ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে - সুস্থ মানুষের দেহে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে কিডনি। কিডনি মানুষের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। র*ক্ত কণিকা তৈরীর জন্য ইরাইথ্রোপয়েটিন ও কোলসিট্রায়াল হরমোন উৎপাদনের কাজও করে কিডনি। কিডনিকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস প্রয়োজন। চিকিৎসকের মতে, কিডনির রোগীদের ফসফরাস ও সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিডনি সমস্যায় পড়লে বা বিকল হলেই আমাদের ডায়ালাইসিস এর সাহায্য নিতে হয়। ডায়ালাইসিস করতে হলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে? আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে এবং ডায়ালাইসিসের আরো অন্যান্য বিষয় তুলে ধরবো। আসুন জেনে নেই, ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?
কিডনির সমস্যা প্রথম অবস্থায় খুব সহজে কারোই নজরে পড়ে না। আস্তে আস্তে লক্ষণ গুলা বাড়তে থাকলে অনেকটা উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু আমাদের উচিত শরীর কিভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। র*ক্তের সিরামে ক্রিয়েটিনিন মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় (স্বাভাবিক মাত্রা ১.৪ মিলিগ্রাম) বেড়ে গেলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে। তখনই আমাদের টাকার পরিমান জানাটা প্রয়োজন হয়ে পড়ে যে, ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?
টাকার পরিমানটা হচ্ছে ডায়ালাইসিস করতে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়। এবং বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে তার চেয়েও দ্বিগুন, বাড়তি ঔষধপত্র ছাড়াও অন্যান্য খরচ সহ প্রায় ৯ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো গুনতে হয়। কোন কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে আরো কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ডায়ালাইসিস কি ও কেন করতে হয়?
একটি বিকল্প র*ক্ত পরিষ্কার পদ্ধতি হচ্ছে ডায়ালাইসিস। এমন একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে ডায়ালাইসিস যা, যাদের শরীরে কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না, তাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য, তরল, টক্সিনকে অপসারণ করা হয় ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে। অথবা র*ক্তের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করা যায়। কিডনি বিকল হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস করতে হয়।
কিডনি যখন র*ক্ত পরিশোধনের কাজ সম্পাদন করতে না পারে ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন র*ক্তে জমা হতে থাকে ক্ষতিকর বর্জ্য। ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ শরীরে বেড়ে গেলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। সেজন্যই মূলত ডায়ালাইসিস অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়
কিডনি দুর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি র*ক্ত হতে দূষিত পদার্থ ও ফ্লুইড বের হতে ব্যর্থ হয়। তখন রোগীকে সুস্থ রাখতে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন পড়ে। এবং ডায়ালাইসিস একবার করার পর আবার কতদিন পরপর তা করতে হয়, সেটা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতালে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়।
প্রতিদিন চার ঘণ্টার মতো র*ক্ত পরিশোধনের কাজ করা হয়। তবে যাদের সাময়িক কিডনি বিকল হয়ে থাকে বা প্রথম ধাপের রোগী তাদের ক্ষেত্রে কয়েকটি ডায়ালাইসিস করার পরই সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু যারা পঞ্চম ধাপের রোগী বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগী তাদের বেলায় জীবনভর চলতে থাকবে এই ডায়ালাইসিস। এবং এই ডায়ালাইসিস র*ক্তে বেশ অনেকটা রসায়নের সমতা বজায় রাখে, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বনেটের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে ও র*ক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুনঃ কোলেস্টেরল কমানোর খাদ্য তালিকা
ডায়ালাইসিস করার নিয়ম
ডায়ালাইসিস প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে, যথা: হিমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস। কোন ডায়ালাইসিস কার উপর প্রয়োগ করা হবে সেটা নির্ভর করে রোগীর সমস্যার উপর।
হিমোডায়ালাইসিস: এই ডায়ালাইসিসটি মূলত মেশিনের মাধ্যমে করা হয়। রোগীর শরীরের র*ক্ত বাইরে স্থাপিত মেশিনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই মেশিনটা শুধু বর্জ্য পদার্থ বের করে নেয়। এই হিমোডায়ালাইসিস মূলত সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত করতে হয়। শিরাপথের র*ক্ত ক্যাথেটারের মাধ্যমে মেশিনে যায় এবং তা পরিশোধন হয়ে অন্য ক্যাথেটারের মাধ্যমে আবার শরীরে ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিমোডায়ালাইসিস বাসায়ও করা যায়।
পেরিটোনিয়াল: এই ডায়ালাইসিসটি হচ্ছে একটি টিউবের মাধ্যমে পেরিটোনিয়াল পেটের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। ডায়ালাইসিস এর কাজটা মূলত পেটের ভিতরেই সম্পন্ন হয়। মিউকাস মেমব্রেন এখানে ছাঁকনির কাজ করে পেটের অভ্যন্তরে। এই দ্রবনটা পেটের ভিতরে কিছু সময় রাখলে র*ক্ত থেকে দূষিত পদার্থগুলো অসমোসিস প্রক্রিয়ায় তা চুষে নেয়। এই পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসটি রোগী বাসায় থেকেও করতে পারবেন এমনকি ভ্রমণে যেকোন জায়গায় গিয়েও করতে পারবেন। এবং এর খরচটা অনেকাংশ কম হয়।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
ডায়ালাইসিস রোগীদের খাদ্য তালিকায়, উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সচেতন থাকবেন, কম মাত্রায় পটাসিয়াম ও সোডিয়াম এবং এমন খাবারের বিষয়ে নিশ্চিত হন যেখানে উচ্চ মাত্রার ফসফরাস রয়েছে। চা,কপি,পানি অথবা যেকোন পানীয় আপনি কতটুকু পান করতে পারবেন বা কতটুকু পান করা উচিত তা আপনার ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এবার আসুন দেখে নেই ডায়ালাইসিস রোগীদের খাবারের তালিকায় কি কি থাকছে।
সকালের খাবারঃ ধনে চাটনি ১ চামচ বা হাফ কাপ চা, ১/৩ কাপ ডাল
দুপুরের খাবারঃ আধা কাপ মিশ্র ফল ( আনারস, আঙ্গুর), ৩/৪ কাপ সালাদ, যার মধ্যে থাকবে শসা,পুদিনা, পালং শাক, লেটুস, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, লেবু ও অলিভ অয়েল।
রাতের খাবারঃ ১ কাপ লেবুর সোডা, ১ টুকরো পীচ পাই।
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের জলখাবারের মধ্যে থাকবে, ভুট্টার তৈরি ইডলি ২,৩ টি, এক কাপ ঠান্ডা পানি, ধনে চাটনি ১ টেবিল চামচ। আপনি সঠিক ডায়েট অনুসরণ করে কিডনি বিকল সঞ্চয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের খরচ কেমন
পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস পদ্ধতিটি হেমোডায়ালাইসিস র*ক্ত ফিল্টারিং পদ্ধতির চেয়েও ভিন্ন আরেকটি উপায়ে র*ক্ত ফিল্টার করার অনুমতি দেয়। ইমারজেন্সি যেকোন সময় আপনি বাড়িতে অথবা ভ্রমণের সময় যেকোন স্থানে এই চিকিৎসাগুলো করতে পারেন। কিন্তু এই পদ্ধতিটি কিডনি ব্যর্থতার জন্য সঠিক বিকল্প নয়।
পেরিটোনিয়াল সংক্রমণ ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া PD এর ক্যাথেটারের মধ্য দিয়ে পেটের গহ্বরে প্রবেশ করে। এই পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস করাতে খরচ পড়বে প্রায় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে ৬০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে এবং বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে হাজার ১,৫০০ বা তারও কিছু বেশি হতে পারে।
ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে নিয়ে সর্বশেষ
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে কিডনি, এই কিডনি নষ্ট হওয়ার কিছু লক্ষণ লক্ষ্য করবেন যেমন, সব সময় একটা বমি বমি ভাব হয় এবং মাঝে মধ্যে বমি হয়েও থাকে। প্রসাবের সাথে র*ক্ত যাওয়া, অতিরিক্ত দুর্বলতা বোধ করা। কাজকর্ম তেমন একটা না করলেও শরীর সব সময় দুর্বল লাগবে। বারবার প্রস্রাবের বেগ হয়, দিন যত যাবে বাড়বে। শরীরের যেকোন অঙ্গে হাত, পা, পেটে পানি জমা। শরীরের ত্বকে চুলকানি এবং শ্বাস নিতে অনেকটা অসুবিধা হয়।
এছাড়াও উচ্চ র*ক্তচাপের রোগীদের মধ্যে অনেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। হার্টে কয়েকবার সার্জারি, জন্ডিস, অতিরিক্ত মাত্রায় মেডিসিন সেবন করার ফলে ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। সাধারণ ইনফেকশন ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকেও কিডনি বিকল হতে পারে। তখনই আপনাকে ডায়ালাইসিস এর মাধ্যম বেছে নিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ স্হূলতায় ভুগছে যা কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। শুধু আমাদের লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেই ৬৮ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া। আমরা নিজেরা একটু সচেতন হলেই ৫০-৬০ ভাগ কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করতে পারব।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।