অনেকেই জানতে চান কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে | কেগেল এক্সারসাইজ কিভাবে করে? ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নারী পুরুষ উভয়ের নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরী। এতে করে পেশি মজবুত ও সুসংগঠিত হয়, পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং শরীরে আরো নানা উপকার ঘটে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে। আর তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত উপকারী ব্যায়াম হলো কেগেল ব্যায়াম।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মূলত কেগেল ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন কেগেল ব্যায়াম/কেগেল এক্সারসাইজ কি, কেগেল ব্যায়াম করার উপকারিতা কি, কেগেল ব্যায়াম এর অপকারিতা কি কি, কেগেল ব্যায়াম করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
তো আপনারা যারা জানতে আগ্রহী কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে | কেগেল এক্সারসাইজ কিভাবে করে তারা আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলো। তাহলে আসুন শুরু করা যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে | কেগেল এক্সারসাইজ কিভাবে করে?
কেগেল ব্যায়াম কিভাবে করে | কেগেল এক্সারসাইজ কিভাবে করে? এই প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে বুঝতে হলে প্রথমত জানতে হবে কেগেল ব্যায়াম এর প্রকারভেদ সম্পর্কে। কেননা প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা নিয়ম মেনে এই এক্সারসাইজটি করতে হবে। তাই আমরা ধারাবাহিকভাবে কেগেল ব্যায়াম করার সহজ টিপস এবং প্রাথমিক গাইডলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কেগেল ব্যায়াম কাকে বলে?
যে সকল ব্যায়াম প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের পেলভিক পেশী মজবুত ও সুসংগঠিত করে তাকেই কেগেল ব্যায়াম বলে। আরেকটু ভিন্নভাবে বললে বলা যায় মানব শরীরের যৌ*নাঙ্গের বিশেষ এক ধরনের পেশি সুসংগঠিত করার জন্য যে বিশেষ ব্যায়াম করার প্রয়োজন পড়ে তাই হচ্ছে কেগেল ব্যায়াম।
কেগেল ব্যায়ামের প্রকারভেদ
কেগেল ব্যায়াম এর প্রকার দুইটি। সেগুলো হলোঃ
- ক্লাসিক কেগেল ব্যায়াম
- পালস কেগেল ব্যায়াম
আপনি যদি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে গুগল অথবা ইউটিউব এর সাহায্য নিতে পারেন। কেননা এই সম্পর্কিত অনেক ওয়েবসাইট অথবা ভিডিও খুব সহজেই পেয়ে যাবেন আপনি। এবার আসুন জেনে নেই কেগেল ব্যায়াম মূলত কোন কোন সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য করতে হয়!
কেগেল ব্যায়াম এর কার্যকারিতা - কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা
কেগেল ব্যায়াম এর সংজ্ঞা জানার পর অনেকেই এই ব্যায়ামের কার্যকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারবেন। তবুও আরো সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার জন্য আমরা এ পর্যায়ে কেগেল এক্সারসাইজ এর কার্যকারিতা অর্থাৎ অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
মূলত নারী এবং পুরুষ উভয়েরই কিছু সমস্যার সমাধানে এই ব্যায়াম অধিক বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বলা যায় নিয়মিত এই ব্যায়াম করার ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের সেই সমস্যা গুলো বরাবরের মতো ঠিক হয়ে যায়। সেগুলো হলোঃ
- মহিলাদের স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
- মহিলা এবং পুরুষদের বিভিন্ন সার্জারির কারণে দীর্ঘমেয়াদি কাশি অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা
- হ*স্ত মৈথুনের সমস্যা
- পে*নিস এর বিভিন্ন সমস্যা সহ প্রকৃতি: যেমন দ্রুত বী*র্যপাত বা লি*ঙ্গোত্থান জনিত সমস্যা।
এবার কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যাতে করে সঠিক নিয়মে এই ব্যায়ামগুলো আপনি আজ এবং এখন থেকেই আরম্ভ করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ শরীরের যত্ন কিভাবে নিতে হয় জেনে নিন
কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি
নারী এবং পুরুষ উভয়েই এই ব্যায়াম করতে পারে। মূলত প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের জন্য এই ব্যায়াম। আর তাই কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি একজন নারী এবং একজন পুরুষের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। এর জন্য পুরুষদের কেগের ব্যায়াম করার পদ্ধতি এবং মহিলাদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি আমরা আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরছি।
ছেলেদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি | পুরুষদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতার সম্পূর্ণভাবে পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক নিয়ম মেনে এই ব্যায়ামটি করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা তবেই আপনি দ্রুত তার ফলাফল পাবেন। এর জন্য অবশ্যই আমাদের উল্লেখিত স্ট্রাকচার মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে তা মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন।
প্রথমত: ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে প্রসাব করে পেট খালি করে নেবেন। এরপর নির্ধারণ করবেন ব্যায়াম করার জায়গা। যারা নতুন অর্থাৎ প্রথম প্রথম শুরু করছেন তারা মেঝেতে শুয়ে ব্যায়াম করলেই অধিক বেশি ভালো হবে। তবে আপনি চাইলে খাটেও এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত: কেগেল ব্যায়াম করার জন্য সঠিক পেলভিক পেশি খুঁজে বের করবেন। অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না ছেলেদের পেলভিক পেশি মূলত কোনটি! এজন্য একটা পরীক্ষা করতে পারেন।
মূলত পেটে বায়ু জমলে সেটা বের করে দেওয়ার জন্য অথবা প্রসাব করাকালীন সময় প্রস্রাব বন্ধ করে দিলে পেটের নিম্নভাগে পেছনের দিকে যে পেশিগুলো আটসাট হয়ে যায় সেগুলোই হচ্ছে পেলভিস ফ্লোর মাসল।
আর এই সময় আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন লি*ঙ্গ কিছুটা তলপেটের কাছাকাছি চলে আসে এবং অন্ডকোষ কিছুটা ওপরের দিকে উঠে আসছে। অর্থাৎ এটাই হচ্ছে আপনার পেলভিক পেশি। তো এটা এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করার পর আপনাকে মূলত পাঁচ সেকেন্ড পেলভিস ফ্লোর মাসল গুলো সংকুচিত করে রাখতে হবে।
তৃতীয়ত: ঠিক ৫ সেকেন্ড সংকুচিত করে রাখার পরবর্তীতে আবার ৫ সেকেন্ড প্রসারন করে রাখতে হবে। আর এভাবে চালিয়ে যেতে হবে টানা কয়েকবার।
যখন আপনি কয়েকবার এই প্রক্রিয়ায় সংকোচন এবং প্রসারণ এর কাজটি করবেন তখন দাঁড়িয়ে বসে যে কোনোভাবেই কেগেল করতে পারবেন। এবার আসুন মেয়েদেরটা জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার
মহিলাদের কেগেল ব্যায়াম করার পদ্ধতি | নারীদের কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম
আপনি যদি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে কেগেল ব্যায়াম করার জন্য আপনাকেও
প্রথমত: ছেলেদের মত নিজের পেলভিক পেশি খুঁজে বের করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ যো*নির ভিতর আঙ্গুল দিয়ে পাশের পেশিগুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত করতে হবে।
তৃতীয়ত: বেশিগুলোকে ধীরে ধীরে শিথিল করতে হবে। মানে প্রসারিত করতে হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঁচ সেকেন্ড সংকুচিত করবেন এবং পাঁচ সেকেন্ড পরবর্তীতে প্রসারন করবেন। এভাবে পাঁচ থেকে ছয় বার একটানা করে যাবেন।
প্রথম দিন করা হলে দ্বিতীয় দিন সময় কিছুটা বাড়াবেন। অতএব আপনি যদি প্রথম দিন পাঁচ সেকেন্ড করে থাকেন দ্বিতীয় দিন ১০ সেকেন্ড এবং এক সপ্তাহ বা ১০ দিন পরে বারো ১৩-১৫ সেকেন্ড।
আরো পড়ুনঃ কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
কেগেল ব্যায়াম এ সতর্কতা
মনে রাখবেন, এটি নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই খুবই উপকারী একটা ব্যায়াম যদি আপনি সঠিক প্রোসেসিংটা মেনে করতে পারেন। তবে এই ব্যায়াম করতে গিয়ে যদি আপনার পিসিতে টান পড়ে, তল পেটে ব্যথা অনুভব হয় তাহলে মারাত্মক কোন সমস্যা হতে পারে।
তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিয়ম মেনে ধীরে ধীরে ব্যায়ামটি করবার। এর জন্য আপনাকে অধিক বেশি সাহায্য করবে ভিডিও। তাই আমরা আপনাদের জন্য এ পর্যায়ে একটি ভিডিও শেয়ার করছি যেখান থেকে আপনি কেগেল ব্যায়াম করার নিয়ম আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। ভিডিও দেখতে এখানে ভিজিট করুন।
আরো পড়ুনঃ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের তালিকা
কেগেল ব্যায়াম কেমন? কেগেল ব্যায়াম করলে কি হয়
কেগেল ব্যায়াম খুবই উপকারী একটা ব্যায়াম যদি সেটা সঠিকভাবে করা হয়। কেননা এই ব্যায়াম করলে সাধারণ ব্যায়াম গুলোর মত হাত-পা এবং শরীরের অন্যান্য পেশি যেমন শক্তপোক্ত হয় ঠিক একইভাবে পেটের নিচের অংশের পেলভিক পেশিও শক্ত পোক্ত হয়। মূলত কেগেল ব্যায়াম করাই হয় নিচের অংশগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং পেশি মজবুদের জন্য।
আর হ্যাঁ, আপনি যদি আমাদের উল্লেখিত নিয়ম মেনে নিয়মিত এই ব্যায়ামটি করেন তাহলে তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে তার ফলাফল পাবেন। মূলত আপনার মাঝে থেকে কয়েকটি সমস্যা একদমই উধাও হয়ে যাবে যেমনঃ
- অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা
- দ্রুত বী*র্যপাত হয়ে যাওয়ার সমস্যা
- লি*ঙ্গ উত্থানের সমস্যা সহ প্রভৃতি
তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই শুরু করে দিন কেগেল ব্যায়াম। আশা করি আপনারা সঠিক নিয়মে এই ব্যায়ামটি করার মাধ্যমে এর উপকারিতা ভোগ করতে পারবেন এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবনের অধিকারী হবেন। তো পাঠক বন্ধুরা, সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।