অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই রোগ এক ধরনের মানসিক রোগ। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অযৌক্তিক অবসেসিভ এর চক্রে আটকে যায়। ওসিডি যেকোন মহিলা, পুরুষ বা শিশুর হতে পারে ৬ বছর বয়স থেকে একজন ব্যক্তির মধ্যে OCD এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে তবে এটি প্রায়শই কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়।
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার মানসিক ব্যাধিগুলির মধ্যে একটি। আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এ রোগে তাদের এবং অন্যদের পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
অনেকেই জানেন না এটি একটি মানসিক রোগ, এই রোগে মনোরোগবিদ্যা প্রয়োজন। এই রোগ সম্পর্কে জানলেও অনেকেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখতে চান না। যে কারণে কালক্রমে এ রোগ ভয়াবহ রূপ নেয়।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
OCD এর লক্ষণ
ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণ লক্ষণগুলি হল:
- নিজের বা অন্যদের ক্ষতি করার অযৌক্তিক ভয়।
- শরীর, কাপড় বা আসবাবপত্রে জীবাণু বা ময়লা আছে বলে বারবার অপ্রয়োজনীয় চিন্তা করা।
- যৌ*ন কল্পনা বা আবেগ উদাহরণস্বরূপ, নিষিদ্ধ এবং বিকৃত যৌ*ন চিন্তা।
- বারবার একই কাজ করা। উদাহরণস্বরূপ, গ্যাস বন্ধ বা দরজা লক করা আছে কিনা এই ধরনের চিন্তার পুনরাবৃত্তি।
- জীবাণু এবং দূষণের ভয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা।
- OCD উপসর্গ প্রায়ই গর্ভাবস্থায় প্রদর্শিত হয়।
OCD এর কারণ
ওসিডি এর আসল কারণ কি হতে পারে এটা কারো কাছে পরিষ্কার নয়। বিভিন্ন কারণে ওসিডি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপঃ
- পরিবারের কারোর ওসিডি থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে ওসিডি হওয়ার ঝুঁকি থাকে বংশগতভাবেও ওসিডি হতে পারে।
- ওসিডিতে আক্রান্ত কিছু লোকের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে বা সেরোটোনিন বা ডোপামিনের পরিবর্তনের কারণেও ওসিডি হতে পারে।
- অত্যধিক ড্রাগ ব্যবহার ওসিডির একটি গৌণ কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে।
- কিছু কিছু মানসিক রোগের প্রথম উপসর্গ হতে পারে ওসিডি ওসিডি উদাহরণস্বরূপ, ওসিডি সিজোফ্রেনিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে হতে পারে।
- এছাড়াও জীবনে অনেক কঠিন মুহূর্তের পরে অথবা জীবনের কঠিন ঘটনার পরে ওসিডি বিকাশ করতে পারে। যেমন: সন্তানের জন্ম বা মৃ-ত্যু।
ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়
OCD আসলে একটি মানসিক রোগ। এই রোগ আসলে অতিরিক্ত চিন্তা থেকে আসে বলে মনে করা হয়। ছোট জিনিসকে বড় জিনিস ভেবে নিজেকে মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া আসলে ওসিডি।
কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান যেমন অনেক এগিয়েছে, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানও পিছিয়ে নেই। এখন সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসার উপায় আছে। জেনে নিন ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয়।
যদি কোনো ব্যক্তি এই ধরনের রোগে ভুগে থাকেন তাহলে তাকে প্রচুর শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে যাতে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় এবং ঠিকমতো ঘুম হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে কেউ যদি সঠিকভাবে ঘুমায় তবে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে এবং এই ধরনের দুশ্চিন্তা কারও মনে প্রবেশ করবে না।
এছাড়াও, আমাদের এই ধরনের রোগীদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা উচিত যাদের দীর্ঘস্থায়ী খিঁচুনি রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ যদি সবকিছু পরীক্ষা করে তাকে প্রেসক্রিপশন দেন তাহলে অবশ্যই ফলাফল ভালো হতে পারে।
কিন্তু মোটামুটিভাবে আমাদের এই রোগের জন্য কত দিন ওষুধ খেতে হবে? আমরা যদি ধাপে ধাপে মানসিক রোগ নির্ণয়কারী ডাক্তারের কাছে যাই তবে তিনি বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। সুতরাং, আপনার যদি এমন রোগী থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই দ্রুত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং আপনি যদি সেই ডাক্তারের চিঠিতে দেওয়া পরামর্শটি অনুসরণ করেন তবে আমি মনে করি বিষয়টি খুব দ্রুত সেরে যাবে।(alert-success)
আর এই রোগের চিকিৎসা যদি প্রথমেই করা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই এই রোগ কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। এখন আমরা দেখব ওসিডির জন্য এই ওষুধটি কত দিন খেতে হবে।
আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে রোগের ধরন এবং মাত্রা অনুসারে ডাক্তার আপনাকে বিভিন্ন সময়ের জন্য ওষুধ দেবেন। চিকিৎসক ওষুধ দেবেন এবং পর্যবেক্ষণ করবেন যে রোগী কতটা সুস্থ হচ্ছে এবং রোগীর সেরে উঠতে কত দিন সময় লাগছে।
তাই বিভিন্ন সময়ে রোগীকে এই ওষুধ খেতে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ শুরু করার পর। ওষুধ কাজ করতে ৬ থেকে ১২ মাস সময় নিতে পারে এবং অনেকের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ১২ মাস সময় নিতে পারে এবং বড় পর্যায়ের মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে, দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ঔষধ সেবন করতে হতে পারে।(alert-success)
আরো পড়ুনঃ থাইরয়েড টেস্ট কিভাবে করে - থাইরয়েড টেস্ট খরচ কত
ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়
অন্যান্য শারীরিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তেমনি ওসিডিও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাধারণত ২ ধরনের চিকিৎসা আছে। ২ ধরনের চিকিৎসা একসাথে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
১। ফার্মাকোলজিক্যাল: ফার্মাকোলজিক্যাল চিকিৎসা বলতে ওষুধ বা ফার্মাকো থেরাপি দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করাকে বোঝায়। এই রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যান্টি ডিপ্রেশন খুবই উপকারী। এই রোগীদের বিষন্নতাজনিত ব্যাধি ছাড়াও উদ্বেগজনিত ব্যাধি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
২। সাইকোলজিক্যাল (মনস্তাত্ত্বিক): মনস্তাত্ত্বিক চিকিত্সাগুলির মধ্যে, সবচেয়ে দরকারী হল জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপি। এই থেরাপি সাধারণত রোগীর ত্রুটিপূর্ণ চিন্তার উপর কাজ করে। বিশেষ করে, এটা নেতিবাচক চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া ভালো নানা রকম ভাবে রোগীর মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন রোগীকে বারবার হাত ধোয়া থেকে বিরত রাখা। তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার ওসিডি রোগীকে বারবার নিজের অস্বাভাবিকতা বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত এবং রোগীকে তার বয়স অনুযায়ী সামাজিকভাবে ব্যস্ত রাখা উচিত।
আরো পড়ুনঃ অর্গানিক হেয়ার অয়েল এর দাম কত
ওসিডি আক্রান্তদের জন্য কিছু পরামর্শ
ওসিডি ওষুধ কত দিন খেতে হবে সে সম্পর্কে আপনার ইতিমধ্যেই ধারণা রয়েছে। এখন আমরা ওসিডি রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ বা ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় বলব।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাতে হবে। অ্যালকোহল এবং নিকোটিন এড়িয়ে চলতে হবে।
- চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগুলি অনুশীলন করতে হবে।
- OCD হল এক ধরনের মানসিক ব্যাধি। তাই সবসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা উচিত। অন্য মানুষ জনের মতো একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনা করুন এবং সেই কল্পনা অনুসরণ করুন।
- অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা এড়িয়ে চলুন। একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন ততটুকুই অনুসরণ করা উচিত।
- টানা ৬ মাস নিয়মিত চিকিৎসা করলে অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। অনেক সময় সুস্থ হয়ে যাবার পরেও এই রোগ ফিরে আসতে পারে। সেজন্য চিকিৎসার কোর্স কমপ্লিট করতে হবে।
- কেউ এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর
ওসিডি ঔষধ কাজ করতে কতদিন সময় নেয় ?
ওষুধ শুরু করার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনি এর ফলাফল দেখতে পারবেন। তবে আরো ভালো ফলাফল পেতে বারো সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে।
OCD চিকিৎসা কতটা সফল ?
প্রকৃতপক্ষে, ERP-এর সাফল্যের হার প্রায় ৬৫% থেকে ৮০%। শুধুমাত্র ওষুধ ব্যবহারে ৪০% থেকে ৬০% কার্যকারিতা পাওয়া যেতে পারে।
ইআরপি কি ও সিডির সেরা চিকিৎসা ?
সর্বপ্রথম রোগীকে ইআরপি চিকিৎসা দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে ইআরপি চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ওসিডি রোগী সুস্থ হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
উপসংহার
আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ওসিডি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় সে সম্পর্কেও আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ওসিডি রোগ সম্পর্কে অজানা অনেক কিছু জানতে পারবেন। এরকম আরো নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।