হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত জানতে চান অনেকেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফলে দুর্ঘটনার কারণে অনেকের দেহের হাড় ভেঙে যায়। হাড় হলো রডের মত। যার উপর ভিত্তি করেই মানুষের শরীর গড়ে ওঠে।
অনেক যুবক রয়েছে যারা খেলাধুলা করতে বেশ পছন্দ করে। আর খেলতে গিয়ে অনেকেই হাত এবং পায়ের হাড় ভেঙে ফেলে। তবে যে কারণেই হাড় ভাঙুক না কেন, ভাঙ্গা হাড় দ্রুত জোড়া লাগার জন্য ঔষধ সেবনের পাশাপাশি অবশ্যই বেশ কিছু খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
অনেকেই জানতে চান যে হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত বা হাড় ফেটে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি বলব হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত। সুতরাং, হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত এই প্রশ্নটির উত্তর পেতে হলে অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
হাড় জোড়া না লাগার কারণ
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে হাড় ভাঙ্গার পর কেন জোড়া লাগে না। হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত? সেটা তো বলবই, তবে তার আগে হাড় জোড়া না লাগার কারণ গুলো একটু আলোচনা করা যাক।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দেহের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙে ফেলে। আর হাড় ভাঙ্গার পরে চিকিৎসা নেওয়ার পরও অনেকের হাড় জোড়া লাগে না। এর বিভিন্ন কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণেও অনেক সময় জোড়া লাগে না। তাছাড়া যখন একটি ভাঙ্গা হাড়ে রক্ত সরবরাহের অভাব ঘটে, তখনো হাড়টি জোড়া লাগতে চায় না।
হাড় ভাঙ্গার পর চিকিৎসক বেশ কিছু ব্যয়াম দিয়ে থাকেন যাতে করে হাড় দ্রুত জোড়া লাগে। কিন্তু অনেকেই আছেন সেই ব্যায়াম গুলো নিয়মিত সঠিকভাবে করেন না। যার ফলে হাড় জোড়া লাগে না।
অনেকেই আছেন যারা ডায়াবেটিকস, হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে ভুগছেন এবং এমন রোগীদের কখনো হাড় ভাঙলে তা সহজে জোড়া লাগে না। তাছাড়া হাড়ভাঙ্গা অবস্থায় কেউ যদি ধূমপান কিংবা অ্যালকোহল গ্রহণ করে এর ফলেও কিন্তু হাড় জোড়া লাগে না।
ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে
দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম গুলো সম্পাদন করতে গিয়ে আমরা অনেকেই দুর্ঘটনা কবলে পড়ি। যার ফলে আমাদের দেহের হাড় ভেঙ্গে যায়। তাছাড়া অন্যান্য কারণেও দেহের হাড় ভাঙতে পারে। ঠিক এই সময় অনেকেই যেমন জানতে চান হাড় ভাঙলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত? আবার অনেকেই জানতে চান ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে।
ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে সেই বিষয়টি নির্ভর করে আপনার ঠিক কোন ধরনের হাড় ভাঙ্গা হয়েছে। যেমন অধিকাংশ বোন ফ্র্যাকচার বা হাড় ভাঙ্গা ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে জোড়া লেগে যায়। তবে একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম।
কারো যদি হাত অথবা কব্জির হাড় ভাঙ্গে তবে তা জোড়া লাগতে ৪-৬ সপ্তাহের মতো সময় লাগে। যাদের অনেক বেশি হাড় ভাঙার পরিমাণটা অনেক বেশি হয় তাদের ক্ষেত্রে হাড় জোড়া লাগতে একটুখানি বেশি সময় লাগে।
আবার যাদের হাড় ভাঙ্গার পরিমাণটা কিছুটা কম, তেমন গুরুতর ও নয় তাদের হাড় খুব দ্রুতই জোড়া লেগে যায়। অর্থাৎ হাড় ঠিক কত দিনে জোড়া লাগে, তা অনেকটা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর।
আরো পড়ুনঃ দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত বা হাড় ফেটে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত
হাড় ভেঙে যাওয়ার পরে অধিকাংশ মানুষ একটা কথাই জানতে চায় হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত? কিংবা হাড় ভেঙে গেলে কি কি ফল খাওয়া উচিত? কি খেলে হাড়জোড়া লাগে? তাহলে চলুন জেনে নেই হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত। হাড় ভেঙে গেলে ভাঙা হাড় দ্রুত জোড়া লাগাতে যে সকল খাবারগুলো খাবেনঃ
১। দুগ্ধজাতীয় খাবার
ভাঙ্গা হাড় দ্রুত জোড়া লাগাতে দুগ্ধজাত খাবার খান। অর্থাৎ দুধ অথবা যে সকল খাবার দূধ থেকে তৈরি সেসব খাবার খান, যেমন ফর্টিফাইড দুধ, পনির এবং দইয়ে খান। কারণ এগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি। যা কিনা হাড় গঠনে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়।
২। সয়া দুধ
অনেকেই আছেন যারা ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না। আর তাই অনেকেই একেবারে দুধ খেতেই পারেন না। আর তাদের জন্যই দুধের বিকল্প হিসেবে রয়েছে ফর্টিফাইড সয়া দুধ। যেটি খেলেও ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগে।
৩। টুনা ফিশ বা টুনা মাছ
ক্যালসিয়াম আপনার শরীরে তখনই সবচেয়ে ভালো কাজ করবে যখন এর সাথে যুক্ত থাকবে ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি হাড়ের জোড়া লাগাতেও সাহায্য করে। আর চর্বিযুক্ত মাছ যেমন টুনা ফিশে আছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি একসাথে। যেটি হাড়ের স্বাস্থ্য গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৪। মিষ্টি কুমড়ার বিচ
মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে আছে ম্যাগনেশিয়াম। দেহের কোন অংশে হাড় ভাঙ্গলে মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাবেন। কারণ এটি শরীরের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে বেশ সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ম্যাগনেশিয়াম হাড়কে শক্তিশালী ও দৃঢ়-সবল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫। ক্যাপসিকাম
ক্যাপসিকাম খাবেন। কারণ লাল রঙের ক্যাপসিকামে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি দেহের অভ্যন্তরে কোলাজেন নামক একটি প্রোটিন তৈরিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে এবং এই প্রোটিনটিই হাড় পুনর্গঠনে ব্যপক সহায়তা করে।
৬। ডিম
ডিম খুব পুষ্টিকর একটি খাবার। ডিমে অনেক গুণাগুণ রয়েছে। যদিও ডিমে ভিটামিন-ডি আছে খুব অল্প পরিমাণে, তবে এতে আরও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন বি। ডিম খেলে হাড়ের গঠন হয়। তবে শুধু হাড়ের গঠনেই না এর পাশাপাশি ডিম সারা শরীরের বিকাশেও ভুমিকা রাখে।
৭। আঙুর ফল
আঙুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-কে। আঙ্গুরকে বলা হয় সুপারফুড এবং এই ফলটি আপনার হাড়কে করে তুলবে অধিক শক্তিশালী। তাই আঙ্গুর খাবেন।
৮। পার্সলে
পার্সলে হলো একটি ভেষজ শাক। ভেষজ এই শাকটিতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে। হাড় গঠনকারী যত শাকসবজি আছে তার মধ্যে পার্সলে থাকবে সবার শীর্ষে। এটি হাড়ের ঘনত্বও বৃদ্ধি করে।
ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর ঔষধ
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত তা তো এতক্ষণে জেনে গেছেন। অনেকেই জানতে চান ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগানোর ওষুধ কি। মানুষের দেহের হাড় যখন ভেঙে যায়, তখন তার জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
কোন ধরনের ঔষধ সেবন করাই ঠিক নয়। ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগানোর জন্য হাড় ভাঙ্গার সাথে সাথেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন। এবং চিকিৎসক অবশ্যই আপনাকে এক্সরে করতে বলবে।
আপনি অবশ্যই হাড় ভাঙ্গার পর এক্সরে করে নেবেন এবং চিকিৎসক আপনাকে যে ওষুধ সেবন করতে বলবে সে ওষুধ সেবন করাই আপনার জন্য শ্রেয় হবে।
সুতরাং হাড় ভেঙে গেলে গ্রাম্য পন্থা অনুযায়ী জরিবুটি লাগানো কিংবা পানি পট্টি বাঁধা থেকে দূরে থাকুন। এবং হাড় ভাঙ্গার পর এলাকার যেকোনো ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা থেকেও বিরত থাকুন।
আরো পড়ুনঃ কিডনির পাথর অপারেশন খরচ কত
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত তা নিয়ে শেষ কথা
হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত আশা করি এতক্ষণে উত্তর পেয়ে গেছেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভাঙ্গা হার জোড়া লাগানোর দোয়া টি জানতে চান। কারণ মানুষের যখন চিকিৎসা করেও কোন কাজ হয় না, তখন সে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে কিছু কাজ করতে চায়।
যেমন দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করে ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে চায়। ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগানোর দোয়া টি হলো ‘ক্বলা রাব্বি ইন্নি ওয়াহানাল আজমু মিন্নি ওয়াশতাআলার রাসু শাইবাও ওয়া লাম আকুন বিদুআয়িকা রাব্বি শাকিয়্যা।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৪)
যখনই আপনার দেহের কোন অংশে হাড় ভেঙ্গে যাবে, বিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক আপনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।