সিস্ট কি? সিস্ট কি টিউমার - ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী। কেননা বর্তমানে মেয়েদের সবচেয়ে বড় শারীরিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে ওভারিয়ান সিস্ট। তাই অবশ্যই আপনাকে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় এবং কখন কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা এবং ওভারিয়ান সিস্ট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখা উচিত।
তাহলে আসুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া যাক ওভারিয়ান সিস্ট কি? ওভারিয়ান সিস্ট কাকে বলে, ওভারিয়ান সিস্ট হলে কি কি সমস্যা হয় এবং এর লক্ষন গুলো কি কি পাশাপাশি ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
সিস্ট কি
সিস্ট নামটি শুনলেই অধিকাংশ মানুষের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়। কিন্তু হ্যাঁ সব সময় সিস্ট মানেই খারাপ খবর এমনটা ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। আমরা জানি মেয়েদের ডিম্বাশয়ে সিস্ট এর কথা বেশি পরিমাণে শোনা গেলেও হাজবেন্ড এবং স্ত্রী নির্বিশেষে উভয়ের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় সিস্ট হতে পারে। যদিও সিস্ট ৯০% ক্ষেত্রেই বিনাইন অর্থাৎ ক্যান্সারহীন।
তবে শরীরে সিস্ট হলে সংশ্লিষ্ট যায়গায় ব্যাথা-যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। উক্ত অঙ্গের স্বাভাবিক চলাফেরা, কাজ ব্যাহত হতে পারে। এতে করে আপনি অহেতুক ভয় পাবেন না। বরং সিস্ট কি, সিস্ট কত প্রকার এবং সিস্ট দূর করার উপায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুনঃ
সিস্ট হল একটি তরল-ভরা থলি যা ডিম্বাশয়ের পৃষ্ঠে বা তার উপর পাওয়া যায়। মহিলাদের দুটি ডিম্বাশয় আছে। দুটোই আকৃতিতে বাদামের মতো। ডিম্বাশয় প্রসবের সময়ে ডিমের মতো তৈরি করতে শুরু করে। অনেক মহিলার ডিম্বাশয়ের সিস্ট থাকে, কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি যথেষ্ট ছোট হয় যাতে কোনো অস্বস্তি বা ক্ষতি হয় না।
কিন্তু অনেক সময় এটি বড় সমস্যা রোগেও রূপ নেয়। যখন এই সিস্টগুলি থেকে র- ক্তপাত শুরু হয় তখন একে হেমোরেজিক সিস্ট বলে। ডানদিকে ডিম্বাশয়ে হেমোরেজিক সিস্ট থাকাকে ডান ওভারিয়ান হেমোরেজিক সিস্ট বলা হয় এবং বাম দিকে ডিম্বাশয়ে হেমোরেজিক সিস্ট বলা হয় বাম ওভারিয়ান হেমোরেজিক সিস্ট।
ওভারিয়ান হেমোরেজিক সিস্টের লক্ষণঃ অনেক সময় সিস্ট হলে কোনো ধরনের লক্ষণ থাকে না। কিন্ত, একটি বড় ডিম্বাশয় সিস্ট থাকার কারণে, নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে; ১। পেলভিক ব্যথা। (পেলভিসে ব্যথা) ২। পেট ভারী লাগা ৩। পেট ফুলে যাওয়া ৪। কষ্টদায়ক মি-লন ৫। বমি বমি ভাব এবং বমি ৬। কুঁচকি বা উরুতে ব্যথা ৭। স্ত-ন আবেগপ্রবণতা
ওভারিয়ান সিস্ট কি?
ওভারিয়ান সিস্ট হচ্ছে নারীদের ওভারিতে সৃষ্টি হওয়া একটি পানিপূর্ণ থলি। যেটা শুরুর অবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি বিন্দু আকারে অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে চিকিৎসার বিলম্ব ঘটলে সেগুলো ক্ষুদ্র পানি বিন্দু থেকে বড় টিউমার আকার ধারণ করে। অনেকেই আবার এই ওভারিয়ান সিস্টকে কখনো কখনো ক্যান্সারের কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করে থাকেন।
তবে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটা প্রকাশ করেছেন, ওভুলেশনে তৈরি হওয়া এই সকল সিস্ট কখনোই ক্যান্সার নয়। এগুলোকে মূলত ফাংশনাল সিস্ট বলা হয়ে থাকে। নারীর শরীরে সাধারণত এই সিস্ট জীবনের যেকোনো সময় হতে পারে অর্থাৎ জন্ম থেকে শুরু করে মৃ- ত্যু অবধি যেকোনো সময়। তবে আজকাল অল্প বয়সেই মেয়েদের মাঝে ওভারিয়ান সিস্ট এর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সাধারণত ৫০ বছরের মধ্যেই ওভারিয়ান সিস্ট এর দেখা মেলে নারীদের মাঝে।
ওভারিয়ান সিস্ট কেন হয়?
এখন কথা হল ওভারিয়ান সিস্ট মূলত কেন হয়ে থাকে? এই সিস্ট কেন নারীদের শরীরে বাসা বাঁধে? এ সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওভারি অর্থাৎ নারীদের ডিম্বা-শয় হলো একটা বিশেষ স্থান। যার কাজ হচ্ছে ডি-ম্বাণু তৈরি করা। মূলত স্বাভাবিক নিয়মেই প্রতিমাসে ওভারেতে বেশ সংখ্যক ডি-ম্বাণু তৈরি হয়। পরবর্তীতে ওভুলেশনের সময় ওভারির ভেতরে সিস্ট এর মতো দেখতে ফলিকলের সৃষ্টি হয়। আর সেই ফলিকলগুলো নষ্ট হয়ে যায় ডি-ম্বাণু নিঃসরণের পরবর্তীতে।
কিন্তু যখন নারীদের দেহে এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না অর্থাৎ কোনো না কোনো বাধা সৃষ্টি হয় ঠিক সেই সময় ওভারিয়ান সিস্ট দেখা দেয় ডিম্বা-শয়ে। যেটার কারণে চার থেকে দশ শতাংশ মহিলারা একটু জটিল প্রকৃতির সমস্যায় ভোগেন।
ওভারিয়ান সিস্ট কত প্রকার ও কি কি?
ওভারিয়ান সিস্ট সাধারণত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আর ধরণের উপর ভিত্তি করে ওভারিয়ান সিস্ট তাদের প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আমরা মূলত পরবর্তী স্টেপে জানাবো ওভারিয়ান সিস্ট হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং কোন কোন সমস্যা দেখা দেয় নারীদের শরীরে। তবে এ পর্যায়ে জানাবো ওভারিয়ান অর্থাৎ ডিম্বা-শয় বিভিন্ন ধরনের যে সিস্ট হয়ে থাকে, সেগুলোর নাম কি কি!
১। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ২। ফাংশনাল সিস্ট ৩। এন্ডিওমেট্রিওটিক বা চকলেট সিস্ট ৪। ডার্ময়েট সিস্ট ৫। সিস্ট এডোনোমা সহ প্রভৃতি। তবে উল্লেখিত এই সবগুলো ওভারিয়ান সিস্ট গুলোর মধ্যে থেকে অনেক বেশি বিপদজনক হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সেন্ট্রোম।
যেটার কারণে নারীরা সচরাচর অস্বাভাবিক ভাবে চিকন থেকে মোটা হয়ে যায় অথবা মোটা থেকে চিকন হয়ে যায়। হঠাৎ করেই দেহের রং পরিবর্তন করে ফেলে সেই সাথে শরীরে অবাঞ্ছিত লোমের দেখা মিলে অতিরিক্ত পরিমাণে। এবার আসুন জেনে নেই সিস্ট হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়।
ওভারিয়ান সিস্ট এর লক্ষণ
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয়ে পিণ্ড মহিলার শরীরে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে এবং নিজে থেকেই বাড়তে পারে। এমন একটি উচ্চ সম্ভাবনাও রয়েছে যে আপনি আপনার ডিম্বাশয়ে ক্রমবর্ধমান পিণ্ড সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নাও হতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় এর বিভিন্ন উপসর্গ মহিলাদের শরীরে অনুভূত হয়। ডিম্বাশয়ের সিস্টের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:
১। কোমরের আকার বৃদ্ধি ২। পেটে ব্যথা ৩। ক্ষুধা হ্রাস ৪। অত্যধিক ফোলাভাব বা পেট ফুলে যাওয়া ৫। ঘন ঘন প্রস্রাব ৬। মলদ্বার বা মূত্রাশয়ের উপর চাপ ৭। অন্তঃসত্ত্বা নড়াচড়ার সময় অসুবিধা এবং প্রচণ্ড ব্যথা
সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়?
সিস্ট হলে সাধারণত বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরে। আর বেশ কয়েকটি লক্ষণ ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি যেটা সাধারণত পলিসিস্টিক অভারিয়ান সেন্ট্রোমের কারণে হয়ে থাকে। তবে এ পর্যায়ে ওভারিয়ান সিস্ট এর কারণে সার্বিকভাবে যে সমস্যা গুলো সৃষ্টি হয় সেগুলো উল্লেখ করছি। যথাঃ
১। অনিয়মিত বমি ২। অনিয়মিত মাসিক ৩। তলপেটে ব্যথা অনুভব ৪। পেট ভরা ভাব ৫। অল্প খেতেই পেট ভরে যাওয়া। তাই যদি আপনার এই সমস্যাগুলো থেকে থাকে তাহলে আমরা সাজেস্ট করব দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবার এবং আল্টাস্নো চেক আপ এর মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া।
কখন ডাক্তার দেখাবেন? ১। যখন পেটে বা শ্রোণীতে ব্যথা হয় ২। জ্বর বা বমি সহ ব্যথা আছে। এই উপসর্গগুলি ছাড়াও, আপনি যদি দ্রুত শ্বাসকষ্ট, আঠালো ত্বক এবং দুর্বলতা অনুভব করেন তবে দেরি না করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ওভারিয়ান সিস্টের চিকিৎসাঃ ডাক্তাররা বিভিন্ন উপায়ে সিস্টের চিকিৎসা করেন। বয়স, ধরন এবং সিস্টের আকার, লক্ষণগুলির মতো বিষয়গুলি চিকিৎসার জন্য বিবেচনা করা হয়। তাই আপনার উচিত ওভারিয়ান সিস্ট ভালো করার জন্য এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
সিস্ট কি টিউমার
‘‘সিস্ট হচ্ছে টিউমার কিন্তু টিউমার মানেই কিন্ত ক্যানসার নয়। সিস্ট হলো একটি থলি যা বাতাস, তরল কিংবা অন্যান্য উপাদান দিয়ে ভর্তি হতে পারে। অঙ্গ, হাড় এবং নরম টিস্যু সহ শরীরের যেকোনো স্থানে সিস্ট হতে পারে। অন্যদিকে টিউমার হলো টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কিংবা ফুলে যাওয়া। সিস্টের মতো, টিউমারও শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে।
যেকোনো কিছুই যদি শরীরে খানিকটা জায়গা দখল করে, তখন আমরা তাকে বলি টিউমার কিংবা স্পেস অকুপায়িং লিসান। টিউমার দুই প্রকার হয় যথাঃ ম্যালিগন্যান্ট ও বিনাইন। সিস্ট বা টিউমার ম্যালিগন্যান্ট বা বেনাইন হতে পারে তা নির্ধারণ করার জন্যে সর্বোত্তম পরীক্ষা হচ্ছে একটি বায়োপসি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিস্ট বিনাইন হয়ে থাকে অর্থাৎ সিস্ট ৯০% ক্ষেত্রেই ক্যানসারহীন হয়ে থাকে।
সিস্টের দেয়াল মোটা আকৃতির হলে, তারমধ্যে অনেক গুলো পার্টিশন থাকলে, ঐ পার্টিশনটি কোথাও পাতলা এবং কোথাও মোটা হলে ও সিস্টের মধ্যে মাংসপিণ্ড থাকলে এবং সিস্টে র- ক্ত চলাচল হলে তবে তা ম্যালিগন্যান্সির লক্ষণ। চিকিৎসকরা আলট্রাসোনোগ্রাফি, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করে সিস্ট শনাক্ত করে থাকেন। সিস্টে র- ক্ত চলাচল বেশি পরিমাণে হলে তবে তা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা।’’
ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়
ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আর যদি ওভারিয়ান সিস্ট এর চিকিৎসার কথা বলেন তাহলে চিকিৎসকরা সাধারণত সিস্ট এর ধরনের ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা পরামর্শ এবং ওষুধ খাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তবে আপনি যদি শুরুর দিকে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যাটি নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার জন্য দুইটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। সেগুলো হচ্ছেঃ ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় মেনে চলে ওভারিয়ান সিস্ট দূর করা এবং হারবাল উপায় অবলম্বন করে ওভারিয়ান সিস্ট কে ছিল তরে নির্মূল করে।
এবার আসুন আলাদা আলাদাভাবে জেনে নেওয়া যাক, ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় সমূহ এবং ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় হারবাল উপায় সমূহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।
ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া উপায়
ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে যদি আপনি কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে পারেন তাহলে ওভারিয়ান সিস্ট এর সমস্যা কি নির্মূল করতে পারবেন। আর এটা চিকিৎসকাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে আপনি কি কি কাজ করতে পারেন।
১। হাটা এবং ব্যায়ামঃ সুন্দর সুস্থ স্মার্ট লাইফস্টাইল একটা মানুষকে এমনিতেই সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। আর আপনার যদি হয়ে থাকে ওভারিয়ান সিস্ট, তাহলে প্রতিদিন সকালে অবশ্যই আপনাকে বিশ মিনিট হাটতে হবে। এক কথায় জগিং করতে হবে আপনাকে।
শুধু তাই নয়। জগিং করার পাশাপাশি আপনি সাইক্লিন, সাঁতার কাটা বা ফ্রী হ্যান্ড এর যে ব্যায়ামগুলো রয়েছে সেগুলো করতে পারেন। নিয়মিত যদি আপনি এই ব্যায়ামগুলো করে থাকেন তাহলে ওভারিয়ান সিস্ট খুব দ্রুত নির্মূল হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত। আর হ্যাঁ, এগুলোর পাশাপাশি আপনি সাধারণ আর যে সকল ব্যায়াম রয়েছে সেগুলো করতে পারেন। আবার ইয়োগা করার মাধ্যমেও আপনি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন ওভারিয়ান সিস্টকে।
২। নিয়মিত তাপ দিয়েঃ তাপ অথবা ছেক দেওয়া এটা খুবই বহুল প্রচলিত একটা ব্যবস্থা। যেটা সম্পর্কে আমরা সবাই খুব অল্পস্বল্প হলেও জানি। তো আপনার যদি ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে আপনি আপনার তলপেটে গরম পানির বোতল অথবা হিডেন প্যাড এর সাহায্যে সেক দিতে পারেন। কেননা এর ফলে র-ক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তাই ওভারিয়ান সিস্ট এর কারণে যে ব্যথা অনুভব হয় সেটার অনেকটাই প্রশমন ঘটে। তাই তলপেটে ব্যথা অনুভব হলে ঘরোয়া এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে।
৩। ম্যাসাজঃ মালিশ অর্থাৎ ম্যাসাজ এর মাধ্যমেও ডিম্বা-শয়ের কারণে সৃষ্টি হওয়া ব্যথা কমানো সম্ভব। তাই ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে এটি কেউ বেছে নিতে পারেন।
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণঃ ওভারিয়ান সিস্ট হবার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ বিএমআই বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে মেয়েদের সাধারণত পলিসিস্ট হয়ে থাকে। তাই ওভারিতে যদি সিস্ট হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন। এর জন্য পরিণত খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই জরুরী।
৫। গ্রহণ করুন পরিমিত খাবারঃ সুস্বাস্থ্য আশা করলে অবশ্যই আপনাকে খাদ্য তালিকায় সঠিক খাবার গুলো রাখতেই হবে। আমাদের শরীরে সাধারণত যে সকল রোগ বা সমস্যার আবির্ভাব ঘটে তার অন্যতম কারণ অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল। আমাদের অস্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল এর কারণে খাবার তালিকায় পুষ্টিকর খাবার থাকে না বললেই চলে। আর এই কারণেই পড়তে হয় এই ধরনের জটিল সমস্যায়। তাই ওভারিতে সিস্ট হলে নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খান।
আর হ্যাঁ, অবশ্যই অবশ্যই মনে রাখবেন ভিটামিন ই, ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়মিত লাইফস্টাইল ওভারিয়ান সিস্ট এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। তাই খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও গোটা সর্ষের পরিমাণ অবশ্যই বেশি পরিমাণে রাখা অতিব জরুরী।
ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় হারবাল উপায়
ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, বেশকিছু হারবাল জিনিস এন্ডোক্রিন সিস্টেম সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি হরমোনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে চান, ওভারিয়ান সিস্ট এর বৃদ্ধি পাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, ডিম্বা-শয়ে যে কার্যপ্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় সেটাকে যদি নিয়মিত করতে চান, তাহলে হারবাল উপায়গুলো অবলম্বন করুন। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন ড্যান্ডেলিয়ন, মিল্ক থিসল ইস্ট্রজেনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। তাই এগুলো নিঃসন্দেহে সেবন করতে পারেন। আশা করা যায় ওভারিয়ান সিস্ট মোকাবেলায় আপনিও সফল হবেন।
সিস্ট থাকলে কি বাচ্চা নেওয়া যায়
অনেকেই জানতে চান সিস্ট থাকলে কি বাচ্চা নেওয়া যায়। তবে আমি আপনাকে বলবো এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নিন। ওভারিয়ান সিস্ট মূলত ডিম্বস্ফোটনের সমস্যা সৃষ্টি করে। যার কারণে, গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এটির চিকিৎসা আছে তাই আপনার উচিত আবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় না
অনেকেই জানতে চান যে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়না। তবে আমি আপনাকে বলব সিস্টের সাথে বাচ্চা হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
Disclaimer - দাবিত্যাগ: এই ব্লগটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি যদি কোন রোগে ভুগে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিন।
উপসংহার: তো পাঠক বন্ধুরা, আলোচনার শেষ পর্যায়ে একটা কথা না বললেই নয়। সেটা হচ্ছে যদি শরীরে জটিল কোন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে সেটা অনেক বেশি দূর এগিয়ে যাওয়ার পূর্বেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন এবং তাদের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন সাবধানতা এবং সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থাপনা জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।