বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো এই টপিক নিয়ে আলোচনা করব আমাদের আজকের এই প্রবন্ধে। তো আপনি কি জানতে চান কিভাবে এলো বাংলা বর্ষপঞ্জি! আর কেইবা এই বাংলা বর্ষপঞ্জি আবিষ্কার করল? যদি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে, পড়ে ফেলুন আমাদের আজকের এই বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো আর্টিকেলটি।
কেননা আজ আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করতে চলেছি বাংলা বর্ষপঞ্জি কি, বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো, সেই সাথে বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা, বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ টপিক সম্পর্কে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
বাংলা বর্ষপঞ্জি কি?
বাংলা বর্ষপঞ্জি হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ অঞ্চলে ব্যবহৃত একটি সৌর বর্ষপঞ্জি। যাকে বঙ্গাব্দ বলেও সংবর্ধন করা হয়। আরেকটু ভিন্নভাবে বললে বলা যায় বাংলা বর্ষপঞ্জি হচ্ছে বাংলা সাল বা বঙ্গাব্দ সম্পর্কিত একটি পঞ্জিকা। যেখানে বাংলা বছরের তারিখ এবং বার সম্পর্কিত তথ্য থেকে থাকে।
অতএব বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা হচ্ছে বাংলা ক্যালেন্ডারের একটি অংশ। যে পঞ্জিকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা সালের সময়সূচী ও তারিখ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সরবরাহ করা এবং বাংলা সালের প্রধান তারিখ, মাস দিন ক্ষণ, উৎসব রাষ্ট্রীয় ছুটি এবং অন্যান্য সাময়িক তথ্য সংগ্রহীত করা সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে।
মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ অঞ্চলের এই সৌর বর্ষপঞ্জির একটি সংশোধিত সংস্করণ বাংলাদেশের জাতীয় ও সরকারি বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর তাইতো বাংলা বর্ষপঞ্জিতে "নববর্ষ" পহেলা বৈশাখ নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ নটরডেম কলেজে পড়ার যোগ্যতা
বর্ষপঞ্জির আবিষ্কারক কে?
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা গিয়েছে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ৫৭ বছর আগে ভারতবর্ষের সম্রাট বিক্রমাদিত্য প্রবর্তন করেন বিক্রম সাম্বাত পঞ্জিকা। তিনি হিন্দু রাজা ছিলেন এবং হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল এই পঞ্জিকা মেনে চলে বলে আন্তর্জাতিক মহলে এটি হিন্দু পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার হিসেবে পরিচিতি পায়। আর তাই কেউ কেউ এটিকে নেপালি ক্যালেন্ডারও বলে থাকে।
পরবর্তীতে আরো জানা যায় বাংলা বর্ষপঞ্জি ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর প্রথম প্রবর্তন করেন। সেই সময় এই বর্ষপঞ্জি টি পরিচিত ছিল তারিখ ই এলাহী নামে। কিন্তু পরবর্তীতে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ কি ১১ মার্চ এর দিকে সেটাকে বঙ্গাব্দ নামে সংবেদন করা হয়।
তবে হ্যাঁ, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নতুন এই সালটি আকবরের রাজত্বের ২৯তম বর্ষে প্রবর্তিত হলেও তা গণনা করা হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাবের ৫ই নভেম্বর। আর এর কারণ হচ্ছে এই তারিখে আকবর দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করে জয়লাভ করে সিংহাসন।
অতএব সবশেষে এটা দাঁড়ালো বাংলা বর্ষপঞ্জি ১৫৫৬ খ্রিস্টাবের ৫ই নভেম্বর সম্রাট আকবর প্রবর্তন করেছিলেন। আর হ্যাঁ, এই বর্ষপঞ্জির ইতিহাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বহুদিনের পুরনো ইতিহাস।
তাই আপনি যদি বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস সম্পর্কে এটু জানতে চান তাহলে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পারেন অথবা গুগল এ সার্চ করতে পারেন বাংলা বর্ষপঞ্জির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং বর্ষপঞ্জির প্রাচীন ইতিহাস এই ধরনের কিওয়ার্ড লিখে। কেননা এ সম্পর্কিত অসংখ্য ইনফরমেশন আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে।
তবে এবার আসুন, আমাদের আলোচনার মাধ্যমে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো অর্থাৎ বাংলা বর্ষপঞ্জির আগমন ঘটলো কখন কিভাবে কোন মাধ্যমে!
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা সরকারি কলেজের তালিকা
বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো?
বাংলা বর্ষপঞ্জির উৎস বেশ প্রাচীন এবং সম্পাদনার পদ্ধতি প্রথম বঙ্গাব্দ সম্প্রদায়ের উৎস থেকে আসে। এটি হিন্দু পঞ্চাঙ্গের এক অংশ, যা ধর্মীয় ও সংস্কৃতিকে উল্লেখ করে। বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রারম্ভিক ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলা বর্ষপঞ্জের আদি আদান-প্রদান ঘটে ৫৭৬-৬৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। যে সময় পল্লব বংশের রাজাদের রাজ গোপালের সাম্রাজ্যকে সূচনা করে।
তবে এখনো পর্যন্ত বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে বিভিন্ন দ্বিধা। মতপার্থক্য থাকার কারণে এখনো পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না বাংলা বর্ষপঞ্জি ঠিক কিভাবে এই বাংলায় এসেছে। তবে ইতোমধ্যে যে গবেষণা গুলো সম্পন্ন করা হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে কেউ কেউ বলে থাকে সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে বাংলা বর্ষপঞ্জি টি এসেছে।
আর আপনি যদি এ সম্পর্কে কিছুটা সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান তাহলে নিচের সাজেস্কৃত বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো pdf ফাইলটি ডাউনলোড করুন অথবা ভিজিট করে পড়ে নিন বাংলা বর্ষপঞ্জি সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচার উপায়
বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয়
আমাদের আলোচনার মাধ্যমে মূলত এই প্রশ্নের উত্তরটা অনেকের কাছেই কিছুটা হলে খোলাসা হয়েছে। কেননা এরই মধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি বাংলা বর্ষপঞ্জি হচ্ছে বাংলা ভাষার একটি লোকাল ক্যালেন্ডার সিস্টেম। যে ক্যালেন্ডারে অর্থাৎ পঞ্জিকাতে বাংলা মাস ও তারিখ সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা থাকে এটা মূলত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই আলোচনার এই মুহূর্তে আমরা বাংলা বর্ষপঞ্জির কিছু কাজ বা এর ব্যবহার তুলে ধরবো। যথা:
ধার্মিক উপলক্ষে: বাংলা বর্ষপঞ্জি বিভিন্ন ধার্মিক উপলক্ষে ব্যবহৃত হয়, যেমন বৈষ্ণব হিন্দুরা এটি বিশেষভাবে উল্লঙ্ঘন করে, তাদের উপলক্ষে বিশেষ তারিখ এবং ইভেন্ট নির্ধারণ করার জন্য।
সাংস্কৃতিক উপলক্ষে: সাংস্কৃতিক উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠান, উৎসব, উপহার দেওয়া ইত্যাদি এটি ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে: বাংলা বর্ষপঞ্জি সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে এটি তারিখ, মাসের নাম, ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে।
সামাজিক উপলক্ষে: বাংলা বর্ষপঞ্জি বাঙালি সামাজিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক ইভেন্ট এবং উৎসব নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
পূর্বপুরুষের স্মরণ ও উৎসর্গে: পরিবারের পূর্বপুরুষের জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, উত্তরাধিকারির সময় নির্ধারণে এবং তাদের স্মরণ করার জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করা হয়।
এক কথায় এই সকল বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, বাংলা বর্ষপঞ্জি বাংলা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা সরকারি মেডিকেল কলেজের তালিকা
বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা
বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে কিনা এই নিয়ে বেশ কিছু মানুষের প্রশ্ন রয়েছে। আর এ সম্পর্কে পর্যালোচনা করার পর আমরা জেনেছি, বাংলা বর্ষপঞ্জের বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এর কারণ হলো, প্রাচীনকাল থেকেই এই বর্ষপঞ্জির ব্যবহার হয়ে আসছে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি কোনভাবেই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে চলে না। অতএব বাংলা বর্ষপঞ্জির বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই।
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো এবং এ সম্পর্কে খুঁটিনাটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং কোন মন্তব্য থেকে থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।