বাংলাদেশের গৃহপালিত গবাদি পশুর মধ্যে গরু অন্যতম। বাংলাদেশ গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষই গরু পালন করে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই গরুর পুষ্টি সম্পর্কে অবগত নন। কি জাতীয় খাবার খেলে গরুর পুষ্টি বৃদ্ধি পায় সে সম্পর্কে তারা অনেকেই জানেন না।
গ্রামে অঞ্চল ছাড়াও শহরে বিভিন্ন ধরনের এগ্রো ফার্ম রয়েছে। এই এগ্রো ফার্মে গরু সহ আরো অন্যান্য গবাদি পশু পালন করা হয়। এগ্রো ফার্মে গরু মোটা তাজা করার জন্য গরুকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়।
গরু মোটাতকরণ করার জন্য দানাদার খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দানাদার খাবার গরুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, গরু মোটাজাত করনে সহায়তা করে, গরুর ওজন বৃদ্ধি করে। তাই গরু মোটাতকরণে দানাদার খাদ্যের কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু অনেকেই জানেন না গরু মোটাতাজাকরণে দানাদার খাদ্য হিসেবে কতটুকু খাদ্য কি পরিমাণে খাওয়াতে হবে। আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাতে চলেছি গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা কেমন হতে পারে। চলুন দেরি না করে গরু মোটাতাজাকরণের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
মোটাতাজাকরণের জন্য গরু কিনতে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয়
মোটাজাতকরণের জন্য গরু ক্রয় করতে গিয়ে যে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, যেমন:
- ১ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে গরু কিনতে হবে (১২-১৫ মাস বয়সের গরু মোটাজাতকরনের জন্য ভালো)
- গায়ের চামড়া ঠিলা-পাতলা, পাঁচরের হাড় চেপ্টা, পায়ের মোট এবং শুধু মাত্র খাবারের অভাবে যে সব গরু শুকিয়ে গেছে এমন গরু কম মূল্যে কিনতে হবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খাদ্য তালিকা কয়েক ধরনের হতে পারে। এক একটি খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন পরিমাণে থাকতে পারে। চলুন আপনাদের জন্য গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য তালিকা বেশ কিছু নমুনা দেখে নেওয়া যাক-
১ নং মিশ্রণ
- তিলের খৈল = ৪ কেজি
- চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
- গমের ভূষি = ৪ কেজি
- যে কোন ডালের ভূষি = ৪ কেজি
২ নং মিশ্রণ
- গম ভাঙ্গা =৪কেজি
- তিলের খৈল = ৪ কেজি
- চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
- ডাল ভাঙ্গা, খেসারি = ৪ কেজি
কৃমি দূর করার পরে গরুকে ইউরিয়া মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।
গরুর দানাদার খাদ্য তৈরির নিয়ম - মিশ্রণ ০১
উপাদানের নামঃ | পরিমাণ |
---|---|
গমের ভুষি | ৫৪০ গ্রাম |
খেসারি ভুষি | ২০০ গ্রাম |
তিলের খৈল | ১৫০ গ্রাম |
মাছের গুঁড়া | ৮০ গ্রাম |
লবণ | ০৫ গ্রাম |
ঝিনুকের পাউডার | ২৫ গ্রাম |
শুল্ক খাদ্য | ৯০০ গ্রাম |
মেটাবলিক শক্তি | ১০.৭০ গ্রাম |
আমিষ | ২০৯ গ্রাম |
গরুর দানাদার খাবার তৈরির নিয়ম - মিশ্রণ ০২
উপাদানের নামঃ | পরিমাণ |
---|---|
চাল ভাঙ্গা | ২০০ গ্রাম |
গমের ভুষি | ৩০০ গ্রাম |
ধানের ভুষি | ২৩০ গ্রাম |
সরিষার খৈল | ১৯০ গ্রাম |
মাছের গুড়া | ৫০ গ্রাম |
লবণ | ০৫ গ্রাম |
ঝিনুকের পাউডার | ২৫ গ্রাম |
শুল্ক খাদ্য | ৯০০ গ্রাম |
মেটাবলিক শক্তি | ১১.২৬ গ্রাম |
আমিষ | ১৮৭ গ্রাম |
গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা - মিশ্রণ ০৩
উপাদানের নামঃ | পরিমাণ |
---|---|
গম ভাঙ্গা | ১৫০ গ্রাম |
গমের ভুষি | ২৫০ গ্রাম |
ধানের ভুষি | ২৮০ গ্রাম |
মসুর ভুষি | ১০০ গ্রাম |
সরিষার খৈল | ১৪০ গ্রাম |
মাছের গুড়া | ৫০ গ্রাম |
লবণ | ০৫ গ্রাম |
ঝিনুকের পাউডার | ২৫ গ্রাম |
শুল্ক খাদ্য | ৯০০ গ্রাম |
মেটাবলিক শক্তি | ১০.৮৮ গ্রাম |
আমিষ | ১৮৩ গ্রাম |
গরুর দানাদার খাদ্য তৈরির নিয়ম - মিশ্রণ ০৪
উপাদানের নাম ও পরিমাণঃ
- ধানের ভুষিঃ ৫৩০ গ্রাম
- খেসারি ভুষিঃ ১৪০ গ্রাম
- মসুর ভুষিঃ ১০০ গ্রাম
- তিলের খৈলঃ ১৫০ গ্রাম
- সয়াবিন মিলঃ ৫০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডারঃ ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্যঃ ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১০.৪৯ গ্রাম
- আমিষঃ ১৮৩ গ্রাম
গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা - মিশ্রণ ০৫
উপাদানের নাম ও পরিমাণঃ
- চাল ভাঙ্গাঃ ২০০ গ্রাম
- গমের ভুষিঃ ১৩০ গ্রাম
- ধানের ভুষিঃ ২০০ গ্রাম
- মসুর ভুষিঃ ২৪০ গ্রাম
- তিলের খৈলঃ ১৫০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়াঃ ৫০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডারঃ ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্যঃ ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১১.০৪
- আমিষঃ ১৮১ গ্রাম
গরুর দানাদার খাদ্যের তালিকা নম্বর - মিশ্রণ ০৬
উপাদানের নাম ও পরিমাণঃ
- চাল ভাঙ্গাঃ ১০০ গ্রাম
- খেসারি ভাঙ্গাঃ ১০০ গ্রাম
- গমের ভুষিঃ ১৫০ গ্রাম
- ধানের ভুষিঃ ৩৮০ গ্রাম
- নারিকেলের খৈলঃ ২০০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়াঃ ৪০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডারঃ ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্যঃ ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১১.০৬ গ্রাম
- আমিষঃ ১৮৪ গ্রাম
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা - মিশ্রণ ০৭
উপাদানের নাম ও পরিমাণঃ
- ভুট্টা ভাঙ্গাঃ ১৮০ গ্রাম
- গমের ভুষিঃ ২০০ গ্রাম
- ধানের ভুষিঃ ২৩০ গ্রাম
- খেসারি ভুষিঃ ১৫০ গ্রাম
- সরিষার খৈলঃ ১৬০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়াঃ ৫০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডারঃ ২৫ গ্রাম
- শুষ্ক খাদ্যঃ ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১১.০৯ গ্রাম
- আমিষঃ ১৭৯ গ্রাম
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা নম্বর - মিশ্রণ ০৮
উপাদানের নামঃ | পরিমাণ |
---|---|
চাল ভাঙ্গা | ১০০ গ্রাম |
গম ভাঙ্গা | ১০০ গ্রাম |
গমের ভুষি | ২৫০ গ্রাম |
ধানের ভুষি | ২৮০ গ্রাম |
তিলের খৈল | ২০০ গ্রাম |
মাছের গুড়া | ৪০ গ্রাম |
লবণ | ০৫ গ্রাম |
ঝিনুকের পাউডার | ২৫ গ্রাম |
শুল্ক খাদ্য | ৯০০ গ্রাম |
মেটাবলিক শক্তি | ১১.৪৯ গ্রাম |
আমিষ | ১৯৬ গ্রাম |
উপরোক্ত গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সমূহ থেকে যেসকল খাদ্যের উপাদান গুলো আপনি সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন এবং যেসকল খাদ্যের উপাদান নিয়মিত ক্রয় করার সামর্থ্য আপনার আছে, সেইসব উপাদানের মিশ্রণে তৈরি খাদ্যই হচ্ছে আপনার গরুর জন্য সর্বোত্তম দানাদার খাদ্য।
সুতরাং, আপনি গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য দানাদার খাদ্য তালিকা কোনটি বাছাই করবেন তা সম্পূর্নভাবে নির্ভর করছে আপনার লোকাল বাজারে খাদ্যের উপাদানের সহজলভ্যতা এবং আপনার গরুর পিছনে খরচ করার বাজেটের উপর।
আরো পড়ুনঃ গরুর খামার করে লাভবান হওয়ার উপায় | গরুর খামার পরিকল্পনা
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা
গরু মোটাতাজাকরণ করতে গরুকে সুষম দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। এসকল দানাদার খাবারে আছে ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাট, এনার্জি, মিনারেলস, ভিটামিন এগুলোর একটি সমন্বয়ে অর্থাৎ পরিমাণ মাফিক সবগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে রেশন তৈরি করতে হয়।
আমাদের দেশে অধিকাংশ খামারিরা যে যার ইচ্ছামতো গরুকে দানাদার জাতীয় খাবার দিয়ে থাকেন। এই খাবার খেয়ে দেখা যায় সাময়িক সময়ের জন্য গরু মোটা হলেও পরবর্তীতে গরুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা নিচের অংশে ভিডিও সহকারে গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করেছি।
একটি সুস্থ স্বাভাবিক গরুকে দৈনিক তার শরীরের ওজনের ২ শতাংশ দানাদার খাদ্য খেতে দিতে হয় অর্থাৎ একটি গরুর ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তবে ২ কেজি দানাদার খাদ্য এবং গরুর ওজন যদি ২০০ কেজি হয় তবে ৪ কেজি দানাদার খাদ্য খেতে দিতে হবে।
আমরা নিচে টেবিল আকারে যে ফিড ডিজাইন করেছি এই ফিডের মধ্যে ১০ থেকে ১২টি উপাদান উল্লেখ থাকবে এই উপাদানগুলো খুব সহজেই আপনি আপনার আশেপাশের যেকোনো জায়গায থেকে সহজে ক্রয় করতে পারবেন। গরু মোটাতাজাকরণ করার জন্য দানাদার খাদ্য এবং মিশ্রণ প্রক্রিয়া নিচে দেওয়া হলঃ
খাদ্য উপাদান | মিশ্রণ ১০০ কেজি তৈরির পরিমান | মিশ্রণ ৫০ কেজি তৈরির পরিমান | মিশ্রণ ১০ কেজি তৈরির পরিমান |
---|---|---|---|
গমের ভুসি | ৫০ কেজি | ২৫ কেজি | ৫ কেজি |
ভুট্টা ভাঙ্গা | ১১ কেজি | ৫.৫ কেজি | ১.১ কেজি |
রাইচ পালিশ( চালের আবরণ) | ১০ কেজি | ৫ কেজি | ১ কেজি |
সোয়াবিন মিল | ১২ কেজি | ৬ কেজি | ১.২ কেজি |
সরিষার খৈল | ১০ কেজি | ৫ কেজি | ১ কেজি |
ফিস মিল | ২.৫ কেজি | ১.৫ কেজি | ০.২৫ কেজি |
খাবার লবণ | ১ কেজি | ০.৫ কেজি | ০.১ কেজি |
ডিসিবি | ১ কেজি | ০.৫ কেজি | ০.১ কেজি |
রক সল্ট | ১ কেজি | ০.৫ কেজি | ০.১ কেজি |
চিটা গুড় | ১.৫ কেজি | ০.৭৫ কেজি | ০.১৫ কেজি |
মোট পরিমাণ | ১০০ কেজি | ৫০ কেজি | ১০ কেজি |
উপরে উল্লেখিত ফিড ফর্মুলাটি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে। এই ফিড ফর্মুলাটিতে এনার্জির পরিমাণ ১০-১১ মেগাজুল, প্রোটিন রয়েছে ২১% এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ মিনারেল ফাইবার এবং ভিটামিন রয়েছে ৫ শতাংশ এর নিচে।
বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখবেনঃ গরুকে ধীরে ধীরে দানাদার খাবারের সাথে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। অর্থাৎ একটি গরু যদি দিনে ২ কেজি গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য খাওয়ার যোগ্যতা রাখে তবে উক্ত গরুকে প্রথম দিনে ১/২ কেজি দ্বিতীয় দিন ১ কেজি এরপরে দিন দেড় কেজি এভাবে ধীরে ধীরে গরুকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় | গরুর বাছুরের যত্ন
ওজন অনুযায়ী গরুর খাদ্য তালিকা
এখন আমরা জানব কম ওজনের গরুর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা এবং বেশি ওজনের গরুর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা কি ধরনের হতে পারে।
গরুর ওজন যে ধরনেরই হোক না কেন তাদের খাদ্য তালিকা অনেকটা একই ধরনের হয়ে থাকে। শুধুমাত্র ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কিছুটা কমবেশি হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কম ওজন এবং বেশি ওজনের গরুর জন্য খাদ্য তালিকাঃ
কম ওজনের গরুর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা
উপাদানের নামঃ | পরিমাণ |
---|---|
ভুট্টা ভাঙ্গা | ২০০ গ্রাম |
গমের ভুষি | ২০০ গ্রাম |
ধানের ভুষি | ২৩০ গ্রাম |
খেসারি ভুষি | ১৫০ গ্রাম |
সরিষার খৈল | ১৬০ গ্রাম |
মাছের গুড়া | ৫০ গ্রাম |
লবণ | ০৫ গ্রাম |
ঝিনুকের পাউডার | ২৫ গ্রাম |
শুল্ক খাদ্য | ৯০০ গ্রাম |
মেটাবলিক শক্তি | ১১.০৯ গ্রাম |
আমিষ | ১৮১ গ্রাম |
বেশি ওজনের গরুর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা
উপাদানের নাম ও পরিমাণঃ
- চাল ভাজ্যঃ ১০০ গ্রাম
- খেসারি ভাঙ্গাঃ ১০০ গ্রাম
- গামের ভূষিঃ ১৫০ গ্রাম
- ধানের ভূষিঃ ৩৮০ গ্রাম
- নারিকেলের খৈলঃ ২০০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়াঃ ৪০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডার: ২৫ গ্রাম
- শুল্ক খাদ্য: ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১১.০৬১ গ্রাম
- আমিষ্: ১৮৪ গ্রাম
খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম
খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ১০ কেজি খড় ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল (পাত্রবিশেষ) বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়া তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে। এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে (২০০-৫০০ গ্রাম) গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সবের্াচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।
দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকা।
দানাদার খাদ্যে ইউরিয়ার সরাসরি ব্যবহার
দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে খাদ্যের প্রোটিনের মান বাড়ানো যায়। ১০০ কেজি ওজনের গবাদি পশুর জন্য ইউরিয়া মিশ্রিত খাদ্য তালিকা, উপাদান ও পরিমাণ-
- শুকনো ধানের খড়ঃ ২কেজি
- সবুজ ঘাসঃ ২ কেজি (যদি ঘাস না পাওয়া যায় তাহলে, ৪কেজি খড় ব্যবহার করতে হবে)
- শস্য খাদ্য মিশ্রণঃ ১.২-২.৫ কেজি
- ইউরিয়াঃ ৩৫ গ্রাম
- চিটাগুড় বা রব বা লালিঃ ২০০-৪০০ গ্রাম
- লবণঃ ২৫ গ্রাম
লবণ, ইউরিয়া, চিটাগুড়, চালের খড়, কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে শস্যদানার সাথে মিশিয়ে এই গরুকে দিনে ২ বার মোটাতাজাকরণ খাবার খাওয়াতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গরুর খামার করতে কত টাকা লাগে | গরুর খামারের লাভ কেমন
ষাঁড় মোটাতাজা করার নিয়ম
গরু মোটাতাজা করার জন্য যা যা করতে হবে-
- ২ বছর বয়সী ষাঁড় কিনতে হবে।
- গরুর জন্য আরামদায়ক বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- গরুকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
- প্রতিদিন গরুকে গোসল করাতে হবে।
- গরুকে স্টেরয়েড ও হরমোন দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
গরু মোটাতাজাকরণ পাউডার
db ভিটামিন পাউডার (db vitamin)। ডিবি ভিটামিন গবাদি পশুর ভিটামিন ও খনিজ ঘাটতি একটি সুপরিচিত এবং সাধারণ সমস্যা। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে প্রায় প্রতিটি গবাদিপশু ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতিতে ভুগছে। এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হল খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন মিনারেল ফিড সাপ্লিমেন্ট প্রদান করা।
আরো পড়ুনঃ ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া এবং রিস্ক ফ্রি ব্যবসা
গাভীর দানাদার খাদ্য তালিকা
- চাল ভাঙ্গাঃ ২০০ গ্রাম
- গমের ভুষিঃ ১৩০ গ্রাম
- ধানের ভুষিঃ ২০০ গ্রাম
- মসুর ভুষিঃ ২৪০ গ্রাম
- তিলের খৈলঃ ১৫০ গ্রাম
- মাছের গুঁড়াঃ ৫০ গ্রাম
- লবণঃ ০৫ গ্রাম
- ঝিনুকের পাউডারঃ ২৫ গ্রাম
- শুল্ক খাদ্যঃ ৯০০ গ্রাম
- মেটাবলিক শক্তিঃ ১১.০৪ গ্রাম
- আমিষঃ ১৭৯ গ্রাম
১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা।
- ধানের খড়ঃ ২ কেজি
- সবুজ ঘাসঃ ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে)
- দানদার খাদ্যে মিশ্রনঃ ১.২-২.৫ কেজি
- ইউরিয়াঃ ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
- চিটাগুড়াঃ ২০০-৪০০ গ্রাম
- লবণঃ ২৫ গ্রাম
দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা
- খড়ঃ ৩ কেজি
- কাঁচা ঘাসঃ ৫-৬ কেজি
- দানাদার খাদ্যের মিশ্রনঃ ১.৫-২ কেজি
- চিটাগুড়ঃ ৫০০ গ্রাম
- ইউরিয়াঃ ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
- লবনঃ ৩৫ গ্রাম
১৫০-২০০ কেজি ওজনের পশুর খাদ্য তালিকা
- ধানের খড়ঃ ৪ কেজি
- কাঁচা ঘাসঃ ৫-৬ কেজি
- দানাদার খাদ্যের মিশ্রনঃ ১.৫-২ কেজি
- চিটাগুড়ঃ ৫০০ গ্রাম
- ইউরিয়াঃ ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
- লবনঃ ৩৫ গ্রাম
মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গবাদীপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদানে কিছু কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
- এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
- কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
- গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
- অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
- ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।
আরো পড়ুনঃ ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় - মনের রোগের চিকিৎসা
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্যের সুবিধা
১। পুষ্টি সরবরাহ করে
সঠিকভাবে প্রস্তুত দানাদার খাদ্যে গরুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি রয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করলে গরুর কর্মক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় এবং গরুর মাংসের উৎপাদনও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
২। সুষম খাদ্য অভ্যাস তৈরি
যদি কোনো কারণে গরুর শরীরে কোনো ঘাটতি দেখা দেয়, যার কারণে গাভী অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে গরুর খাদ্যে ভিটামিন, মিনারেল বা ওষুধ যোগ করা বা খাদ্য থেকে কোনো উপাদান বাদ দেওয়া সম্ভব। তাই দানাদার খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে গরুর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এমনকি গরুর স্বাস্থ্যের অবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গরুর খাদ্যে এই পরিবর্তনগুলি একটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত।
৩। পরিশ্রম কমে যায়
দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে গরুর তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম সময় লাগে গরুকে।ফলে গুরুকে খাওয়াতে সময় কম লাগে এবং মালিক কিছুটা বিশ্রাম পায়।
৪। খাদ্য অপচয় কমে
দানাদার খাদ্য অনেক সুস্বাদু হয়। যার ফলে গরুর রুচি বৃদ্ধি পায়, গরু কোন ধরনের খাদ্য অপচয় করে না। সম্পূর্ণ খাবার শেষ করে।
আরো পড়ুনঃ মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায় - ৫টি উপায়ে আয় করুন
গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্যের অসুবিধা
১। হজমের সমস্যা
অপরিকল্পিতভাবে গরুকে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ালে গরুর হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই গরুকে বিভিন্ন খাবার খাওয়ানোর আগে জেনে নিতে হবে আপনার গাভীর কোন সমস্যা আছে কিনা বা গরুকে কী ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত এবং কী ধরনের খাবার খাওয়ানো উচিত নয়।
২। খাদ্য সংরক্ষণের অসুবিধা
অনেক এলাকায় খাদ্যশস্য সহজলভ্য নাও হতে পারে। খাবার সংগ্রহ করা গেলেও খাবারের মান ঠিক রাখতে অনেক সময় তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
গরু মোটাতাজাকরণ খাদ্য সম্পর্কে FAQ
প্রশ্নঃ গরু মোটাতকরণের ঔষধ
উত্তরঃ গরু মোটাতকরণের জন্য বাছাইকৃত গরু গুলো কোন রোগে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। যদি গরু গুলো কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় প্রথমে সেই রোগের চিকিৎসা করতে হবে। তাছাড়া ভিটামিন, কৃমির ঔষধ এবং ডিবি ভিটামিন পাউডার পাউডার ইত্যাদি গরু মোটাতাজাকরনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ তিন মাসে গরু মোটাতকরণ পদ্ধতি
উত্তরঃ তিন মাসে গরু মোটাতকরণ এর জন্য গরুকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।- আঁশ জাতীয় খড় খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে
- দানাদার জাতীয় খাদ্যের সাথে সরাসরিভাবে এবং
- ইউরিয়া মোলাসেস জাতীয় খাদ্য
লেখকের শেষকথা
আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনার যদি কোন এগ্রো ফার্ম থেকে থাকে তাহলে আপনি উপরোক্ত পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য দানাদার খাদ্য তালিকা বানিয়ে নিতে পারেন। আশা করি উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো গরু মোটাতাজাকরণে আপনাকে সাহায্য করবে। এরকম আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।