ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এই ব্যাপারে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় এদেশের সকল মানুষ কৃষির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনারা অনেকেই কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চান। কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে আপনারা অনেকেই ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে তা জানেন না।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এই ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকের এই পোস্টটি ফসলের পরিচর্যা নিয়ে সাজানো হয়েছে। তাই এই পোস্টটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তবে চলুন জেনে ফসলের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় নিয়ে কিছু কথা
কৃষি ফলন বৃদ্ধির জন্য আমাদের ফসলের পরিচর্যা করতে হবে। আমাদের দেশে যেহেতু কৃষি পণ্য বেশী উৎপাদন করা হয় তাই আমাদের ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় তা জেনে রাখা প্রয়োজন। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ পড়ুন।
১। ভুট্টা
ভুট্টা এক ধরনের খাদ্যশস্য। ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে ভুট্টা চাষ করা হয়। বিশেষ করে যশোর, বান্দরবান, রাঙামাটি জেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করা হয়। বাংলাদেশে অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ হওয়ার অনেকেই ভুট্টা চাষের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চায়, প্রথমে ভুট্টার বীজ জমিতে রোপন করতে হবে।
এরপর ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোঁড়ায় ভালোভাবে মাটি তুলে দিতে হবে এবং গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে পানি সেচ দিতে হবে। এরপর গাছের নিচের মরা পাতা ভেঙ্গে ফেলে দিতে হবে। যদি ভুট্টার সাথে একই জমিতে অন্য ফসলের চাষ করা হয় তবে সে ফসলের ও পরিচর্যা করতে হবে।
২। বোরো ধান
বাংলাদেশের অন্যতম বহুল জনপ্রিয় ধান হলো বেরো ধান। বাংলাদেশের ধানের একটি জাতের নাম হলো বোরো ধান বা বাসন্তিক ধান। নিয়মিত বোরো ধানের পরিচর্যা করতে হবে। তার জন্য প্রতিনিয়ত আগাছা দমন, সেচ প্রদান, বালাই নাশক ব্যবস্থাপনা সহ অন্যন্য পরিচর্যা করতে হবে।
বোরো ধানের চারা রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০ থেকে ৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বোরো ধানের বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্য গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে পারেন। এসময় ধান ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। রোগ ও পোকার আক্রমণ দূর করতে চাইলে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
৩। গম
বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক ভাতের পাশাপাশি রুটি খেতে পছন্দ করেন। তাই অনেক কৃষক ভাইয়েরা গম চাষের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চান। গম ফসল পরিচর্যার জন্য গমের জমিতে যেখানে অনেক গমের চারা রয়েছে সেখানে পাতলা করে দিতে হবে।
আর যদি শীষ বের হয় কিংবা গম গাছে বয়স ৫৫ থেকে ৬০ দিন হয় তবে জরূরীভাবে গম খেত সেচ দিতে হবে। এতে করে গম ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন, ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আর একবার সেচ দেওয়া প্রয়োজন। এসময় যদি ইদুরের উপদ্রব হয় তবে তা অবশ্যই দমন করতে হবে।
৪। আলু
বাংলাদেশের অধিক তরকারি রান্না করার সময় আলু ব্যবহার করা হয়। তাই আলু চাষের প্রয়োজনীয়তা জেনে রাখা প্রয়োজন। আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং মডেল শিডিউল মেনে চলতে হবে।
আলু ফসলে মড়ক রোগ দূর করতে হলে ২ গ্রাম ডায়থন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে সাত দিন পর পর স্প্রে করতে হবে। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত আলু ফসলে মলচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে।
৫। তুলা
বাংলাদেশের অনেক জেলাতে তুলার চাষ করা হয়। বিশেষ করে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ইত্যাদি অঞ্চলে তুলার চাষ বেশী হয়। অনেক কৃষকেরা তুলা চাষের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। সাধারণত তুলা তিন পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথমবার।
বাকি ৩০% পরিপক্ক হলে এবং সর্বশেষ অবশিষ্ঠ ফসল পরিপক্ক হলে তুলা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকিয়ে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে ভালো তুলার বীজের সাথে খারাপ তুলার বীজ কখনও না মিশে যায়। এরপর জমিতে তুলার বীজ রোপন করতে হবে।
৬। শাকসবজি
শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত শাক-সবজি খাওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শীতকাল হচ্ছে শাকসবজির মৌসুম। নিয়মিত শাক-সবজির পরিচর্যা করলে বেশী ফলন পাওয়া যায়। যদি আপনি শীতের মৌসুমে শাক-সবজির চাষ করেন তবে বেশী বেশী পরিচর্যা করতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ওলকপি, শিম, লাউ, বেগুন, চালকুমড়া, মিষ্টি-কুমড়া, মটরশুটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
এসবে ফসলে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় উপদ্রব করতে পারে। টমেটো পোকার মারাত্মক পোকা হলো ফল ছিদ্রকারী পোকা। ফোরেমন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এছাড়া নিম পাতার নির্যাস পানির সাথে মিশিয়ে ১২ ঘন্টা ভেজাতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে ছ্যাঁকতে হবে এরপর ২ থেকে ৩ দিন পর স্প্রে করতে হবে।
৭। গাছপালা
পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য আমাদের প্রত্যকের গাছা লাগানো প্রয়োজন। গাছের বীজ বপন করার পর থেকে গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। শীতের সময় গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে, গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। চারা গাছ হলে বেড়া দিতে হবে ছাগল, গরু কিংবা অন্য কোন প্রাণী থেকে রক্ষা করার জন্য। যদি গাছে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বাড়ে তাহলে অবশ্যই কীটনাশক ব্যবহার করে সেচ দিতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। তবে চলুন আর বেশী সময় নষ্ট না করে জেনে নেই সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর।
গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়?
গাছের চারা কিভাবে পরিচর্যা করতে হয় এই ব্যাপারটি আমাদের জেনে রাখা জরুরী। যদি আপনি কোন নার্সারি থেকে চারাগাছ কিনেন তাহলে চারা কেনার পর পরেই বাগানে লাগানো উচিত নয়। চারাগাছ কেনার পর টব থেকে ওঠিয়ে চারাগাছে কিছুক্ষণ ধরে পানি সেটাতে হবে এরপর গাছ লাগাতে হবে। এরপর গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে, গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। এভাবেই গাছের পরিচর্যা করতে হয়।
তাপমাত্রা বেশি হলে উদ্ভিদের কি হয়?
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উদ্ভিদের প্রকৃতপক্ষে খাদ্যের মজুদ কমে যায়। যার কারণে উদ্ভিদ মারা যেতে পারে
শেষ কথা
ফসলের ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই আমাদের ফসলের পরিচর্যা করা প্রয়োজন। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকে আমি আপনাদের সাথে কোন ফসলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যদি এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর যদি এই পোস্ট সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান তবে এই পোস্টের নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।