফারায়েজ বলা হয়। কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃ- ত্যুর পর তার সম্পত্তি বন্টন করার পূর্বে বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে নিতে হয়। 

যেমন মৃ- ত ব্যক্তির যদি কোন ধার দেনা থাকে তাহলে তা পরিশোধ করে দেওয়া, মৃ- ত ব্যক্তির স্ত্রীর দেনমোহর বাকি থাকলে সেটা পরিশোধ করে দেওয়া, মৃ- ত ব্যক্তির দান বা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দেওয়া ইত্যাদি। এসকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরেই অবশিষ্ট সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। এর পূর্বে সম্পত্তি ভাগ করা যাবে না।

ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী উত্তরাধিকারদের মধ্যে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

১। মৃ- ত ব্যক্তির পিতা-মাতা ও স্বামী কিংবা স্ত্রী সম্পত্তির অংশ পাওয়ার পরে অবশিষ্ট সম্পত্তি থাকলে সেটা ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

২। কন্যা সন্তানেরা তিন ভাবে পিতা-মাতার সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। যদি বাবার ওয়ারিস হিসেবে শুধু একজন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে দুই ভাগের একভাগ কিংবা ১/২ অংশ সম্পত্তির অধিকারী সে কন্যা হবে।

৩। পিতার উত্তরাধিকার যদি একাধিক কন্যা সন্তান থাকে তাহলে সবাই মিলে সমান ভাগে মোট সম্পত্তি তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পত্তি পাবে বা ২/৩ অংশ।

৪। যদি পুত্র ও কন্যা উভয়ই থাকেন তাহলে পুত্র ও কন্যা ২ঃ১ অনুপাতে সম্পত্তির অধিকারী হবে। যার অর্থ হলো এক মেয়ে পাবেন এক ছেলের অর্ধেক অংশ। মাতা পিতার সম্পত্তি থেকে কন্যা সন্তান কখনোই বঞ্চিত হবে না। 

৫। মৃ- ত ব্যক্তির কোন কন্যা সন্তান না থাকলে অংশীদারদের ভাগ দেওয়ার পর অবশেষ্য সম্পূর্ণ সম্পত্তি তার ছেলে বা ছেলেরাই ভোগ করবে।

৬। মুসলিম সম্পত্তি আইন অনুযায়ী কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে গণ্য করা হয় না। যদি কেউ এরূপ হয়ে থাকে তাহলে সেও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। তবে যদি কেউ তার সন্তানকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে রেজিস্ট্রি করে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে যায় ও সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে তাহলে সে সন্তান তার পিতার সম্পত্তির কোন ভাগ পাবে না। সৎ ছেলেমেয়ে বাবা-মায়ের সম্পত্তি পাবে না।

৭। যদি কোন উত্তরাধিকার না থাকে এবং সে ব্যক্তি জীবিত থাকাকালে কাউকে তা সম্পত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা না করে তাহলে ওই মৃ- ত ব্যক্তির সম্পত্তির ওয়ারিস হবে সরকার।

বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম ভিডিওতে দেখুন

বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম

সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর

সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর বা উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর অ্যাপ উত্তরাধিকার সম্পর্কিত সকল আইন কানুন সহ অনলাইনে জমি খতিয়ান দেখার দারুন একটি মোবাইল অ্যাপ। এই সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর অ্যাপসে uttoradhikar (মুসলিম উত্তরাধিকার সম্পত্তির হিসাব) অন্তর্ভুক্ত করা সহ সম্পত্তি হস্তান্তর আইন এবং মুসলিম শরীয়াহ আইন দেওয়া আছে। এই অ্যাপে আপনি ঘরে বসে আপনি আপনার পিতা মাতা সহ চাচা/ফুফুর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে আপনার কতটুকু অংশ আছে তা এই উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর বা উত্তরাধিকার অ্যাপস থেকে দেখতে পারবেন।

এছাড়া এই সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর অ্যাপে জমি মাপার ক্যালকুলেটর, ভুমির পরিমাপ ও ভূমি সেবা পাবেন যা আপনার সম্পত্তির হিসাব পেতে উপকারী হবে। এছাড়া এখানে জমির হিসাব পেতে জমি মাপার ক্যালকুলেটর অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন। সম্পত্তি বন্টন ক্যালকুলেটর আপনার ফোনে ইন্সটল করুন এখান থেকে।

পরিশেষে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম নিয়ে কিছু কথা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সম্পর্কে। বাবার মৃ- ত্যুর পর তার সম্পত্তি ভাগাভাগি করাকে নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা এবং ভুল নিয়ম আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং শত্রুতা। 

ইসলামী আইন এবং বাংলাদেশী আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম রয়েছে। সম্পূর্ণ বিষয়গুলো আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে উক্ত পোস্টে আলোচনা করেছি। আশা করছি, পোস্টটি পড়ার পর সম্পূর্ণ বিষয়টি আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে। এর বাইরে থেকে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে মধ্যে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!