সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত টাকা এই সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। আজকাল দেশে কর্মসংস্থানের অভাব। হাজার হাজার তরুণ তরুণী শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় চাকরি নেই। তাই অধিকাংশ তরুণই শিক্ষিত হওয়া সত্বেও অর্থ উপার্জনের জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে।
আর প্রবাস জীবনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ যুবকের পছন্দের তালিকায় থাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সৌদি আরব, ওমান, কাতার, বাহারাইন এর মত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে বেশ কিছুটা টাকা কম প্রয়োজন হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে হলে গুনতে হয় অনেক টাকা।
দেশে কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে অধিকাংশ যুবকই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে চায়। বিশেষ করে সৌদি আরবে। আজ সৌদি আরবের কাজের ক্ষেত্রে ফ্রি ভিসার তুলনায় অধিকাংশ যুবকেরই পছন্দের তালিকায় থাকে কোম্পানি ভিসা। এর অবশ্য বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। সেসব নিয়েই আলোচনা করতে চাচ্ছে আজকের আর্টিকেলে।
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা বেতন কত? সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত? সৌদি আরবের ক্লিনার ভিসা ইত্যাদি। চলুন শুরু করা যাক।
(toc) #title=(সূচিপত্র)
সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত?
সৌদিতে কোম্পানি ভিসার বেতন কত? এই প্রশ্নের উত্তরটি যেমন অধিকাংশ লোকই জানতে চায়, এর পাশাপাশি অনেকেই জানতে চায় সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত? সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা বেতন কত? এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমরা একটু সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা নিয়ে আলোচনা করি।
ফ্রি ভিসা মূলত এমন একটি ভিসা ব্যবস্থা যে ভিসা নিয়ে আপনি সৌদি আরবে গেলে যে কোন কোম্পানিতে যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কাজের কোন নির্ধারিত টাইম কিংবা বিধি নিষেধ থাকবে না।
অন্যদিকে কোম্পানির ভিসায় যদি আপনি সৌদি আরবে যান, তাহলে কোম্পানির বেধে দেওয়ার নির্দিষ্ট টাইম টুকুতেই আপনি কাজ করতে পারবেন, এবং ঘন্টা প্রতি কোম্পানি যত টাকা ধার্য করবে, ঠিক তত টাকাই আপনাকে বেতন দেওয়া হবে। এর বাইরে আপনি একটি টাকাও পাবেন না।
রিলেটেড: সৌদি আরবের সকল কোম্পানির নাম ও তালিকা (২০২৫ আপডেট)
অন্যদিকে আপনি যদি ফ্রি ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান, তাহলে আপনি আপনার খুশি মত যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ কাজ করতে পারবেন। এবং সেক্ষেত্রে কোম্পানির তুলনায় দেখা যায় যারা ফ্রি ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যান তারাই বেশি উপার্জন করতে পারেন।
তবে ফ্রি ভিসায় সবসময় কাজ নাও থাকতে পারে এবং ফ্রি ভিসায় সৌদি আরব যাওয়ার পর থাকা এবং খাবার খরচ সম্পূর্ণ নিজেকেই বহন করতে হয়। সৌদি আরবে কেউ যদি ফ্রি ভিসা নিয়ে যেতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে ফ্রি ভিসার দাম পরবে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মত এবং বিমান খরচ, মেডিকেল ও ইত্যাদি যাবতীয় জিনিস মিলিয়ে খরচ পরতে পারে সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা ২০২৫
অনেকেই গুগলে সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা নিয়ে সার্চ করে থাকেন। জানতে চান সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসার খরচ কেমন? সৌদি আরবে অনেকগুলো কোম্পানি রয়েছে। যেমন তেলের কারখানা, ফাস্টফুড আইটেম তৈরির কারখানা, বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি। অনেকের আত্মীয় স্বজন সৌদি আরবে থাকে এবং তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজও করে।
সুতরাং কেউ যদি কোম্পানির ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যেতে চায় তাহলে তাদের আত্মীয়র মাধ্যমে যেতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সৌদি আরবের কোম্পানির মধ্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরই সেই কোম্পানিতে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। এবং কেউ যদি কোম্পানির ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যেতে চায় তাহলে তার সব মিলিয়ে খরচ পড়বে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মতো।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত টাকা? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, শুরুতেই সৌদি আরবের যেকোনো কোম্পানিতে একজন কর্মীর ঘন্টা হিসেবে বেতন ধরা হয় এবং সেখানে সর্বনিম্ন আট ঘন্টা কাজ করতে হয়। সে অনুযায়ী মাসিক বেতন ধরা হয় প্রথম অবস্থায় ১৫০০ থেকে ১৭০০ রিয়ালের মধ্যে। এরপর এই বেতন ধীরে ধীরে বাড়ানো হয় এবং কোন কোন কোম্পানিতে চাইলে কর্মীরা ওভারটাইম ও করতে পারে। আর সেজন্য আলাদা বেতন ধরা হয়।
সৌদি আরব রেস্টুরেন্ট ভিসা বেতন কত টাকা?
পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও কিন্তু দিন দিন বেশ উন্নত হচ্ছে। যার প্রভাব সৌদি আরবেও পরেছে। নতুন নতুন পার্ক এবং অনেক রেস্টুরেন্ট সৌদি আরবে তৈরি হচ্ছে। আর সৌদি আরবের রেস্টুরেন্ট গুলোতে রেস্টুরেন্ট মালিকরা প্রতিবছরই দক্ষ, অদক্ষ কর্মী নিয়োগ করে থাকে। সুতরাং চাইলে সৌদি আরবে রেস্টুরেন্ট ভিসা নিয়েও যাওয়া যেতে পারে।
আর রেস্টুরেন্ট ভিসার একটি সুবিধা হল খরচ কম হয়। থাকা এবং খাওয়া কোম্পানির মধ্যেই পরে। আপনি যদি সৌদি আরবের রেস্টুরেন্ট ভিসা নিয়ে যান তাহলে আপনার ডিউটি টাইম হবে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা এবং ওভারটাইম করতে পারবেন দু'ঘণ্টার মতো।
থাকা এবং খাওয়ার খরচ বাদে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার ডিউটি করে আপনি প্রতি মাসে অনায়াসেই ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা শুরুতে উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া টিপস পেলে তো আর কোন কথাই নেই। সৌদি আরবের মতো মরুভূমির দেশে রেস্টুরেন্ট ভিসাই হচ্ছে সবচেয়ে আরামের ভিসা।
রিলেটেড: সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয়? ফিট হওয়ার উপায় জেনে নিন
সৌদি আরব ক্লিনার ভিসা বেতন কত টাকা
অনেকে সৌদি আরব ক্লিনার ভিসা সম্পর্কে জানতে চান। এই ভিসাটি হচ্ছে মূলত ক্লিনিং ভিসা। অর্থাৎ সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বড় বড় মসজিদ কিংবা কাবা প্রাঙ্গন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে বিভিন্ন কোম্পানির মালিক কিংবা সৌদি সরকার প্রতি বছর ক্লিনার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
আপনি যদি সৌদি আরবে ক্লিনার ভিসা নিয়ে আসেন তাহলে আপনার কাজ হবে মূলত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা। সেক্ষেত্রে বেসিক ডিউটি হলো ৮ থেকে ১০ ঘন্টা।
সৌদি আরবে যারা ক্লিনার ভিসা নিয়ে আসতে চান তাদের সব মিলিয়ে খরচ পরবে তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মতো এবং শুরুর দিকে বেতন হবে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত টাকা ২০২৫ সালে
অর্থ উপার্জনের আশায় কর্মের তাগিদে সৌদি আরবের যাওয়ার আগে হাজারো প্রবাসীর প্রশ্ন যেন একটাই সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত?
এর উত্তর হল সৌদি আরবে এক এক কোম্পানিতে এক এক বেতন দিয়ে থাকে। আপনি যদি কোন কন্সট্রাকশন কোম্পানির অধীনে যান এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করে থাকেন, তাহলে আপনার বেতন শুরুর দিকেই ২৫০০ থেকে ৩ হাজার রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকার মত।
তাছাড়া আপনি যদি কোন ফাস্টফুডের দোকান, কিংবা অন্য কোন তেলের কোম্পানিতে যান সেক্ষেত্রে শুরুর দিকে বেতন পড়বে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত।
সৌদি আরবের আরামকো কোম্পানি ভিসা
আরামকো হলো মূলত সৌদি আরবের তেল পরিশোধনকারী একটি কোম্পানি। আর এই কোম্পানিটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কোম্পানির মধ্যে একটি। শুধু বাংলাদেশই নয় সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষ এই কোম্পানিতে এসে কাজ করে। আর এই কোম্পানিতে দক্ষ লোক নিয়োগ করে থাকে। এবং এই কোম্পানিতে বেতন ও বেশ ভালো পরিমাণের।
উপসংহার
আপনি সৌদি আরবে ফ্রি ভিসায় আসুন কিংবা কোম্পানির ভিসায়, যে ভিসা নিয়েই আসুন না কেন আমি বলব দালালের হাত থেকে দশ হাত দূরে থাকবেন। এমন অনেক দালাল রয়েছে যারা ভালো কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
এবং ভুক্তভোগীরা যখন সেই দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান তখন দেখেন তাদের কাজ অনেক কঠিন। তাই এই সব বিষয়ে অনেকটা সচেতন থাকবেন। এবং অবশ্যই যে কোন দেশে পাড়ি দেওয়ার পূর্বেই কিছু না কিছু দক্ষতা অর্জন করে বিদেশে পাড়ি দিবেন।