চিয়া সিড বর্তমানে খুবই পরিচিত একটি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে অবস্থান করছে। কেননা এর রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ উপাদান। আবার অনেকে আছেন যারা চিয়া সিড কি, কিভাবে খেতে হয় এবং কি কি উপকার এ সম্পর্কে অবগত নন। আজকের লেখাটিতে চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।
তো পাঠক বন্ধুরা, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ আজকের আলোচনায় আমরা আপনাদেরকে জানাবো চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, চিয়া সিড খাওয়ার সময় এবং চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভালো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী সম্পর্কে।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড (Chia Seed) হল সাদা ও কালো রঙের বীজ এবং তিলের মত ছোট সাইজের হয়, যা মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিসপানিকা (Salvia Hispanica) উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটি মেক্সিকো ও গুয়াটেমালা অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ, তবে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছে।
এই অতি উপকারী বীজটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং সেখানকার প্রাচীন আদিবাসি অ্যাজটেক জাতির (আজটেক জাতি ছিল সুসংহত, কৃষিপ্রধান ও ধর্মনিয়ন্ত্রিত) খাদ্য তালিকায় এই বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন মায়া এবং আজটেক জাতির মানুষ চিয়া সিডকে সোনার চেয়েও মূল্যবান মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো এটা তাদের শক্তি এবং সাহস জোগাবে।
চিয়া সিড উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। এগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিয়া সিড সাধারণত সালাদ, স্মুদি, দই, অথবা অন্যান্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চিয়া সিডে সাধারণত নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান থাকে:
- কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান
- চিয়া সিডে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে
- কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি
- পালং শাক এর চেয়ে ৩ গুণ বেশশি আয়রন
- স্যামন মাছ থেকে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩
- মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন
এক আউন্স (২৮ গ্রাম) চিয়া সিডে আছে
- ক্যালোরি: ১৩৭ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট: ১২ গ্রাম
- ফাইবার: ১০.৬ গ্রাম
- প্রোটিন: ৪.৪ গ্রাম
- ফ্যাট: ৮.৬ গ্রাম (এর মধ্যে প্রায় ৫ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড)
- ক্যালসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ১৮%
- ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ৩০%
- ফসফরাস: দৈনিক প্রয়োজনের ২৭%
- জিংক: দৈনিক প্রয়োজনের ১২%
- ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): দৈনিক প্রয়োজনের ১৫%
- ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন): দৈনিক প্রয়োজনের ৩%
- ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন): দৈনিক প্রয়োজনের ২৪%
চিয়া সিডে আরও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, পটাসিয়াম, এবং কপারও থাকে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখা, হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা, হজম শক্তি বৃদ্ধি করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
চিয়া সিড খাওয়ার আগে জেনে নিন এর উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রত্যেকটি জিনিসের ভালো এবং মন্দ দুইটি দিক আছে। সেটা হোক ব্যবহার করা যেকোনো জিনিস অথবা খাওয়ার কোনো জিনিস। ঠিক চিয়া সিড এর সুবিধা ও অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। তবে হ্যাঁ অপকারিতার থেকে উপকারিতা বেশি, যদি আপনি এটা সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।
কেননা চিয়া সিড এ রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও উপযোগী।
তবে হ্যাঁ বোঝার সুবিধার্থে আমরা সিয়া সিড এর উপকারিতা এবং চিয়া সিড এর অপকারিতা অর্থাৎ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরছি। আশা করি আমাদের এই আলোচনা আপনাদের চিয়া সিড এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করবে।
জিংক বি ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আমাদের এই পোষ্টে আলোচনা করেছি।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ:
১। এটি শরীরের শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে
২। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।
৩। মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে চিয়া সিড ওজন কমাতে সহায়তা করে ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪। চিয়া সিডে আছে ওমেগা-৩, যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫। চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি কমায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করেন।
৬। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের ক্ষয় রোধ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারি।
৭। চিয়া সিড মলাশয় (colon) পরিষ্কার রাখে। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
৮। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৯। এটি শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের করে দেয়।
১০। চিয়া সিড পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
১১। চিয়া বীজ হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।
১২। চিয়া বীজ ক্যান্সার রোধ করে এবং রক্তের চিনির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১৪। চিয়া সিড অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার দূর করে।
১৫। চিয়া বীজে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যমান যা দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং অস্থি শক্তিশালী করে।
১৬। নিয়মিত খেলে পেট ভরা থাকে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়।
১৭। বয়সের ছাপ দূর করে।
১৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং যেকোনো ধরনের ব্যথা নিরাময় করতে সক্ষম হয়।
১৯। এটি দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে।
২০। চিয়া সিড খেলে চুল নখ ও ত্বক সুন্দর থাকে।
২১। চিয়া সিড খেলে ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত সমস্যার সমাধান মিলে।
২২। ভালো ঘুম হতে চিয়া সিড কার্যকর।
২৩। মানসিক চাপ কমে যায়।
২৪। হৃদপিণ্ড ভালো থাকে।
চিয়া সিড নিয়মিত খেলে এইসব উপকারিতা পাওয়া যায়, তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানতে আমাদের লেখা এই পোস্টটি একবার পড়ে নিতে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক তা জানলাম, পাশাপাশি চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যদি সঠিক নিয়মে না খেতে পারেন। সত্যি বলতে পরিমিত পরিমাণের চিয়া সিড খেলে উপকারিতা পাওয়া যায় আর যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তখন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরে প্রভাব ফেলে। তাই এপর্যায়ে আমরা চিয়া সিড এর অপকারিতা সম্পর্কে জানবো:
অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে হজমের সমস্যা করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই এটি সামান্য পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।
চিয়া সিড রক্তচাপ কমাতে পারে ঠিক একইভাবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তচাপের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। তাই যাদের রক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরবর্তীতে এটি খাওয়া উচিত।
চিয়া সিড এলার্জি জনিত সমস্যাকে বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি চুলকানি এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার আবির্ভাব ঘটায় যদি অতিরিক্ত পরিমাণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া হয়।
এটি অতিরিক্ত খেলে রক্তকে পাতলা করে ফেলে এবং কিছু কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটায়।
চিয়া সিড বেশি পরিমাণে খেলে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত যদি উপকার গুলো পেতে চান।
পরিমিত চিয়া সিড ওজন কমায়, অন্যদিকে অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়, যেটা একদমই মাত্রাতিরিক্ত।
এছাড়াও দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং কিডনির সমস্যাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দেয়।
চেষ্টা করবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিয়া বীজ পরিমিত পরিমাণে নিয়ম মেনে খাওয়ার।
কি খেলে টিউমার ভালো হয়? (ডাক্তারের পরামর্শ সেরা 20টি খাবার) সম্পর্কে জানতে আমাদের লেখা এই পোষ্টটি পড়তে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
দ্রুত ওজন কমাতে সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড এবং ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে নরমাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পানিতে ভিজিয়ে সহজে খাওয়া যায় চিয়া সিড। চাইলে পুডিং, ওটস, জুস, স্মুথি ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়েও খেয়ে নেয়া যায়। এছাড়া কেউ চাইলে টক দই, রান্না করা সবজি বা সালাদের ওপরে ছড়িয়েও খেতে পারেন। স্বাভাবিক পানি কিংবা হালকা কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন চিয়া সিড। এরপর সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। আবার ঘুমানোর আগেও এটি খাওয়া যায়।
চিয়া সিডের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই। আপনি এই চিয়া সিড খাবারের সাথে বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন। সাধারণত, চিয়া সিড শুকনো ছাড়া যে কোনভাবেই খাওয়া যেতে পারে। আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু নিয়ম বর্ণনা করছি।
এছাড়াও চিয়া সিড আরও বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। আবার শুধুমাত্র কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়। এপর্যায়ে আমরা চিয়া বীজ খাওয়ার কিছু নিয়ম আপনাদেরকে জানিয়ে দেব। সেগুলো হলো:
সালাদ অথবা ফলমূলের সাথে সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড খেতে পারেন। এক্ষেত্রে তৈরিকৃত সালাদ অথবা কেটে রাখা ফলমুলের উপর সামান্য পরিমাণে চিয়া বীজ সিটিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। এমনকি আপনি রান্না করা খাবারের মধ্যে এই প্রক্রিয়াই চিয়া সিড দিয়ে খেতে পারেন অল্প সল্প।
যারা নিয়মিত জুস খান অর্থাৎ ফলের জুস বাড়িতেই বানিয়ে খান তারা মূলত সেই জুসে সামান্য পরিমাণ চিয়া সিড মিক্স করেও খেতে পারেন। এমনকি লেবুর শরবতে মিশিয়ে নেওয়া যাবে।
সুপ খাওয়ার সময় সুখের সঙ্গে মিশিয়েও চিয়া সিড খাওয়া যায়। তাই আপনি চাইলে এই প্রক্রিয়াও গ্রহণ করতে পারেন।
যারা বাড়িতে বিস্কুট পাউরুটি, কেক পুডিং ইত্যাদি এ জাতীয় খাবার তৈরি করেন তারা তৈরিকৃত খাবারের সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড অ্যাড করতে পারেন।
তবে হ্যাঁ সবচেয়ে ভালো এক থেকে দুই চামচ চিয়া সিড হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া। তবে আপনি চাইলে আমাদের উল্লেখিত যেকোন পদ্ধতি অনুসরণ করে খেতে পারেন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য পণ্যটি। এবার আসুন জেনে নেই চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময়।
আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে আমাদের এই পোষ্টটি পড়ে নিন।
চিয়া সিড খাওয়ার সময়
চিয়া সিড খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকাল এবং রাত। মূলত সকালে খালি পেটে এবং রাতে খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে চিয়া সিড খেলে সর্বোত্তম উপকারিতা পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ পরিমাণের কথা যদি বলেন তাহলে এক থেকে দুই চা চামচ চিয়া সিড কুসুম গরম পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খাবেন।
চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিয়া সিড সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে পরিচিত, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। নিচে চিয়া সিডের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:
চিয়া সিডে বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চিয়া সিড ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। এটি রক্ত পাতলা হওয়ার কারণ হতে পারে, যা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
যাদের রক্তচাপ কম থাকে, তাদের জন্য চিয়া সিড রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চিয়া সিড খাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে ত্বকের ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
চিয়া সিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ খান, তাদের ক্ষেত্রে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত বেশি পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়ার কারণে ঘটে। তাই, চিয়া সিড খাবার আগে বা যদি আপনি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তবে আপনার একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা
চিয়া সিড বাচ্চাদের জন্যও উপকারি হতে পারে, কারণ এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নিচে বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিডের কিছু উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:
চিয়া সিডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে, যা বাচ্চাদের হাড়ের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
চিয়া সিডে থাকা ফাইবার বাচ্চাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক, যা স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগের উন্নতিতে কাজ করে।
চিয়া সিড বাচ্চাদের দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে, কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরে শর্করা বাড়ায়, যা তাদের সারাদিন সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বাচ্চাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিডের উপকারিতা পেতে বাচ্চাদের খাদ্যতালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করুন। তবে, চিয়া সিডের পরিমাণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, এবং নতুন কিছু খাবারের ক্ষেত্রে প্রথমে অল্প পরিমাণে দিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হলো।
চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ বয়স, স্বাস্থ্য, এবং দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, সঠিক পরিমাণে চিয়া সিড গ্রহণ করলে এটি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
দৈনিক ১-২ টেবিল চামচ (প্রায় ১৫-৩০ গ্রাম) চিয়া সিড খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
বাচ্চাদের জন্য
৬ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য: দিনে ১/৪ থেকে ১/২ চা চামচ (প্রায় ১-২ গ্রাম) চিয়া সিড মিশিয়ে দিতে পারেন।
২ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য: দিনে ১/২ থেকে ১ চা চামচ (প্রায় ২-৪ গ্রাম) চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে।
৫ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য: দিনে ১ চা চামচ (প্রায় ৫ গ্রাম) চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ট্যাবলেট প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় সম্পর্কে আমাদের এই পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হইছে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে, প্রকৃতপক্ষে সুস্থ সন্তান প্রসব হওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে চিয়া বীজ। প্রায় ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে মোটামুটি প্রায় ২০ গ্রাম প্রোটিন সরবরাহ করে। বড় ১ চা চামচ চিয়া সিড সেবন করলে তা থেকে আপনি ৩ গ্রাম প্রোটিন পেতে পারেন। এছাড়াও চিয়া সিডের মধ্যে আছে আয়রণ এবং ক্যালসিয়াম। আমরা জানি এই উপাদান গুলো সুস্থ এবং স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য অপরিহার্য।
আসল চিয়া সিড চেনার উপায়
আসল চিয়া সিড সবসময় ফ্রেশ এবং ঝরঝরা হয়। কখনও একটি দানা অন্য দানার সাথে লেগে থাকেনা। বালি বা অন্য কোনো কিছুর মিশ্রণ থাকবে না এবং পচা কিংবা বাসি গন্ধ করবে না। কালো চিয়া সিড সাধারণত সাদা চিয়া সিডের তুলনায় সামান্য বেশি দামি হয়। কারন, এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে।
উপসংহার
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আপনি চিয়া সিড খাওয়ার সময়, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা, চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। তবে হ্যাঁ আপনি যদি চিয়া সিড এর কাজ এবং পুষ্টি উপাদান ও সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এই সম্পর্কিত আরেকটি আর্টিকেল করতে পারেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।