দাঁত থেকেই মুখের হাসির সৌন্দর্যতা প্রকাশ পায়। সেই দাঁত নিয়েই যখন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তখন আমরা মরিয়া হয়ে উঠি কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া খুবই অসহ্যকর এবং যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি করে। প্রচন্ড ব্যাথা থাকে, কোন কিছু খাওয়া যায়না, দাঁত দিয়ে খাবার চিবানু যায় না, গাল ফুলে বেলুনের মত হয়ে যায়। আজকের এই পোস্টে আমারা জানবো দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে এবং ঘরোয়া কোনো উপায় আছে কিনা।
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে তা সবসময় জানা থাকে না। এরকম একটা অবস্থায় আমরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিই অথবা ঘরোয়া কিছু উপায় ব্যবহার করি, এই দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ায় ব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আসুন জেনে নেই, দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে?
(toc) #title=(সুচিপত্র)
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে
দাঁতের মাড়ি ফোলে যাওয়ায় সেই ব্যাথার যন্ত্রণায় ভুগে আমরা দন্ত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলেই সুস্থতা লাভ করবেন অথবা ফার্মেসি থেকে কিছু ঔষধ এনেও খেতে পারবেন। দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি ঔষধ খেতে হবে তা হলঃ
Tetracycline antibiotics খাবার পরে দিন ২ বার।
Tetracycline hydrochloride খাবার পর দিন ২ বার।
doxycycline দিন ২ বার।
minocycline খাবার পর দিন ২ বার।
এবং painkiller (ব্যথার মেডিসিন) দাঁতের মাড়ি ফোলের সাথে সাথে ব্যাথা থাকলে এই ওষুধটি খেতে পারেন। এগুলো হলো দাঁতের মাড়ি ফোলার জন্য প্রাথমিক ঔষধ, যা দাঁতের মাড়ি ফোলার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এবং অ্যান্টিসেপ্টিক বা ফ্লুরিনেটেড মাউথওয়াশ ও ব্যবহার করতে পারেন।
আরো কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে, এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। ইনসিশন ও ড্রেনেজ (দাঁতের মাড়ির ফোলা অংশ কেটে পুজ বের করা) করতে পারেন। খাবারের পরে অবশ্যই হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে নিবেন যাতে খাদ্যের কোন কনা দাঁতে লেগে না থাকে। সামান্য কোন খাদ্যের কনা দাঁতে লেগে থাকলে ব্যাথার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই ওষুধগুলো খেতে পারেন এবং এই পদ্ধতি গুলা ব্যবহার করলে অবশ্যই দাঁতের মাড়ি ফোলে যাওয়ার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবেন।
আরো পড়ুনঃ কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়
কোন ভিটামিনের অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়
দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির সুস্থতার জন্য কিছু ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ঠিক তেমনি সেই ভিটামিন গুলো যখন নিয়মিত ভাবে দাঁত পায়না, তখনই শুরু হয় দাঁতের সমস্যা, দাঁতের ক্ষয়রোধ, দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁতে ব্যাথা। যে ভিটামিন গুলোর অভাবে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, তা হলো:
ভিটামিন-এ: দাঁতের মাড়িকে সুস্থ ও শক্ত রাখতে ভিটামিন এ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। মুখের ভিতরের তরল লাল প্রবাল মাত্রাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। (গাজর ,মিষ্টি আলু, সবুজ শাকসবজি, আম) এ খাদ্য গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।
ভিটামিন-বি: মুখের এবং মুখের ভিতরের জিহ্বার ঘা হতে রক্ষা করে। (সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মটরশুটি, দই, মাংস) এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে।
ভিটামিন-সি: দাঁতের মাড়ির সুস্থতায় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ভিটামিন সি। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হওয়া, ফুলে যাওয়া বন্ধ করে। (টক জাতীয় ফল আমলকি, লেবু, কমলা, আমড়া, পেয়ারা, কামরাঙ্গা ইত্যাদি) এগুলোতে রয়েছে খুব বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি, যা দাঁতকে খুবই শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন-ডি: সূর্যের আলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, যা শরীর এবং দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও মাছ, মাংস, দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন-কে: শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ভিটামিন কে এবং ভিটামিন কে এর অভাবে দাঁতের মাড়িতে রক্তপাত হয়। সবুজ শাকসবজি এবং সয়াবিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে।
আরো পড়ুনঃ দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে কি করনীয়
দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে খুব অশান্তিকর একটা অবস্থায় থাকতে হয়। কোন কিছু ভালো লাগেনা, কথা বলা যায় না, মেজাজ খিটখিটে থাকে। দাঁতের মাড়ি ফুলে ব্যথা থাকায় গাল ফুলে যায়। এই সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন: সামান্য পরিমাণে সরিষার তেল ও সাথে একটু লবণ মিশিয়ে দাঁতের মাড়িতে লাগাতে পারেন, এতে করে মাড়ির ব্যাথা কমে যাবে। সরিষার তেলে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আরো রয়েছে লবন পানি, হালকা কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে একটু পর পর কুলকুচি করে নিবেন, আস্তে আস্তে ব্যাথা কমবে এবং খুবই উপকার পাবেন।
দাঁতের মাড়ি ব্যাথার ঔষধ
দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যাথার যন্ত্রণা যখন অসহ্যকর হয়ে ওঠে তখন আমরা দাঁতের মাড়ি ব্যথার ঔষধ খুঁজি। দাঁতের মাড়ি ব্যাথা নিরাময়ে ফ্লুব্লাস্ট এই ঔষধটি ব্যবহার করতে পারেন। দাঁতের মাড়ি ব্যথার জন্য খুবই কার্যকরী একটি ঔষধ। এবং আরো কয়েকটি ঔষধ আছে যা,
- Fanamic 250 যা (১৫ বছরের নিচে বয়স হলে) ৪ থেকে ৫ দিন খাবেন, দিন ২ বার করে।
- Fanamic 500 ( ১৮ বছরের উপরে হলে) ৩ দিন খাবেন, দিন ২ বার।
- Tab- Tory 60 একটা করে দুইবার খাবার পরে।
- Tab- Exilok 20 একটা করে দুইবার খাবার আগে।
- Cap- Moxacil 500 একটা করে দুইবার খাবার পর।
এই ওষুধগুলো খেয়ে দেখবেন অবশ্যই আপনার দাঁতের মাড়ি ব্যাথা কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ হিজামার উপকারিতা ও অপকারিতা
দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যথা কমানোর উপায়
দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যাথা এটি একটা সাধারন সমস্যা হলেও এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ব্রাশ করার সময় ফোলা মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়। আসুন জেনে নেই এই যন্ত্রণাদায়ক দাঁতের মাড়ি ফোলা ও ব্যাথা কমানোর উপায়।
হলুদ ব্যবহার করতে পারেনঃ হলুদের রয়েছে কারকিউমিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী, এটা দাঁতের মাড়ির ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে অনেক সাহায্য করে।
সামান্য কুসুম গরম পানির মধ্যে এক চা চামচ হলুদের গুড়া দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন, আঙ্গুলের সাহায্যে মাড়িতে পেস্টটি হালকা করে ঘষিয়ে দুই, তিন মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, দিন দুইবার করে এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন দাঁতের ব্যাথা ও ফোলা কমে যাবে।
এবং অ্যালোভেরা জেল, যা ঔষধি গুণে খুবই সমৃদ্ধ। মুখের, ত্বকের অথবা যেকোন সমস্যায় অ্যালোভেরা জেল খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দাঁতের মাড়ির ফোলা, রক্তপাত হওয়া, দাঁতের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় কেন
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেক কিছুই থাকে। যেমন, ছত্রাক সংক্রমণ, ভিটামিনের অভাব, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, পুষ্টির ঘাটতি, গর্ভকালীন অনিয়ম, প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস এরকম অনেক কিছুর কারণেই দাঁতের মাড়ি ফুলে যেতে পারে। দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার সাথে সাথে ঘরোয়া উপায় গুলো ব্যবহার করুন এবং দীর্ঘদিন না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা না নিলে দাঁতের মাড়ি ফোলা থেকে বড় ধরনের কোন সমস্যা হতে পারে।
দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি
অনেক সময় দাঁতের মাড়ি ফোলার সাথে সাথে মাড়ির মাংস বৃদ্ধিও ঘটে। দাঁতের মাড়ির মাংস বৃদ্ধি হলে বা মাড়ির মাংস সরে গেলে দাঁতে প্রচণ্ড ব্যাথা হয় এবং সাথে রক্তক্ষরণও থাকে। তখন অবশ্যই দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
দাঁতের এক্সরে করাতে পারেন দাঁতের মাড়ির কোথায় মাংস বৃদ্ধি হয়েছে তা চিহ্নিত করন ও সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে তা বুঝতে পারবেন। সংক্রমনের বিস্তার বন্ধ করার জন্য চিকিৎসক আপনাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন, রুট ক্যানাল চিকিৎসা, দাঁত তুলে ফেলা, ইনসিশন, ড্রেনেজ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটা করলেই দাঁত মাড়ির মাংস বৃদ্ধি বা মাড়ির ফোলা ও ব্যাথা সেরে যাবে।
আরো পড়ুনঃ কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো
সর্বশেষ
সব ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরের জন্য এবং দাঁত ও দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত বেশি পরিমাণে পানি পান করবেন এবং নিয়মিত ব্রাশ করলে দাঁতের মাড়ি ফোলা থেকে রেহাই পাবেন এবং দাঁতে ক্যাভেটির ফলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়, দাঁতে ক্যাভেটি হয়েছে কিনা বুঝতে পারবেন, ঠান্ডা বা গরম খাবার খেলে দাঁতের শিরশির অনুভব করবেন। তখন অবশ্যই অ্যান্টি সেনসিটিভিটি টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন।
বর্তমানে আমাদের লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস বদলে যাচ্ছে, দিন দিন খাবারের মধ্যে ফাস্টফুড, নানা ধরনের অ্যাসিটিক খাবার, কোল্ডড্রিংস এসবের মাত্রা বেড়ে গেছে তাই শরীরের সমস্যা ও বাড়ছে সাথে দাঁতেরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেকোনো ধরনের খাবারের পরেই যদি আমরা নিয়মিত ব্রাশ করে নেই, তবে দাঁতের মাড়ি ফোলা, দাঁত ব্যাথা এই সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবো।