সোনালী ব্যাংক লোন সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে অনেকেই সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম জানা না থাকার কারণে অনেকেই সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারছে না।
তাই আপনি যদি সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য লোন গ্রহণ করতে চান আপনার জন্য কি কি শর্ত প্রযোজ্য হবে, লোন গ্রহণ করতে কি কি প্রয়োজন হবে এ সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ব্যাংক লোন কি ?
আর্থিক সংকট দূর করার জন্য বিভিন্ন মেয়াদের ভিত্তিতে ব্যাংক যে লোন প্রদান করে থাকে তাকে ব্যাংক লোন বলা হয়। ব্যক্তিগত,ব্যবসা চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি কারণে ব্যাংক লোন নেওয়া যায়। বাংলাদেশের সকল নাগরিক ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক লোন নিয়ে কিছু কথা
সোনালী ব্যাংক বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মেয়াদের লোন প্রদান করছে। বিশেষ করে এই লোনগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক শিক্ষা লোন ও সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন অন্যতম। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সোনালী ব্যাংক।
তারা জনগণের মান উন্নয়নের জন্য আলাদা আলাদা খাতে লোন প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। যদিও আপনিও সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তবে আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম ২০২৪
যদি আপনি একজন সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকেন তবে আপনি নিশ্চয়ই সোনালী ব্যাংকের লোন সম্পর্কে জানতে চাইবেন। সোনালী ব্যাংকের লোন নেওয়ার জন্য আপনি প্রথমে আপনার নিকটস্থ Sonali Bank branch-এ যোগাযোগ করুন।
এরপর ব্যাংকের শাখা থেকে সোনালী ব্যাংকের লোন আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন, এরপর আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে ফরম-টি সুন্দরভাবে পূরণ করুন।
তারপর লোনের আবেদনের ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সংযুক্ত করুন। এরপর পূনরায় আপনার নিকটস্থ সোনালী ব্যাংকের শাখায় জমা দিন।
সোনালী ব্যাংকের কতৃপক্ষ আপনার সকল ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে আপনার তথ্যর সত্যতা ভেরিফিকেশন করবেন। পরবর্তীতে যদি আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য হন্ তবে আপনাকে জানানো হবে।
তবে আপনার এই তথ্য-টি জেনে রাখা ভালো যদি আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে চান তবে অবশ্যই একজন গ্যারান্টার লাগবে। লোন নেয়ার পূর্বে এই ব্যাংক থেকে আপনাকে একটি একাউন্ট করতে হবে এবং গ্যারান্টারকে অবশ্যই সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তথা মেম্বার হতে হবে।
আরো পড়ুনঃ জরুরী লোন কিভাবে পাবেন জেনে নিন বিস্তারিত - জরুরী লোন বাংলাদেশ
সোনালী ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে
সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের জন্য অবশ্যই গ্রাহকের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য লাগবে। সাধারণত লোনের প্রকারভেদ অনুযায়ী কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস ভিন্ন হতে পারে। সোনালী ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র কিংবা ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হতে পারে। তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/ড্রাইভিং লাইসেন্স/পাসপোর্ট এর ফটোকপি
- আবেদনকারী অবশ্যই সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার হতে হবে
- আবেদনকারী স্টুডেন্ট হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা প্রত্যায়ন পত্র
- স্টুডেন্টের ক্ষেত্রে তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন
- আবেদনকারী লোন গ্রহণের কারণ উল্লেখ করতে হবে
- আবেদনকারীর অবশ্যই একজন সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে গ্যারান্টার হতে হবে।
- আবেদনকারী ও গ্যারান্টারকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে
- যথাযথভাবে লোন আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে
সাধারণত ব্যাংকের লোনের প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। তবে আপনি কোন ধরনের লোন গ্রহণ করবেন তা জেনে নিয়ে উপযুক্ত ফরম পূরণ করবেন।
তাছাড়াও আপনি ব্যাংক নেওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করে আপনার লোনের খাতের উপর নির্ভর করে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা ভালোভাবে জেনে নিবেন।
সোনালী ব্যাংক লোন সমূহ
বাংলাদেশের জনগণের মান উন্নয়নের জন্য সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন খাতে লোন প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। সোনালী ব্যাংকের কয়েক ধরনের লোন নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। তবে, চলুন সোনালী ব্যাংক কি কি খাতের লোন প্রদান করে তা জেনে নেই।
- সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন।
- প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প।
- ফরেন এডুকেশন ঋণ প্রকল্প।
- সরকারি ভাতা অথবা শুধুমাত্র প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মেয়াদী ঋণ।
- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ।
- বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী।
- সোনালী ব্যাংক স্যালারি লোন।
- সোনালী ব্যাংক শিক্ষা লোন।
- সোনালী ব্যাংক শিক্ষক ও চাকরিজীবী লোন কর্মসূচি।
বর্তমানে সোনালী ব্যাংক উপরের খাতগুলোতে সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকদের এসব লোন প্রদান করছে। আপনিও যদি সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি লোন নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
সোনালী ব্যাংকের পার্সোনাল লোন সর্বোচ্চ ১লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাবে। তবে এই পার্সোনাল লোন সবাই নিতে পারবে না। শুধুমাত্র যাদের বেতন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যেমে জমা হয় শুধু তারাই এই লোন গ্রহণ করতে পারবে।
বিশেষ করে সরকারি ও আধা সরকারি কোম্পানির কর্মকর্তাগণ নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। মূল কথা হচ্ছে যাদের স্থায়ী চাকুরী রয়েছে তারা এই লোন নিতে পারবেন।
আপনার অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে জমা করা বেতনের টাকার পরিমাণ ঋণের কিস্তির থেকে কম অথবা সমান হলে, আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে সেই পরিমাণের দুই-তৃতীয়াংশ লোন নিতে পারবেন। লোন গ্রহণের পর সোনালী ব্যাংক চাইলে সুদের হার বৃদ্ধি করতে পারে।
সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন নিতে যা যা লাগবে
সোনালী ব্যাংক থেকে পার্সোনাল লোন নিতে চাইলে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন নিতে যা যা লাগতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
- আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- গ্যারান্টার এর পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি ও তার পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রীর ছবি ও আইডি কার্ড প্রয়োজন হতে পারে
- আবেদনকারীর ও গ্যারান্টার এর স্বাক্ষর করা একটি Blank চেক
- আপনার সঞ্চয় দেখানো যেকোনো একটি নথি প্রদান করতে হবে
- এমপিও ভুক্ত চাকরি হলে, এমপিওর কপি প্রয়োজন
এছাড়াও যদি সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আর কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগে তবে ব্যাংক থেকে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনি সোনালী ব্যাংকে লোন ১ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিতে সক্ষম হবেন। এবং লোনের মেয়াদ হবে ১ থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত।
আরো পড়ুনঃ আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট কত
সোনালী ব্যাংকের লোন গ্রহণ করে থাকলে আপনার অবশ্যই সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট কত এই ব্যাপারে জেনে রাখতে হবে। সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট তথা সুদের হার মাত্র ১২%, তবে ব্যাংকের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী যেকোনো সময় কর্তৃপক্ষ সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তন করতে পারে।
সোনালী ব্যাংক লোনের কিস্তি
যদি আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করে থাকেন তবে সোনালী ব্যাংকের কতৃপক্ষ আপনাকে প্রতিমাসে কত টাকায় কিস্তি দিতে হবে তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিবে। এছাড়াও আপনি এই ব্যাপারে ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে পারেন।
উপসংহার
যদি আপনি একজন সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক হয়ে থাকেন তবে আপনি সোনালী ব্যাংকের লোন সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। কেননা অধিকাংশ সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকের সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে থাকেন।
তাই আজকের এই পোস্টটিতে আমি সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যদি পোস্টটি তথ্যবহুল হয় তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।