প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত জানতে চান। বর্তমান সময়ে বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই বেকারত্বের হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দিচ্ছে প্রবাসী লোন।
অর্থাৎ যদি আপনি টাকার অভাবে বিদেশে যেতে না পারেন, তবে আপনার জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ কারণ আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নিয়ে সহজেই বিদেশে যেতে পারবেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ পড়বেন। তবে চলুন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সমন্ধে বিস্তারিত জেনে নেই।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হলো বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, প্রবাসীদের জন্য বিশেষায়িত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ যারা বিদেশে যেতে আগ্রহী কিন্তু টাকার অভাবে বিদেশে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের একটি আর্থিক সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
বাংলাদেশের প্রবাসীদের আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি এই সমন্ধে।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম নিয়ে কিছু কথা
অনলাইনে প্রবাসী ব্যাংকের লোন আবেদন করা যায় এই ব্যাপারে আপনারা অনেকেই জানতে চান। কারণ অনলাইনে সহজ পদ্ধতিতে লোনের জন্য আবেদন করা যায়।
তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অনলাইনে আবেদন করা যায় এই তথ্যটি পুরোপুরিভাবে সঠিক নয়। এর কারণ হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের জন্য আপনাকে সরাসরি ব্যাংকে গিয়েই লোনের জন্য আবেদন করতে হবে।
তবে আপনি অনলাইন থেকে তাদের আবেদন ফ্রম ডাউনলোড করে কম্পিউটার দোকান প্রিন্ট আউট করে ঘরে বসেই আপনি নিজেই ফিল-আপ করতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করার সঠিক নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ আপনার জানা থাকলে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজন মত ব্যাংক লোন করতে পারেন।
অভিবাসন ঋণ- যারা বিদেশে যেতে চাচ্ছে,কিন্তু ভিসা হাতে থাকার পরও আর্থিক সচ্ছলতার কারণে বিদেশ যাওয়া সম্ভব হচ্ছ না, তাদের জন্য যে লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটাই হচ্ছে অভিবাসন ঋণ।
পুনর্বাসন ঋণ- কোন ব্যক্তি বিদেশে যাওয়ার পর বিভিন্ন কারণবশত সেখান থেকে দেশে ফিরে আসার পর নিজের দেশে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কোনো প্রকল্প গ্রহন করলে তাদের যে ঋণ প্রদাণ করে সেটাই হচ্ছে পুনর্বাসন ঋণ।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ- বিদেশে চাকরি করে এমন কোনো ব্যক্তির পরিবারের সদস্যর ঋণ প্রয়োজন হলে, জামানত বিহীন এবং জামানত সহ যে ঋণ প্রদানের সুবিধা প্রদান করা হয় সেটাই হলো বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ।
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ- করোনা মহামারীর সময় বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল। এরুপ পরিস্থিতিতে তাকে অথবা তার পরিবারের কোনো একজনকে পুনর্বাসনের জন্য যে লোনের সুবিধা দেয়া হয়েছিল সেটাই হচ্ছে মূলত বিশেষ পুনবার্সন ঋণ।
আরো পড়ুনঃ কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ বেশি
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের আবেদন সঠিক পদ্ধতি
যদি আপনার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার পদ্ধতি জানা থাকে তবে আপনি খুব সহজেই ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-এ ঋণের জন্য আবেদন করা যায়।
আপনি চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ফরম পূরণ করে নিয়ে সরাসরি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন নিতে পারেন। প্রবাসী ব্যাংক লোন গ্রহণ করতে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে।
তবে চলুন জেনে নেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে। সেটা জেনে নেই।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য ও বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। যেসব কাগজপত্র ছাড়া আপনি কোনভাবেই লোন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন না। তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- আবেদনকারীর ভিসা ফটোকপি। (ভিসা উঠানোর আগে আবেদন করা যাবে না)।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা চার কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- নমিনির জাতীয়পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধনফটোকপি।
- আবেদনকারীর পাসপোর্ট এর প্রথম দুই পৃষ্ঠার ফটোকপি।
- চেয়ারম্যান কতৃক আবেদনকারীর সার্টিফিকেট অথবা নাগরিকত্ব সনদপত্র।
- আবেদনকারীর বিএমএটি স্মার্ট কার্ড (বহির্গমন ছাড়পত্র) এবং প্রশিক্ষণ সনদপত্রের ফটোকপি।
যদি আপনার এসব কাগজপত্র সংগ্রহ করা থাকে তবে আপনি খুব সহজে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন। তাই আপনারা যারা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তারা এসব কাগজপত্র আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন।
তবে এসব কাগজপত্র ছাড়াও ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ অনুযায়ী আরও বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগতে পারে। তাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপনারা জেনে নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ সহজে টাকা ইনকামের উপায় কি জেনে নিন বিস্তারিত
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের যোগ্যতা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন গ্রহণ করার জন্য আবেদনকারীর বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। কেননা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক গ্রহণ করতে হলে এসব যোগ্যতা আবেদনকারীর প্রয়োজন। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের যোগ্যতা দেওয়া হলো-
- আবেদনকারীর কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
- আবেদনকারীর বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারী কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য লোন পাবেন। ভ্রমণ কিংবা পড়াশোনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন দেওয়া হবে না।
- আবেদনকারীর প্রবাসী কল্যাণ লোন পেতে হলে একজন নিকট আত্মীয়কে জামিনদার রাখতে হবে। জামিনদার ব্যাংকের সাথে লেনদেন করতে হবে। জামিনদার অবশ্যই আর্থিকভাবে সচ্ছলতা থাকতে হবে।
আবেদনকারীর এসব যোগ্যতা থাকলেই কেবল প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে। তাছাড়াও আবেদনকারী প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
আরো পড়ুনঃ বিদেশ থেকে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম | সুদের হার কত? কত টাকা লোন নেওয়া যায়?
যদি আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার নিয়ম,কত টাকা লোন নেওয়া যায়, সুদের হার কত এসব বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নে উত্তর সমূহ।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ১ লক্ষ টকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রবাসী অভিবাসন ব্যাংক লোন প্রদান করে থাকে।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসন লোন সর্বোচ্চ ২ বছরের জন্য প্রদান করে থাকে।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসন লোন ১০টি অথবা ২২ টি কিস্তির মাধ্যমে শেষ করতে হয়। ১ বছর মেয়াদি হলে ১০টি কিস্তি এবং ২ বছর মেয়াদি হলে ২২টি কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। লোন নেওয়ার প্রথম ২ মাস কিস্তি দিতে হয়না, তৃতীয় মাস থেকে শুরু করে প্রতি মাস কিস্তি দিতে হয়।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রবাসী অভিবাসন লোনের জন্য সুদ দিতে হয় ৯% শতাংশ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের আবেদন ফরম ডাউনলোড
যদি আপনি বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে আর যদি আপনার আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তবে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে পারেন। নিচে থকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের আবেদন ফরম ডাউনলোড করে নিন।
- স্থায়ী আমানত/সঞ্চয়ী স্কিম/বিশেষ স্কিম হিসাব খোলার ফরম
- সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের হিসাব খোলার ফরম
- প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব খোলার ফরম
- ব্যক্তিক হিসাব খোলার ফরম
উপসংহার
বিদেশে যাওয়ার জন্য আর্থিকভাবে সাহায্যর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকের পোস্টটি তথ্যবহুল হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।