ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা - যখন আমাদের শরীরের দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায় তখন ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত বিপাক কার্যক্রম চলতে থাকে। এর ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। প্রতিদিন এই সকল বর্জ্য পদার্থ কিডনির মাধ্যমে বের হয়ে থাকে।
এছাড়া রক্ত প্রস্তুতি এবং শরীরে প্রসাবের মাধ্যমে লবণ পানির ভারসাম্য রক্ষাতেও কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি বিকল হয়ে গেলে শরীরের এই ব্যবস্থাপনায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, শরীর ফোলা, দুর্বলতা, খিচুড়ি ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং ইউরিয়া জাতীয় বর্জ্য পদার্থ শরীরের প্রতিদিন জমতে থাকে।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের পাঁচটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে শেষ ধাপে রোগীকে ডায়ালাইসিসের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিডনি আকারে ছোট হলেও রক্ত পরিষ্কার করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ইলেকট্রোলাইট এর ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রস্রাব উৎপাদন সহ শরীরের নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বের প্রায় ১০% লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। আজকের এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে আমরা জানবো ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
শুধুমাত্র আপনি কিডনি রোগী তার মানে এই না যে আপনার খাবার উপভোগ্য বা সুস্বাদু হবে না। এখানে বিশেষ করে কিডনি রোগীদের জন্য ডিজাইন করা একটি খাদ্য তালিকা দেয়া হয়েছে। নিচে ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা তুলে ধরা হলো:
ডায়ালাইসিস রোগীর সকালের খাবারঃ ২টি ডিমের সাদা অংশ। ১ টি রুটি (চালের)। ১ টেবিল চামচ মাখন (লবণ বিহীন)। ধনে চাটনি ১ টেবিল চামচ। ১/৩ কাপ সাম্বার। ১/২ কাপ চা। আধা কাপ গমের ক্রিম। ১/২ টেবিল চামচ চিনি। ১/৪ কাপ ক্রিমার (নন ডেইরি)।
ডায়ালাইসিস রোগীর দুপুরের খাবারঃ ৩/৪ কাপ ডাল ফ্রাই। দুইটি নান রুটি। আধ কাপ কাপ ফুলকপি এবং আলু দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি। আধা কাপ মিশ্র ফল (আঙ্গুর, আনারস ,কমলা)। ৩/৪ কাপ সালাদ, যার মধ্যে পুদিনা, পালং শাক, শসা, সবুজ মরিচ, লেটুস পাতা, ধনেপাতা, লেবু এবং অলিভ অয়েল ইত্যাদি থাকবে। এক কাপ চা নন-ডেইরি ক্রিমারের সাথে। এক কাপ লেবুর সোডা।
ডায়ালাইসিস রোগীর রাতের খাবার: দুই টুকরা কাটলেট (সবজি)। ১/২ কাপ পোলাও ক্র্যানবেরি সহ। আধা কাপ ভেজি স্টির-ফ্রাই। জল খাবার: ভুট্টার তৈরি ইডলি তিনটি। ধনে চাটনি এক টেবিল চামচ। এক কাপ ঠান্ডা পানি।
আরো পড়ুনঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ডায়ালাইসিস রোগীর যে সকল খাবার বেশি খাওয়া উচিত
ফুলকপি: ফুলকপি ভিটামিন C, K, এবং B+ এর মত নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং এতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এক কাপ বা ১২৪ গ্রাম ফুলকপিতে ১৯ মিলিগ্রাম, ১৭৬ মিলিগ্রাম এবং ৪০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে।
ব্লুবেরি: ব্লুবেরি এমন একটি ফল যা একাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সার সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিবহন্থী রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এই ফলটি আপনার রেনাল ডায়েটে চমৎকার একটি সংযোজন কারণ এতে সোডিয়াম পটাশিয়াম এবং ফসফরাস অল্প মাত্রায় থাকে। এক কাপ তাজা ব্লুবেরিতে যথাক্রমে ১.৫ মিলিগ্রাম, ১১৪ মিলিগ্রাম এবং ১৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে।
সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছের উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের একটি ভালো উৎস। এছাড়া ৮৫ গ্রাম সামুদ্রিক খাদ্যে যথাক্রমে ৭৪ মিলিগ্রাম, ২৭৯ মিলিগ্রাম এবং ২১১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে।
ডিম: ডিমের সাদা অংশ উচ্চমানের প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং এটি একটি কিডনি বান্ধব খাবার তৈরি করতে সক্ষম। ৬৬ গ্রামের ডিমের সাদা অংশ যথাক্রমে ১১০ মিলিগ্রাম, ১০৮ মিলিগ্রাম এবং ১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে।
আনারস: আনারস একটি কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল এবং এটি কিডনি খাদ্যে মহা সংযোজন। এছাড়া এটি ফাইবার, ভিটামিন সি, এবং ম্যাঙ্গানিজের একটি ভালো উৎস। ১৬৫ গ্রাম আনারসে যথাক্রমে ২ মিলিগ্রাম, ১৮০ মিলিগ্রাম এবং ১৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস থাকে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ফেইলিওর এর লক্ষণ
ডায়ালাইসিস রোগীদের যে সকল খাবার বেশি খাওয়া যাবেনা
আপনার কিডনি রোগ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ডায়েট নিয়ে আলোচনা করবেন। বেশিরভাগ কিডনি ডায়েট রক্তে বজ্র ও টক্সিন নির্মূল করার উপর ফোকাস করে থাকে। অতএব ডাক্তার ডায়ালাইসিস করার সময় আপনাকে নিম্নলিখিত সকল খাবার ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা থেকে সীমিত করার সুপারিশ করতে পারেন:
ডায়ালাইসিস রোগীদের বেশি পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। যেমন ফলের মধ্যে কামরাঙ্গা, আনার, লেবু, বড়ই, কাঁঠাল ও আমে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম যুক্ত থাকে। তাই ডায়ালাইসিস রোগীদের এই ফলগুলো খেতে নিষেধ করা হয়।
ডায়ালাইসিস রোগীদের অতিরিক্ত ফসফেট যুক্ত খাবার খেতেও নিষেধ করা হয়। দুধ জাতীয় খাবারে উচ্চ পরিমাণে ফসফেট থাকে। তাই ডায়ালাইসিস রোগীদের পনির, মাখন, দুধ, দই খেতে নিষেধ করা হয়। পাশাপাশি গরু ও খাসির মাংস এবং বিচি জাতীয় খাবার কম খেতে বলা হয়ে থাকে। কারণ এ সকল খাবারেও রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফসফেট।
এই সময় সোডিয়ামযুক্ত খাবারও বেশি খাওয়া যাবেনা। লবণে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। তাই ডায়ালাইসিস রোগীদের লবণ কম খেতে বলা হয়। এছাড়াও ক্যান ফুড, সসেজ, নোনতা বিস্কুট, শুটকি, সস, নাগেটস ইত্যাদি খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
তাছাড়া খাবারের বেশি পরিমাণে মশলা খাওয়া যাবেনা। এই সময়ে মসলাযুক্ত খাবার যত কম খাওয়া যাবে ততই ভালো। পাশাপাশি ধূমপান পরিহার করতে হবে। জর্দা খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
হোমোডায়ালাইসিসের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি
আপনি যদি হোমোডায়ালাইসিস শুরু করে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই খাদ্য তালিকা এবং জীবন ধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা আপনি প্রতিদিন যা খান তা আপনার চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অত;এব আপনার জন্য বিশেষ খাদ্য পরিকল্পনার জন্য একজন কিডনি ডায়োটিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে হোমো ডায়ালাইসিসের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:
- খাদ্য তালিকায় উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করুন।
- কম মাত্রায় সোডিয়াম পটাশিয়াম এবং উচ্চমাত্রায় ফসফরাস আছে এমন খাবার খান।
- পানি চা কফি এবং অন্যান্য পানীয় সহ আপনি যে সকল পরিমাণ তরল পান করেন সে সম্পর্কে আপনার ডায়েটিশিয়ানকে জিজ্ঞাসা করুন।
ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা নিয়ে সর্বশেষ
শুধুমাত্র ডায়ালাইসিস রোগীর জন্যই নয়। যেকোনো রোগের চিকিৎসার সময় প্রতিদিন গ্রহণ করা খাদ্য একটি বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসকের কাছে সঠিক একটি ডায়েট চার্ট জেনে নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মধ্যে দিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আশা করি আমাদের এই ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা আর্টিকেল থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।