কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা: কাজু বাদাম সারা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেই বেশি পরিচিত। প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ ও পুষ্টিগুন সম্পূর্ণ এ বাদামের খ্যাতি সারাবিশ্বে। ডাক্তাররা কিছু কিছু যায়গায় ঔষুধের পরিবর্তে কাজু বাদাম খেতে বলেন নিয়মিত।
(toc) #title=(সূচিপত্র)
যার ফলে এ বাদামের ঔষুধি গুন সম্পর্কে একটি ধারনা খুব সহজেই পাওয়া যায়। নিয়মিত ৩/৪ টা কাজু বাদাম সকল রোগ হতে মুক্তি দিতে পারে। এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে শরীরের পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। কাজু বাদাম স্ন্যাকস থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবারের পরিবেশনের জন্য উপযুক্ত একটি খাবার।
যেমনঃ পায়েসের সাথে, আইসক্রিমের সাথে। কাজু বাদাম বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে চাষ করা হয় যার পুষ্টিগুন অনেক এবং snacks হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হলেও এটি খুব সহজেই আমাদের পাশের বাজারে পাওয়া যায়। চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানিঃ
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজুবাদাম ছোট থেকে শুরু করে বয়স পর্যন্ত সকলেই খেয়ে থাকেন। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিন খাবার যেমনঃ আইসক্রিম, চকলেট, কেক ও বিস্কুট ইত্যাদি জিনিসগুলোতেও এখন বর্তমানে কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া আলাদাভাবে কাজুবাদামের তৈরি বিস্কুট ও বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু বয়স ভেদে কাজু বাদাম খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে।
- শিশু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম: ১-৩ বছরের বাচ্চাদের গলার নালি চিকন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের খুব সাবধানতার সাথে খাওয়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য খাবারের সাথে এই কাজুবাদাম মিশিয়ে খাওয়ালে বেশি ভাল হয়। সপ্তাহে ১০/১২ টা।
- বড়দের ক্ষেত্রে কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম: প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো মানুষ প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি কাজু বাদাম খেতে পারবে। এতে কোনো রকম সমস্যা হবেনা।
- গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম: গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন ১০ গ্রাম থেকে পঞ্চাশ গ্রাম পর্যন্ত কাজুবাদাম খেতে পারবে যা হিসাবে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি কাজুবাদাম। তবে যদি কাজুবাদাম বেশি খেলে আপনার কোন সমস্যা হয় তাহলে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন খেতে পারেন। খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম: ডায়াবেটিস রোগীরা প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি কাজুবাদাম খেতে পারবে। কাজুবাদাম খেলে তাদের খিদেও কম লাগবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাজুবাদাম খাওয়া বেশ ভালো।
আরো পড়ুনঃ কাতিলা গামের উপকারিতা - কাতিলা গাম এর উপকারিতা
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- কাজু বাদামকে ডাক্তাররা ব্রেইন বুস্টার বলে থাকে। কারন কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে। যা মস্তিষ্কের টিস্যু শক্তি বাড়িয়ে তুলে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মেধা শক্তি ও বয়সষ্কদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি কাজু বাদামের ভূমিকা অনেক।
- বর্তমানে হার্ট অ্যাটাক প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। হার্ট সুস্থ রাখতে কাজু বাদামের বিকল্প নেই।
- কাজুবাদামে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার সেল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যার ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজু বাদামের উপকারিতা অপরিসীম।
- টিউমার প্রতিরোধে কাজু বাদাম বেশ কার্যকরী কারণ এর মধ্যে উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা টিউমার ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
- কাজুবাদামের প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এর উপস্থিতি রয়েছে। যার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ব্লাড প্রেসারের রোগীরা নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে তাদের ব্লাড প্রেসার থেকে মুক্তি মিলতে পারে। তাই এ রোগীদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত কাজু বাদাম রাখা প্রয়োজন।
- কাজুবাদামে এক প্রকার ওলিসিক ফ্যাটি এসিড থাকে। যা আমাদের দেহের খারাপ কোলেস্টরেল দূর করতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
- কাজুবাদামের প্রচুর পরিমাণে কপারের উপস্থিতি রয়েছে। যার ফলে এটি আমাদের শরীরের কিছু এনজাইমের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ভাবে আমাদের চুলকে শক্ত করে, চুলের গোড়া মজবুত করে থাকে এবং চুলকে গারো কালো করতে সাহায্য করে। আমাদের যাদের চুল ওঠার সমস্যা রয়েছে তারা কাজুবাদাম খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
- আমাদের দেহে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা কাজুবাদাম খেলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
- কাজুবাদামের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকলেও এতে উপস্থিত ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তা রয়েছে। রয়েছে তারা কাজুবাদাম নিয়মিত খেলে ওজন হ্রাস পাবে।
- কাজুবাদাম ফাইবারের খুব ভালো একটি উৎস। আমরা জানি যে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার প্রধান কারণ হচ্ছে আশযুক্ত খাবার গ্রহণ না করা। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা খালি পেটে কাজুবাদাম খেলে এই সমস্যা সমাধান হবে।
- কাজুবাদামের উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক আমাদের শরীরের হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর উপকারিতা
সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
- আমাদের মানব দেহের শক্তির মূল উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট। কাজুবাদামের প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। সকাল বেলা খালি পেটে আমরা যদি কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে থাকে তাহলে আমাদের সারা দিনের শক্তির যোগান দিয়ে দিবে।
- সকালবেলা খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে পরিপাকতন্ত্র গ্লুকোজকে কাজ করতে বাধ্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কাজু বাদাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি রয়েছে। আমাদের অনেকেরই সকালবেলা পায়খানা হয় না বা নিয়মিত আমরা পায়খানা করতে পারি না যার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের খাবারে আঁশ এর পরিমাণ কম থাকা। যার ফলে কাজুবাদামের আসল উপস্থিতি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- সকালে খালি পেটে কাজুবাদাম খেলে তা আমাদের রেচন প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ হিজামার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাজু বাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
- কাজুবাদামের বাইরের আবরণে রয়েছে সাইট্রিক এসিড এবং এই এসিড মানুষের শরীরে ক্ষতি করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার তৈরি করে। যদি আপনি কাজুবাদাম ভিজিয়ে খান তবে বাইরের এই আবরণটির সাইট্রিক এসিডের ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এটি শরীরের আর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
- কাজু বাদামের মধ্যে এক ধরনের এনজাইম থাকে যা মাঝে মাঝে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাদাম খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখলে এই এনজাইমটি দূর হয়ে যায়। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা বাদাম ভিজিয়ে খাবেন।
- কাজুবাদামের ট্যানিন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। এটি আমাদের হজমে সমস্যা তৈরি করে। তাই যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা কাজুবাদাম ভিজিয়ে খাবেন।
কিভাবে কাজুবাদাম ভিজিয়ে রাখবেন
একটি পাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে নিন। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি নিয়ে নিবেন। এবার পানিতে ১/২ চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। ছয় থেকে সাত ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। পানি ফেলে দিয়ে এবার আপনি কাজুবাদামটি খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাজু বাদামের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া - কাজু বাদামের ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তেমনি কাজুবাদামের পুষ্টিগুণ অনেক থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত না। এবার আসুন জেনে নেই কাজু বাদামের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেঃ
- কাজু বাদামে এক ধরনের ফাইবার থাকে। বেশি পরিমাণে কাজুবাদাম খেলে এটি পেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তাই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।
- অনেকের কাজু বাদামে এলার্জি হতে পারে।
কাজুবাদাম এর দাম
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে আপনি ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কাজুবাদামের দাম। বর্তমান বাজারে কাজুবাদাম ১০০০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাজুবাদাম অত্যাধিক পুষ্টি সম্পন্ন তাই এর বাজারে চাহিদা অনেক। সর্বনিম্ন ৭৫০ টাকা থেকে শুরু করে অনেক দামি কাজুবাদাম কিনতে পাওয়া যায়। কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ চিনি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লেখকের শেষকথা
কাজুবাদাম শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেকোনো বয়সের মানুষ কাজুবাদাম খেতে পারবে। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।