মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়? গ্রামের দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকার। গর্ভকালীন সময় শারীরিক অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, অনেক নারীরাই দারিদ্রতার কারণে গর্ভকালীন সময় শরীরের সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারে না।
মূলত তাদের জন্যই বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করেছেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য পেতে পুরো পোস্টটি পড়ুন।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়, মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা, মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইনে আবেদন, গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিষয়ে আরো বিভিন্ন তথ্য। তো চলুন আমরা প্রথমেই জেনে আসি, মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় এই সম্পর্কে।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়?
আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়, মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়? মাতৃত্বকালীন ভাতা সহ আরো মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সাজানো এই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তবেই আপনি মাতৃত্বকালীন বা গর্ভকালীন জানা অজানা অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে অথবা অনলাইনে আবেদন করে, জেলা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার মাধ্যমেই মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া যায়। আপনার নিকটস্থ যেকোন দরিদ্র গর্ভবতী মহিলা এই মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে পারেন।
মাতৃকালীন ভাতা পাবার জন্য, গর্ভবতী নারীকে অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করতে হবে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করে জমা দিতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রকল্পে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে হবে। পরে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মরত প্রতিনিধিগন পরিদর্শন ও প্রাপ্ত তথ্য পরীক্ষা করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করবেন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হলে আপনি মাতৃকালীন ভাতা পাবেন।
প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ বরাবর আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সব থেকে সহজ হবে অনলাইনে আবেদন করা। মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু শর্তাবলী রয়েছে,
- প্রথম অথবা সর্বোচ্চ দ্বিতীয় গর্ভধারণ হতে হবে
- মাসিক আয় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকার নিচে হতে হবে
- বয়স ন্যূনতম ২০ বছর হতে হবে
- নিজের বসতবাড়ি রয়েছে অথবা অন্যের বাড়িতে/ভাড়া থাকেন
- আবেদনের সময় অবশ্যই গর্ভবতী নারী থাকতে হবে
- পরিবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষি জমি নেই
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দরিদ্র হতে হবে
উপরোক্তা এই শর্তগুলোর মধ্যে ১, ২ ও ৬ নাম্বার সহ মোট পাঁচটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় গর্বের সন্তান জন্মের দুই বছরের মধ্যে মারা গেলে তবেই তৃতীয় সন্তানের জন্য মাতৃকালীন ভাতার প্রাপ্য হবেন।
আরো পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন কপি ডাউনলোড করার নিয়ম
মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা
বাংলাদেশ সরকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতদরিদ্র মাতৃত্বকালীন নারীদেরকে ভাতা প্রদান করে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার মাসিক ৮০০ টাকা হারে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করেছেন। তা প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর করে ৪ বার অথবা ২৪ মাস মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে থাকে।
প্রতি ৬ মাস অন্তর আপনাকে ৪,৮০০ টাকা করে দেওয়া হবে, এই ভাতার মেয়াদ ২ বছর। এই ভাতা বর্তমানে ৮ লক্ষ হতদরিদ্র নারীরা মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন। তবে মাতৃত্বকালীন এই ভাতার মেয়াদকে ৩ বছর করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে অর্থাৎ সন্তান জন্মের পর তিন বছর পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন এই ভাতা ৮০০ টাকা হারে পাবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন
মাতৃত্বকালীন ভাতার খুবই সহজ একটি পদ্ধতি হচ্ছে অনলাইনে আবেদন। অনলাইনে আবেদন করার জন্য আপনাকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল যে ওয়েবসাইট রয়েছে সে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
ওয়েবসাইটের লিংক : http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration
এই ওয়েবসাইটের লিঙ্কে অনলাইন আবেদনের ফরম দেওয়া আছে, এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, আপনার জন্মস্থান, আপনার নাম, ধর্ম, বাংলাতে ও ইংরেজিতে পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামীর নাম ইত্যাদি সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
পরের অপশনে, আপনার বর্তমান ঠিকানা যেমন, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড নং, পোস্ট অফিস, এবং আপনার স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। স্থানী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা যদি একই হয়, তবে উপরে যে একই অপশন দেওয়া আছে তাতে ঠিক মার্ক দিবেন। তারপর, আপনার আর্থিক তথ্য দিবেন যেমন:
- আপনার সংসারে প্রথম রোজগার কে করেন পুরুষ নাকি মহিলা?
- মাসিক আয় এর কোন সমস্যা আছে কিনা
- নিজস্ব কৃষি কাজের জমি বা পুকুরের জমি আছে কিনা
- ভাতার টাকা কিভাবে নিতে চান, ব্যাংকে নাকি বিকাশ, রকেট, নগদ যেটাই হয় সেটা সিলেক্ট করে দিবেন।
- গর্ভের সন্তান কত নাম্বার
- আপনার ছবি আপলোড করতে হবে
- স্বাক্ষর বা টিপসই যেটা প্রয়োজনীয় সেটাই দিবেন
- এবং কোন সংযুক্তি থাকলে যেমন টিকার কার্ড, প্রত্যয়ন পত্র বা মেডিকেলের কোন কাগজপত্র থাকলে তা সংযুক্ত করে দিতে পারেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, এই সহায়তা প্রদান করেছেন। ২০০৫ সালে মা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র মায়েদের জন্য এই উদ্যোগটি চালু করেছেন।
আরো পড়ুনঃ পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম
অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম
মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য বছরের জুলাই মাসে গর্ভবতী থাকা অবস্থায় আবেদন করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও মেডিকেল রিপোর্টসহ গর্ভবতী প্রমাণস্বরূপ ইউনিয়ন বা পৌরসভায় আবেদন ফর্ম পূরণের মাধ্যমেই গর্ভবতী কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয়।
- প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে
- বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে
- মোট মাসিক আয় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ মধ্যে হতে হবে
- দরিদ্র এবং প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার বেশি পাবে
- কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় থাকেন
- ভাতার জন্য নির্বাচিত হবেন অবশ্যই জুলাই মাসে
- নিজস্ব কোন জমি নেই
- প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভের সন্তান গর্ভাবস্থায় বা জন্মের দুই বছরের মধ্যে মৃত্যু হলে তৃতীয় গর্ভধারণকালে গর্ভবতী মা ভাতার প্রাপ্য হবেন
গর্ভকালীন অবস্থায় এই নির্দেশনার সবকিছু আপনার ঠিকঠাক থাকলে, অবশ্যই আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার যোগ্য।
আরো পড়ুনঃ তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম
গর্ভবতী কার্ড করতে যা যা লাগবে
- ভাতাভোগীর বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে হতে হবে
- ভাতাভোগীকে ৪-৬ মাসের গর্ভবতী হতে হবে
- নাগরিকত্বের সনদ
- জন্ম নিবন্ধন সনদ
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ইউনিয়ন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কর্তৃক প্রদত্ত সনদ
- ভাতাভোগীর একটি অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ব্যাংক, বিকাশ, নগদ যা থাকে, যা তাকে অবশ্যই একটি দিতে হবে।
মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের লিংকে গিয়ে সঠিকভাবে এই সব তথ্য দিয়ে সাবমিট করে দিবেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় নিয়ে সর্বশেষ
সন্তান গর্ভে থাকাকালীন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক এবং মানসিক অনেক সেবার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে অনেক মা গর্ভবতী সময়ে শারীরিক বা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন না।
তাই দরিদ্র নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভবতীর সময়ের সকল দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার এই মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করেছেন। যাতে দরিদ্র নারীরাও গর্ভবতী সময়ে সঠিক সেবা ও সঠিক খাদ্যাভাস গ্রহণ করতে পারেন। এতে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবেন।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়, মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইনে আবেদন, অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম, মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকার সহ গর্ভকালীন নানা বিষয়ের উপর তথ্য।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায় এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রয়োজনীয় নানা বিষয় এর উপর আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আপনার জন্য রইল শুভকামনা। ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।