কিডনি ব্যথা কোথায় হয় জানতে চান অনেকেই। বর্তমান সময়ে কিডনি রোগীর সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। মানবদেহে দুইটি কিডনি থাকে, এই কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে শরীরের অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পণ্য থেকে মুক্তি পাওয়া। এগুলো মেরুদন্ডের পূর্ববর্তী অংশে অবস্থিত যা বামপাশে একটি এবং ডানপাশে একটি রয়েছে।
কিডনিতে ব্যথার সর্বাধিক কারণ রয়েছে তার মধ্যে কিছু হচ্ছে মূত্রনালী সংক্রমণ এবং কিডনিতে পাথর। কিডনির ব্যাথা শরীরে একটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে কিডনি সম্পর্কিত কিছু লক্ষণ, উপসর্গ এবং কিডনি ব্যথা কোথায় হয় এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এছাড়াও থাকছে কিডনি ব্যথা কোথায় হয়, কিডনি ব্যাথা দূর করার উপায়, সুস্থ কিডনির লক্ষণ, কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ, কিডনি সমস্যা হলে কি হওয়া উচিত এসব কিছু পেয়ে যাবেন একটি পোস্টের মধ্যেই। তো চলুন প্রথমেই জেনে আসি, কিডনি ব্যথা কোথায় হয়?
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কিডনি ব্যথা কোথায় হয়
নিচে উল্লেখ করা জায়গাগুলোতে কিডনি ব্যথা হয়ে থাকেঃ
- কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হওয়ার কথা। অর্থাৎ পাঁজরের ঠিক নিচে অথবা পেটের সামনেও অনুভব করতে পারেন। এই ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে, শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই আরাম মেলে না।
- কিডনি ব্যাথা মূলত মেরুদন্ডের ডানে হয় বামে বা পিঠে অনুভব করতে পারেন
কোন কোন সময় কিডনির ব্যথার সাথে অন্যান্য উপসর্গ ও দেখা যায়ঃ
- বমি বমি ভাব থাকে
- মূত্রনালীর সংক্রমণ
- জ্বর
- অসুস্থতা বোধ
- বমি হয়
- কিডনির ব্যাথা প্রায়ই নিস্তেজ রকমের একটি ব্যথা যা স্পর্শ করলেই তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে।
- কিডনির ব্যথা ডানদিকে, বামদিকে অথবা উভয় দিকে আঘাত করতে পারে
- প্রায়শই হালকা ব্যাথা থেকে তীব্র ব্যাথায়ও রুপান্তরিত হয়
- পাঁজর অঞ্চল থেকে সিট অঞ্চলের দিকে প্রসারিত হতে পারে
কিডনিতে ব্যথা মূত্রাশয়ের রোগের কারণে হতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য কিছু ডায়াগনোসিসও রয়েছে, যা কিডনির ব্যথার মতই উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু তা কিডনির কারণে নয় যেমন:
- পিঠে পেশির ব্যাথা
- পেটের অর্টিক অ্যানিউরিজম
- স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সমস্যা
- জর ব্যথা
এগুলো লক্ষণও অনেকটা কিডনি রোগের ব্যথার মতো, তাই পিঠে অথবা পাঁজরের আশেপাশে ব্যথা হলেই তা কিডনি ব্যথা নয়।
আপনার কিডনি রোগ নির্ণয় বা কিডনির ব্যথার কারণ সম্ভাব্য চিকিৎসা ও পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারবেন। কিডনির গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা রয়েছে। শরীরের প্রতি সচেতনতা এ যত্নশীলতাই পারে আপনাকে সুস্থ রাখতে।
আরো পড়ুনঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
কিডনি ব্যথা দূর করার উপায়
কিডনি ব্যথা দূর করার জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যেমন,
- পরিমাণ মতো পানি পান করা, তবে অবশ্য অতিরিক্ত পানি নয়, অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনিতে পানি জমা হয়ে যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া উচিত, কারন কিডনিতে পাথর বা কিডনি ইনজুরি হলে অতিরিক্ত কাজকর্ম, হাঁটাচলা, ব্যায়াম ব্লিডিং বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ব্যথার জায়গায় হালকা গরম সেক দিতে পারেন, গরম সেকের ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, নার্ভের সেনসেশন কমে যায় ফলে ব্যথার জায়গায় অনেকটা আরাম অনুভব হয়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিডনি ব্যথার ওষুধ সেবন করতে পারেন।
- কিডনি রোগের ব্যথার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য কম করে খাবেন কারন অতিরিক্ত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কিডনিতে অক্সলেটে পরিণত হয়, পরে তা কিডনি পাথরে পরিণত হতে পারে।
- কিডনিতে ইনফেকশন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।
সুস্থ কিডনির লক্ষণ
আমাদের শরীরের ছাঁকনির কাজ করে কিডনি। শরীরের যাবতীয় দূষিত তরল পদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কিডনি। যাদের শরীরে ডায়াবেটিস, প্রেসার এর সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত কিডনি বিষয়ে সচেতন ও যত্নশীল হওয়া। অতিরিক্ত ডায়াবেটিসের ফলে কিডনিতে প্রভাব পড়ে।
সুস্থ একজন মানুষ দিনে ৬ থেকে ১০ বার প্রস্রাব করে এর থেকে কম বা বেশি যদি প্রস্রাবে যেতে হয়, তবে তাহলে কিছুটা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
হঠাৎ করে ওজন কমে বা বেড়ে যায়, খিদে কমে যায়, সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বমি ভাব থাকে, খাবার দেখলে বিরক্ত লাগে, সব সময় শরীর অসুস্থ লাগে, এগুলো মূলত কিডনি সমস্যার লক্ষণ। আপনার শরীরে যদি এই লক্ষণগুলোর কোনটাই না থাকে, তবে ধরে নিবেন আপনার কিডনি সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড হলে কি কি সমস্যা হয়
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা গুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পরেই রয়েছে কিডনি ড্যামেজ ক্যান্সার। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ জানেনইনা যে তারা কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত, এটা না জানার ফলে হচ্ছে না সুচিকিৎসা যার ফলে অকালেই প্রাণ হারাচ্ছেন কতশত মানুষ। আপনার কিডনিতে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণের মাধ্যমেই বুঝতে পারবেন বা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ যেমন:
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা- কিডনি ড্যামেজের বড় একটি লক্ষণ আছে প্রস্রাবের সময় ব্যাথা করা। মূত্রনালীর সংক্রমণে এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে পিঠে ব্যথা হয় এবং জ্বর উঠে।
- প্রস্রাবে রক্ত বের হওয়া- কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্তের কোষগুলো বের হয়। কিডনির সংক্রমণের সমস্যা হয়, এটি প্রস্রাবে অ্যালবামিন নামের প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে ঘটে থাকে।
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করা- সাধারণত কিডনি ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া করে এবং রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করাও কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ।
- খাবারে অরুচি, খাবার দেখলেই বিরক্ত লাগে- খাবার দেখলে বমি বমি ভাব আসে, এ সমস্যাটি শরীরের টক্সিন তৈরির কারণে হয়ে থাকে।
- পায়ের গোড়ালি বা পাতা ফুলে যাওয়া- পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া বা হঠাৎ পা ফুলে যাওয়া, কিডনি ড্যামেজের অন্যতম একটি লক্ষণ। শরীরে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে সোডিয়াম এর পরিমাণ হ্রাস পায়, যার ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়।
- মাংশপেশিতে ব্যথা- কিডনি সমস্যার সৃষ্টি করে ইলেক্ট্রোলাইট উপাদানগুলির ভারসাম্যহীনতা। যখন শরীরে উপাদানটি হ্রাস পায় তখন মাংসপেশিতে টান ও ব্যথা হয়।
- ত্বকে চুলকানি- কিডনি যখন সঠিকভাবে কার্যকারিতা সম্পন্ন করতে পারে না তখন শরীরে খনিজ এবং পুষ্টির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা থাকে, যার ফলে ত্বকে চুলকানির দেখা দেয়।
- চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া- প্রস্রাবের সাথে অতিরিক্ত প্রোটিন বের হয়ে গেলে তা চোখের চারিদিকে ঘুরে, ফলে চোখের চারপাশ খুলে যায়। অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- কাজ না করে অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা- কিডনির কার্যকারীতা যখন হ্রাস পায়, রক্তে দূষিত পদার্থ মিশে যায় এবং টক্সিন এর উপাদানের দিকে পরিচালিত করে যার কারনে আপনি খুব বেশি ক্লান্ত ও দুর্বল অনুভব করবেন।
শরীরের এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি সব চিকিৎসার দ্বারস্থ হন।
আরো পড়ুনঃ ই ক্যাপ 400 এর উপকারিতা
কিডনি সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যা বা কিডনি অকার্যকর হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। খাবারের মধ্যে কিডনি সমস্যা থাকাকালীন কি খাওয়া উচিত তা হচ্ছে:
যে ফলগুলো খাওয়া উচিত- আপেল ১-২ টা, নাসপাতি ১-২ টা, পাকা পেঁপেঁ ২-৩ টুকরো, পেয়ারা ১-২ টা, কমলা ১-২ টা, আনারস ২-৩ টুকরো, বেল ২-৩ চামচ বা ২ গ্লাস শরবত।
যে শাকসবজি খাওয়া উচিত- লাউ, ডাটা, চাল কুমড়া, শশা, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কলমি শাক, লাল শাক, লাউ শাক, ডাটা শাক এগুলো। এবং কিছু সবজি সিদ্ধ করে পানি ফেলে রান্না করতে হবে যেমনঃ আলু, কাঁচা পেঁপে, কাঁচা কলা, মিষ্টি কুমড়া, করলা, গাজর, টমেটো, মুলা।
কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এ খাবার গুলো খুবই প্রয়োজনীয় এবং কোন খাবারই অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। সব কিছুরই রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ। সে অনুযায়ী চলাফেরা এবং খাওয়া দাওয়া করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ নাকের পলিপাস এর ড্রপ নাম | নাকের পলিপাস এর ড্রপ
উপসংহার
কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত শাকসবজি খাবেন এবং পরিমাণ মতো পানি পান করা উচিত তবে অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত নয়। নিয়মিত লেবুর রস খাওয়া ভালো লেবুতে রয়েছে সাইট্রাস উপাদান, যার ফলে কিডনিতে থাকা ক্রিস্টালদের জোড়া লাগাতে বাধা দেয়।
অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণে এবং অসচেতনতায় একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে পারেন। খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন, সচেতন থাকুন। শরীরে অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আমাদের আজকের এই কিডনি ব্যথা কোথায় হয় আর্টিকেলে কিডনি সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরেছি, কিডনি সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন এবং পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।