কাতিলা গাম এর উপকারিতা অনেকের কাছেই অজানা। এমনকি কেউ কেউ রয়েছেন যারা কিনা এই উপকারি খাবার জিনিসটির নামটা পর্যন্তও জানেন না। কিন্তু এর রয়েছে হাজারো উপকারিতা। আর তাই কাতিলা গাম এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আমরা আমাদের আজকের এই লেখাটিতে।
আশা করছি কাতিলা গাম এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আপনিও উপকৃত হবেন। তো বন্ধুরা, আসুন ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া যাক কাতিলা গাম কি জিনিস, কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম, কাতিলা গাম কখন খেতে হয়, কাতিলা গাম কোথায় পাওয়া যায়, কাতিলা গাম এর উপকারিতা, কাতিলা গামে থাকা পুষ্টি উপাদানসমুহ এবং কাতিলা গামের উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কাতিলা গাম কি জিনিস?
কাতিলা গাম একটি গন্ধহীন উদ্ভিদ, স্বাদহীন এবং পলিস্যাকারাইডের দ্রবনীয় মিশ্রণ, যেটা উদ্ভিদের শিকড় শুকিয়ে সংগ্রহ করা হয়। এটা কে কাতিলা গাম নামেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে।
কাতিলা গাম দেখতে সাদা এবং হালকা লালচে বর্ণের হয়। বলতে পারেন অনেকটাই তাল এর মিশ্রণের মত। কাতিলা হচ্ছে ওই উদ্ভিদের নাম যে উদ্ভিদের শেকর থেকে রস/গাম অর্থাৎ আঠা সংগ্রহ করা হয়। এটি মূলত বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমনঃ
- টুথপেস্ট
- লোশন
- বিভিন্ন জেলি তৈরি সহ
- সালাদ ড্রেসিং, খাবার ও পানীয় প্রস্তুতকরণে।
কাতিলা গামের পুষ্টিগুনাগুন
কাতিলা গামে ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, হাইড্রেটস এবং সোডিয়াম অধিক বেশি পরিমাণে থেকে থাকে। যে পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
জানা যায় ১০০ গ্রাম কাতিলা গামে ক্যালরির পরিমাণ থাকে ৭০ কিলো ক্যালরি, পাশাপাশি ৩০ গ্রাম ফাইবার, পাঁচ গ্রাম হাইড্রেটস, ৩৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৯ গ্রাম সোডিয়াম। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কাতিলা গাম এর উপকারিতা সম্পর্কে।
কাতিলা গাম এর উপকারিতা
কাতিলা গামের উপকারিতা অনেক। আপনি যদি সঠিক নিয়মে এটি নিয়মিত খান তাহলেঃ
- শরীর ঠান্ডা থাকবে
- কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর হবে
- ত্বক এবং চুলের উপকার হবে
- যৌ* ন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
- সারাদিনের ক্লান্তি কেটে যাবে
- শরীরে গোটা জাতীয় সংক্রমনের আগমন ঘটবে না
- শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যাবে
এক কথায় শুধুমাত্র এই একটি জিনিস খাওয়ার ফলে আপনি পাবেন অসংখ্য উপকার, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরো পড়ুনঃ মিল্ক শেক এর উপকারিতা ও অপকারিতা
কাতিলা গাম কিভাবে খায় | কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম
আপনি যদি কাতিলা গাম এর উপকারিতা পেতে চান তাহলে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে এটা খেতে হবে। তাই আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জানাবো কাতিলা গাম কিভাবে খেতে হয়, কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম।
কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম -১
উপকরণ: মধু, লেবু, চিনি/তাল মিসরি, কাতিলা গাম
খাওয়ার নিয়ম: নিয়মিত দিনে দুইবার উল্লেখিত উপকরণগুলো কাতিলা গামের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে হবে।
উপকার: গ্রীষ্মকালে দিনে দুইবার নিয়ম করে কাতিলা গামের এই মিশ্রণটি খেলে শরীরের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং গরম শরীর খুব তাড়াতাড়ি শীতল হবে। সেই সাথে হিট স্ট্রোক এর সম্ভাবনাও কমে যাবে অনেকটাই।
কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম - ২
উপকরণ: কাতিলা গাম এবং চিনি
খাওয়ার নিয়ম: প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে কাতিলা গাম এবং চিনির মিশ্রণ খেতে হবে।
উপকার: নিয়মিত এটি খাওয়ার ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ খুব সহজেই বের হয়ে যাবে এবং শরীরে মেটাবলিজম উন্নত হবে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে এবং পেট ভরা ভাব বা পেটের আরো কোনো সমস্যা থেকে থাকলে সেটাও খুব সহজেই ঠিক হয়ে যাবে।
তাছাড়াও লেবু মধু কাতিলা গাম এসব একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যায়। কেননা কাতিলায় থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিএজিং ত্বক থেকে ব্রণ এবং বলিরেখা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আর হ্যাঁ, যে সকল পুরুষদের যৌ* ন সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন এই পানীয় পান করে তাহলে ম্যাজিকের মত কাজ করবে তাদের জন্য। কেননা ইতিমধ্যে এটা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কাতিলা গাম যৌ* ন ক্ষমতার বৃদ্ধি করে। তাই সচরাচর চিকিৎসকরা যৌ* ন রোগের জন্য কাতিলা গাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিন্তু এখন কথা হচ্ছে কাতিলা গাম এর উপকারিতা অনেক রয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু কাতিলা গাম এর অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কি কি রয়েছে! এ ব্যাপারে আমরা সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করব আপনাদেরকে। তাই বিস্তারিত জানতে অবশ্যই কাতিলা গাম খাওয়ার অপকারিতা অর্থাৎ কাতিলা গামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উল্লেখিত বিষয়বস্তু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আরো পড়ুনঃ ওয়েট গেইন মিল্ক শেক এর উপকারিতা
কাতিলা গামের অপকারিতা | কাতিলা গাম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
গাম শব্দটি যেহেতু রয়েছে তাই অনেকেই কাতিলা গাম নামটি শোনার সাথে সাথেই এটা বুঝে যাবেন যে এটি আঠা জাতীয় একটা জিনিস। আর তাছাড়াও কাতিলা গাম একটি আঠা জাতীয় পদার্থ বা জেলি এটা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য সত্যিই অনেক কার্যকরী। আর তাই এর রয়েছে একের অধিক উপকারিতা।
তবে সচরাচর সব কিছুরই ভালো এবং মন্দ দুইটি দিক থেকে থাকে। তাই কাতিলা গাম এর উপকারিতা থাকার পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। যেগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী। যথা:
- কাতিলা গাম আঠা জাতীয় হওয়ার কারণে কোন ওষুধের সাথে সেবন করলে পেটে বা অন্ত্রে সেটা লেগে যায়। ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয় কিছুটা।
- মুখে সেবনযোগ্য ওষুধের সাথে কাতিলা গাম সেবন করলে শরীর ঔষধ শোষণ করার ক্ষমতা হারায়।
- কাতিলা গাম অন্ত্রকে ব্লক করার ক্ষমতা রাখে
- কাতিলা গাম খাওয়ার পূর্বে যদি অধিক সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা না হয় তাহলে সেটা পেটের ভেতরে গিয়ে ফুলে ওঠে ফলে খাদ্য কণাকে আটকে রাখে
- এটি যেমন হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ঠিক একইভাবে সঠিক নিয়মে না খেলে পাতিলা গাম হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
কাতিলা গাম খাওয়ার পরামর্শ ও কাতিলা গাম কখন খেতে হয়
আপনি যদি কিছু পরামর্শ গ্রহণ করেন অথবা কাতিলা গাম খাওয়ার সময় কিছু বিষয় নজরে রাখেন তাহলে এর অপকারিতা নয় বরং শুধু উপকারিতাই ভোগ করতে পারবেন। তাই নিচের পয়েন্টগুলো এক নজরে পড়ে ফেলুন।
ঔষধ এবং কাতিলা গাম একসঙ্গে খেলে শরীর ঔষধ শোষণ করতে পারে না তাছাড়াও পেটে ওষুধের সাথে কাতিলা গাম আটকে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আর তাই সব সময় মুখে সেবনযোগ্য ঔষধ সেবনের এক থেকে দুই ঘণ্টা আগে অথবা এক থেকে দুই ঘন্টা পরে কাতিলা গামের মিশ্রণটি সেবন করুন। এতে করে কোন প্রকার সমস্যা হবে না।
কাতিলা গাম যেহেতু এক ধরনের আঠা এবং এটা মধু লেবু এবং আরো কিছু উপকরণের সাথে মিশিয়ে খেতে হয় এবং এই মিশ্রণটি তৈরির পূর্বে কাতিলা গাম অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে হয়, তাই সবসময় চেষ্টা করবেন এটাকে পুরোপুরি ভাবে ভিজিয়ে ফুলে ওঠার সময় দেবার। এতে করে পেটের মধ্যে গিয়ে কাতিলা গাম ফুলে উঠবে না এবং এটা শরীরের পর্যাপ্ত পানি শোষণ করবে না সেইসাথে খাদ্য কণাকে আটকাতেও সক্ষম হবে না বরং হজম শক্তিকে আরও বেশি বৃদ্ধি করবে।
সেই সাথে কাতিলা সর্বদা খালি পেটে খাবেন। পাশাপাশি অধিক পরিমাণ পানি খাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। কেননা অতিরিক্ত পানি খেলে কাতিলা গাম এর যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো রয়েছে সেগুলো খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
আরো পড়ুনঃ হিজামার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাতিলা গাম কোথায় পাওয়া যায়
আপনি যদি কাতিলা গাম সংগ্রহ করতে চান তাহলে নিকটস্থ কোনো দোকানেই আশা করা যায় পেয়ে যাবেন। তবে যদি আশেপাশের নিকটস্থ দোকান থেকে এটা সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে আপনি চাইলেই অনলাইনে বিভিন্ন সুপার শপ থেকে খুব সহজে কিনে ফেলতে পারবেন কাতিলা গাম।
অথবা আমরা সাজেস্ট করব রকমারি ডটকম অথবা দারাজকে। সেখান থেকে আপনি বিভিন্ন দামে কাতিলা গাম এর গুঁড়ো সংগ্রহ করতে পারবেন। যেগুলোর মোটামুটি দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। তাহলে আর দেরি কেন এখনই কিনে ফেলুন এবং সঠিক নিয়মে খেয়ে নিন উপকারী এই জিনিসটি।
কাতিলা গাম এর দাম
- ১ কেজি ৯২০ টাকা।/ 1kg 920 Taka
- ৫০০ গ্রাম ৪৭৫ টাকা।/ 500gm 475 Taka
- ২৫০ গ্রাম ২৫০ টাকা।/ 250gm 250 Taka
- ১০০ গ্রাম ১১০ টাকা।/ 100gm 110 Taka
- ৫০ গ্রাম ৬০ টাকা।/ 50gm 60 Taka
- ২৫ গ্রাম ৩৫ টাকা।/ 25gm 35 Taka
কাতিলা গমের ছবি
কাতিলা গাম এর উপকারিতা নিয়ে সর্বশেষ
আশা করা যায় আমাদের উল্লেখিত এই নিয়মগুলো মেনে আপনি যদি কাতিলা গাম খেয়ে থাকেন তাহলে কাতিলা গাম এর উপকারিতা সম্পূর্ণভাবে পাবেন। তো পাঠক বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারও নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনা পর্বে দেখা হবে কথা হবে। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।