ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

হাসিবুর
লিখেছেন -

ইসলামে দেনমোহর বলতে বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক কিছু অর্থ বা সম্পদ যা স্ত্রীকে মর্যাদা ও তার প্রাপ্য সম্মানস্বরূপ প্রদান করা হয়, তাই দেনমোহর। হাদিসে বলা হয়েছে, স্ত্রীকে তার নির্ধারিত মোহর অর্পণ করবে (সূরা-নিসা,আয়াত-২৪)। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সঠিক সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবে আরোপিত এই দেনমোহর, যা বিয়ের সময় দেওয়া অথবা বিয়ের পরবর্তী সময় দেওয়া বাধ্যতামূলক ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম অনুযায়ী।

স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব,যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক। ইসলামের ভিত্তিতে, ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম, দেনমোহরের পরিমাণ যুক্তিসঙ্গত ও স্বামীর সামর্থের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হওয়া উচিত। আসুন জেনে নেই, ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম হচ্ছে - দুইভাবে দেনমোহর পরিশোধ করা যায় ১। বিয়ের সময় নগদ দেনমোহর পরিশোধ করা ২। বিয়ের পরবর্তী সময় দেনমোহর পরিশোধ করা। আগে বা পরে অথবা অল্প অল্প করে যে কোনভাবেই ইসলামে দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক, দেনমোহর স্ত্রীর প্রাপ্য হোক। যা আদায় করে দেওয়া যেকোন স্বামীরই কর্তব্য ও দায়িত্ব। বিয়ে সম্পন্ন করার সময় কাজীর সামনে নগদ দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে অথবা কিছু আদায় করে বাকীটা স্ত্রীপক্ষের সম্মতিতে পরবর্তী সময়ও তা আদায় করা যাবে।

স্ত্রীর সম্পূর্ণ মোহর আদায় না করা পর্যন্ত দৈহিক মিলনে বাধা দিতে পারবেন স্ত্রী এবং আইনের দ্বারস্থ হতে পারবেন। স্ত্রী দেনমোহর চাওয়া মাত্র স্বামী তা দিতে বাধ্য। আবার স্ত্রী যদি স্ব-ইচ্ছায় খুশি হয়ে দেনমোহরের পরিমাণ কমিয়ে দেন, তবে স্বামী তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবেন।

খুশি মনে পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে এবং সহবাসের আগে স্বামীর মৃত্যু হলে অথবা কোন কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ দেনমোহরের অর্ধেক দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। ইসলামের দেনমোহর পরিশোধের এই নিয়ম অনুযায়ী বিয়েতে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি কি

সমাজে দেনমোহন নিয়ে কিছু প্রতারণা

অনেক জায়গায় বিয়ের সময় দেখা যায়, কাবিননামার ১৪ নাম্বার কলামে লিখে দেওয়া হয় "মোহরানা পরিশোধ" বলে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এভাবে লিখে দিলে আইনগতভাবে স্ত্রী তার দেনমোহর পেয়ে গেছেন এটা বুঝায়, তিনি আর দেনমোহর দাবি করতে পারবেন না। তবে এটা প্রতারণা বৈকি অন্য কিছু নয়।

এরকম কোন নিয়মই ইসলামে জায়েজ নয়। ইসলাম সবসময় বলে স্ত্রীর পরিপূর্ণ হক থাকে পরিশোধ করে দেওয়া উচিত। স্বামী বেঁচে থাকতে যদি দেনমোহর পরিশোধ না করেন তাহলে তার মৃত্যুর পরে তার সম্পদের উপর স্ত্রী তার দেনমোহরের নির্ধারিত ভাগ পাবে।

আবার আমাদের সমাজে অনেকে বলেন, স্বামী তার স্ত্রীর ভরনপোষণ সবই করছে, আলাদা করে আর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটা নিতান্তই বোকামি এবং অন্যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে স্বামী তার স্ত্রীর পূর্ণ হোক দেনমোহর পরিশোধ না করবে সে ব্যভিচারী। স্বামীর অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা উচিত।

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের গুরুত্ব

ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক, স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর উপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে যে স্বাদ গ্রহণ করো তার বিনিময়ে তোমরা অপরিহার্য ফরজ হিসেবে তাদের দেনমোহর পরিশোধ করো" (সূরা-নিসা,আয়াত-২৪)।

আবার অনেক বিয়েতে দেখা যায়, শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে একটা মোটা অংকের মোহরানা ধার্য করে বিয়ের সম্পন্ন করে। কিন্তু পরবর্তীতে গোপনে স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে নেয়।

এ সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিল পরিমাণ মোহরানা ধার্য করে একটি নারীকে বিবাহ করিল, অথচ পরবর্তীতে তা পরিশোধ করার ইচ্ছে তার নেই, এই ব্যক্তি আল্লাহর নামে তার স্ত্রীকে প্রতারিত করল ও অন্যায়ভাবে তার সতীত্ব নিজের জন্য হালাল মনে করে ভোগ করল এমন ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জিনাকারী, ব্যভিচারী হিসেবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে - মুসনাদে আহমদ।

তাই বর ও কনেপক্ষের সম্মতিতে স্বামীর সামর্থ্যের উপর বিবেচনা করে মোহর ধার্য করা উচিত, যা স্বামী বিয়ের সময় নগদ হিসেবে পরিশোধ করে দিতে পারবে।

আরো পড়ুনঃ divorce papers তালাক নামা ফরম ডাউনলোড

মোহরে ফাতেমি প্রসঙ্গ

মোহরে ফাতেমি বলতে, ওই পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা যা হযরত রাসূল (সা:) উনার মেয়ে হযরত ফাতেমা (রা:) এর জন্য নির্ধারণ করেছিলেন, এবং তার পরিমাণ ছিলো ৫০০ দিরহাম। তবে মোহরে ফাতেমিকে অনুসরণ করে, মোহর নির্ধারণ করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। মোহরে ফাতেমির চেয়ে বেশি দেনমোহরও নির্ধারণ করতে পারবেন যদি স্বামীর সে অনুযায়ী সামর্থ্য থাকে। আর যদি স্বামীর তেমন কোন সামর্থ্য না থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী দেনমোহর কমিয়ে বা কম মূল্যের কোন সম্পদ দেনমোহর হিসেবে নির্ধারিত করা উচিত।

দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি না?

একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া এবং তাকে স্পর্শ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে। সহবাসের আগেই দেনমোহর পরিশোধ করা উত্তম। তবে স্ত্রী যদি খুশি মনে অনুমতি প্রদান করেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। দেনমোহর পরিশোধ না করার কারণে স্ত্রী চাইলে সহবাসে বাধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে, পরবর্তী সময় আর বাধা প্রদান করা যাবে না।

স্বামী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দেনমোহর পরিশোধ না করেন, তবে উনার জন্য তার ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে। স্ত্রী যদি তার দেনমোহর মাফ না করে,তবে স্বামী কিয়ামতের ময়দানে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই সুযোগ অনুযায়ী দেনমোহর পরিশোধ করে দেওয়াটাই জরুরী। কোরআনে বলা হয়েছে, "যদি তাদেরকে মোহরানা প্রদান করে থাকো, তবে তাদেরকে বিয়ে করেছ এতে কোনো অপরাধ নেই" (সূরা নাস,আয়াত-৬০)।

আরো পড়ুনঃ টাইমেক্স ট্যাবলেট এর কাজ কি

স্ত্রী আগে তালাক প্রদান করলে,স্বামীকে তার স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে কিনা?

অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে, এতে করে স্ত্রী আগে তালাক প্রদান করুক বা না করুক স্বামীকে তার প্রাপ্য দেনমোহর পরিশোধ করে দিতে হবে। ১৯৩৯ সালের 'মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন' এ প্রণীত রয়েছে যে, কোন নারী যদি কোন কারনে তার স্বামীকে তালাক প্রদান করে থাকেন তবে উক্ত স্বামী দেনমোহরের নির্ধারিত টাকা স্ত্রীকে পরিশোধ করে দিতে বাধ্য।

স্বামী কখনোই বলতে পারবেন না যে, তালাকের নোটিশ স্ত্রীর পক্ষ থেকে এসেছে, সুতরাং আমার সেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। আদালত তাকে কোনো অজুহাত দেখানোর সুযোগ দিবে না। সুতরাং মনে রাখবেন,, স্বামী বা কনে যেপক্ষ থেকেই তালাকের নোটিশ আসুক না কেন, স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ norix 1 pill details - norix 1 এর কাজ কি

ইসলামে দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম নিয়ে সর্বশেষ

বিবাহ শুধু একটি পারিবারিক বন্ধনই নয়, বিবাহ দুজন অপরিচিত মানুষকে এক করে গড়ে তোলে সারাজীবন একসাথে কাটানোর জন্য। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দেনমোহর, যা পরিশোধ করাটা খুবই জরুরী। সর্বোত্তম দেনমোহরের পরিমাণ হচ্ছে, যা স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা সহজলভ্য। তাই স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোন পরিমাণের মোহর ধার্য করতে পারেন, তবে অবশ্যই লোক দেখানো অধিক পরিমাণে দেনমোহর ধার্য করা উচিত নয় তা ইসলাম সমর্থন করে না।

জাঁকজমকহীন, অল্প খরচে যে বিয়ে সম্পন্ন করা হয় তা খুবই বরকতময়। ইসলামী পরিভাষায় বলা হয়, যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে অবশ্যই মর্যাদার সঙ্গে আনতে হবে এবং তার প্রাপ্য অনুযায়ী তাকে এমন কিছু উপহার দেবে যা তাকে খুবই সম্মানিত করবে।

আমাদের সমাজের জাঁকজমকপূর্ণ জগৎ থেকে বেরিয়ে ইসলামের শরীয়ত মোতাবেক অল্প খরচে বরকতময় বিবাহ সম্পন্ন করুন। সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহন নির্ধারণ করে বিয়ের সময়ই তা পরিশোধ করে দিন। সংসার হবে উঠবে সুখের শান্তিময়, বরকতম একটি সংসার।

Tags:

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!