রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার - রাতে ঘুম না হওয়ার কারণ ও প্রতিকারঃ মানুষের শরীর যদি হয় একটা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, তবে এর রিচার্জ সিস্টেম হলো ঘুম। ঘুমের মাধ্যমেই মস্তিষ্ক ও শরীরের প্রতিটা অঙ্গ পায় পূর্ণাঙ্গ বিশ্রাম। তাই সুস্থ থাকতে হলে ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুমের কারণেই আপনি দিনভর কর্মক্ষম থাকতে পারেন।
কিন্তু অনেকেরই রয়েছে নিদ্রাজনিত সমস্যা অর্থাৎ রাতে ঘুম আসে না। এ এক ভয়াবহ যন্ত্রণা। অনেকে আছেন যারা রাতের পর রাত জেগে থাকেন, ঘুমানোর চেষ্টা করলেও তাদের ঘুম আসে না। অনেকে এটাকে খুব সাধারণ ব্যাপার মনে করে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু সারা দিনের কাজকর্ম শেষে শরীর ও মস্তিষ্কের বিশ্রাম দরকার হয়।
ঘুমের সমস্যা নিয়মিত চলতে থাকলে তা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে অসুখে পরিণত হয়। ডাক্তারি ভাষায় রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা। এবার আসুন রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে কী করণীয় তা জেনে নেয়া যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
রাতে ঘুম না আসার কারণ কি?
স্বাভাবিক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তবে বয়স অনুযায়ী শরীরে ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়। কিন্তু সমস্যা তখন প্রবল হয়ে যায়, যখন একজন ব্যক্তির ঘুমের ঘাটতি দেখা দেয়।
দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অবসাদ কাজ করে। দীর্ঘদিন ঘুম না হলে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে।
ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদের মতে, “ইদানিংকালে মানুষের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের মধ্যে রাতে জেগে থাকা ও দিনে ঘুমানোর প্রবণতা বেড়েছে, যা রাতে ঘুম না আসার মতো সমস্যা আরো বৃদ্ধি করছে। বেশ কিছু মানসিক সমস্যা যেমন, উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদিও বেড়েছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ব্যাথার কারণেও রাতে ঘুম না হতে পারে।”
ব্যক্তি ও পরিস্থিতি ভেদে রাতে ঘুম না আসার কারণ হতে পারে ভিন্ন। তবে তাদের মধ্যে প্রথমেই আসে খাদ্যাভ্যাস। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা, কফি বা নিকোটিনজাতীয় কিছু সেবন করা। সারাদিন কাজের শেষে যদি মনে করেন যে, এগুলো পান করে কিছুটা রিল্যাক্স হবেন, তা হলে আপনি ভুল ভাবছেন। বরং সেটিই হতে পারে আপনার রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার কারণ।
আমরা অনেকেই বিশ্রাম নিতে কিংবা ঘুমের আগে মোবাইল টিপাটিপি মনে করেন একটু ফেসবুক, ইউটিউ থেকে ঢু মেরে আসি। কিন্তু এতে ঘুম আসার পরিবর্তে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে চোখ থেকে ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্যোশাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ঘুমের মাত্রা কমিয়ে ঘুম না আসার মতো রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
রাতে ঘুম না আসার পেছনে আরেকটা বিষয়ের প্রভাব রয়েছে, সেটা হলো আরামদায়ক পরিবেশ না পাওয়া ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। অনেকসময় ঘুমানোর সময় বেশি গরম বা ঠাণ্ডা পরিবেশ ইত্যাদি কারণেও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
ঘুমের রুটিন বা ‘স্লিপ সাইকেল’ এর পরিবর্তন রাতে ঘুম না আসার কারণ হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস যেমন- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে না যাওয়া। ঘুমের প্যাটার্ন পরিবর্তন হলে, রাতের শিফটে কাজ করলে, আরামদায়ক বিছানা না হলে কিংবা নির্দিষ্ট বিছানা পরিবর্তন হলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশাও রাতে ঘুম না আসার কারণ সৃষ্টি করে। মানসিক কারণের মধ্যে রয়েছে- ভয়, হতাশা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ঝগড়াঝাটি, পেশাগত সমস্যা বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্নতা, আঘাত-পরবর্তী মানসিক চাপ ইত্যাদি যা ঘুম না আসার বড় একটি কারণ।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ সার্জনস ফর স্লিপ আপনিয়া- এর জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডাঃ মনিলাল আইচ লিটু বলছেন বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে করোনা মহামারির সময়ে ৪৫-৫০ শতাংশ মানুষ নিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগেছে যা থেকে বিষন্নতাসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
শারীরিক কিছু সমস্যায়ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর্থ্রাইটিস, বুক জ্বালা, মাথাব্যথা, দাঁতের সমস্যা, লিভার, ফুসফুস বা কিডনির সমস্যা, প্রোস্টেটের সমস্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনিদ্রা হতে পারে। এমন আরো কিছু গবেষণা থেকে জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রায় ৭৮ শতাংশেরই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভধারণের তিন মাসের মাথায় এই ধরনের সমস্যা হয়। কারণ এই সময় সন্তান বেড়ে ওঠে এবং শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
এতোক্ষণ আমরা রাতে ঘুম না আসার কারণ সম্পর্কে জানলাম এবার চলুন রাতে ঘুম না আসার প্রতিকার গুলো কি কি তা জেনে নিইঃ
আরো পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ সহ - তওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া সাইয়েদুল ইস্তেগফার
রাতে ঘুম না আসার প্রতিকার? রাতে ঘুম না হলে করনীয় কি জেনে নিন
এখন প্রশ্ন হলো, রাতে ঘুম না হলে করণীয় কী? বা রাতে ঘুম না আসার প্রতিকার কি? প্রথমে আপনাকে রাতে ঘুম না আসার কারণ খুুঁজে বের করতে হবে। শারীরিক কোনও অসুস্থতা অথবা মানসিক চাপ থেকে ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি হলে উক্ত কারণটি দূর করতে হবে।
রাতে ঘুম না আসার প্রতিকার হিসেবে আপনাকে সন্ধ্যার পর চা, কফি খাওয়া যাবেনা। রাতে ঘুমের সময় অর্থাৎ রাত ১০-১১টার পুর্বে বা পরে বিছানায় যাওয়া যাবেনা। কেবল ঘুমের নির্ধারিত সময়ে বিছানায় যেতে হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো এবং নিদিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করুন।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাইলে তুলনামূলক ঠাণ্ডা স্থান নির্বাচন করুন। ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস প্রবেশ না করলে সেখানে ঘুমের সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। স্নিগ্ধ এবং নিরিবিলি পরিবেশ, শব্দহীন, আরামদায়ক এবং পরিপাটি বিছানা-বালিশ সাথে বাতি বন্ধ করে দিয়ে কিংবা হালকা আলো জ্বলে অর্থাৎ ড্রিম লাইট লাগিয়ে শোয়ার পরিবেশ তৈরি করুন।
ঘুমানোর সময় ঘর গরম থাকলে এবং বিশেষ করে বালিশ ও বিছানা গরম থাকলে সেটি ঘুমের জন্য উপযুক্ত স্থান নয়। তাই ঘুমানোর জন্য ঠাণ্ডা ঘর এবং শোবার জায়গা ঠাণ্ডা নির্বাচন করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ঘুম আসলে সাথে সাথে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। ঘুমাতে যাওয়ার পুর্বে অনেক সময় ধরে কোনও কাজ করা উচিত না।
রাতে ভালোভাবে ঘুম আসার জন্য আপনাকে সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস রাত্রিবেলায় চালানো বন্ধ করতে হবে। যেমনঃ মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এই সকল ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা দেখা যায় অনেকেই আছেন যারা এই সকল ডিভাইস চালাতে গিয়ে রাতের ঘুমানোর মোক্ষম সময় নষ্ট করেন। বর্তমান সময়ের যুবক যুবতীদের মধ্যে এই সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। যা রাতে ঘুম না আসার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
রাতে ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার খাওয়া শেষ করতে হবে। শোয়ার আগে আগে ১ গ্লাস গরম দুধ অথবা ১ গ্লাস পানি খেয়ে নিন। ক্ষুধা নিয়ে বিছানায় ঘুমাতে যাবেন না।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি গোসল করে নিতে পারেন। এতে করে আপনাকে ফ্রেশ লাগবে এবং ভালো ঘুম হবে। অর্থাৎ রাতে ঘুমের সমস্যা হলে ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন।
অনেকে মনে করেন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে সেটি শরীরকে ঠাণ্ডা করে এবং ঘুম আসতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে তা শরীরকে ঠাণ্ডা করে কিন্তু সেটি অল্প সময়ের জন্য। আর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে সেটি শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঠাণ্ডা করতে পারে।
ভালো ঘুমের জন্য দিনে অন্তত ১৫ মিনিট হলেও হালকা ব্যায়াম করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের শুরুতে হালকা ব্যায়াম করলে সেটি শরীরকে চাঙ্গা ও সক্রিয় করে তোলে। এটি রাতে ঠিকমতো ঘুম আনতেও সাহায্য করে। এছাড়া দুপুরে ঘুমানো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ এটি রাতের ঘুমকে নষ্ট করে দিতে পারে। ধ্যান মানুষের মনকে শান্ত রাখে ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে ধ্যান করা হলে ঘুম ভালো হয়।
প্রতিদিন অনন্ত ৩০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করবে। আপনার মস্তিষ্ক দিন আর রাতের পার্থক্য ঠিকমতো বুঝলে রাতে নিজে থেকেই ঘুম আসে। রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য দুপুরে বেশি ঘুমানো উচিত না। সম্ভব হলে একেবারেই দুপুরের ঘুম বাদ দেওয়া উচিত। রাতে ভালো ঘুমের জন্য মা- দক এবং ধূমপান বর্জন করুন।
আরো পড়ুনঃ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি - পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
ঘুম আসার খাবার
আমরা অনেকেই জানিনা, ঘুমের সমস্যার পেছনে খাদ্যাভাসের ভূমিকা অনেক। যারা ইনসমনিয়ায় ভুগছেন তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবারঃ ম্যাগনেসিয়াম হলো এমন একটি খনিজ পদার্থ যা পেশীকে শিথিল করতে এবং স্ট্রেস কম করতে সাহায্য করে। ডার্ক চকোলেট, বাদাম, অ্যাভোকাডো এগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম আছে। রাতে এগুলো খেলে ভালো উপকার পাবেন।
মেলাটোনিনযুক্ত খাবার: মেলাটোনিন শুধু ঘুম আসতে নয়, ঘুম দীর্ঘস্থায়ী করতেও সাহায্য করে। আমরা সালাদ হিসেবে যা খাই যেমন টমেটো, শসা, ব্রোকলি, সরিষা, আখরোট, বেদানা ইত্যাদিতে মেলাটোনিন থাকে। প্রতিদিনের খাবারে সবজিগুলো যোগ করলে ঘুমের সমস্যা কেটে যাবে।
কলা: ঘুম না আসার সমস্যা কমাতে কলা খুবই কার্যকর। কলাতে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম যা মাংসপেশি শিথিল করে দ্রুত ঘুম আনয়নে সাহায্য করে।
গরম দুধ: অনিদ্রা দূর করতে গরম দুধের কোনো বিকল্প নেই। গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা সিরোটোনিন হিসেবে কাজ করে আর এই সিরোটোনিন ঘুম আনতে খুবই সহায়ক।
বিঃদ্রঃ অনেকেই আছেন যারা ঘুম না আসলে নিজে নিজে থেকেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন। এই কাজটি করা একদমই উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনও ধরনের ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ হঠাৎ শরীর দুর্বল হওয়ার কারণ কি
রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয়
বিশেষজ্ঞরা ঘুমের বিষয়ে প্রতেক মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা, ঘুমের একটু ব্যাঘাত ঘটলেই শরীরে বাসা বাঁধে কিছু রোগ। রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয় চলুন তা জেনে নেওয়া যাকঃ
১। ডায়াবেটিসঃ গবেষণায় জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাতে সঠিক ভাবে ঘুমানো না হলে বা রাতে কম ঘুমানোর কারণে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাঘাত ঘটে। যার কারণে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২। ওজন বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে রাতে কম ঘুমানোর ফলে শরীরে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যেতে থাকে। যার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়।
৩। খিটখিটে ভাব দেখা দেয়ঃ ঘুম সঠিক ভাবে ঘুম না হলে অনেক সময়ই দেখা যায়, ঘুম না পারা ব্যক্তির মুড ঠিকঠাক থাকে না। এই কারণে তারা খিটখিটে আচরণ করে থাকেন। এটাই হচ্ছে একটা বড় সমস্যার কারণ।
৪। মাংসপেশিতে খিঁচ ধরেঃ সারাদিনের সকল কর্মব্যস্ততার পর মাংসপেশি অনেক শক্ত হয়ে যায়। যা ঘুমের মাধ্যমে শরীর নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয়। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে ঘুম না হলে এই কাজটা সঠিক মতো হয়না। যার কারণে সমস্যা দেখা যায় কয়েকগুণ। তাই উচিত এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা।
৫। কোলেস্টেরলের সমস্যাঃ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিমাণে কম ঘুম শরীরে এইচডিএল কোলেস্টেরল কিংবা ‘গুড কোলেস্টেরল’ এর পরিমাণ বিপজ্জনক ভাবে হ্রাস যায়। যার কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৬। উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়ঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা। চিকিৎসকরা বলেন, নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হলে আমাদের শরীরের ‘লিভিং অর্গানিজম’ গুলো সঠিক ভাবে কাজ করতে পারেনা। যার ফলে শরীরে নষ্ট হতে পারে হরমোনের ভারসাম্য। বৃদ্ধি হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপার টেনশনের মতো এই সকল সমস্যা।
৭। বিভ্রান্তিঃ আমাদের মস্তিষ্কে সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে তথ্য জমা হয়। ঘুমের মাঝে মস্তিষ্কে উক্ত তথ্যের মাঝে থেকে কিছু তথ্যকে যত্ন করে রাখে। আর কিছু কিছু তথ্য বাদ দিয়ে থাকে। কিন্তু যদি ঘুম সঠিক ভাবে না হয় তবে এই কাজটি সঠিক ভাবে হয়না। তখন পরেরদিন বিভ্রান্তি দেখা দিয়ে থাকে। তাই উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো।
আরো পড়ুনঃ ব্রেস্ট ক্যান্সার স্টেজ ২ বাচার হার কত দিন
রাতে ঘুমানোর দোয়া
হযরত হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় নিজ বিছানায় ঘুমানোর সময় নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন। অতঃপর বলতেনঃ اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।
রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন
অনেকেই জানতে চান যে রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কোনটি। ঘুমানো, খাবার খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম নেয়ার কি সঠিক সময় আদৌ আছে? কেননা সম্প্রতি সময়ে প্রায় সকলেই অনেক কর্মব্যস্ত মানুষ। সকলের শুধু কাজ আর কাজ। রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় মোটামুটি ১০ থেকে ১১টা এবং ঘুম থেকে উঠার সঠিক সময় মোটামুটি ভোর ৪ টা থেকে ৫টা।
রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে শেষ কথা
আমরা রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলাম। মানুষের শরীরের জন্য খাদ্য ও পানি যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ-ই এই অনিদ্রাহীনতায় ভুগছে যার মূ্লে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
বর্তমান সময়ে রাতে ঘুম না আসার মতো সমস্যায় ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে এই সমস্যার প্রভাবটা অনেক বেশি দেখা যায়। দিনে ঘুমানো, মানসিক চিন্তা এবং শরীরের কোন রোগ রাতে ঘুম না আসার কারণ প্রধান কারণ।
যদিও বেশিরভাগ মানুষের অনেকেই জানে না কি করলে ঘুমের সমস্যা দূর করা যায়। ফলে অনিদ্রা সমস্যা নিয়েই বছরের পর বছর জীবন যাপন করতে হয়। রাতে ঘুম না আসার সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য একটি সুস্থ জীবনযাত্রা বেছে নিতে হবে, সবকিছু নিয়মানুবর্তী হতে হবে, এরপর ভালো ঘুমের অভ্যাস তৈরি ও স্বাস্থ্যবিধির মধ্য দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই অনিদ্রার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।