আমাদের আশেপাশে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে কেউ না কেউ পায়খানা জনিত কোনো না কোনো রোগে ভুগে থাকেন। কারো পায়খানা নিয়মিত হয় না, কারো বদহজম, কারো পেটে গ্যাস আবার কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। উক্ত সমস্যা গুলোর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যাটাই বেশি হয়ে থাকে।
পায়খানা ঠিকমত না হলে দেহে নানান প্রকার অসস্থি কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ভালো চিকিৎসা না গ্রহন করলে পরবর্তীতে তা থেকে পাইলস বা গেজের মত দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত শুষ্ক ও কঠিন মল এবং সপ্তাহে ৩ বারের কম পায়খানা হলেই সে অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। চলুন আজকের এই আর্টিকেল এ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম সম্পর্কে জানা যাকঃ
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আশেপাশে অনেকেই রয়েছেন যারা কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। সকাল বেলা পায়খানা যথেষ্ট সময় হয় না অথবা বাথরুমে অনেকক্ষণ সময় বসে থাকতে হয়। সম্প্রতি একটি জরিপ থেকে জানা গিয়েছে বিশ্বের প্রায় ১২% মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত রোগে ভোগেন। যা আসলেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাজ আনার জন্য যথেষ্ঠ।
১। কোষ্ঠকাঠিন্য হবার প্রধান কারন হল কম আঁশ যুক্ত খাবার খাওয়া। বিজ্ঞানীদের মতে আঁশ যুক্ত খাবার আমাদের পায়খানায় সাহায্য করে থাকে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য আঁশ যুক্ত খাদ্য গ্রহন না করা একটি কারন।
২। দ্বিতীয় কারন হল ব্যাথা নাশক ঔষুধ এর পার্শপ্রক্তিয়া। অ্যাসপিরিন এবং ইবুপ্রোফেন-জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই এই জাতীয় ঔষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহন করাই শ্রেয়।
৩। বিপাকে সমস্যা হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির কারণে শরীরের বিপাকক্ষমতা কমে যায় যার ফলে বুকে জ্বালা হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৪। নিয়মিত শরীর চর্চা না করলে এবং সুষম খাদ্য গ্রহন না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৫। পায়খানা আটকে রাখা কোষ্ঠকাঠিন্যর সবচেয়ে বড় কারন। অনেকেই পায়খানা চেপে ধরে রাখেন নিয়মিত পায়খানা করে না। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৬। মানসিক বিষণ্ণতা সমস্যার কারণে অনেক সময় পরিপাক ক্ষমতায় সমস্যা হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৭। গর্ভধারনের সময় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কেউ যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ভোগেন এবং গর্ভধারণের লক্ষণ যদি দেহে প্রকাশ পায়, তবে তার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ - কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম
কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের বেশ কিছু সিরাপ রয়েছে। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা একান্ত জরুরী। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম গুলো কি কি বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কি কি সিরাপ খাওয়া উচিত।
১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম - Avolac (এ্যাভোলাক): এই সিরাপটিতে ল্যাক্টুলোজের উপস্থিতি থাকে এবং এই ল্যাক্টুলোজ হলো এক ধরনের জোলাপ। জোলাপ মূলত শক্ত কোন জিনিসকে নরম করতে সাহায্য করে। এই সিরাপে উপস্থিত জোলাপ আমাদের অন্তরে প্রবেশ করে পানি উৎপন্ন করে যা আমাদের পায়খানাকে নরম করে তোলে। এই সিরাপটি সেবনের কিছুক্ষণের মধ্যেই পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে যায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
২। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম - Milk of Magnesia (মিল্ক অব ম্যাগনেশিয়া): নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই সিরাপ তৈরিতে দুধের ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত আমাদের শরীরে অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। এতেও রয়েছে, জোলাপের উপস্থিতি। এই সিরাপটি সেবনের ৩০ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই পায়খানা ক্লিয়ার হয়। যা মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম - Cremaffin Plus Syrup (ক্রেমাফিন প্লাস সিরাপ): এই সিরাপে রয়েছে লিকুইড প্যারাফিন যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা রোগীদের সবচেয়ে বেশি এই ওষুধটি সেবন করতে দেওয়া হয়। এই ওষুধটি সেবনের পাঁচ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ পাইলস অপারেশন খরচ কত টাকা লাগে - পাইলস অপারেশন খরচ কত
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হওয়ার জন্য এই ওষুধগুলো আমরা প্রায়শই গ্রহণ করে থাকি। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে সব ওষুধ কিন্তু সকলের জন্য নয়। তাই যেকোনো ওষুধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং ডাক্তারের কাছ থেকে সঠিক ডোজ জেনে দেওয়া উচিত।
এছাড়াও প্রথমবার এই ওষুধগুলো সেবনের ফলে মাথা ঘোরা, বমি ভাব, তন্দ্রা অনুভূত, পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আস্তে আস্তে ওষুধটি শরীরের সাথে মানিয়ে যায়। এ সকল সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি খেতে হবে
কষা বা পায়খানা না হবার অন্যতম কারন হল ভালো ভাবে খাবার গ্রহন না করা। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে প্রচুর পরিমানে ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিৎ। মূলত আঁশ জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমানে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। কারন আঁশ জাতীয় খাবার পায়খানা দেহ হতে বের করতে সাহায্য করে এবং পায়খানা নরম রাখে।
মৌসুমী ফলগুলোতে আঁশের পরিমান বেশি থাকে সেক্ষেত্রে মৌসুমি ফল খেলে দেহে আঁশের পরিমান ঠিক থাকবে। পাশাপাশি সবজি যেমনঃ ঢেড়শ, পালং শাক, কচু শাক, লাউ ইত্যাদি খাদ্য তালিকা রাখলে দেহে আঁশের ঘাটতি থাকবে না। পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। জেনে রাখা ভালো দেহে পানিশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কোন খাবার গুলো খাবেন না
কোষ্ঠকাঠিন্য বয়ষ্কোদের মাঝে বেশি দেখা যায়। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীরা বুঝে উঠতে পারে না কি খাওয়া উচিৎ এবং কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ। যে সকল খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য হলে না খাওয়াই শ্রেয় সেগুলো হল-
দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবারঃ আমাদের অনেকের শরীরেই দুধ হজম হয় না সঠিক ভাবে। যা পরিপাকে সমস্যা তৈরী করে। এছাড়া দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন, পনির ও আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার গুলোতে আঁশের পরিমান কম থাকে। যার ফলে পায়খানা সঠিক ভাবে হয় না।
স্ন্যাকস বা চিপসঃ পটেটো চিপসজাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেবে। কারন এ জাতীয় খাবার আমাদের দেহ সহজে হজম করতে পারে না এবং পেটে গ্যাসের তৈরী হয়।
মাংসঃ মাংস মানেই চর্বি হবেই। চর্বি জাতীয় মাংস যেমন, গরু বা খাসির মাংস খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হবার অন্যতম কারন। খাবার অন্ত্রে অনেকক্ষণ থাকে যার ফলে দেহে পরিপাক সহজে হয় না যার ফলে নিয়মিত পায়খানা বাধা তৈরী হয়।
সংরক্ষিত খাবারঃ আমরা অনেকেই আমাদের খাবার গুলো ফ্রিজে অনেকদিন সংরক্ষন করে রাখি যার ফলে খাবারগুলো পানি শুকিয়ে যায়। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবারে পানি শুকিয়ে তৈরী করা হয় ও লবণ বেশি থাকে যা গ্রহনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
কাচা কলা বা কাচা কলার তরকারীঃ কাচাকলায় আঁশের পরিমান নেই বললেই চলে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিন্তু পাকা কলাতে আশ রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ব্যায়াম
যেকোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে সর্বপ্রথম ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা উচিত। কারণ যেকোন ওষুধ সেবনেরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তেমনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে হলে ওষুধ সেবনের পূর্বে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
আর কোষ্ঠকাঠিন্য সারানোর সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া উপায় হল ব্যায়াম। কিছু যোগ ব্যায়াম রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই যোগ ব্যায়ামগুলো করার মাধ্যমে আপনি সহজেই এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে যোগ ব্যায়ামগুলো করবেন।
পবনমুক্তাসন
একটি ম্যাট নিয়ে তার উপর আরাম করে বসুন। এবার আপনার পা দুটি সামনের দিকে লম্বা করুন। এবার শরীর পিছনের দিকে এলিয়ে দিন এবং পিঠের উপর শুয়ে পড়ুন চিৎ হয়ে। কয়েক সেকেন্ড এভাবেই থাকুন। এবার আপনার হাতের তালু মাটিতে লাগান। দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকুন।
এবার আপনার ডান পা টি ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উপরের দিকে তুলতে থাকুন। পায়ের আঙ্গুল একেবারে সোজা উপরের দিকে থাকবে। আপনার হাঁটু ভাঁজ করুন। আপনার হাঁটু চাপ দিয়ে বুকের সাথে হাতের তালুর সাহায্যে লাগাতে থাকুন। এবার আস্তে আস্তে মাথা তুলুন।
হাটুতে থুতনি লাগানোর চেষ্টা করুন। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকুন। এক থেকে দেড় মিনিট এভাবেই থাকার চেষ্টা করুন। এবার ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে এসে পড়ুন এবং বিশ্রাম নিন। চার থেকে ছয় বার করতে থাকুন।
চাইল্ড পোজ
প্রথমে ভর দিয়ে বসুন আপনার গোড়ালির উপর। এরপর সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে যান। আস্তে আস্তে কপালটি মাটিতে ঠেকান। এই পজিশনে কিছুক্ষণ থাকার চেষ্টা করুন। তারপর পুনরায় সোজা হয়ে উঠে বসুন। হাঁটু বা পিঠে সমস্যা থাকলে এই যোগব্যায়ামটি করতে যাবেন না।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম নিয়ে সর্বশেষ
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে এবং নিয়মিত ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করলে আপনি দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। তবে কোন রোগ অবহেলা করবেন না। রোগ হওয়া মাত্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আশা করি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপের নাম এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।