"সিজার" শব্দটির সাথে আমরা তো সবাই পরিচিত। কারন আজকাল নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব বেশি হচ্ছে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণ আছে। নরমাল ডেলিভারিতে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রসব বেদনা উঠলে বাচ্চা জন্মদানের সময় অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।
তবে সি সেকশন বা সিজারিয়ান অপারেশন এর ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায় না। যদিও সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিলে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রসব বেদনা ভোগ করতে করতে হয় না। কিন্তু সি সেকশন পরবর্তী সময়ে তাকে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো সিজারের পর ইনফেকশন।
অনেকেই হয়তো জানেন না সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়? সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলোই বা কিভাবে বুঝবেন? তাই আজকের আর্টিকেলে সিজারিয়ান ইনফেকশন সম্পর্কে আমি যাবতীয় সব তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়?
সিজার অপারেশন পর একজন মায়ের যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তার মধ্যে বড় একটি সমস্যা হলো কাটা জায়গায় ইনফেকশন। এখন প্রশ্ন হলো সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ কি? সিজারের পর ইনফেকশন কেন হয়? বেশ কিছু কারনে এমনটা হতে পারে। যেমনঃ
- রোগী যে হাসপাতালে থাকবে সেখানের পরিবেশ নোংরা বা অস্বাস্থ্যকর হলে।
- সিজারের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করে ব্যবহার করলে।
- যে রুমে সিজার হবে সেটি পরিচ্ছন্ন না থাকলে।
- রোগীর শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিলে।
- সিজার অপারেশনের সময় ব্যবহার করা পানিতে জীবানু থাকলে।
- সিজারের পর সুতা বা যেকোনো কিছু ভিতরে থেকে গেলে।
আরও বেশ কিছু কারনেও সিজারিয়ান অপারেশনের পর সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে। যেমন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পর রোগী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে। সেলাইয়ের জায়গায় কোন আঘাত বা খোঁচা লাগলেও ইনফেকশন হতে পারে।
একজন সিজারিয়ান অপারেশনের রোগীর সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হলে হয়তো সে মৃ- ত্যুবরণ করবে না, কিন্তু তাকে এর কারণে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। এতে তিনি মাতৃত্বের স্বাদ ভালো মতো নিতে পারেন না। একটু সতর্ক হলেই আমরা এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে পারি।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ - সিজারের পর কাটা স্থানে ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি?
সিজারের পর অনেকেরই সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়। আর সেটা যে ইনফেকশন এর দিকে যাচ্ছে সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। তাই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে রাখলে অনেক দ্রুতই এর চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ হলোঃ
- সেলাইয়ের পর কাঁটা জায়গা ফুলে উঠা
- প্রসাবে অনেক জ্বালা পোড়া করা
- পেটের কাঁটা স্থান থেকে পুঁজ পরা
- সুতা উঠে যাওয়া
- সেলাইয়ের জায়গায় হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে ব্যথা অনুভব করা
- গায়ে গায়ে জ্বর থাকা
- মাসিকের সময় পুঁজ বা দূর্গন্ধযুক্ত কিছু বের হওয়া
- সেলাইয়ের জায়গায় গুরি গুরি বোটা মতো কিছু ওঠা
- সেলাইয়ের জায়গা চুলকানো
এই লক্ষণ গুলো যদি সিজারের পর দেখতে পান তাহলে বুঝে নিতে হবে তার সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। এবং লক্ষণ গুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই রোগীকে দ্রুত একজন গাইনী চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট কোনটা ভালো
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় - সিজারের পর কাটা জায়গায় ইনফেকশন হলে করনীয়
সিজারের পর অধিকাংশ রোগীর সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয় হাসপাতালের কারণে। অপারেশন থিয়েটারে যখন একজন গর্ভবতী মাকে নেওয়া হয়, তখন তার অপারেশন এর সময় বারতি কিছু সতর্কতা অবলম্বন এবং অপারেশন এ ব্যবহৃত যন্ত্রাদি গুলো যদি আলাদা আলাদা রোগীর জন্য আলাদা ভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্যই সিজারের পর আর এই ইনফেকশন দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তেমন একটা থাকে না। তারপরও সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়:
- রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
- সেলাইয়ের জায়গা সব সময় ভালো একটা ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার রাখা।
- জীবানু আছে এমন জায়গায় না যাওয়া।
- এলার্জি আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলা।
এসবের পাশাপাশি একজন চিকিৎসক তাকে যেভাবে চলতে ফিরতে বলেছেন সেভাবে চলাফেরা করা। এবং ইনফেকশন এর লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ বাংলা
সিজারের পর সেলাইয়ের জায়গায় দ্রুত শুকানোর কিছু টিপস
সিজারের পর যদি কিছু টিপস মেনে চলেন তবে অবশ্যই কাটা জায়গায় দ্রুত শুকাবে। যেমনঃ
- কাটা জায়গাটিকে প্রতিদিন হালকা কুসুম গরম পানির সাথে জীবাণুনাশক মিশিয়ে অলতো হাতে পরিষ্কার করবেন। এবং শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে তা মুছে রাখবেন।
- চেষ্টা করবেন টাইট জামা না পরে ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে। এতে ঘা তারাতারি শুকাবে। বাতাসের চলাচল সহজেই প্রবেশ করবে।
- বেশি পরিমাণে সিজারের পর পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ফলমুল, শাকসবজি, দূধ ডিম খাবেন। এতে আপনি সুস্থ থাকবেন। আপনার কাটা জায়গাও দ্রুত শুকাবে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশি করে পানি পান করবেন। অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে মলত্যাগ করার সময় অধিক প্রেসার দেওয়ার ফলে সেলাই ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বেশি বেশি শরবত, জুস ও পানি পান করবেন। এতে আর পায়খানা কোষা হবে না। এবং অধিক পানি পান করলে আপনার স্বাস্থ্য ও ভালো থাকবে।
- সিজারের ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত কোন প্রকার ভাড়ি কাজ একদম করবেন না। এতে সেলাইয়ের জায়গায় ক্ষতি হতে পারে। ভাড়ি কাজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
- প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
- সিজারের পর পেটে কিছু দিন ব্যাথা থাকতে পারে। তবে অধিক ব্যথা দেখা দিলে প্যারাসিট্যামল খেতে পারেন। ব্যথার অনেক বেশি হলে চিকিৎসক এর কাছে যেতে হবে।
- আরেকটি কাজ কখনোই করবেন না। অনেকেই আছেন সিজারের পর সেলাইয়ের জায়গায় বার বার হাত দেয়। এটা ঠিক নয়। হাতের নখ লেগে সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে। তাই এই কাজটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয় নিয়ে শেষ কথা
একজন মা যখন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি শিশু জন্ম দেয় তখন বলা যায় তার নিচের অংশটুকুই কেটে ফেলতে হয়। যদিও তা পরে আবার সেরে উঠে।
কিন্তু এত ত্যাগের পরও যখন একজন মায়ের সিজারের পর ইনফেকশন দেখা দেয় তখন তার জন্য এটি বেশ যন্ত্রণাদ্বায়ক হয়ে দাঁড়ায়। একেই তো নবাগত শিশুর যত্ন নিতে একজন মাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
তার মধ্যে যদি সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। এজন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালের উচিত অপারেশন থিয়েটারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে এবং অপারেশনের সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে একজন গর্ভবতী মায়ের সিজার সম্পন্ন করা। এবং একজন মায়েরও উচিত সিজারের পর সতর্ক থাকা।
FAQ
১) সিজারের পর সেলাই ফুলে যায় কেন?
উত্তর: সেলাইয়ের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দিলে।
২) সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে?
উত্তর: কারো ক্ষেত্রে ১ সপ্তাহ। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক এর সরণাপন্ন হতে হবে।
৩) সিজারের পর কি কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: অপারেশন এর সময় অতিরিক্ত ব্লাড যেতে পারে। তাছাড়া সিজারের পর একজন মায়ের কোমর ব্যথা দীর্ঘদিন থাকতে পারে। তিনি ভাড়ি কিছু বহন করতে পারেন না। এমনকি চতুর্থ সন্তান নিলেও তার জীবনে ঝুঁকি থাকে।
৪) একজন মহিলার কতটি সিসেকশন করা যায়?
উত্তর: তিনটি। এর বেশি করলে তার মৃ-ত্যু ঝু্ঁকি থেকে যায়।
৫) দ্বিতীয় সি সেকশন কি প্রথমের চেয়ে বেশি বেদনাদ্বায়ক
উত্তর: এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম সি সেকশন এর তুলনায় দ্বিতীয় বার ব্যথা অনুভব করা লাগে।