অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ক্ষ্যাত বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বের নানান প্রান্ত হতে প্রতিবছরই লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন এদেশে যার অন্যতম কারণ হলো এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশেষ পালক হচ্ছে চট্টগ্রামে অবস্থিত সীতাকুণ্ড।
সীতাকুণ্ড মূলত চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা দিন দিন ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে যার অন্যতম কারণ হলো এখানে অবস্থিত দর্শনীয় স্থানসমূহ ও ঝর্ণাগুলো। চট্টগ্রাম জেলা হতে ৯ কিলোমিটার উত্তরে ও ঢাকা জেলা হতে ২১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে মূলত সীতাকুন্ড থানার অবস্থান।
সীতাকুন্ড উপজেলায় দেশের প্রথম ইকোপার্ক অবস্থিত, পাশাপাশি বিকল্প শক্তি প্রকল্প, বিশেষ করে বায়ু শক্তি এবং ভূ-তাপীয় শক্তি প্রকল্প অবস্থিত। যেগুলোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে এই উপজেলাটি। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থাকার ফলে প্রতিবছর দেশের নানান প্রান্ত হতে মানুষ সীতাকুন্ডে ভ্রমন করতে যায়।চলুন আজকের আর্টিকেলে সীতাকুন্ড ভ্রমনের ট্যুর প্ল্যান সম্পর্কে জানা যাকঃ
(toc) #title=(সুচিপত্র)
সীতাকুন্ড ট্যুর প্ল্যানে কয়দিন হাতে রাখবেন?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হতে অথবা কুমিল্লা বা রাজশাহী হতে এক দিনেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভ্রমনে ঘুরে আসা যায়। তবে একদিনে সকল দর্শনের স্থান ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। তাই আপনি যদি ডে ট্যুরের প্ল্যান করেন তাহলে একদিনে বেশকিছু স্থান ঘুরে আসতে পারলে সম্পূর্ণ সীতাকুণ্ডের মজা উপভোগ করার জন্য আপনার দুই রাত এবং তিন দিনের প্ল্যান করলেই সবচেয়ে ভালো হবে।
এর অন্যতম কারন হল সীতাকুন্ডের পাশাপাশি খৈয়াছড়া ঝর্না দেখতে যাওয়া। যা মূলত মিরসরাই উপজেলায় পরেছে কিন্তু সীতাকুন্ড থেকে কাছে হওয়ায় এবং একদিনে পাহাড়, ঝর্ণা ও সমুদ্র এই তিন ধরণের প্রকৃতির ভ্রমণ অভিজ্ঞতার জন্যে খৈয়াছড়া ঝর্ণা না ঘুরতে গেলে ভ্রমন অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
সীতাকুন্ড কিভাবে যাবেন
ঢাকা হতে বিভিন্নভাবেই সীতাকুন্ডে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট হতে বাস সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যায়।এছাড়া আপনি ট্রেনের মাধ্যমে ও সীতাকুণ্ডে যেতে পারেন।
ঢাকা হতে বাসেঃ ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের খুব সহজেই যোগাযোগ থাকায় প্রতিদিনই প্রায় ঢাকা হতে চট্টগ্রামগামী বাস পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামগামী বাসগুলি মূলত সীতাকুণ্ড হয়ে গিয়ে থাকে। ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী, বাইপাইল, ফকিরাপুল, মহাখালী ইত্যাদি বাস স্ট্যান্ড হতে এনা পরিবহন, ঈগল, রয়েল-৭১, শ্যামলী, সৌদিয়া, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি ননএসি এবং এসি বাস ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে নন এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১২০০ টাকার মধ্যে জনপ্রতি।
ঢাকা হতে ট্রেনের মাধ্যমেঃ ঢাকা হতে আপনার চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডে ট্রেনের মাধ্যমে যেতে হলে প্রথমে রেলওয়ে স্টেশন হতে ফেনীর বাস গিয়ে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে ১৫ টাকা হতে ২০ টাকা অটো রিস্কা ভাড়া নিয়ে মহিপাল বাস স্ট্যান্ড নামতে হবে।
মহিপাল বাস স্ট্যান্ড হতে বিভিন্ন লোকাল বাস ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা ভাড়ায় ডিরেক্ট সীতাকুন্ড দিয়ে থাকে। তাছাড়া ঢাকা হতে প্রতিদিন রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে মেইল ট্রেনে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিট পেতে চাইলে আপনাকে অনেক আগে থেকেই ট্রেনে বসে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ট্যুর একদিনের হলে বাসেই যাওয়া শ্রেয়।
তাছাড়া আপনি যদি অন্য জেলা হতে সীতাকুণ্ডে আসতে চান তাহলে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সব জায়গা থেকেই সীতাকুণ্ডে আসার বাস পাওয়া যায়।
সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করবোঃ
১। সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান - মেলখুম ট্রেইল
এটি মূলত একটি অফ ট্রেইল যা একদিন ভ্রমণ করার জন্য যথেষ্ট। এটি পরিস্কার পরিছন্নতার জন্য পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে এসেছে শুরু থেকেই। মেলখুম ট্রেইলে আপনি কখনো কোন পাথর দেখতে পাবেন না। তবে পরিষ্কার স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের আলো যেন এক একটি মুক্তোর মত ফুটে উঠবে এবং যা আপনার মনকে আপ্লুত করতে যথেষ্ট।
এখানে উপস্থিত স্থানীয়রা ট্রেইল থেকে এক ধরনের বিশেষ লতা ব্যবহার করে মাছ শিকার করে এবং সেই লতার সাদা রস পানিতে ফেললে সেখানে বিষক্রিয়ায় মাছ ধরা পড়ে যার জন্য মূলত সেই লতার নাম অনুসারে এই ট্রেইলের নামকরণ করা হয়েছে। তবে অব্যশই সাঁতার না জানলে অবশ্যই খুমে নামবেন না।
তারপর সীতাকুন্ডের ফিরে রাতে হোটেলে বা রিসোর্টে থাকতে পারবেন। সীতাকুন্ডে উপজেলায় অনেকগুলো হোটেল বাড়ি রয়েছে সেখানে ডাবল বেড বা সিঙ্গেল বেডের আবাসিক হোটেল থাকার কারণে খুব সহজেই এখানে হোটেল বা রিসোর্ট পাওয়া যায়। পরের দিন সকালে নাস্তা করে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি বা অটো ভাড়ায় চলে যান প্রথম গন্তব্য চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে।
২। সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান - চন্দ্রনাথ পাহাড়
এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় মূলত রয়েছে প্রাচীন ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ মন্দির। এই মন্দিরের নাম অনুসারে মূলত এই পাহাড়ের নামকরণ করা হয়। মূলত হিন্দুধর্মালম্বীদের জন্য একটি পবিত্র স্থান হওয়ার কারণে এখানে হিন্দু পর্যটকায় বেশি ভ্রমণ করতে আসে।
তবে তার পাশাপাশি মন্দির অনেক প্রাচীন হওয়ার কারণে প্রাচীন ঐতিহ্য উপভোগ করতে পাশাপাশি পাহাড়ের সৌন্দর্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাই এই মন্দিরে ঘুরতে আসেন। তাই পাহাড়ে উঠার সময় শুকনা কিছু খাবার, পানি বা স্যালাইন সাথে নিয়ে পাহাড়ে উঠবেন।
কারণ উপরে সে সকল খাবারই আপনাকে দ্বিগুন দামে কিনতে হবে। পাশাপাশি ছোট একটি বাশ নিয়ে পাহাড়ে উঠবেন বর্ষার কারণে পাহাড় মাঝে মধ্যে বেশ পিছিল হয়ে পরে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে মূলত ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে। উপরে উঠার পর আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার সেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা কষ্টকে এক নিমিষেই ভুলিয়ে দিবে।
চন্দ্রনাথ পাহাড় হতে দুপুরের মধ্যে নেমে পাহাড়ের পাদদেশে অনেকগুলো খাবার হোটেল পাওয়া যায় সেখান থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যেতে পারেন খৈয়াছড়া ঝর্না দেখতে। যা চন্দ্রনাথ পাহাড় হতে ৩০/৪০ মিনিট দূরত্ব হতে অবস্থিত।
খৈয়াছড়া ঝর্ণার ১৩ টি ধাপ যেন একেক রকম মুগ্ধতার পসরা সাজিয়ে দর্শনার্থীদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। ১৩ টি ধাপ ভ্রমণ করতে বেশ কিছু সময় লাগতে পারে তাই সবগুলো ধাপ ভ্রমণ না করেও মূলধারটি ঘুরে আসতে পারেন।
ঝর্নারের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার পর সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারেন সীতাকুণ্ডে হোটেলে এবং রাতে বিশ্রাম নিয়ে সকালে বের হয়ে যেতে পারেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্য।
৩। সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান - গুলিয়াখালী বিচ
সীতাকুন্ড হতে এই বিচের অবস্থান প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। একপাশে সবুজ চর ঘাসে মোড়ানো এবং অপর পাশে সমুদ্রের গর্জন যে কাউকে আকর্ষণ করতে যথেষ্ট। তাই প্রতি বছর ভ্রমণকারীরা সীতাকুণ্ড ভ্রমণ করতে গেলে গুলিয়াখালী বীচে অবশ্যই ভ্রমণ করতে যান।
কারণ সীতাকুণ্ডের ঝরনার পাশাপাশি পাহাড় ও সমুদ্র এই তিনটি একসাথে উপভোগ করবার জন্য গুলিয়াখালি বেশ উপভোগ্য একটি স্থান। তিন দিনের ভ্রমণ শেষে রাতের বাসে অথবা ট্রেনে করে খুব সহজে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি রাতে বাসে উঠেন পরদিন সকালবেলায় ঢাকায় পৌঁছে যাবেন।
সীতাকুন্ড ভ্রমন খরচ
সীতাকুণ্ডে দুই থেকে তিন দিন থাকতে হলে। আপনার যাতায়েত খরচ ও খাবার খরচ, হোটেল ভাড়া খরচ সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা মত খরচ হবে।
সীতাকুন্ড ভ্রমনে সর্তকতা
- সাঁতার না জানলে ট্রেইলে নামবেন না
- হাপানি বা শ্বাসকষ্ঠ থাকলে অবশ্যই পাহাড়ের উপরে উঠা নিষেদ
- সন্ধ্যার আগে আগেই পাহাড় হতে নেমে যান
- ভ্রমন গাইড সাথে রাখুন
- বিপদগ্রস্থ মনে হলে ৯৯৯ কল করুন
সীতাকুন্ড ট্যুর প্ল্যান - সীতাকুন্ড দর্শনীয় স্থান নিয়ে সর্বশেষ
ভ্রমণের জন্য সীতাকুণ্ড একটি অসাধারণ জায়গা। আপনি যদি পরিবার প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে যেতে চান তবে এখনই আদর্শ সময়। আপনার সীতাকুন্ড ট্যুর প্ল্যান সুন্দর হোক। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ
কক্সবাজার হোটেল ভাড়া 2023 - কক্সবাজার হোটেল ভাড়া কত ২০২৩
ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান ভাড়া | ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান ভাড়া ২০২৩