আজকে আমি আপনাদের জন্য নতুন আরো একটি আর্টিকেল নিয়ে আসলাম। আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হল “কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা” এছাড়াও পুকুরে কিভাবে রুই মাছ এবং কাতল মাছ চাষ করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। পুকুরের কার্প জাতীয় মাছ চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে ভালো করে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।
আপনি যদি কার্প জাতীয় মাছ চাষ করতে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই কার্প জাতীয় মাছের খাবার তালিকা সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখতে হবে। কেননা, ভালো খাবার না দিলে মাছ আকারে বড় হয়না এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিমও ছাড়ে না। তাই কার্প জাতীয় মাছ কি? কাপ জাতীয় মাছের খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
(toc) #title=(সূচিপত্র)
কার্প জাতীয় মাছ
যেসব প্রজাতির মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের নয়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগীতা করেনা, জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরে বাস করে এবং বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণ করে এসব গুণাবলীর কয়েক প্রজাতির রুই জাতীয় মাছ একই পুকুরে একত্রে চাষ করাই হল মিশ্রচাষ। আসুন জেনে নিই কার্প জাতীয় মাছ কোন গুলো এবং এদের সুবিধা অসুবিধা এবং খাদ্য তালিকা কেমন।
কার্প হল মধ্যে এশিয়ার একটি বড় মিঠা পানির মাছ। অনেক দেশে কার্পকে বিশ্বের সর্বাধিক বিস্তৃত মিঠা পানির মাছ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। কার্প জাতীয় মাছ ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যেপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় এবং ইউরোপের একটি জনপ্রিয় মাছ।
কার্প জাতীয় মাছ বলতে দেশী ও বিদেশী রুই জাতীয় মাছকেই বুঝায়। আমাদের দেশে, দেশী কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ ইত্যাদি এবং বিদেশী কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, ব্লাক কার্প, মিরর কার্প, বিগহেড কার্প, কমন কার্প, কার্পিও ইত্যাদি অন্যতম।
আরো পড়ুনঃ গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
কার্প জাতীয় মাছের তালিকা
- কাতলা
- রুই
- মৃগেল
- কালিবাউশ
- সিলভার কার্প
- গ্রাস কার্প
- সরপুটি
- বিগহেড কার্প
- ব্লাক কার্প
- মিরর কার্প
- কমন কার্প
- কার্পিও
কার্প জাতীয় মাছ চাষের সুবিধা
- অম্ল ও ক্ষারযুক্ত পানিতেও টিকে থাকতে পারে।
- দ্রুত বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
- সহজে পোনা পাওয়া যায়।
- খেতে সুস্বাদু। ফলে এর চাহিদা রয়েছে।
- জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরের খাবার খায়।
- স্বল্প মূল্যের সম্পূরক খাদ্য খায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
- এরা রাক্ষুসে স্বভাবের নয়। তাই খাদ্য ও স্থান নিয়ে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।
- বদ্ধ জলাশয়েও কার্প মাছ প্রজনন ঘটায়। জলাশয়ের নানা স্তরের খাবার খেতে পারে।
- কষ্টসহিষ্ণু ও রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
- পুকুরের তলদেশের খনিজ উৎপাদন ও পুষ্টিকারক পদার্থ তৈরিতে সহায়তা করে।
- ২০ থেকে ৩০ শতাংশ লবণাক্ত পানিতে চাষ করা যায়।
- অভিজ্ঞতা ছাড়াও চাষ করা যেতে পারে।
- বেঁচে থাকার হার তুলনামূলক বেশি। নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
- অর্থনৈতিক মূল্য আছে।
- কৃত্রিম প্রজনন দ্বারা পোনা উৎপাদন করা যায়।
কার্প জাতীয় মাছ চাষের অসুবিধা
- তলদেশে বিচরণকারী দেশি মাছের প্রতিদ্বন্দ্বী।
- তলদেশে বিচরণকারী ও গর্তে বাস করার স্বভাব বলে আহরণ করা কষ্টসাধ্য।
- পুকুরের তলদেশ ও পাড়ের মাটিতে কার্প মাছ খাদ্য অন্বেষণ করে, এতে পানির ঘোলার হার বাড়ে ও পাড় ভেঙে যায়।
কার্প জাতীয় মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
কার্প জাতীয় মাছের পুকুর প্রস্তুত যেমন: পুকুরের চারপাশে আগাছাগুলোকে (ঝোপ-ঝাড়) ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আশানুরূপ ফলনের জন্য চাষের শুরুতে পুকুর পাড় মেরামত ও তলা সমান করতে হবে। পুকুরে অধিক কাদার স্তর থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে। পুকুরে কোন জলজ আগাছা ও রাক্ষুছে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ রাখা যাবে না। পুকুর সেচের মাধমে এসব মাছ সম্পুর্ণভাবে দূর করা উত্তম।
পুকুরে প্রতি শতাংশে চুন প্রয়োগ করতে হবে ৪০০ গ্রাম এবং লবণ প্রয়োগ করতে হবে প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম এবং পটাশ প্রয়োগ করতে হবে প্রতি শতাংশে ১০০ গ্রাম এবং তারপর পুকুরে ২ দিন রোদ লাগাতে হবে।
এবং রোদ লাগানোর পর পুকুরে দিতে হবে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি। পানি দেওয়ার পরে যে আপনাদের বলে দেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন প্রতি শতাংশে (টিএসপি) সার ২০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে) তারপর (ইউরিয়া) সার ১০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। তারপর পুকুরে প্রতি শতাংশে খৈল দিতে হবে ১০০ গ্রাম।
তারপর পুকুরে গোবর প্রয়োগ করতে হবে প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম। তারপর ৩ থেকে ৪ দিন পুকুরের পানিতে নিবিড় রাখতে হবে। তারপর ভালো মানের রুই, কাতল, মৃগেল, ব্রিকেট ইত্যাদি কাপ জাতীয় মাছের পোনা কুকুরে ছাড়বেন। ভালো হ্যাচারীতে থেকে মাছের পোনা গুলো সংগ্রহ করবেন। মনে রাখবেন ১০০ শতাংশ পুকুর হলে কার্প জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে খুব ভালো হয়।
আরো পড়ুনঃ গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে | গরুর খামারের লাভ কেমন
কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য কি
কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য হলো:
- সরিষার খৈল
- ফিসমিল
- কুড়া
- গমের ভুসি
- ভূট্টা
- ধানের কুড়া
- জলজ উদ্ভিদ
- নরম ঘাস
- শেঁওলা
- ক্ষুদি পানা
- টোপা পানা
- হেলেঞ্চা
- ঝাঁঝি
কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য স্বভাব কেমন
কার্প জাতীয় মাছের খাদ্যাভাস না জানার কারনে মৎস্যচাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন, এসব মাছের স্বভাবজাত খাদ্যাভাস তুলে ধরা হলো। যারা দেশী এবং বিদেশী কার্প জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, সরপুটি, কমন কার্প) চাষ করে থাকেন তাদের এ সকল মাছের খাদ্য স্বভাব জানাটা খুবই জরুরী:-
- বাংলাদেশে চাষযোগ্য কার্প জাতীয় মাছ তিনটি স্তরে খাবার গ্রহণ করে থাকে: উপর স্তর, মধ্য স্তর ও নীচের স্তর।
- কাতলা, সিলভার কার্প উপরের স্তরে; রুই মধ্য স্তর; মৃগেল, মিরর কার্প, কমন কার্প নীচের স্তরে খাবার খেয়ে থাকে।
- গ্রাস কার্প, সরপুটি বিভিন্ন স্তরের খাবার গ্রহণ করে থাকে।
- কাতলা মাছ কিশোর ও পূর্ণ বয়ষ্ক অবস্থায় প্রানীজ প্রোটিন খায়।
- রুই মাছ ছোট অবস্থায় প্রাণিজ প্লাংক্টন ও বড় অবস্থায় প্লাংক্টন ও পচনশীল জৈব পদার্থ খায়।
- মৃগেল মাছ তলদেশের খাবার খায়।
- সিলভার কার্প ছোট অবস্থায় জুওপ্লাংক্টন ও বড় অবস্থায় ফাইটোপ্লাংক্টন খেয়ে থাকে।
- গ্রাস কার্প ছোট অবস্থায় প্রানিজ প্লাংক্টন ও বড় অবস্থায় জলজ আগাছা খেয়ে থাকে।
- কমন কার্প/কার্পিও মাছ সর্বভূক। এরা পুকুরের তলদেশের খাবার খায়। এরা একটু বড় হলেই মুখে কাদা তুলে নেয় এবং এই কাদা থেকে জৈব পদার্থগুলো ছেকে নিয়ে বাকীগুলো ফেলে দেয়,ফলে কার্পিও মাছ যে পুকুরে চাষ করা হয় ঐ পুকুরের পানি সব সময় ঘোলা থাকে।
এই বৈশিষ্ট্য তাদের স্বভাবজাত কিন্তু জলাশয়ের প্রকৃতি,মাছের জাত,আবহাওয়া বিবেচনায় এসব মাছের খাদ্য স্বভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করার ২৫টি সেরা ও কার্যকরী উপায়
কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা
মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। মাছের চাষ করে অনেকেই তাদের দারিদ্রতা দূর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মাছ চাষে লাভবান হতে দ্রুত বর্ধনশীল কার্প জাতীয় মাছের জুড়ি নেই। আসুন জেনে নেই কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য প্রয়োগে করণীয় সম্পর্কে। কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য প্রয়োগে করণীয়:
১. কার্প জাতীয় মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
পুকুরে সার প্রয়োগের ফলে যে প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মে তাতে মাছের পুষ্টি সম্পূর্ণ হয় না, তাই মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। সম্পূরক খাবার হিসেবে ভেজা খাবার বা পিলেট খাবার প্রয়োগ করা যেতে পারে। কার্প জাতীয় মাছের ভেজা খাবার নিম্নরুপ পদ্ধতিতে তৈরি করা যায়:
উপাদান | শতাংশ |
---|---|
চালের কুড়াঁ/গমের ভূসি | ৩৫% |
খৈল | ৪০% |
ফিসমিল | ১৫% |
আটা | ১০% |
ভিটামিন প্রিমিক্স | ০.১% |
মোট | ১০০% |
- ভেজা খাবার পুকুরের চারপাশে ৪-৫ টি নির্দিষ্ট জায়গায়, পানির ১-২ ফুট নিচে খুটিতে আটকানো টিনের তৈরি ট্রে অথবা চাটাই ও পলিথিন দ্বারা তৈরি মাচায় রেখে প্রয়োগ করতে হবে।
- মাছের মোট ওজনের ২-৫% হারে খাবার দৈনিক ২ ভাগে সকালে (৫০%) ও বিকালে (৫০%) প্রয়োগ করতে হবে।
- মাছ মজুদের পর প্রতিমাসে একবার জাল টেনে মাছের নমুনায়নের মাধ্যমে গড় ওজন জেনে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
- পোনা ছাড়ার পর মোট ওজনের ৫% হারে খাবার দিতে হবে এবং খাবারের পরিমাণ মাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে কমিয়ে মাছের মোট ওজনের ২% এ নিয়ে আসতে হবে।
২. কার্প মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
- পুকুরে ব্যবহৃত সারে যে প্রাকৃতিক খাদ্যকণা জন্মে তাতে মাছের পুরোপুরি খাবার চাহিদা সম্পূর্ণ হয় না, তাই মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে।
- সম্পূরক খাবার হিসেবে চালের কুঁড়া (৮০%), সরিষার খৈল (১৫%) ও ফিশমিল (০৫%) এর মিশ্রণ পুকুরে সরবরাহ করা যেতে পারে।
- মাছ ছাড়ার পরের দিন থেকে প্রতিদিন সকালে মজুদকৃত মাছের ও শতকরা ২-৫ ভাগ সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে।
- সপ্তাহে ১ দিন সম্পূরক খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া, মেঘলা দিনের খাদ্য সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মাছ মজুদের পর প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের নমুনায়নের মাধ্যমে গড় ওজন জেনে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। নমুনা সম্ভব না হলে নিচের ছকে বর্ণিত হারে খাবার দেয়া যেতে পারে।
মাস | একর প্রতি খাবারের পরিমাণ দিন (কেজি) |
---|---|
প্রথম | ৪.০ কেজি |
দ্বিতীয় | ৮.০ কেজি |
তৃতীয় | ১৫.০ কেজি |
চতুর্থ | ২৪.০ কেজি |
পঞ্চম | ৩০.০ কেজি |
ষষ্ঠ | ৩৫.০ কেজি |
সপ্তম | ৪২.০ কেজি |
- গ্রাসকার্প নরম ঘাস খায়। তাই এ মাছের জন্য নরম কচি ঘাস, ক্ষুদে পানা, কলাপাতা প্রতিদিন সকালে ও বিকালে সরবরাহ করতে হবে।
- ঘাস-পাতা যাতে পুকুরে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য বাশ দিয়ে তৈরি আয়তকারের বেষ্টনীর মধ্যে ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
- ঘাস সরবরাহের ১-২ ঘন্টা পর পুকুরে সম্পূরক খাবার দিলে আসকার্প সম্পূরক খাবার তেমন খাবে না। ফলে অন্যান্য মাছ বেশি খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাবে, ফলে মাছের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
৩. কার্প জাতীয় মাছে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
সরিষার খৈল খাদ্যের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমপরিমান পানির সাথে ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পঁচা সরিষার খৈলের সাথে পরিমাণ অনুযায়ী অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আধা শক্ত গোলাকার বলের মত তৈরী করতে হবে।
এই খাদ্য দিনে দুই বার অর্থাৎ সকালে ও বিকেলে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে সরবরাহ করতে হবে।যদি সম্ভব হয় তাহলে খাদ্য পাত্রের মধ্যে সরবরাহ করা ভাল। শুকনো গুঁড়ো খাবার সরাসরি পুকুরের পানিতে ছড়িয়ে দিলে খাদ্যের অপচয় হয়।
৪. গ্রাস কার্পের খাদ্য
গ্রাস কার্প ঘাসখেকো মাছ। তাই গ্রাস কার্পের খাবার সরবরাহের জন্য পুকুরে চার ফুট লম্বা, চার ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট আবেষ্টনীতে (ফিডিং রিং) ক্ষুদিপানা-কলাপাতা-সবুজ নরম ঘাস প্রতিদিনি সরবরাহ করতে হবে।
লাঠি পুঁতে ফিডিং রিংটিকে আটকে দিতে হবে যাতে ফিডিং রিংটি একই স্থানে অবস্থান করে। ফিডিং রিংটি সব সময় পরিপূর্ণ রাখতে হবে। কেননা গ্রাস কার্প ও সরপুঁটি ক্ষুদ্রাকৃতির পাকস্থলী বিশিষ্ট।
তাই ক্ষুধা পাওয়ার সাথে সাথে যাতে সামনে খাবার পেতে পারে সেজন্যে ফিডিং রিংটি সর্বদা ঘাসে পরিপূর্ণ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। পুরনো বা ভাঙা রিং পরিবর্তনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি গ্রাস কার্পের বিষ্ঠা ৫টি কার্পের খাবারের জোগান দিতে পারে।
৫. কার্প জাতীয় মাছকে সম্পূরক খাবার দিতে পারেন
পুকুরে পোনা মজুদের পর থেকেই দৈনিক সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। সুষম খাবার তৈরির জন্য ফিশমিল, সরিষার খৈল, গমের ভুসি/ চালের কুঁড়া, আটা ও ভিটামিন যথাক্রমে ২০ঃ ৩০ঃ ৪৫ঃ ৪.৫ঃ ০.৫ অনুপাতে মিশিয়ে খাবার তৈরি করে মাছকে দেওয়া যায়।
খাবার দেওয়ার ১০-১২ ঘণ্টা আগে খৈল ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা খৈলের সাথে বাকি উপাদানগুলো অল্প পানি দিয়ে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে বল আকারে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে দিতে হবে। দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য সমান দুইভাগে ভাগ করে সকালে ও বিকালে দিতে হবে।
এছাড়া বাজার থেকে কেনা কারখানায় তৈরি মৎস্য খাদ্যও পুকুরে সরবরাহ করা যেতে পারে। পুকুরে প্রতিদিন মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ২-৫ ভাগ এবং শীতের সময় ১-২ ভাগ খাবার দিলেই চলে।
কার্প জাতীয় মাছের হাতে বানানো খাবার
কার্প জাতীয় মাছের হাতে বানানো খাবার। আমিষ ২৬-২৮℅, এই খাবার দিলে মাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। এই খাবার দিলে মাছ অনেক তারাতারি বড় হয়, যে উপকরণ লাগবে সয়াবিন মিল, চালের কুদ, মিক্স করা ডালের কুদ, সব গোলা উপকরণ এক সাথে মিশিয়ে নিবেন, তার পরে খিচুড়ি তৈরি করুন, লবন দিতে ভুলবেন না। ১০ দিন খাওয়ানো পর, ফলাফল দেখুন নিজে বিশ্বাস করতে পারবেন না মাছের বৃদ্ধি দেখে।
কার্প জাতীয় মাছ চাষে যেসকল বিষয় মনে রাখতে হবে
- পুকুরে অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়া যাবে না।
- মেঘলা দিন ও বৃষ্টির সময় খাদ্য না দেওয়া ভাল।
- প্রতি সপ্তাহে হররা টেনে দিতে হবে।
- প্রতি মাসে একবার প্রতি শতাংশে ১০০-১৫০ গ্রাম জিওলাইট প্রয়োগ করতে হবে।
- পুকুর সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
- প্রতি ১৫ দিন পর পর মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
- পানিতে বুদবুদ দেখা দিলে খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
- পানির স্বচ্ছতা ৮ সেন্টিমিটারের নীচে নেমে গেলে সার ও খাবার দেয়া বন্ধ রাখতে হবে।
- পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন সকালে ও পোনার গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে হবে।
FAQ
অনেকেই কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ের উপর জিজ্ঞাসা করে থাকেন। তো চলুন সেসকল প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেইঃ
কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
- চিংড়ি
- তেলাপিয়া মাছ
- পাঙ্গাশ মাছ
- সিলভার কার্প মাছ
- রুই মাছের চাষ
- কৈ মাছ
- পাবদা মাছ
- টেংরা মাছ
- কাতলা মাছ
- গুলসা মাছ
- শোল মাছ
- শিং মাছ
মিশ্র মাছ চাষের সুবিধা
- মাছ পুকুরের বিভিন্ন স্তরে থাকে ও খাবার খায় বলে পুকুরের সকল জায়গা ও খাবারের সদ্বব্যহার হয়।
- কোনো স্তরের খাবার জমা হয়ে নষ্ট হয় না। ফলে পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে।
- মিশ্র চাষে মাছের রোগ বালাই কম হয়।
- সর্বোপরি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
কাতলা মাছের প্রিয় খাবার কি
সাধারণত জলাশয়ের মধ্যে এবং উপরের স্তরে কাতলা মাছ থাকতে পছন্দ করে। কাতলা মাছ সাধারণত প্রাণী প্লাংকটনের তুলনায় উদ্ভিদ প্লাংকটন বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকে। ক্রাসটেসিয়া, কীটপতঙ্গ, রটিফার, শৈবাল ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ কাতল মাছের প্রধান খাবার।
লেখকের শেষকথা
এছাড়া কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য তালিকা এবং কার্প মাছ চাষের পরিচর্যার বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে উপজেলা ও জেলা মৎস্য দপ্তরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। তাদের সাথে যোগাযোগ করার ফলে আশাকরা যায় আপনি আরো বেশি তথ্য পাবেন এবং মাছ চাষে সফলতা লাভবেন করবেন পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী। আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।