পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম আপনার যদি হঠাৎ ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কোন ঔষধটি সেবন করবেন? জানতে হলে পড়তে থাকুন আজকের এই আর্টিকেলটি।
কেননা আজ আমরা পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম জানানোর পাশাপাশি পাতলা পায়খানা কেন হয়, পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি এবং পাতলা পায়খানার ঔষধ অ্যান্টিবায়োটিক, বড়দের ও বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম, বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ, পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ, কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয় ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম ও দাম সম্পর্কে।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
পাতলা পায়খানা হলে কি ঔষধ খেতে হবে? আপনার পাতলা পায়খানা হয়েছে তাহলে এখন কোন ট্যাবলেটটি সেবন করবেন? চিন্তা নেই না জানলে এখনই নিকটস্থ কোনো ডাক্তারের কাছে যান এবং জেনে নিন অথবা আমাদের সাজেস্টকৃত ঔষধ গুলো সেবন করতে পারেন। কেননা চিকিৎসকরা সচরাচর পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম বলতে এগুলোকেই সাজেস্ট করে থাকেন।
তবে একটা কথা না বলেই নয়। সেটা হচ্ছে ঔষধ যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী ঠিক একইভাবে অপকারী একটি পণ্য। সঠিক রোগের জন্য সঠিক মাত্রায় ঔষধ সেবন করা জরুরী। তাই যে কোন ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরি।
সেই সাথে যদি দীর্ঘদিন যাবত কোন সমস্যার কারণে আপনি ঔষধ খেয়ে থাকেন তাহলে সেটা জটিল কোন রোগের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করতে পারে। তাই পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম গুলো জেনে নিন যদি আপনি আপনার সমস্যার সময়ে খেতে চান।
তবে একটা অথবা দুইটা ট্যাবলেট সেবনের পরবর্তীতে যদি না ঠিক হয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে যান এবং তাদের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করুন।
আরো পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
- মেট্রিল
- অ্যামোডিস
- ফ্লাজিল
- এপ্রোসিন
- ফ্লোনটিন
- মেট্রো
- নিটক্সিন
- মেট্রোনিডাজল
- ফিলমেট
বড়দের পাতলা পায়খানার অ্যান্টিবায়টিক ওষুধের নাম - পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
পাতলা পায়খানা হলে খুবই ঝামেলায় পড়ে যেতে হয় আর এটা যখন খুব মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় তখন অনেকেই পাতলা পায়খানার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের নাম জানতে চান সেবন করার উদ্দেশ্যে। আর তাই এই পর্যায়ে আমরা পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক ওষুধের নাম সাজেস্ট করব।
তবে ভুলেও এগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করবেন না। কেননা প্রত্যেকটি ওষুধের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে আর ওই মাত্রা অনুযায়ী আপনাকে খেতে হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক পাতলা পায়খানার ঔষধ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কোনগুলো খাওয়া হয়ে থাকে সেগুলোর নাম। যথাঃ
- সিপ্রোফ্লক্সাসিন (Ciprofloxacin)
- মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
- অ্যাজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin)
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ওষুধের নাম - বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
কখনো কখনো বাচ্চাদেরও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। আর বাবা মা সাধারণত বাচ্চাদের নিয়ে খুবই চিন্তিত থেকে থাকেন। তাই যেকোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতেই ঔষধ খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তাই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম অর্থাৎ বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ঔষধের নাম। কিন্তু সত্যি বলতে অল্প বয়সেই বাচ্চাদের জন্য এমন কোন ওষুধ চিকিৎসকরা সচরাচর সাজেস্ট করেন না।
তবে যদি খাওয়াতেই হয় তাহলে বাচ্চাদের জন্য এমোডিস ট্যাবলেটই যথেষ্ট। তবে সব সময় চেষ্টা করবেন বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে লেবুর রস দিয়ে শরবত খাওয়ানোর। চাইলে আপনি লবণ এবং চিনি যুক্ত করতে পারেন অথবা যেকোনো একটিও ব্যবহার করতে পারেন।
পাশাপাশি বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার ঔষধ হিসেবে খাওয়াতে পারেন ডাবের পানি অথবা একটি এসএমসি ওর স্যালাইন (ছােট বাচ্চাদের অবশ্যই পরিমাণ মতো স্যালাইন খাওয়াবেন)।
আশা করা যায় আপনার বাচ্চা এতেই সুস্থ হয়ে যাবে। শিশুর পাতলা পায়খানা হলে পাঁচ দিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ভাবে ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে ডায়রিয়ার কারণে সৃষ্ট শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে তাই এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুর পাতলা পায়খানা দেখা দিলে এই ওষুধগুলো খাওয়াতে পারেন খাবার স্যালাইন, জিংক ট্যাবলেট, লোপেরামাইড জাতীয় ওষুধগুলো শিশুর পাতলা পায়খানার জন্য খাওয়ানো যেতে পারে। তবু যদি বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার অবস্থা আরো গুরুতর হয় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ নাম - বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ
- Zox
- Ciprocin
- Filmet
- Amodis
- Nitanid
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ হিসেবে উপোরক্ত সিরাপ গুলো খাওয়াতে পারেন। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে শুধুমাত্র ওষুধ খাওয়ালেই চলবে না পাশাপাশি ওষুধের সঙ্গে পুষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
আর যদি বাচ্চার বয়স ৬ মাস হয় তবে উক্ত শিশুর ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়াতে হবে পরিমাণ মতো। আর যদি বাচ্চার পাতলা পায়খানার কারণে মারাত্মক অবস্থা ধারণ করে তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী ওষুধগুলো সেবন করাতে হবে।
যেকোনো প্রকার ওষুধ শিশুকে খাওয়ানোর পুর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো উচিত। মনে রাখবেন শিশুর পাতলা পায়খানার জন্যে প্রথম অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।
প্রথম অবস্থায় স্যালাইন (অবশ্যই পরিমাণ মতো স্যালাইন খাওয়াবেন) এবং মায়ের বুকের দুধ বেশি পরিমাণে খাওয়ান এবং বাচ্চার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এতে করে যদি না ভালো না হয় তবে পরবর্তীতে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে শিশুর চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুনঃ ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে
পাতলা পায়খানা কেন হয় - পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ
পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে এবং এটি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, আহার এবং শৌচাগার স্বচ্ছতা সম্পর্কিত সমস্যার ফলাফল হতে পারে। নিম্নলিখিত কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ হিসেবে। যথাঃ
অল্প পানি পান করাঃ পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, যা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ রেখে থাকে। প্রতিদিনকার পর্যাপ্ত পানি পান না করা বা প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি পান করা পায়খানার পারিবর্তন করতে পারে এবং পাতলা পায়খানার উৎপাদন হতে পারে।
শারীরিক সমস্যাঃ শারীরিক সমস্যা বা অসুস্থতা, যেমন জ্বর, পেট ব্যাথা, ডায়াবেটিস, জিপি সমস্যা ইত্যাদি পায়খানার কার্যকলাপে প্রভাব ফেলতে পারে এবং পাতলা পায়খানার সময়কাল সামান্য করতে পারে।
পুরুষ বা মহিলা হরমোনাল পরিবর্তনঃ কয়েকটি হরমোন, যেমন প্রোস্টাগ্লান্ডিন, প্রোস্টাট গ্লান্ড প্রতিরোধ হরমোন (পি.আই.এইচ) ইত্যাদি পায়খানার কার্যকলাপে প্রভাব ফেলতে পারে এবং পাতলা পায়খানার কারণ হতে পারে।
এছাড়াও খাবারের গন্ডগোলের কারণে সচরাচর পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, দূষিত এবং নোংরা পানি পান করা, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া এর কারণে, ফুড পয়েজিংয়ের কারণে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করলে পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, পচা ও বাসি খাবার খাওয়ার কারনে পাতলা পায়খানা হয়।
এছাড়াও হজম ঠিকমতো না হলে বদ হজমের কারণে পাতলা পায়খানা হয়। আবার মাঝে মধ্যে কোন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণ হতে পারে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন পরিণত খাবার খাওয়ার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করবার এবং শরীরের সকল প্রকার পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট ফলো করবার।
এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক পাতলা পায়খানা হলে সাধারণত কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়। যথাঃ
- ঘন ঘন হটাৎ পায়খানার চাপ লাগা।
- পায়খানার চাপ লাগলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়া মানে এতটুকু অপেক্ষা করতে না পারা।
- প্রায় সময় পোশাকে পায়খানা লেগে যেতে পারে। মানে পায়খানা অটোমেটিক বের হয়ে যাওয়া নিজের কন্ট্রোলে রাখতে না পারা।
- তলপেটে বার বার কাঁমড় দেওয়া বা তীব্র ব্যাথা অনুভব করা।
- বার বার বাজে অস্বস্তিকর গন্ধযুক্ত ঢেকুর আসা।
- বমি-বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- শারীরিকভাবে অধিক বেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
তবে হ্যাঁ, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট সেবনের পাশাপাশি পাতলা পায়খানা স্বাভাবিক করতে কিছু খাবার বাদ দেওয়া উচিত এবং কিছু খাবার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখা উচিত। তাই এ পর্যায়ে আমরা তুলে ধরব পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাবেন এবং পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাওয়া বন্ধ করবেন।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়
পাতলা পায়খানা হলে করণীয় - পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি
পাতলা পায়খানা হলে তা সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে ঠিক হয়ে যায়, তবে পাতলা পায়খানার কারণে সৃষ্টি হয় পানিশূন্যতা তাই পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য আপনার দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন।
যদি আপনার পাতলা পায়খানা হয় তবে আপনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে বসে ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আপনার যদি পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে তবে আপনি নিচে উল্লেখ করা ঔষধগুলো সেবন করতে পারেনঃ
১।পাতলা পায়খানা হলে করণীয় খাবার স্যালাইন খানঃ যতবার পাতলা পায়খানা হবে ততবার এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন আধা লিটার পানিতে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যদি আপনার ঘরে খাবার স্যালাইন না থাকে তাহলে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাবার স্যালাইন তৈরি করে খেতে পারেন। এছাড়াও ভাতের মাড়, চিড়ার পানি অথবা ডাবের পানিও খেতে পারেন। ভাতের মাড়ের সাথে সামান্য পরিমাণে লবণ যুক্ত করতে পারেন।
২। পানিঃ পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং লবণ বাহির হয়ে যায়। তাই শরীরের এই পানিশূন্যতার অভাব পূরণ করার জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। প্রতিদিন গড়ে ৮-১২ প্লাস পানি পান করুন। বেশি পরিমাণে পানি পান করার ফলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এবং ব্যাকটেরিয়া বাহির হয়ে যাবে।
৩। পাতলা পায়খানা হলে মধু খানঃ মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন একটি উপাদান। পাতলা পায়খানা দূর করতে মধু বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাতলা পায়খানা হলে মধু যেভাবে খাবেন, এক গ্লাস কুসুম গরম পানির মধ্যে ১ চা-চামচ মধু, ১ চা-চামচ দারুচিনি নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। দিনে ২ বার থেকে ৩ বার এই মিশ্রণটি খান। আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি আপনার পাতলা পায়খানা ভালো হয়ে যাবে।
৪। জিংক ট্যাবলেটঃ পাতলা পায়খানা হলে জিংক ট্যাবলেট খেতে পারেন। গবেষণায় পরীক্ষিত যে, জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে পাতলা পায়খানা হওয়ার সময়কাল এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তবে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে।
৫। পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটঃ পাতলা হওয়ার কারণে পেটে অস্বস্তি হতে পারে এমন অবস্থায় আপনি উপরে আলোচনা ওষুধ গুলো খেতে পারেন। আর হ্যাঁ শিশু বাচ্চাকে ঔষধ দেয়ার পুর্বে ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ে দেখবেন।
আর হ্যাঁ অবশ্যই বয়স অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ মতো ওষুধ খাওয়াবেন। এছাড়াও পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য উপরে আলোচনা পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট গুলো খেতে পারেন এতে করে আপনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।
৬। ফলের রসঃ পাতলা পায়খানা হওয়ার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়, শরীরের শক্তি থাকেনা। তাই আপনি চেষ্টা করুন বেশি বেশি পরিমাণে ফল এবং ফলের রস খান, ফলের রস আপনার শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে এবং শরীরে শক্তি যোগান দিবে।
৭। লেবু পানিঃ লেবুতে থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এই উপাদান পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পাতলা পায়খানা হলে লেবু পানি যেভাবে খাবেন, লেবু থেকে রস বাহির করে এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির মধ্যে এক চা চামচ চিনি এবং এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে শরবত তৈরি করুন। দ্রুত পাতলা পায়খানা দূর করার জন্য এটি স্যালাইনের মতো বারবার খেতে থাকুন। আশা করা যায় আপনি খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
৮। কলাঃ পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া দূর করার জন্য কাঁচা এবং পাকা কলা দুটিই অনেক বেশি উপকারী। আপনি পাকা কলার সঙ্গে সামান্য পরিমাণে টক দই নিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন এবং কাঁচা কলা সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে সাথে লেবু রস মিশিয়ে খেলেও অনেক উপকার পাবেন। এটা খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি। পাতলা পায়খানা দূর করতে আপনি বিচি কলা খেতে পারেন এটিও খুব কার্যকর।
৯। সরষে বীজঃ সরষে বীজে থাকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা পাতলা পায়খানা দূর করতে বেশ কার্যকরী। ১ বাটি পানির মধ্যে ২-৪ চা চামচ সরিষা বীজ নিয়ে ১ ঘন্টা যাবত ভিজিয়ে রাখুন। পাতলা পায়খানা থেকে দ্রুত সময়ে মুক্তি পেতে চাইলে আপনি এই পানি দিনে তিন থেকে চারবার পান করুন।
১০। লোপেরামাইড জাতীয় ঔষধঃ পাতলা পায়খানা দ্রুত সময়ে বন্ধ করার জন্য ডাক্তার আপনাকে লোপেরামাইড জাতীয় ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। কিন্ত লোপেরামাইড জাতীয় ওষুধ আপনি কখনই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করবেন না।
আর ১২ বছরের চেয়ে কম বয়সী বাচ্চাদের এটি ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য আমরা উপরের আলোচনায় পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম উল্লেখ করেছি আপনি সেগুলো সেবন করতে পারেন। আশা করা যায় আপনার পাতলা পায়খানা সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে।
পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে একজন ব্যক্তির তার জীবনধারায় নিম্নলিখিত পরিবর্তন করা উচিতঃ
১। ভালো করে হাত ধুয়ে খাওয়া উচিত।
২। বেশিক্ষণ ক্ষুধার্ত থাকা উচিত নয়।
৩। খাবার সময়মতো নিতে হবে।
৪। রাতে সময়মতো ঘুমানো উচিত।
৫। কোন শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত নয়।
৬। ধূমপান করা উচিত নয়।
৭। রাগ করা উচিত নয়।
৮। রাতের খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে যাতে খাবার ঠিকমতো হজম হয়।
৯। রোগীকে যতটা সম্ভব বিশ্রাম নিতে হবে, কারণ অতিরিক্ত পাতলা পায়খানার কারণে শরীরে দুর্বলতা আসে।
কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়
বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার দাবার ও জীবাণুযুক্ত পানি পান করার ফলে আমাদের পেটে বিভিন্ন জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। তারপর আমাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কবলে পড়তে হয়।
কিছু ঘরোয়া খাবার খেয়ে পাতলা পায়খানাকে খুব সহজে আমরা ভালো করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি। সেই খাবার গুলো কি কি বা কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয় চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ
আপনার যদি পাতলা পায়খানা হয় তবে আপনি ভাত খান। ভাতের সাথে আপনি পাতলা মুগ ডালও খেতে পারেন। ভাতের সাথে দই মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এই সময় আপনি হালকা করে খিচুরি রান্না করেও খেতে পারেন। এই সময়ে টক দই খাওয়া রোগীর পক্ষে খুবই উপকারী।
টক দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রো-বায়োটিক উপাদান, উপকারী ব্যাক্টেরিয়া, যা আমাদের পেটের ভালো জীবাণুদের কার্যকারী ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে আপনি টক দইয়ের শরবত করে খেতে পারেন বা ভাতের সাথে টক দই মিশিয়েও খেতে পারেন।
পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে ওটস খেতে পারেন। কেননা ওটসে রয়েছে পানি শোষণ করে নেয়ার ক্ষমতা। যার ফলে এটি খেলে মল শক্ত হয় খুব দ্রুত এবং খুব সহজেই। এই সময়ে দুধ মিশিয়ে একদমই ওটস খাবেন না। দুধ মিশিয়ে খেলে পায়খানা আরাে বেড়ে যেতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে আমাদের শরীর থেকে অনেকটাই সোডিয়াম, পটাসিয়াম বের হয়ে যায় পাতলা পায়খানার মাধ্যমে। যার ফলে আমাদের প্রাণের সং-শয় পর্যন্ত হতে পারে। এই সময়ে কাচা কলা সিদ্ধ খাওয়া খুবই উপকারী।
এই সময়ে পেটকে ভালো রাখতে এবং পাতলা পায়খানা ভালো করতে কাচা কলা সিদ্ধ খুবই উপকারী একটি খাবার। কাচা কলা সিদ্ধ ভাতে সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা কাচা কলা সিদ্ধ হালকা ভাবে ঝোল করে ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। পায়খানাকে শক্ত করতে এই কাচা কলা সিদ্ধ এর কোনো বিকল্প নেই।
পেট খারাপের সময়ে কোনো ফল না খাওয়াই ভালো কিন্ত আপনি আপেল খেতে পারেন। কেননা আপেলে আছে পেকটিন নামে একটি উপাদান যা আমাদের মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া যে ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হয় তার প্রভাব দূর করার পাশাপাশি আমাদের পেটের এসিড কমাতে সাহায্য করে এই আপেল।
পাতলা পায়খানা হওয়ার সময় পেট ব্যাথা হলে কয়েক কুচি কাচা আদার সাথে ৪ চা চামচ বা ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে পেট ব্যাথা কম হয়। এই সময়ে আপনি আদা চা ঠান্ডা করে খেতে পারেন।
যেসব ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু এর জন্য আমাদের পাতলা পায়খানা হয় তার প্রভাব নষ্ট হয় লেবুর রস এর জন্য। এই সময় পাতি লেবুর রসের সাথে একটু চিনি মিশিয়ে শরবতের মতো করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে পানি আমাদের ফুটিয়ে খাওয়া উচিত। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী তামার পাত্রে পানি রাখা ভালো। তামার পাত্রে পানি রাখলে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পরে সেই পানি থেকে সকল প্রকার জীবাণু মা-রা যায়। তাই আমাদের সবসময় তামার পাত্রে পানি রেখে খাওয়া উচিত।
পাতলা পায়খানা হলে খাবার দাবারের প্রতি আমাদের অনীহা দেখা দেয় এই সময়ে আমাদের কোন কিছুই খেতে ভালো লাগে না কিন্ত এই সময় একদমই না খেয়ে থাকলে চলবে না। না খেলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পরতে পারে। পাতলা পায়খানা চলাকালীন সময়ে বেশি পরিমাণে ডাবের পানি পান করা প্রয়োজন।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে
পাতলা পায়খানা চলার সময় এগুলো খাওয়া উচিতঃ পুরাতন শালি চাল, ওটমিল, মুগ ডাল, মসুর ডাল, পটল, করলা, কুমড়া, মৌসুমি সবজি, কলা, জাম, ডালিম।
পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হয়
পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় মূল করণীয় হচ্ছে শরীরের পানি এবং লবনের ঘাটতি মেটানো। পাতলা পায়খানা হলে শরীরে অধিক বেশি পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এ সময় সব থেকে বেশি পানি পান করা জরুরী। পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য পরিমাণ মতো খাবার স্যালাইন, তরল পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
সাধারণত প্রতিবার পাতলা পায়খানা করার পরে এক প্যাকেট বা ৫০০ গ্রাম করে খাবার স্যালাইন খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়। তরল পানীয়ের মধ্যে আপনি ভাতের মাড়, চিড়ার পানি কিংবা ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। ভাতের মাড়ের সাথে সামান্য লবণ দিতে পারেন।
পাশাপাশি শরীরকে শক্ত পোক্ত করতে এবং শরীরের পুষ্টি চাহিদা সম্পন্নের জন্য আরও খেতে হবে সবুজ শাকসবজি, শুকনো খাবার এবং পানির চাহিদা পূরণ করবে এমন ফলমূল। যখনই মনে হবে তখনই খেতে পারবেন, তখনই খাবার খেয়ে নিবেন। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে না
পাতলা পায়খানা হলে উল্টাপাল্টা খাবার একেবারে খাবেন না। বিশেষ করে প্যাকেট জাত খাবার গুলো। সেই সাথে বাইরে তর্কিকৃত খাবার যেগুলো তৈলাক্ত এবং অতিরিক্ত লোভনীয় খাবার যেমন ধরুনঃ চটপটি, ফুচকা, বিভিন্ন ভাজাপোড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায়
প্রিয় পাঠক আপনি যদি পাতলা পায়খানা বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান তবে আমি আপনাকে বলবো উপরোক্ত আলোচনা করা পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করার আশা করি আপনি পাতলা পায়খানা হওয়া সহজেই বন্ধ করতে পারবেন।
পাতলা পায়খানা চিকিৎসায় কখন দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাবেন?
পাতলা পায়খানা হলে যদি নিচের উল্লেখ করা লক্ষণগুলোর সাথে আপনার সাথে কোনটির মিল দেখা যায় তবে আপনি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। পাতলা পায়খানার গুরুতর লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ
১। প্রচণ্ড পেটব্যথা
২। পানিশূন্যতা পূরণ না হওয়া
৩। পাতলা পায়খানার অবস্থার উন্নতি না হওয়া
৪। পায়খানার সঙ্গে র-ক্ত অথবা আঠালো মিউকাস বের হওয়ার
৫। পাতলা পায়খানার সাথে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শরীরে জ্বর, অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি থাকা
এগুলো হচ্ছে গুরুতর অবস্থা প্রকাশ করে, তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা শুরু করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্রঃ আমাদের আজকের এই পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম আর্টিকেলটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং পরামর্শ নিন।
আর হ্যাঁ, পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম হিসেবে আমরা যে ঔষধ গুলো সাজেস্ট করেছি সেই ঔষধ গুলো আপনি যেকোনো ফার্মেসির দোকান থেকে কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে কিনে ফেলতে পারবেন। তবে সবশেষে আবারো একটা কথা বলব, আপনি যে ওষুধই সেবন করেন না কেন নিজের মর্জি মাফিক না খেয়ে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।