বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা, এই নিয়ে প্রশ্নের নেই কোন কমতি। সত্যি বলতে বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে মানুষের মনে অনেক কৌতুহল। আর তাইতো কেউ জানতে চায় বাংলা বর্ষপঞ্জির আবিষ্কারক কে, কেউ জানতে চায় বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এল আবার কেউ কেউ জানতে চায় বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আদৌ রয়েছে কিনা!
আজকে মূলত এই টপিক নিয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনা করব। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের পঞ্জিকা বাংলা সন। তাই এ সম্পর্কে অল্প বিস্তর জেনে রাখাটা সকলেরই প্রয়োজন। তাহলে আসুন বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা সে সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা?
মূলত বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস বহু বছরের পুরনো। যদি আরেকটু সঠিক করে বলতে চাই তাহলে বলা যায় সেই ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিক। কেননা প্রত্নতত্ত্ব বেদেরা নব্য প্রস্তর যুগেও পেয়েছেন প্রাথমিক ক্যালেন্ডার এর নিদর্শন। তবে সেটা কিন্তু এক ধরনের সময় গণনার ধারণা ছিল মাত্র।
তবে সেসব যাই হয়ে থাকুক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা? সত্যি বলতে মেঘনাদ সাহার সুপারিশে বৈশাখ থেকে ভাদ্র ৩১ দিন, আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিন ছিল, অধিবর্ষে ১ দিন যুক্ত হতো চৈত্র মাসে। তার আগে কেবল চাদের হিসাব ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি করা হতো, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। আর নতুন বর্ষপঞ্জি তারই আলোকে করা হয়েছে।
কিন্তু এই নিয়ে রয়েছে নানা মতবাদ। আর তাইতো বলা হয়ে থাকে বাংলা বর্ষপঞ্জি বিভিন্ন ভিত্তি অনুসারে তৈরি হয়েছে। সেটা হতে পারে পৌরাণিক ভিত্তি, হতে পারে জ্যোতিষ ভিত্তি অথবা বৈদ্যুতিন্যায় ভিত্তি।
এর কারণ হচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জির একটি পৌরাণিক ভিত্তি রয়েছে, যেটি পৌরাণিক ও ধার্মিক ঘটনার উল্লেখ সহ বিভিন্ন তারিখ এবং উপযুক্ত তারিখের বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করে। আবার, বাংলা বর্ষপঞ্জি জ্যোতিষ ভিত্তিতে তৈরি হতে পারে।
কারণ ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে জানা গিয়েছে চন্দ্র, সূর্য এবং গ্রহের গতি, পৃথিবীর গতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে এবং তাদের আকাশমণ্ডলিক অবস্থান ও সংমিলিত প্রভাব বিচার বিবেচনা করেও বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে বৈদ্যুতিন্যায় ভিত্তিতে তৈরি বাংলা বর্ষপঞ্জির অংশও রয়েছে, যেটি বৈদ্যুতিন্যায় এবং তার প্রযুক্তির বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। আর তাই বলা হয় যে, বাংলা বর্ষপঞ্জি বিভিন্ন ভিত্তি অনুসারে তৈরি হতে পারে এবং এতে বৈজ্ঞানিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেগুলি সময়ের সাথে আদর্শ, ব্যক্তিগত মতামত এবং সাংশ্লিষ্ট ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সীমানার সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এই নিয়ে চলছে এখনো গবেষণা মানুষ খুঁজছে অজানা তথ্য আড়ালে ভাসছে সত্য।
আরো পড়ুনঃ নামাজের জন্য ১০ টি সূরা | ১০ টি ছোট সূরা
বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো জ্যোতিষবিদ্যা বা ভাগ্য গণনা
অনেকের প্রশ্ন বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো জ্যোতিষবিদ্যা বা ভাগ্য গণনা শুরু হলো কিভাবে। এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে জানা গিয়েছে, বাংলা বর্ষপঞ্জি অর্থাৎ যেটা আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা হিসেবে পরিচিত সেটি বাঙালি সম্প্রদায়ের বছরের নির্দিষ্ট তারিখ এবং তারিখের সাথে প্রতিটি দিনের উপর নির্ধারণযোগ্য।
সেই সাথে হিন্দু পর্যায়ের বিবরণ করার জন্য ব্যবহৃত হয় জ্যোতিষ বা ভাগ্য গণনা। তাই বাংলা বর্ষপঞ্জি জ্যোতিষ বিদ্যা বা ভাগ্য গণনার কাজেও ব্যবহৃত হয়।
সত্যি বলতে বাংলা বর্ষপঞ্জি আসলে একটি সৌর ও চন্দ্র ক্যালেন্ডার, যা সৌর বর্ষ এবং সৌর মাস নামে পরিচিত। এই পঞ্জিকাকে বর্ণিত সৌর ও চন্দ্র মাসের উপর নির্ভর করে বাংলা বছর পরিচিত করানোহয়েছে।
জ্যোতিষবিদ্যা বা ভাগ্য গণনা সম্পর্কিত বিশেষ তথ্য নিম্নলিখিত মৌলিক উপায়ে বাংলা বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো:
সৌর মাস: সৌর মাসের উপর ভিত্তি করে জ্যোতিষবিদেরা কিছু কাজ এর পরামর্শ দেন। এই মাসে যে কোন প্রাণী বা মানুষের জন্ম এবং পূণ্য কার্য সম্পর্কে বিবেচনা করা হয়।
তিথি ও পক্ষ: বাংলা বর্ষপঞ্জি তিথি (চাঁদের দিন) ও পক্ষ (চাঁদের দ্বিতীয় অথবা পূর্ণিমা/অমাবস্যা) মৌলিক উপায়ে ব্যবহার করে থাকে। আর তাই এই উপায়ে জন্ম তারিখ, গণনা, যাত্রা, বিবাহ, শুভ কার্য ইত্যাদি সম্পর্ক বিবেচনা করা হয়। যেটা এখনো পর্যন্ত হিন্দু ধর্মে প্রচলিত।
নক্ষত্র: বাংলা বর্ষপঞ্জি একটি ২৭ টি নক্ষত্রের সাথে যুক্ত হয়, যা সৌর মাসে পরিবর্তিত হয়। নক্ষত্র বের করার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ব্যবহার করা হয় এবং এটি জন্ম নক্ষত্র ও গ্রহ পূজা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে থাকে।
গ্রহ গতি: বাংলা বর্ষপঞ্জি গ্রহের গতি বা পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে থাকে। পাশাপাশি জাতকের রাশি এবং গ্রহের স্থিতির উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস পাওয়া যায় যেগুলো এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন জ্যোতির্বিদরা করে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রচনা
বাংলা বর্ষপঞ্জি কীভাবে এল | বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত কুসংস্কার
দেখুন ইতোমধ্যে আমরা বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে কিনা এ সম্পর্কে বেশ কিছু অংশ আলোচনা করেছি। কিন্তু অনেকেই জানতে ইচ্ছুক বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এল এবং বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রচলিত কুসংস্কার সম্পর্কে। আর আপনি যদি এই সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে (বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এল) আমাদের সাজেস্টকৃত কিন্তু এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
কেননা এই পোস্টে বর্ণনা করা হয়েছে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। যা পড়ার মাধ্যমে আপনি বুঝতে সক্ষম হবেন বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে কোথায় কোন প্রক্রিয়ায় বা কোন মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। সেই সাথে আরও জানতে পারবেন বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার হয়, বাংলা সনের ইতিহাস এবং এই সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর।
আরো পড়ুনঃ বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো
বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রচলিত অবৈজ্ঞানিক চর্চা
বাংলা বর্ষপঞ্জি বা পঞ্চাঙ্গ একটি সার্বিক জ্যোতিষ ও তাত্ত্বিক গ্রন্থ, যা বাংলা সাল এবং তারিখ নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এটি ধার্মিক ও জ্যোতিষ ঘটনাগুলি সম্পর্কে মন্ত্রণা, পূজা, সংক্ষিপ্ত তথ্য এবং নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়ে থাকে।
আর বিশাল সংখ্যক জ্যোতির্বিদরা ধারণা করেন বাংলা বর্ষপঞ্জির মূল আধার হচ্ছে হিন্দু পঞ্চাঙ্গ এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র, যা চাঁদের গতি, সূর্যের গতি, গ্রহের চলন, নক্ষত্রের স্থান ইত্যাদি বিষয়ে ভিত্তি করে। এছাড়া, সামাজিক ও ধার্মিক উৎসব, উপবাস, মহাপুরুষের জন্মদিন, শ্রাদ্ধ এবং অন্যান্য ধার্মিক ঘটনার সময়সূচি এবং নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপের তারিখ এই বর্ষপঞ্জি উল্লেখ করে।
আর হ্যাঁ এই বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে অবৈজ্ঞানিক চর্চা গুলি বিশেষভাবে জ্যোতিষ এবং ধার্মিক বিষয়ে ঘটে থাকে। যেমন ধরুন:
জ্যোতিষ বিষয়াবলী: বাংলা বর্ষপঞ্জি জ্যোতিষ বিষয়ে সময়ের ব্যবস্থা, গ্রহের চলন, নক্ষত্রের অবস্থা এবং তাত্ত্বিক মন্ত্রণা সহ প্রচলিত তথ্য সরবরাহ করে।
ধার্মিক উৎসব ও তারিখ: প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জি ধার্মিক উৎসব যেমন পোহেলা বৈশাখি, দুর্গা পূজা, কালী পূজা, দিপাবলি, ঈদ, ক্রিসমাস, মহরাম ইত্যাদির তারিখ নির্ধারণ করে।
ধর্মীয় প্রচার এবং প্রসার: বর্ষপঞ্জির মাধ্যমে ধার্মিক মন্ত্রণা, শ্লোক, প্রচার-প্রসার সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়, যা ধার্মিক প্রথা এবং অনুষ্ঠানের অংশ।
মহাপুরুষের জন্মদিন: প্রখ্যাত ধার্মিক ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের জন্মদিন বর্ষপঞ্জির মাধ্যমে সূচিত হয়, যা তাদের স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে পুনরায় মনে করিয়ে দেয়।
শ্রাদ্ধ এবং উপবাস: শ্রাদ্ধ, উপবাস ইত্যাদি ধার্মিক ক্রিয়াকলাপের সঠিক তারিখ নির্ধারণে বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুনঃ মোহরানা ও কাবিন এর মধ্যে পার্থক্য
উপসংহার
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সত্যি বলতে বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে যে প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস রয়েছে তা ছোট্ট এই আলোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের আলোচনার মাধ্যমে বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক আছে কিনা তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা আপনাদের কাঙ্খিত প্রশ্নের সমাধান পেয়েছেন আমাদের আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে। তো সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।