কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

হাসিবুর
লিখেছেন -
0

কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, রক্তে ক্রিয়েটিনিন কত হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস লাগে! মূলত এই প্রশ্নগুলো মানুষের মুখে মুখে। কেননা এখন বেশিরভাগ মানুষই কিডনির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন।

তাই কমবেশি সকলেরই জেনে রাখা জরুরী কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সে সম্পর্কে। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আসুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, ডায়ালাইসিস কি এবং ডায়ালিসিস মূলত কখন করার প্রয়োজন পড়ে, সেই সাথে কিডনির ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত।

কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

পুরুষদের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক রেঞ্জ হলো ০.৭ থেকে ১.৪। আর নারীদের ০.৬ থেকে ১.২ mg/dL। যদি এই মাত্রাটি ৬ থেকে ১০ mg/dL হয়ে যায়, তহলে বুঝতে হবে কিডনির ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে।

যদি বলেন কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় তাহলে এর উত্তর হবে স্বাভাবিক রেঞ্জ থেকে যখন ক্রিয়েটিনিন কমে আসবে এবং রোগীর কিডনি দূর্বল হয়ে পড়ার পাশাপাশি রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ এবং ফ্লুইড বেরতে ব্যর্থ হবে এবং যখন কিডনি রোগীকে সুস্থ রাখতে অসমর্থ হতে হবে মূলত তখনই কিডনি ডায়লিসিসের প্রয়োজন পড়বে।

অতএব রোগীর অবস্থানের কথা চিন্তা করে অথবা ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ১০ থেকে ১৫ % সক্রিয় থাকতে কিডনি ডায়ালাইসিস করা হবে। তবে হ্যাঁ, রোগীর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে রোগীকে ঠিক কখন ডায়লিসিস করা উচিৎ তার পরামর্শ একমাত্র চিকিৎসকই ভালো দিতে পারবেন।

তাই আমরা সাজেস্ট করব এ বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি মূলত এমন ক্রিটিকাল সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ গুলো মাথায় রেখে তাদের টিপসগুলো মেইনটেইন করে চলবার। আশা করি, আমাদের এটুকু আলোচনার মাধ্যমে আপনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় এ সম্পর্কে।

তবে হ্যাঁ যারা ডায়ালাইসিস কি এটাই জানেন না, তারা চাইলে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু পড়তে পারেন। কেননা এ পর্যায়ে আমরা ডায়ালাইসিস কি, এবং ডায়ালাইসিস কেন প্রয়োজন সেই সাথে কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, পাশাপাশি কিডনির ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় সম্পর্কে অল্প বিস্তর আলোচনা করব।

আরো পড়ুনঃ কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়

ডায়ালাইসিস কি?

ডায়ালাইসিস হচ্ছে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যে পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কিডনির বিকলাঙ্গতায় বিকল্প হিসেবে রক্ত পরিশুদ্ধীকরণ করা হয়। আমাদের রক্তে দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো এবং অতিরিক্ত পানি প্রস্রাব আকারে বের করে দেয় কিডনি অর্থাৎ বৃক্ক।

কিন্তু বৃক্ষ যখন তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ তার কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয় না তখন আমাদের শরীরে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিকল্প হিসেবে ডায়ালাইসিস করার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত পানি রক্তের দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো প্রস্রাব আকারে বের করে দেয়।

তবে হ্যাঁ আপনি যদি ডায়ালাইসিস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এখনই পড়ে ফেলতে পারেন ডায়ালাইসিস সম্পর্কিত আরেকটি আর্টিকেল। ডায়ালিসিস করলে কি কিডনি ভাল হয় এই সম্পর্কিত একটি আর্টিকেলে আমরা ডায়ালাইসিস সম্পর্কে এ টু জেড আলোচনা করেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি ডায়ালাইসিস সম্পর্কে সমস্ত বৃত্তান্ত জানতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

কত পয়েন্ট থাকলে কিডনি ভালো থাকে এ প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে আপনাকে জানতে হবে রক্তের ক্রিয়েটিনিন এর স্বাভাবিক তাপমাত্রা সমূহ সম্পর্কে। আর তাই এ পর্যায়ে আমরা নারী-পুরুষ শিশুদের রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রার একটি সুনির্দিষ্ট চার্ট তুলে ধরছি। যথা:

  • স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকা প্রয়োজন ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম।
  • স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে এর মান হওয়া প্রয়োজন ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম।
  • পাশাপাশি, একটা কিডনী যাদের নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক।
  • কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম স্বাভাবিক। 
  • অন্যদিকে শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম/ডিএল ওপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিন ৫.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের চেয়ে বেশি হলে কিডনী ড্যামেজ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এখন কথা হচ্ছে কিডনির পয়েন্ট মূলত কত এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কত থাকলে সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো সে সম্পর্কে সব থেকে বেশি ভালো জানবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন আপনার চিকিৎসারত চিকিৎসক। তাই কিডনির যেকোনো সমস্যা হলে কিডনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াটাই অতীব জরুরী।

আরো পড়ুনঃ কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় কি?

ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় হিসেবে চিকিৎসকরা ফল হিসেবে কিছু ফল খাওয়ার জন্য সাজেস্ট করে থাকেন। সেগুলো হচ্ছে:

  • নাশপাতি
  • আপেল
  • পেয়ারা
  • পেঁপে

মূলত ৪০ থেকে ৬০ মিলি ইকুইভিন্টে পর্যন্ত পটাশিয়াম প্রতিদিন রোগীকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কতটুকু ফল ও সবজি খাবে তা ডায়েটিশিয়ানরাই নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন। তাই তাদের টিপস গুলো অনুসরণ করাই বাঞ্ছনীয়।

কেননা আপনি যদি খাবারের ব্যালেন্স রেখে চলতে পারেন তাহলে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক রাখা যেতেও পারে, যেটা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক ডায়ালাইসিস করতে মোটামুটি কত টাকা খরচ পড়ে!

ডায়ালাইসিস করতে কত টাকা লাগে?

হাসপাতালের ধরন এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ডায়ালাইসিস এর খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়ালাইসিস ফ্রি অনেকটাই কম। সরকারি হাসপাতালে সাধারণত এক থেকে দুই হাজার টাকা লাগে অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এর থেকে কিছুটা বেশি, আবার কোন কোন বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালগুলোতে ৮০০০ প্লাস টাকাও ডায়ালাইসিস ফ্রি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর তাই আপনি যদি একদম অ্যাক্রুয়েড অ্যামাউন্ট জানতে চান উক্ত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন যেখানে আপনি ডায়ালাইসিস করাতে ইচ্ছুক।

আরো পড়ুনঃ ডায়ালাইসিস রোগীর খাবার তালিকা

ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয়?

সাধারণত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। কেননা নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস নেওয়ার জন্য প্রতিদিন চার ঘন্টা হিসেবে রক্ত পরিশোধ করা হয়। পরবর্তীতে পঞ্চম ধাপের ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের বেলায় এটি জীবন ভর চলতে থাকে।

তবে সাময়িক কিডনি বিকলাঙ্গ হয়ে গেলে এই বিষয়টি ভিন্ন। কেননা কয়েকবার ডায়ালাইসিস করার পরবর্তীতেই সে সকল রোগীদেরকে নিয়ে ভালো হয়ে যেতে পারে। তবে আপনি যদি এ ব্যাপারে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান তাহলে কিডনি বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আর হ্যাঁ, অনেকেই জানতে চান কিডনি সুস্থ রয়েছে কিনা সেটা বুঝবেন কিভাবে? এটা মূলত আপনার শারীরিক যে সকল উপসর্গ দেখা দিবে তার ওপর ভিত্তি করে আন্দাজ করা সম্ভব। তবে হ্যাঁ যদি আপনি কোন টেস্ট করার কথা বলেন তাহলে কিডনির জন্য কিছু টেস্ট করতে হয়। যা আমরা নিচের পয়েন্টে উল্লেখ করছি।

কিডনির জন্য কি কি টেস্ট করতে হয়?

কিডনি ভালো রয়েছে কিনা অর্থাৎ কিডনির সক্ষমতা বুঝতে মূলত রক্তের ইউরিয়া ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা হয়। কেননা কিডনি যদি নষ্ট হয়ে যায় তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে এই দুইটি অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। আর হ্যাঁ, কিডনি ব্যর্থতার প্রথম পর্যায়ে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে প্রসাবের পরিবর্তন ঘটে। কেননা কিডনি আমাদের শরীরে প্রসাব তৈরির জন্য দায়ী।

সর্বশেষ

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেটা নিজে নির্বাচন করার পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করায় অতীব জরুরী। তাই যদি আপনি বা আপনার নিকটস্থ কোন ব্যক্তির কিডনির কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিন।

মনে রাখবেন সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ একজন মানুষের জীবন বাজিয়ে দিতে পারে। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারও নতুন আলোচনায় আপনাদের সাথে দেখা হবে কথা হবে। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!