প্রতিটি মানুষের দেহেই নানা হরমোন থাকে। তাবে লিঙ্গভেদে হরমোন আলাদা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মেয়েদের মূল হরমোন হল ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন হচ্ছে টেস্টোস্টেরন।
তবে এই টেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যের জন্য অনেক সময় পুরুষের গোপন ক্ষমতা কম বেশি হয়। গুরুত্বপূর্ন এই হরমোনের জন্য হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি সহ যৌ*ন কাজে সাহায্য করে। যার ফলে এই হরমোনের মাত্রা কমতে থাকলে যৌ*ন সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক নানা সমস্যার দেখা দেয়। মূলত টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমতে থাকে।
টেস্টোস্টেরন শরীরে কমে যাওয়ার কারণে দেহে অ্যান্ড্রোপজ হয়। অ্যান্ড্রোপজ হচ্ছে আস্তে আস্তে পুরুষত্বের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলা। টেস্টোস্টেরন হরমোন মূলত দেহে ধীরে ধীরে কমতে থাকে যার ফলাফল প্রকাশ পায় কয়েকবছর পরে। যার ফলে পুরুষের যৌ*ন চাহিদা এবং মানসিক শক্তি সবকিছুরই একটি পরিবর্তন ঘটে।
গবেষনায় দেখা গেছে ২৮-৩০ বছর বয়স হওয়ার পরে এর মাত্রা প্রতিবছর ১% করে কমে। সাধারণত ৬৫-৭০ বছর বয়স্ক পুরুষের শরীরে এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। চলুন আজকের আর্টিকেলে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন সে সম্পর্কে জানা যাকঃ
(toc) #title=(সুচিপত্র)
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন। সে*ক্স হরমোন বা টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হল মানসিক কারণ, দ্বিতীয়টি হল শারীরিক কারণ, তৃতীয়টি হল জীবনযাত্রার মান বা লাইফস্টাইল। জীবনযাপন কীভাবে করছেন সেটার ওপর নির্ভর করেও টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ঔষধের নাম
১) শারীরিক সমস্যার কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়
টেস্টোস্টেরন হরমোন মূলত টেস্ট থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে। টেস্টে কোন রকম আঘাত পেলে এ হরমোন উৎপন্ন ব্যহত হতে পারে। অন্ডকোষের বিভিন্ন রোগ হলেও যেমন অন্ডকোষ বড় বা ছোট হওয়া, কোন রকম ব্যাথা হওয়া, ক্যান্সার হওয়ার ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়।
তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে সাহায্য করে। অনেকে রয়েছেন যাদের ব্লাড প্রেসার অতিরিক্ত হয় যার ফলে টেস্ট থেকে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপন্ন কম হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দেহের অন্যান্য হরমোন গুলো কম নিঃসৃত হওয়া। মানবদেহের বিভিন্ন পয়েন্ট হতে হরমোন নিঃসৃত হয়।
যেমনঃ পিটুইটারি গ্রন্থী, এড্রেনাল গ্রন্থী ইত্যাদি গ্রন্থগুলো আমাদের দেহের হরমোন উৎপাদন করতে সাহায্য করে। এইসব গ্রন্থি হতে হরমোন কম নিঃসৃত হলে আমাদের টেস্টেও কম হরমোন উৎপন্ন হয়। এছাড়া মানবদেহের অগ্নাশয় কোন রকমের সমস্যা থাকলে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো আমাদের দেহে কোনরকম ইনফেকশন থাকলে বা ক্ষত থাকলে। অনেকেই রয়েছেন যাদের ব্লাড ইনফেকশন বা আলসার বা পাইলস জনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
এ সকল সমস্যার কারণেও মূলত টেস্টোস্টেরন হরমোন কম উৎপাদন হয়। এছাড়া আমাদের আশেপাশে অনেকেই রয়েছেন যাদের ক্যান্সার সমস্যা রয়েছে। ক্যান্সারের ফলে অনেকে কেমোথেরাপি নিয়ে থাকেন। এই কেমোথেরাপির কারণে হরমোন কমে যেতে পারে।
তাছাড়া অনেকের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে বা লিভারে সমস্যা রয়েছে। কিডনি এবং লিভার আমাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। তাই এই সকল অঙ্গের সমস্যা হলে আমাদের দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়।
অতিরিক্ত ওজন টেস্টোস্টেরন হরমোনের কমের জন্য অন্যতম একটি কারণ। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে বা দেহে চর্বির পরিমান বেশি তাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যেতে থাকে। তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ হরমোনের পরিমান কমতে থাকে তবে ভালো খাবার পারে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট
২) মানসিক কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়
আমাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যারা মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগেন,তাছাড়া কেউ আছেন যারা অল্পতেই ভয় পেয়ে যান, এছাড়া অনেকেই রয়েছেন যারা অফিসের চাপে বা পারিবারিক চাপে বিভিন্ন রকমের মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগেন।
এই ডিপ্রেশন যদি আস্তে আস্তে দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকে তার ফলে আপনার টেস্টোস্টেরন হরমোন গ্রোথ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এর কারণ হলো ডিপ্রেশনের জন্য অন্যান্য হরমোন অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসরণ হতে থাকে এবং টেস্ট হরমোন উৎপন্ন করতে ব্যহত হয়।
৩) জীবন যাপনের মানের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা অনিয়মিত জীবন যাপন করেন। অনেকেই ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করেন না, অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণের বাহিরের খাবার খাওয়ান নিয়মকরে খাবার গ্রহণ করেন না, সুষম খাদ্য গ্রহন কম করেন, তাছাড়াও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, গ্লুকোজ ও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন।
যার ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা দিন দিন কমতে থাকে এবং শরীরের চর্বি বাড়তে থাকে। আমরা যখন খাবারের সাথে অতিরিক্ত পরিমাণের গ্লুকোজ এবং সুগার গ্রহণ করে থাকি তা একপর্যায়ে আমাদের দেহে গিয়ে জমা হয়ে থাকে।
যার ফলে আমাদের দেহের উৎপন্ন টেস্টোস্টেরন হরমোন সে গ্লুকোজ এবং সুগারের সাথে মিশে গিয়ে এস্ট্রোজেনে পরিণত হয়। আমাদের দেহের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপন্নতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে আস্তে আস্তে এ হরমোনের পরিমান কমে যায়। তাছাড়া নিয়মিত মদ্য পান আমাদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কারণ এই অ্যালকোহল নিয়মিত গ্রহণ করলে তা আমাদের টেস্টে গিয়ে হরমোন উৎপাদনকে ডিএকটিভ করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমলে কিভাবে বাড়াবেন
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন তা আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। এবার আপনাদেরকে জানাবো টেস্টোস্টেরন হরমোন কমলে কিভাবে বাড়াবেন।
আমাদের দেহের সকল হরমোনের উৎপাদন নির্ভর করে আমাদের খাদ্যর ঊপর। খাদ্যের চাহিদ ভালো ভাবে পূরন না হলে হরমোনের ঘাটতি থেকে যায়। তেমনি টেস্টোস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধির জন্য সঠিক খাদ্য গ্রহন করা জরুরি।
টেস্টোস্টেরন হরমোনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ডি। দেহে ভিটামিন ডি এর মাত্রা কমে গেলে এ হরমোনে ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ডিম, দুধ, পনির, মাছ, সোয়াবিন, সবুজ সবজির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণে ভিটামিন ডি। তাই নিয়মিত খাবারে তালিকায় এসকল খাবার ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে।
তাছাড়া খাদ্য তালিকায় ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন আমাদের রুটিনে আছে কিনা সেটির বিষয়ক খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন আমাদের দেহের ফার্স্ট ক্লাস আয়রন তৈরিতে সাহায্য করবে এবং এই আয়রন আমাদের টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপন্ন করতে ব্যাপক আকারে সাহায্য করে থাকে।
তবে অতিরিক্ত মাত্রায় আয়রন আমাদের টেস্টোস্টেরণের উৎপন্ন হওয়া রোধ করতে পারে। তাই সপ্তাহে অন্তত ২ দিন আমাদের তৈলাক্ত মাছ খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তাছাড়া কুমড়োর বিচি আমাদের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্ল্যাক কফি চিনি কম দিয়ে খেলে এ হরমোন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ট্যাবলেট
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন ?
টেস্টোস্টেরন হরমোনটি তিনটি কারণে কমে থাকে। শারীরিক, মানসিক এবং জীবন যাত্রার মানের পরিবর্তনের কারণে।
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে কি ভয়ের কোন কারণ আছে ?
এতে আতঙ্কের কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায় এবং হরমোনের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন মূলত কি?
পুরুষদের পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন হচ্ছে টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনহাড়ের শক্তি বৃদ্ধি সহ যৌ*ন কাজে সাহায্য করে।
আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এবং আপনাদেরকে জানাতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের সুস্থতাই আমাদের একান্ত কাম্য। সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।