ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আমরা সবাই কমবেশ ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর নাম শুনেছি। ই ক্যাপ বা ভিটামিন ই ক্যাপসুল হলো ভিটামিন ই জাতীয় এক ধরনের ওষুধ।
আমাদের শরীরে যখন ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দেয় অথবা আমরা যখন খাবার থেকে ভিটামিন ই পাই না, তখন দেহে ভিটামিন ই এর ঘাটতি কমানোর জন্য এই ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি খেতে দেওয়া হয়। অনেকেই জানতে চান যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি?
আজকের এই লেখায় আমি ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বলবো। তাছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল কখন খাবেন, ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়, ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে আমাদের জানতে হবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি?
ই ক্যাপ বা ভিটামিন ই ক্যাপসুল হলো এক ধরনের সাপ্লিমেন্ট। একজন মানুষের দেহে যখন ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন তাকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে দেওয়া হয়।
ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি চাইলে আপনি মুখে খেতে পারবেন আবার বাহ্যিকভাবেও ব্যবহার করতে পারবেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল মূলত তিন ধরনের। যথা:
- ই ক্যাপ ২০০
- ই ক্যাপ ৪০০ ও
- ই ক্যাপ ৬০০
তবে এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ই ক্যাপ হলো ই ক্যাপ 400।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোনটা ভালো
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে বলে দেই কিভাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করবেন, বা ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম ঠিক কি?
সাধারণত ভিটামিন ই ক্যাপসুল দুই নিয়মে ব্যবহার করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে খাবারের পর অথবা খাবারের আগে ই ক্যাপসুলটি পানি দিয়ে সেবন করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে যেকোনো ধরনের কসমেটিকসের সাথে মিশিয়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যবহার করা। ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে রূপচর্চাও করা যায়। রূপচর্চায় যেভাবে ই ক্যাপসুল ব্যবহার করবেনঃ
- চুলের যত্নে মাথার স্কাল্পে তেল ম্যাসাজ করতে তেলের সাথে তিনটি ‘ই’ ক্যাপসুল নিতে পারেন। এরপর তা তেলে মিশিয়ে মাথার স্কাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন৷ এতে চুলের গোড়া হবে মজবুত ও শক্ত।
- মুখের যেকোনো ক্রিম বা বডি লোশনের সাথে মিশিয়ে নিতে পারেন ‘ই’ ক্যাপসুল। এটি আপনার ত্বককে করবে উজ্জ্বল পাশাপাশি ত্বকের সুরক্ষাও নিশ্চিত করবে।
- শরীরের দীর্ঘদিনের পুরোনো দাগ যেমন ধরুন হাতের কনুই বা হাঁটুর গাঢ় কালো দাগ দূর করতে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন যেকোনো ধরনের তেলের সাথে ‘ই’ ক্যাপসুল মিশিয়ে সে স্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এতে দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
- ঠোঁটের রং গোলাপি এবং মসৃণ পেতে যেকোনো ধরনের লিপবাম বা ভ্যাসলিনের সাথে একটি ‘ই’ ক্যাপ ভেঙে মিশিয়ে নিন এবং প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে তা ঠোঁটে লাগিয়ে ঘুমান। বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।
তাছাড়া দেহের কোন স্থানে যদি ব্রণের দাগ কিংবা ফক্সের দাগ থেকে থাকে,তাহলে সেই দাগ দূর করতে যেকোনো ধরনের তেলের সাথে একটি বা দুটি ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে নিয়ে সেই স্থানে লাগান। বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি হয়
ভিটামিন ই ক্যাপসুল মূলত দেহে ভিটামিন ই এর ঘাটতি মিটায়। যখন কোন ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দেয়,তখন তাকে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে দেওয়া হয়। তাছাড়া অনেক সময় ভিটামিন ই এর অভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় অধিক চুল পড়ে থাকে এবং আরো নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। তখন সে ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ ই ক্যাপ 400 এর উপকারিতা - e cap 400 er upokarita
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কখন খেতে হয়
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে একটু জেনে নেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল কখন খাবেন?
ভিটামিন ই এর অভাবে দেহে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন চুল পড়ে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, দেহের পেশি বা হাড় দুর্বল হয়ে পড়া, আর ঠিক তখনই ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে হয়।
মোটকথা হল দেহের মধ্যে যখনই ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দিবে, তখনই সেই ঘাটতি বা অভাব মেটানোর জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুল গ্রহণ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার উপকারিতা গুলো চলুন আগে জেনে নেই।
১। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ই ক্যাপে রয়েছে মুলত এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা কিনা আমাদের শরিরের ত্বক এবং মুখের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
২। চুল পড়া বন্ধ করতে ই ক্যাপ
চুলের যত্নে ই- ক্যাপ সব থেকে কার্যকরী। যেকোনো ধরনের তেলের সাথে ই-ক্যাপ মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে তা চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
৩। বয়সের চাপ দূর করতে সাহায্য করে
একজন মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথেই তার চেহারায় সেই বয়সের চাপ ফুটে উঠে। তার ত্বক কুঁচকে যায়, এবং ত্বকে বিভিন্ন দাগ দেখা দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বলিরেখাও দেখা দিতে পারে। আর সেই বয়সের ছাপ দূর করতেই ই ক্যাপ ক্যাপসুল অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও নখের ভঙ্গুরতা কমাতে, দেহের বেশি ও হাড় মজবুত ও সবল রাখতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এবার আসি অপকারিতায়। প্রত্যেকটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও আছে। যদিও ই ক্যাপসুল এর তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা পাওয়া যায়নি। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যদি কেউ অতিরিক্ত ই ক্যাপসুল সেবন করে, তবে তা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এছাড়া তেমন কোনো অপকারিতা নেই।
আরো পড়ুনঃ জন্মদিনের কেক বানানোর রেসিপি
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম ও ই ক্যাপ 400 এর উপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা দেহের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণের সাহায্য করে। এটি সেবন করলে পেশীয় হাড়ের দুর্বলতা কমে, ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে, চুলের গোড়া শক্ত হয়, পে- নিস বা লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে লিঙ্গ শক্ত করে। এছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ সেবন করলে শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণ হয়।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি অনেকেই জানতে চান যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৪০০ খাওয়ার নিয়ম ঠিক কি। ভিটামিন ই ক্যাপ ৪০০ খাওয়ার সর্বোত্তম নিয়ম হচ্ছে সন্ধ্যার পর হালকা নাস্তা খেয়ে এই ক্যাপসুলটি খেয়ে ফেলা। এবং উপকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই টানা একমাস খেতে পারেন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
অনেকেই আছেন জানতে চান যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়। অনেকেই আছেন যাদের চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে, ত্বকটা বেশ শুষ্ক এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা একেবারেই নেই। যার ফলে তার মুখ ফর্সা হওয়া সত্বেও তাকে ফর্সা লাগে না।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়েও কিন্তু ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়। এজন্য আপনি একটি প্যাক বানিয়ে চেহারায় ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমে দুই টেবিল চামচের মতো পেঁপের পেস্ট বা পেঁপে বাটা নিতে হবে। এবার সেই পেস্ট এর মধ্যে দিয়ে দিন এক চা চামচ মধু। এবং যোগ করুন একটি বা দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
অর্থাৎ ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি ভেঙ্গে তার ভেতরের নির্যাসটি পেঁপে বাটার মধ্যে দিয়ে দিন। এবার সবকিছু একসাথে মিশিয়ে আপনার মুখে লাগিয়ে নিন। আধা ঘন্টা লাগানোর পর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখটি ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে চাইলে দুই থেকে তিন দিন করে করে যান। বেশ ভালো ফলাফল পাবেন।
পেঁপেতে আছে পাপাইন যা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফেরাতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন ই ক্যাপসুলে থাকা পুষ্টিগুণ কোষ এর মেরামত করে। অন্যদিকে আবার মধু ত্বককে করে তোলে ময়েশ্চারাইজ।
আরো পড়ুনঃ শীতে মেয়েদের জন্য কোন ক্রিম সবচেয়ে ভালো
লেখকের শেষকথা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর উপকারিতা ও অপকারিতা ছাড়াও ভিটামিন ই ক্যাপসুল সম্পর্কে আপনারা এতক্ষণ অনেক কিছুই জানলেন। তবুও আমি সবশেষে বলবো, দেহের বাকি সব পুষ্টিগুন পুরণের পাশাপাশি, যখনই দেহে ভিটামিন ই এর ঘাটতি দেখা দিবে।
তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই ভিটামিন এই ক্যাপসুল সেবন করা শুরু করবেন। এটি আপনার দেহকে সুস্থ এবং সবল রাখতে সাহায্য করবে। এবং রূপচর্চা করতেও ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার করা ভুলবেন না কিন্তু!