মা হওয়া প্রতিটি নারীর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। গর্ভাবস্থার পরে, প্রতিটি মায়ের তার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য একটিই আকাঙ্ক্ষা থাকে। তা হচ্ছে সন্তান এবং তিনি যেন সুস্থ থাকেন। তাই একজন মা সবসময় খেয়াল রাখেন যে তার খাদ্যতালিকায় এমন খাবার থাকা উচিত যা শিশুকে সুস্থ করে তোলে এবং শিশুর ক্ষতি করে এমন জিনিস যেন না থাকে।
আসলে, স্বাভাবিক ভাবে অনেকেই গর্ভাবস্থার সময় কি কি খাওয়া যাবে এবং গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না সে সম্পর্কে কোনো না কোনো পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলস্বরূপ, গর্ভাবস্থায় কি খাবেন এবং গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া যাবে না তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েন।
তাই আপনার এই সমস্যার সমাধান করতে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় কিছু জিনিস খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই গর্ভবতী মহিলার ডায়েট এমন হওয়া উচিত যাতে এই খাবারগুলি থাকা উচিত নয়।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় এমন সব খাবার থাকা উচিত নয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর, যার ফলে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। গর্ভাবস্থায় সঠিক ভাবে খাওয়া সন্তান জন্মদানের দুর্বলতা থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করে, আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না-
১। গর্ভাবস্থায় কাচা বা আধাপাকা পেঁপে খাওয়া যাবে না
বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন, কারণ গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়া নিষেধ। সবাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে না খাওয়ার পরামর্শ দেন। গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা আধাপাকা পেঁপে খাওয়া উচিত নয়, কারণ কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক উপাদান থাকে যা জরায়ুর সংকোচন ঘটায়। এ কারণে অকাল প্রসব ও গর্ভ- পাত হওয়ার মতো আশঙ্কা থাকে। কিন্ত, ভালোভাবে পাকা পেঁপে খেলে তা গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না।
আরো পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা
২। গর্ভাবস্থায় কাঁচা দুধ খাওয়া যাবে না
গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকায় দুধ থাকা জরুরী তবে গর্ভবতী মহিলাকে সিদ্ধ না করে কাঁচা দুধ দেবেন না, গর্ভাবস্থায় কাচা দুধ খেলে ডায়রিয়া ও যক্ষ্মা (টিউবার্কিউলোসিস্ বা টিবি) ইত্যাদি রোগ হতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাকে খাওয়ানোর আগে দুধ ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
৩। গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে আনারস একেবারেই খাবেন না, কারণ এটি শরীরে ব্রোমেলেইন নামক উপাদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা গর্ভ- পাত ঘটাতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থার তিন মাস পরেও খুব কম পরিমাণে আনারস খান, কারণ অকাল প্রসবের ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায়, আপনি যদি চান, তবে সতর্কতা হিসাবে আনারস খাবেন না।
৪। গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস খাওয়া যাবে না
কাঁচা বা কম রান্না করা মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা প্রক্রিয়াজাত মাংস কখনই খাওয়া উচিত নয়। এতে মায়ের টক্সোপ্লাজমোসিস সংক্রমণ হতে পারে। যা গর্ভ- পাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকায় কাঁচা মাংস থাকা উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে - গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
৫। গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না: কাঁচা ডিম
গর্ভবতী মহিলা যদি ডিম খেতে পছন্দ করেন তবে তার সবসময় রান্না করা ডিম খাওয়া উচিত, কারণ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যার ফলে ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে।
৬। গর্ভাবস্থায় ফল ও সবজি না ধুয়ে খাবেন না
গর্ভাবস্থায় ফল বা সবজি না ধুয়ে খাওয়ার ভুল করবেন না। না ধোয়া ফল ও সবজিতে টাস্ক প্লাজমা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
৭। গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না
এটি একটি সুপরিচিত সত্য যে গর্ভাবস্থায় খুব বেশি চা বা কফি পান না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটির কারণে গর্ভ- পাত হতে পারে।
৮। গর্ভাবস্থায় ধূমপান করা যাবে না
গর্ভাবস্থায় ধূমপান করবেন না, কারণ এতে উপস্থিত নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইড নামক উপাদান থাকে যা শিশুর শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে শিশুর ঠিকমতো বিকাশ হয় না এবং মস্তিষ্ক সংক্রান্ত রোগেও আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় ধূমপান অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়।
কখনও কখনও একজন গর্ভবতী মহিলার মনে হয় আইসক্রিম, চকলেট, তেঁতুল ইত্যাদির মতো কিছু জিনিস খাওয়ার, কিন্তু খুব বেশি মিষ্টি খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় সুগার হতে পারে (গর্ভকালীন ডায়াবেটিস)। সেজন্য গর্ভবতী মহিলার খাবার খুব বেশি মিষ্টি হওয়া উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম মেয়েদের
৯। গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়া কি উচিত?
গর্ভাবস্থায় খুব অল্প পরিমাণে বেগুন খাওয়া উচিত, কারণ বেগুন বেশি খেলে গর্ভ- পাত হতে পারে। আপনি চাইলে সপ্তাহে একবার কিছু বেগুনের তরকারি খেতে পারেন, তবে সতর্কতা হিসেবে গর্ভাবস্থায় বেগুন খাবেন না।
১০। গর্ভাবস্থায় তিল খাওয়া কি উচিত?
সাধারণত সমস্ত গর্ভবতী মহিলাদের তিলের বীজ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এর গরম প্রভাব রয়েছে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে তিল খাবেন না, এতে গর্ভ- পাত হতে পারে। কিন্তু তিন মাস পরে, অল্প পরিমাণে তিলের বীজ খাওয়া নিরাপদ, যা আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি, সি এবং ই সমৃদ্ধ।
১১। গর্ভাবস্থায় কি কফি পান করা কি উচিত?
কফিতে ক্যাফেইন নামক একটি উপাদান উথাকে, যা আপনার অনাগত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অতএব, গর্ভাবস্থায় সীমিত পরিমাণে কফি পান করুন। আপনি প্রতিদিন এক কাপ কফি পান করতে পারেন। অতিরিক্ত কফি পান করলে গর্ভ- পাত বা দুর্বল সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
১২। গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়া কি নিরাপদ?
যদিও গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাওয়া নিরাপদ, তবুও সীমিত পরিমাণে এটি খাওয়া উচিত। আপনার যদি কোন ধরনের সমস্যা বা র- ক্ত সংক্রান্ত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কাঁঠাল খাবেন না। এছাড়া বেশি কাঁঠাল খেলেও পেটের সমস্যা হয়, কারণ কাঁঠালে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি। কাঁঠাল র- ক্তে সুগার বাড়াতে পারে, তাই যদি আপনার সুগারের সমস্যা থাকে তবে গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খাবেন না।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে, গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না এবং গর্ভাবস্থায় কোন নতুন খাবার গ্রহণের আগে অবশ্যই আপনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। একজন গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তার উন্নত স্বাস্থ্য এবং শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আশা করি ব্লগটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না। সংক্ষেপে, আমরা বলতে পারি যে গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাবার খাওয়া সঠিক। তাই আপনার খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন। গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকা এবং ভাল খাওয়া আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।