ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয় ? যারা কিডনির অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের এ বিষয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই আজকের এই টপিকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভালো হয় কিনা।
তো ফ্রেন্ডস, আসুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে ডায়ালাইসিস কি, ডায়ালাইসিস কেন করতে হয় এবং ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভালো হয় কিনা, সেই সাথে কিডনি ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয় এবং ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয় জেনে নিন বিস্তারিত
ডায়ালাইসিস বা অস্থায়ী কিডনি সমস্যা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি কিডনির সঠিক কার্যক্রমে দূর্বলতা তৈরি করে। কিন্তু ডায়ালাইসিস করার পরবর্তীতে এই সমস্যার অবসান ঘটে খুব দ্রুত। আর ডায়ালাইসিস যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা না হয় তবে কিডনির স্বাস্থ্য আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অবশেষে কিডনির সম্পূর্ণ কার্যক্রমে অবৈচ্ছিন্ন অসুবিধা সৃষ্টি করতে থাকে।
কিন্তু চিকিৎসকদের ধারণা মতে কোন রোগী যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডায়ালাইসিস করেন তাহলে কিডনি ভালো হয়। অতএব ডায়ালিসিস করলে কি কিডনি ভালো হয়? এই প্রশ্নের উত্তর হবে হ্যাঁ। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে এবং কিডনি পুরোপুরিভাবে অকেজ না হয়ে যায় তাহলে ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভালো হয়।(alert-success)
এবার আসুন বিস্তারিত জেনে নেই ডায়ালাইসিস কি, ডায়ালাইসিস কাকে বলে এবং কিভাবে ডায়ালাইসিস করা হয়!
ডায়ালাইসিস কি?
কোন কারণে কিডনি নষ্ট হলে কিডনির পরিবর্তে কৃত্রিম ছাঁকনি ব্যবহার করে তার মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবাহিত সমস্ত রক্ত ছেঁকে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াই হল ডায়ালাইসিস। এক কথায় ডায়ালাইসিস হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত পরিশোধন বা রক্ত বিশুদ্ধকরণ একটি প্রক্রিয়া/চিকিৎসা পদ্ধতি।
আরো পড়ুন: কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ডায়ালাইসিস কেন করা হয়?
সাধারণত যখন কিডনি বিকল হয়ে যায় বা বিকল হওয়ার পথে ঠিক ওই সময় ডায়ালাইসিস করতে হয়। কিডনি মূলত আমাদের শরীরের রক্ত থেকে বজ্র পদার্থ গুলো পৃথকীকরণ করে এবং মূত্র উৎপাদন করার মাধ্যমে সেগুলো বাইরে বের করে দেয়। কিডনির কাজ হচ্ছে শরীরের খারাপ বিষাক্ত পদার্থ গুলো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বাইরে বের করে দেওয়া। যাতে করে আমাদের শরীল ঠিকঠাক থাকে এবং আমরা সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারি।
কিন্তু যখন এই কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ঠিকঠাকভাবে কাজ করতে পারে না তখন আমাদের শরীরে এই বিষাক্ত পদার্থ গুলো থেকে যায়। এতে করে শরীরের টক্সিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট, ক্লান্ত ও অবসন্নতা।
এছাড়াও মূত্রথলিতে যন্ত্রণা হওয়ার পাশাপাশি মুত্রের সঙ্গে কখনো কখনো রক্তও দেখা দেয়। সেই সাথে ফুসফুসে পানি জমে যায় বুকে ব্যথা করে এটাতে নানা উপসর্গ মিলিয়ে শরীরকে অনেক বেশি অসুস্থ করে তোলে।
আর তাই শরীরের কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক রাখতে শরীরকে সুস্থ রাখতেই মূলত ডায়ালাইসিস করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অতএব যারা জানতে চান ডায়ালাইসিস কেন করা হয় তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, শরীর সুস্থ রাখার জন্য শরীরে টক্সিন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনার জন্য ডায়ালাইসিস করা হয়।
আরো পড়ুন: কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ডায়ালাইসিস কিভাবে করে?
সাধারণত কিডনি বিকল হয়ে গেলে ডায়ালাইজার তরল পদার্থের ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত থেকে বজ্র পদার্থ এবং সূক্ষ স্থাপন প্রক্রিয়ায় পানি থেকে এঁকে মূত্র হিসেবে শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর এই ডায়ালায়জার হল সেই প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়াটি কিডনির নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরবর্তীতে কৃত্রিম ছাঁকনি হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
ডায়ালাইসিস কিভাবে করতে হয় এ সম্পর্কে একজন রোগীর না জানলেও চলবে। কেননা এ সম্পর্কে সব থেকে বেশি ভালো জানবেন চিকিৎসকরা। তাই আপনার যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে এবং আপনি ডায়ালাইসিস করতে চান তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।
ডায়ালাইসিস কেন প্রয়োজন?
মূলত শারীরিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কার্যক্রমের জন্য এবং শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। কারণ ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি কিডনি যখন তার কার্যক্রম গুলো সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয় তখন শরীরের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে ডায়ালাইসিস করতে হয়।
আর কিডনি মানব শরীর থেকে বিষাক্ত বজ্র পদার্থ, লবণ এবং অতিরিক্ত তেল অপরসারণ করে থাকে এবং এটি আমাদের শরীরে জমা হতে বাধা প্রদান করে। সেই সাথে সোডিয়াম পটাশিয়াম ইত্যাদির মত নির্দিষ্ট ইলেক্ট্রো লাইটের যথাযথ স্তর বজায় রাখে সেই সাথে রক্তচাপ কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আর এই কার্যকলাপ গুলো যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় না হয় তাহলে শরীর কতটা অসুস্থ হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! আশা করি এইটুকু আলোচনার মাধ্যমে আপনার কাছে এটা সুস্পষ্ট যে ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজনীয়তা কি বা কেন ডায়ালাইসিস করতে হয়।
এবার আসুন ধারাবাহিকভাবে জেনে ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে, ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা এবং ডায়ালাইসিসের ঝুঁকি সমূহ।
ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?
ডায়ালিসিস করতে মোটামুটি ভালো এমাউন্টের টাকার প্রয়োজন পড়ে। মূলত এ ব্যাপারে রিসার্চ করে জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের জন্য সাধারণত হাজার টাকার মতো ফি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে হাজারের বেশি টাকার প্রয়োজন পড়ে।
অন্যদিকে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ফ্রি ৮ হাজার টাকা থেকে শুরুই হয়ে থাকে। সেই সাথে রয়েছে পরিবহন ও অন্যান্য ব্যয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন ডায়ালাইসিস করতে মোটামুটি কত টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে সত্যি বলতে কিডনি ডায়ালাইসিস এর জন্য আমাদের দেশে সরকারি সুবিধা অনেকাংশে কম।
তবে হ্যাঁ টাকার পরিমাণ যাই হয়ে থাকুক না কেন মূলত সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করা উচিত সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা। কেননা দেরিতে চিকিৎসা করলে তেমন কোন উপকারিতা নাও পাওয়া যেতে পারে এমনকি জীবন সংশয়েও পড়তে হতে পারে।
অতএব চেষ্টা করুন অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেবার এবং তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডায়ালাইসিস করে নেওয়ার। এখন আসুন জেনে নেওয়া যাক ডায়ালাইসিস রোগীদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে কিছু তথ্য।
আরো পড়ুন: ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে
ডায়ালাইসিস রোগীদের খাদ্য তালিকা
একজন ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকায় মূলত সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো রাখা জরুরী। এর জন্য আমাদের উল্লেখিত নিচের খাবার তালিকাটি অনুসরণ করতে পারেন। কেননা নিয়মিত খাবার তালিকায় ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য এই খাবারগুলো থাকলে উপকার হবে।
ডায়ালাইসিস রোগীর খাদ্য তালিকা
সকালের খাবার | দুপুরের খাবার | রাতের খাবার | জলখাবার |
---|---|---|---|
2 ডিমের সাদা অংশ বা ডিমের ½ কাপ বিকল্প | ¾ কাপ ডাল ফ্রাই | 2 টুকরা কাটলেট (সবজি) | ভুট্টার তৈরি ইডলি 3 টি |
1 টি ইডলি (চালের) | 2 টি নান রুটি | ½ কাপ পুলাও ক্র্যানবেরি সহ | ধনে চাটনি ১ টেবিল চামচ |
1 টেবিল চামচ মাখন (লবণবিহীন) | আধা কাপ ফুলকপি এবং আলু আলু দিয়ে রেসিপি | আধা কাপ ভেজি স্টির-ফ্রাই (জুচিনি) | 1 কাপ ঠান্ডা জল |
ধনে চাটনি ১ টেবিল চামচ | আধা কাপ মিশ্র ফল (আঙ্গুর ও আনারস) | 1 কাপ লেবুর সোডা | |
⅓ কাপ সাম্বার | ¾ কাপ সালাদ, যার মধ্যে পালং শাক, পুদিনা, শসা, সবুজ লঙ্কা, লেটুস, ধনেপাতা, লেবু এবং অলিভ অয়েল | 1 টুকরা পীচ পাই | |
½ কাপ চা | 1 কাপ চা নন-ডেইরি ক্রিমারের সাথে | ||
আধা কাপ গমের ক্রিম | |||
½ টেবিল চামচ চিনি | |||
¼ কাপ ক্রিমার (নন-ডেইরি) |
আর হ্যাঁ, আপনি চাইলে ডায়ালাইসিস ব্যক্তিদের কে সকালের নাস্তায় আরো কিছু খাবার দিতে পারেন। যেমন:
- চালের ক্রিম
- গমের ক্রিম
- ভুনা ডিম
- ওটমিল
- সবজির সাথে ডালিয়া
- কর্নমিল সহ প্রভৃতি।
অপরদিকে ডায়ালিসিস রোগীর খাবার তালিকা থেকে যে সকল খাবারগুলো বাদ রাখবেন সেগুলো হলো–
- কলা
- অ্যাভোকাডো
- ব্রাউন রাইস
- টমেটো
- আচার
- রেডি টু ইট খাবার
- প্রক্রিয়াজাত খাদ্য
- দুগ্ধজাত পণ্য
আপনি চাইলে, এ ব্যাপারে চিকিৎসকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন। মনে রাখবেন শারীরিক সুস্থতার জন্য খাবার অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। তাই ডায়ালাইসিস করার পর কোন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে এবং কোন কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা রাখাটা অতীব জরুরী।
আরো পড়ুন: ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা
ডায়ালাইসিস এর ঝুঁকি সমূহ
দীর্ঘমেয়াদী সময় ডায়ালাইসিসের সাথে জড়িত থাকলে বেশ কিছু ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানে কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন ধরুন আমিলাইডোসিস, মানে আপনার শরীরে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমবে, যা আরও অঙ্গ ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেসব অঙ্গ সাধারণত আক্রান্ত হয় সেগুলো হল হার্ট, লিভার, কিডনি ইত্যাদি।
তাই চেষ্টা করবেন সব সময় একটি সুন্দর ডায়েট চার্ট ফলো করবার এবং সুস্থ ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্মার্ট লাইফস্টাইল মেইনটেইন করবার। কেননা নিয়মিত শরীরচর্চা পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করলে জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
আর যদি ইতিমধ্যে আপনি কিডনির বিকলাঙ্গ তার সমস্যায় ভোগেন তাহলে অবশ্যই ডায়ালাইসিস করতে হবে। কেননা এর কোন বিকল্প নেই। তাই এ ব্যাপারে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ গুলো ভালোভাবে মেনে চলার চেষ্টা করবেন।
লেখকের শেষকথা
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, ডায়ালাইসিস করলে কি কিডনি ভালো হয় এ প্রশ্নের সমাধান আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল থেকে পেয়েছেন। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারো নতুন আলোচনায় আপনাদের সাথে শামিল হব ইনশাআল্লাহ। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।