সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা: শরীরে বাসা বাঁধা যেকোনো রোগের নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই সঠিক ডায়েট চার্ট ফলো করা উচিত। কেননা রোগের ধরণের উপর নির্ভর করে কখনো কখনো কিছু খাবার আমাদের শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, আবার কিছু কিছু খাবার ওই রোগকে নিরাময়ের জন্য শরীরকে ভেতর থেকে চাঙ্গা করে তোলে।
অনেকেই হয়তো সোরিয়াসিস নামক রোগটির সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন। কেননা সম্প্রতি অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবুও আপনি যদি এই রোগ সম্পর্কে তেমন কিছুই না জেনে থাকেন তাহলে এখনই পড়ে ফেলতে পারেন সোরিয়াসিস রোগ কি, এটি কেন হয় এবং এর নিরাময়ের জন্য কি করা উচিত সে সম্পর্কিত আরেকটি আর্টিকেল, যা ইতোমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এবার আসুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেই সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা অর্থাৎ কোন মানুষ যদি সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাবারগুলো রাখা উচিত আর কোন কোন খাবারগুলো পরিত্যাগ করা উচিত অর্থাৎ সোরিয়াসিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পড়তে পারেন চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে, নাকের হাড় বাঁকা অপারেশন করতে কত টাকা লাগে।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা
- সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে
- খাবার তালিকায় প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি রাখতে হবে
- সবজি ও ফল
- ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে
- বাদাম জাতীয় খাবার খাবেন
- খাদ্যতেল
- কম চর্বিযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে
- প্রোবায়োটিক্স জাতীয় খাবার
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
- ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খাবেন
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড
সোরিয়াসিস মূলত ত্বকের একটি জটিল রোগ। যেটাকে একপ্রকার চর্মরোগ বলা যায়। এই রোগ হলে মানুষের শরীরে মাছের মত আঁশ জাতীয় ঘা সৃষ্টি হয়।
স্বাভাবিক ভাবেই আমরা পুষ্টিকর খাবার বলতে দুধ ডিম, মাছ মাংস এই খাবার গুলোকে ভেবে থাকি। কিন্তু আশ্চর্যকর বিষয় হচ্ছে এই খাবার গুলোর মধ্যে থেকে কিছু কিছু খাবার আবার সোরিয়াসিস রোগের সম্ভাবনাকে আরো বেশি বৃদ্ধি করে দেয়। তাই এ পর্যায়ে কিছু খাবার সাজানো হলো, যা সোরিয়াসিস রোগীর জন্য উপকারী হতে পারে বলে চিকিৎসকরা সচরাচর বলে থাকেন। যথা:
সবজি ও ফল (ভিটামিন এ জাতীয় খাবার): পালংশাক, ব্রোকলি, স্পিনাচ, গাজর, কলারাবি, মূলা, ফলসবজি, কমলা, আম, পেঁপে, অ্যাপেল ইত্যাদি সবজি ও ফল রোগীর জন্য উপকারী বলে জানা গিয়েছে। কেননা এগুলিতে রয়েছে উচ্চ ফাইবার ও প্রোটিন, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে সাহায্য করে এবং এই রোগকে ভেতর থেকে নিরাময় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
খাদ্যতেল: লিনসিড তেল, আলিভ ওয়েল তেল, কোকোনাট তেল ইত্যাদি খাবারে যোগ করা যেতে পারে। কারণ এগুলি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যে উপকারী।
প্রোবায়োটিক্স: দহি, জলেবি, কিফির ইত্যাদি প্রোবায়োটিক্স আপনার পচনের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত রাখতে সাহায্য করবে। তাই চেষ্টা করবেন সোরিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হলে খাবার তালিকায় এই খাদ্যগুলোকে রাখবার।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ (সালমন, সার্ডিন, টুনা) এ সকল রোগীদের জন্য উপযোগী খাবার। আবার সার্টেড অমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করা যেতে পারে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। আর হ্যাঁ, এটা মূলত রিসার্চ করার মাধ্যমে জানা গিয়েছে ওমেগা ৩ ফেটি অ্যাসিড সোরিয়াসিস রোগীর উপযুক্ত খাবার গুলোর মধ্যে অবস্থান করছে।
ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই জাতীয় খাবার: ভিটামিন ডি সম্পন্ন খাবার যেমন:- মাছ, ক্যান্টালুপ, ক্যারট, গাজর, কোকোনাট মিল্ক ইত্যাদি এই রোগীর জন্য ভাল খাবার। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ডি জাতীয় খাদ্যগুলোকে রাখার চেষ্টা করবেন।
ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড: সোয়া অয়েল, কর্ন অয়েল, সাফলা অয়েল ইত্যাদি খাবারে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। আর এই খাবারগুলো সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকাতে রাখা যেতে পারে।
সোরিয়াসিস থেকে নিজেকে ভালো রাখতে বেশি বেশি ভিটামিন এ জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
তবে হ্যাঁ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো একদমই সোরিয়াসিস রোগীদের জন্য অনুপযুক্ত। তাই আলোচনার পরবর্তী স্টেপে আমরা বেশ কিছু খাবার সাজেস্ট করব যেগুলোকে অবশ্যই রিজেক্ট করতেই হবে আপনাকে। মানে খাবারের তালিকা থেকে সোরিয়াসিস রোগ চিরতরে নির্মূল হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে আমাদের উল্লেখিত খাবার গুলো।
আরো পড়ুনঃ সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
সোরিয়াসিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না
সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকায় কোন খাবারগুলো রাখা যাবে এটা যদি আপনি আরো ভালোভাবে জানতে চান তাহলে সোরিয়াসিস রোগীর অনুপযুক্ত খাবারগুলো সম্পর্কে জানুন। কেননা শুধুমাত্র এই খাবারগুলোকে বাদ রেখে আপনি বাকি খাবার গুলো সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকায় রাখতে পারবেন। সেগুলো হলো:
সোরিয়াসিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না
- অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে
- দুগ্ধ জাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- ডিম বা ডিমের কুসুম খাওয়া যাবে না
- গ্লুটেন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- বেশি লবণযুক্ত খাবার
- যে খাবার গুলোতে ডিম আছে সেগুলো পরিহার করতে হবে
- ধূমপান, মদপান বা নেশা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে
- বেশি মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না
- ময়দা বা ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- যেসব খাবারে এলার্জি বাড়ে সেসকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- টমেটো
- টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- রেডমিট অর্থাৎ গরুর মাংস, মহিষের মাংস, খাসির মাংস এবং প্রস্তুত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
কেননা ইতোমধ্যে আমরা এটা উল্লেখ করেছি সোরিয়াসিস হচ্ছে একটি চর্ম জাতীয় রোগ অর্থাৎ ত্বকের সমস্যা জনিত রোগ। আর এই রোগ শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে এমনকি মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
সাধারণত রোগের প্রকারভেদ এবং লক্ষণের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা এই সোরিয়াসিস রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন। কিন্তু আমাদের উল্লেখিত এই খাবারগুলো খাওয়ার কারণে রোগীর অবস্থা আরো বেশি খারাপ হতে পারে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন এ খাবারগুলো এড়িয়ে চলবার। কারণ:-
ভাজা, তেলে ভোজা এবং খারাপ খাবার: ভাজা, তেলে ভোজা খাবার (ফ্রাইড ফুড), চিপস, ফাস্ট ফুড, বোর্ডার বিষয়বস্তু সহ খারাপ খাবার সেবন করা এই রোগের মার্জনকে বাড়াতে পারে।
মিষ্টি ও চিনি: তুলনামূলকভাবে বেশি মিষ্টি ও চিনি সেবন করা সোরিয়াসিসের লক্ষণগ্রস্ত হতে পারে।
প্রস্তুত খাবার: প্রস্তুত খাবারে এসিডিক পদার্থ, উচ্চ সার্বিক খাবার, মসলা বা তীব্র চিনির ব্যবহার থাকতে পারে। তাই এই সকল খাবারের থেকে জন্য সাবধান থাকার জরুরী।
অতিরিক্ত গরম খাবার: অতিরিক্ত গরম খাবারও কখনো কখনো সোরিয়াসিস রোগীর সমস্যার পরিসীমাকে বৃদ্ধি করে বলে জানা গিয়েছে। তাই অতিরিক্ত গরম খাবার না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এ সময়।
লেবু, টমেটো এবং ভ্যান্ডারা: এই সব খাবারে সিট্রিক এসিড থাকতে পারে, যা রোগীদের ক্ষেত্রে মার্জন প্রসারিত করতে পারে। তাই অবশ্যই এ রোগে আক্রান্ত হলে খাবার তালিকা থেকে লেবু এবং টমেটো এই খাবারগুলোকে বাদ রাখার চেষ্টা করা উচিত।
কাফিনেটেড পদার্থ: অতিরিক্ত কাফিন এই রোগের লক্ষণ বা মার্জনকে প্রসারিত করতে পারে, তাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে কাফিনেটেড জাতীয় খাবারগুলো পরিহার করার চেষ্টা করবেন।
আরো পড়ুনঃ ইবনে সিনা হাসপাতাল ধানমন্ডি ডাক্তার লিস্ট
পরিশেষে
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, যেহেতু শরীরে রোগ এর আবির্ভাব ঘটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাই এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কোনোই কারণ নেই। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন এবং তাদের দেওয়া নির্দেশনা মত মেনে চলুন খাবার ডায়েট।
আশা করা যায় আপনি আমাদের সাজেস্টক কৃত এই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে এবং ক্ষতিকর হিসেবে সাজেস্ট কৃত খাবারগুলো পরিহার করার মাধ্যমে খুব সহজেই সোরিয়াসিস রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবেন। তো আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।