কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায় সম্পর্কে জানতে চান অনেকেই। মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে কিডনি। যার প্রধান কাজ, শরীরের রক্তকে পরিশোধিত করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ করা।
যেকোনো কারণে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে শরীরে নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিডনিকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের সচেতনতার সহিত চলাফেরা ও খাদ্যাভাস গ্রহণ করতে হবে। তাই আজকের এই পুরো পোস্টটি কিডনি সম্পর্কিত নানা তথ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে।
কিডনিতে কোন প্রকার সমস্যা হলে আপনি সহজেই ধরতে পারবেন না। কেননা কোনো লক্ষণ আপনার সামনে আসবে না। তাই উচিত মাঝে মধ্যে কিডনি পরীক্ষা করে নেয়া ভালো এবং বয়স যাদের ৫০ এর উপরে তাদের উচিত বছরে দুইবার পরীক্ষা করানো।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়, কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়, কিডনি রোগ কি ভালো হয়, কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যাথা হয়, কিডনি ড্যামেজ এর লক্ষণ সহ কিডনি নিয়ে জানা-অজানা অনেক তথ্য। কিডনি সম্পর্কিত সব তথ্য জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তো চলুন দেরি না করে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
ভারতের ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য থেকে জানা যায়, এসিআর এবং জিএফআর এই দুটো সিম্পল পরিক্ষা করালেই ধরা পড়বে আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বা ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে কি না।
১. এসিআর: এটি অ্যালবুমিন এবং ক্রিয়েটিনিনের অনুপাত। অ্যালবুমিন হচ্ছে বিশেষ ধরনের প্রোটিন। মূত্রে অ্যালবুমিন আছে কিনা মূলত পরীক্ষা করেই সেটা দেখা হয়। প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যে কারণে রক্তে প্রোটিন থাকা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু হ্যাঁ এই প্রোটিন কখনোই মূত্রে থাকার কথা নয়। যদি মূত্র পরীক্ষায় প্রোটিন পাওয়া যায়, তবে এটার মানে হলো, কিডনি ঠিকঠাক ভাবে রক্তকে ছাঁকতে পারছে না বা কিডনি ভালো নেই। তাই ইউরিন টেস্টে প্রোটিন পজিটিভ থাকলে, নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিএফআর করাতে হবে। যদি, তিন মাস কিংবা তার অধিক সময় ধরে রেজাল্ট পজিটিভ থাকে, তবে তা কিডনির অসুখের আভাস।
২. জিএফআর: কিডনিতে কোনো প্রকার সমস্যা দেখা দিলে তা রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন অর্থাত্ বর্জ্য পদার্থ ঠিকঠাক ভাবে বের করে দিতে পারেনা। তবে, এই ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা হলো প্রথম ধাপ। এরপরে জিএফআর দেখতে হবে। সেই রেজাল্ট দেখেই ডাক্তার বুঝতে পারবেন কিডনি কেমন কাজ করছে।
রক্তের এমন পরিক্ষা করার পর ডাক্তার যদি দেখেন যে আপনার রক্তে ক্রিয়েটিনিন মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি, সে সময়য় চিকিৎসকরা কিডনির অবস্থা আরো ভালো ভাবে বুঝতে রোগীর অন্য উপসর্গ অনুযায়ী চার ধরনের ক্রিয়েটিনিনের একটি বা একাধিক টেস্ট করতে দেন।
আরো পড়ুন: চাপা ভাঙ্গা ঠিক করার ট্যাবলেট | চাপা ভাঙ্গা ঠিক করার উপায়
আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বুঝতে পারবেন কিভাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
আমাদের আজকের এই পোস্টের মূল বিষয় হচ্ছে, কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়। পুরো এই পোস্টটি পড়লে কিডনি সম্পর্কিত সব তথ্য আপনি সহজেই জানতে পারবেন। আমাদের শরীরের এই দুইটি কিডনি প্রতিদিন গড়ে ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে রক্ত থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য নিঃসরণ করে থাকে।
কিডনির সঠিকভাবে আমাদের শরীরে কাজ করছে কিনা, তার উপর নির্ধারিত করা হয় যে কিডনি ভালো আছে কিনা। কিডনি যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেই সমস্যা গুলোর লক্ষণ দেখলেই বা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেই বুঝতে পারি যে কিডনি ভালো নেই। যে যে কারণে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ে তার কিছু উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যেমনঃ
- উচ্চ রক্তচাপ
- বংশানুক্রমে কিডনির সমস্যা
- জন্মগত কিডনি এবং মূত্রনালির অস্বাভাবিকতা
- বারবার কিডনি সংক্রমন
- ক্যাফেইনে বেশি আসক্ত হওয়া
- অতিরিক্ত ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা
- বেশি প্রোটিন গ্রহণ করা
- অ্যালকোহলে আসক্ত হওয়া
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
- সাধারণ সর্দি কাশিকে অবহেলা করা
- রাত জেগে থাকা
- ধূমপানে আসক্ত হওয়া
এই কারনগুলোর জন্য আপনার শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, শরীরের লক্ষণ অনুযায়ী কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণকেই অবহেলা করা উচিত নয়। সামান্য কোন সমস্যা থেকেই বড়রোগের সৃষ্টি হয়। আপনার শরীরে যদি অস্বাভাবিক কোন লক্ষণ না থাকে, তাহলে বোঝে নিতে হবে আপনার কিডনি সুস্থ আছে, সঠিকভাবে কাজ পরিচালনা করছে।
তারপরও আপনার কিডনিতে কোন সমস্যা আছে কিনা কিডনি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলে, দুইটি পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আপনি নিশ্চিত হয়ে যেতে পারবেন আপনার কিডনি সুস্থ আছে কিনা।
- মূত্র পরীক্ষা (এসিআর)
- GFR কাউন্ট করতে রক্ত পরিক্ষা
১। মূত্র পরীক্ষা (এসিআর)
অ্যালবুমিন ও ক্রিয়েটিন এর অনুপাত হচ্ছে AC। অ্যালবুমিন বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন, আমরা জানি, আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি। মূত্রে অ্যালবুমিন আছে কিনা তা পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়। যেহেতু রক্তে প্রোটিন থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু তা কখনোই মূত্রে থাকার কথা নয়।
যদি মূত্রে প্রোটিন পাওয়া যায়, তার মানে কিডনি ঠিক ভাবে কাজ করছে না। তাই ইউরিন টেস্টে প্রোটিন পজিটিভ হলে, তা কিডনি অসুখের লক্ষণ এবং টেস্টে প্রোটিন যদি নেগেটিভ আসে, তবে আপনার কিডনি সুস্থ আছে ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন: কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
২। GFR কাউন্ট করতে রক্ত পরীক্ষা
কিডনি খারাপ হলে রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো অপসারণ করতে পারেনা। ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা হচ্ছে প্রথম ধাপ, পরে আরো কিছু ধাপ আছে যেমন, গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট অথবা GFR, এগুলো পরীক্ষা করলে বুঝতে পারবেন আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা।
কিডনি সমস্যা বোঝার উপায়
কিডনি রোগের ঝুঁকির মধ্যে যারা আছেন, তাদের উচিত শরীরের প্রতিটা অস্বাভাবিক লক্ষণ খুঁজে বের করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। এবং আপনার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে তা বোঝার কিছু উপায় হচ্ছে, যেমন:
- বারবার প্রস্রাব হওয়া
- শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া
- প্রস্রাবের সাথে হালকা ফেনা বা রক্ত বের হওয়া
- ক্লান্তি ও অমনোযোগী হয়ে পড়া
- ত্বকে চুলকানি ও ত্বক শুষ্ক থাকা
- অতিরিক্ত ঘুম বা একেবারে ঘুম না হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- খাবারে স্বাদ না লাগা/অরুচি হওয়া
শরীরে এরকম লক্ষণ দেখা দিলে, অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি।
কিডনি রোগ কি ভালো হয়
যাদের শরীরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস রয়েছে তাদের শরীরে কিডনি রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে অবশ্যই জুড়ালো ভাবে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার আগে কিছু নিয়মকানুন মেনে সচেতনতার সহিত জীবন যাপন করলে অবশ্যই কিডনি রোগও ভালো হয়।
- সব সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- কোলেস্টেরল কমান
- ধূমপান পরিহার করুন। পান, জর্দা, সিগারেট, মদ্যপান এবং অন্যান্য পানীয় ধূমপান
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
যাদের শরীরের স্বল্প মাত্রায় ধীরগতিতে কিডনি রোগ আক্রমণ করে বসে আছে, তাদের শরীরে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশ বেশি। তাই অবশ্যই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এবং শরীরের সামান্যতম রোগকে অবহেলা না করলে অবশ্যই কিডনি রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার সম্ভব।
আরো পড়ুন: কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলি কি কি
কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যাথা হয়
কিডনির সমস্যা হলে শরীরের অনেক জায়গাই ব্যাথা হতে পারে, ব্যথা হওয়ার মত কোন নির্দিষ্ট অংশ নেই তবে, এক্ষেত্রে কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন,
- পিঠের দিকে ব্যথা হয়
- কোমরের নিচের দিকেও ব্যাথা হতে পারে
- ব্যাথাটা তলপেটের দিকেও আসতে পারে
- এবং অনেক সময় প্রস্রাব করার সময়ও ব্যাথা হতে পারে।
এগুলো ছাড়াও রয়েছে প্রস্রাবের সাথে হালকা ব্লাড আসতে পারে অথবা মাঝেমধ্যে প্রস্রাব বন্ধ হয়েও যেতে পারে। এই ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অংশ হচ্ছে কিডনি, এই অঙ্গ সংক্রান্ত শারীরিক জটিলতাকে নীরব ঘাতক বলা হয়। অনেক সময় আমাদের শরীরে নানা সমস্যার জন্য আমাদের মনে হয় যে কিডনি সংক্রান্ত কিছু হয়েছে। সেরকমি কিছু কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ হচ্ছে,
- প্রস্রাবে রক্ত
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া বা জ্বালাপোড়া করা
- পায়ের গোড়ালি বা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
- খাবারে অনিহা প্রকাশ করা / অরুচি
- ত্বকে শুষ্ক ভাব ও চুলকানি হওয়া
- মাংসপেশিতে টান
- কাজ না করেও শরীর খুবই ক্লান্ত লাগা
- চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া
- আনমনা হওয়া, যেকোন কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া
- কিডনি রোগ শরীরের রক্তসল্পতাও সৃষ্টি করে,যার কারনে শ্বাস নিতে একটু সমস্যা হয়।
এই লক্ষণ গুলোর মধ্যে কয়েকটা লক্ষণই যদি একসাথে আপনার শরীরে দেখা দেয়, তবে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামান্য জ্বর, সর্দি হলে আমরা অনেক সময় অবহেলা করে এড়িয়ে যাই কিন্তু এটা একদমই উচিত নয়। সামান্যতম রোগ থেকেই আস্তে আস্তে অনেক বড় আকারের কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। কোন কিছুকেই ছোট ভাবা উচিত নয়।
আরো পড়ুন: এলার্জির ঔষধ এর নাম | এলার্জি ঔষধ এর নাম
লেখকের শেষকথা
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনি সম্পর্কিত নানান তথ্যসহ জানতে পারলেন কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়, কিডনি রোগ কি ভালো হয়, কিডনির সমস্যা হলে কোথায় কোথায় ব্যথা হয়, কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ। কিডনির সম্পর্কিত আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত।
এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং প্রয়োজনীয় আরো বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।