আমাদের দেশের ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। কোন সঞ্চয় স্কিমে টাকা রাখার সুযোগ ছিল না, এই বিপুল সংখ্যক জনগণের। কিন্তু গত ২০২০ সালের আগস্ট মাসে সে বাধা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন তবে ডলার, দিনার, রিয়াল ইত্যাদি পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে পারবেন। তাছাড়াও আপনারা চাইলে বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিন্তু তার আগে আপনাকে জানতে হবে কোন ব্যাংকে লেনদেন বা সঞ্চয় করবেন ও বিনিময়ে আপনার সুবিধাটাই বা কি। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রবাসীদের জন্য কোন ব্যাংক ভালো?
Designed by Freepik |
(toc) #title=(সুচিপত্র)
প্রবাসীদের জন্য কোন ব্যাংক ভালো
চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রবাসীদের জন্য কোন ব্যাংক ভালো:
- ইউসিবি (UCB) ব্যাংক
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- যমুনা ব্যাংক
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক
- ওয়ান ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক
১। ইউসিবি (UCB) ব্যাংক
প্রবাসী ভাই ও বন্ধুদের কথা মাথায় রেখে আমাদের বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন রকম সুবিধা। ইউসিবি (UCB) ব্যাংক আমাদের দেশের স্বনামধন্য ব্যাংক। কোন প্রবাসী ভাই যদি এই ব্যাংকের ডিপোজিট খুলতে চান, তাহলে তার বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ১৮ বছর।
প্রবাসী ভাই ও বন্ধুদের জন্য ইউসিবি এনআরবি ডিপিএস প্লাস স্কীমে ইন্সট্রুমেন্টের আকার ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সঞ্চয় স্কীমের মেয়াদ হচ্ছে দুই থেকে দশ বছর পর্যন্ত এবং আপনার কিস্তি বা সঞ্চয়ের পরিশোধ করতে হবে প্রতিমাসে ২০ তারিখের মধ্যেই।
আপনারা যদি ইউসিবি ব্যাংকে ডিপিএস সিস্টেমে টাকা জমা রাখতে চান, তাহলে চারটি উপায়ে আপনি ডিপিএস খুলে টাকা জমা করে রাখতে পারবেন।
- ইউসিবি এনআরবি ডিপিএস প্লাস।
- ইউসিবি সুপার ফ্লেক্স ডিপিএস।
- ইউসিবি ইয়াংস্টার ডিপিএস।
- ইউসিবি মহিলাদের ডিপিএস প্লাস।
২। মার্কেন্টাইল ব্যাংক
বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য ব্যাংকগুলো মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক একটি। প্রবাসী ভাইদের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক নিয়ে এসেছে মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প। যেখানে প্রবাসীদের হাড় ভাঙ্গা কষ্টের উপার্জন বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে নিজের নামে সঞ্চয় করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রয়েছে ৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক কিস্তিতে ১ থেকে যথাক্রমে ১০ বছর মেয়াদী সঞ্চয়ের সুবিধা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে জমাকৃত টাকার উপর থেকে মুনাফা পাওয়া যাবে ছয় মাস পর পর এবং এই সঞ্চিতকৃত টাকা টাকা থেকে ৮০% পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুবিধা দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। ব্যাংকের যেকোনো শাখায় বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এই সঞ্চয় প্রকল্প খোলা যাবে।
এছাড়াও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ত্রৈমাসিক বেনিফিট প্রকল্পটি চালু করেছে। আমরা প্রথমেই জানাবো ত্রৈমাসিক বেনিফিট প্রকল্পটি কি। আপনি ব্যাংকের কাছে দীর্ঘমেয়াদে কিছু টাকা জমা রাখবেন, সেই টাকার উপর প্রতি তিন মাস পর পর লভ্যাংশ হিসেবে আপনাকে কিছু টাকা প্রদান করবে।
আরো দেখুনঃ বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
৩। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
এখন আমরা জানাবো মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ডিপিএস সম্পর্কে। এটি একটি মাসিক ডিপোজিট স্কিম। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য এই স্কিম। তবে এই স্কিমে যে কেউ মাসিক ভিত্তিতে জমা করতে পারেন এবং মেয়াদ শেষে ভালো লাভের হার সহ একটি বড় টাকার পরিমান ফেরত পাবেন। শর্তবলী:
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি একক বা যৌথ নামে এই ডিপিএস খুলতে পারবেন।
- প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে নগদ বা চেকের মাধ্যমে কিস্তি জমা করতে হবে। মাসের ২০ তম দিন যদি ছুটির দিন হয়। পরবর্তী কার্য দিবসের মধ্যে কিস্তি জমা করতে হবে।
- অগ্রিম কিস্তি জমা করা যাবে, তবে এর কোন অতিরিক্ত সুদ প্রদান করবে না মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
৪। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হল ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়া সর্বপ্রথম ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পরিচালিত। ইসলামী ব্যাংকের হাত ধরে আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। ইসলামী ব্যাংকে বেশ কয়েকটি স্কিম রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম স্কিম হচ্ছে মুদারাবা এনআরবি সেভিং বন্ড।
যেসব প্রবাসী ভাইদের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর, তারাই এই ভন্ড বিনিয়োগ করতে পারবেন ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদী। এই বন্ডে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার, ১লাখ, ২লাখ, ৫লাখ ও ১০ লাখ পর্যন্ত। অন্যসব ব্যাংকের সঞ্চয় প্রকল্প থেকে এই ব্যাংকের সঞ্চয় প্রকল্পে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।
৫। যমুনা ব্যাংক
যমুনা ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক। এটি একটি বেসরকারি ব্যাংক। প্রবাসীদের জন্য যেসব সুবিধা দিচ্ছে যমুনা ব্যাংক তার নিচে দেওয়া হল :
- এনআরবি মান্থলি বেনিফিট স্কিম।
- এনআরবি মান্থলি সেভিংস স্কিম।
- এনআরবি ডাবল গ্রোথ বেনিফিট স্কিম।
- এনআরবি ট্রিপল গ্রোথ বেনিফিট স্কিম।
- এনআরবি মান্থলি পেনশন ডিপোজিট স্কিম।
উপরের স্কিমগুলোর মত আরো ১৭ টি স্কিম চালু করেছে যমুনা ব্যাংক।
৬। ডাচ বাংলা ব্যাংক
ভবিষ্যতের জন্য একটু একটু সঞ্চয় করে রাখার নামই হচ্ছে ডিপিএস। আপনারা চাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংকে মোট পাঁচ ধরনের ডিপিএস একাউন্ট খুলতে পারেন বা নিজের একাউন্টের মাধ্যমেও টাকা জমাতে পারেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের যেসকল পাঁচ ধরনের ডিপিএস একাউন্ট খুলতে পারবেন, ওই সবগুলো ডিপিএস একাউন্টের নাম নিচে দেওয়া হল :
- ডিপোজিট প্লাস স্টিম।
- পর্যায়ক্রমিক বেনিফিট স্কিম (পিবিএস)
- শিশুদের শিক্ষা সঞ্চয় প্রকল্প।
- পেনশন প্লাস।
- বোচোর ডেরগুন স্কিম (বিডিএস)
উপরের পাঁচ ধরনের ডিপিএস একাউন্টে আপনারা চাইলে ডাচ বাংলা ব্যাংকে টাকা জমাতে পারেন।
আরো দেখুনঃ সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক
৭। সোনালী ব্যাংক
বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি ব্যাংক হচ্ছে সোনালী ব্যাংক। আপনারা চাইলে সোনালী ব্যাংকে নয় ধরনের সঞ্চয় স্কিম খুলতে পারবেন। নয় ধরনের সঞ্চয় স্কিন গুলোর নাম নিচে দেওয়া হল :
- সোনালী সঞ্চয় স্কিম।
- শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম।
- চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম।
- পল্লী সঞ্চয় স্কিম।
- বিবাহ সঞ্চয় স্কিম।
- অনিবাসী আমানত স্কিম।
- সোনালী ব্যাংক অবসর সঞ্চয় স্কিম।
- সোনালী ব্যাংক মিলিওনিয়ার স্কিম।
- স্বাধীন সঞ্চয় স্কিম।
৭। ওয়ান ব্যাংক
ওয়ান ব্যাংক দিচ্ছে সঞ্চয়ের মাধ্যমে দ্রুত লাখপতি হওয়ার সুযোগ। এটি বেসরকারি ব্যাংক হওয়া সত্বেও প্রবাসী ভাইদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ব্যাংকটিতে বিভিন্ন মাসিক কিস্তিতে টাকা জমা করে হতে পারেন আপনিও ২ থেকে ৮ বছরের মধ্যে ১০ লাখ টাকার মালিক। ওয়ান ব্যাংকের স্কিম গুলোর মধ্যে বর্তমানে দুইটি স্কিম চালু রয়েছে, তা হলো :
- কুইক মিলিওনিয়ার
- স্কুল ব্যাংক
৯। ঢাকা ব্যাংক
বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হল ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড এর অন্যতম উদ্যোক্তা হচ্ছেন পূর্বাণী গ্রুপের কর্ণধার ও বাংলাদেশের টেক্সটাইল ক্ষেতের অগ্রদূত জনাব আব্দুল হাই সরকার।
ঢাকা ব্যাংক বাংলাদেশের বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকা ব্যাংক ২০২৩ সালে এশিয়ার মানি অ্যাওয়াড পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের সেরা কর্পোরেট ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকা ব্যাংক। এই ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য অনেক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও দেশীয় কর্পোরেট, বহুজাতিক কোম্পানি, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পাবলিক সেক্টর গ্রাহকদের জন্য সর্বোচ্চ ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে একমাত্র ঢাকা ব্যাংক। তাই আপনারা চাইলে ঢাকা ব্যাংকে বিভিন্ন রকমের সঞ্চয় জমা রাখতে পারবেন, লোন নিতে পারবেন বা ডিপিএস খুলতে পারেন।
আরো দেখুনঃ পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম
১০। ব্র্যাক ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত করা হয় মূলত আমাদের দেশের ব্যবসা ও বাজারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে। যা ব্রাক ব্যাংকের গ্রাহকদের দারিদ্র্যমুক্ত, আলোকিত ও সুস্থ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করে।
ব্র্যাক ব্যাংকে প্রবাসী ব্যাংকিং বিভাগ এনআরবিদের (অনাবাসী বাংলাদেশী) প্রবাসী আয় প্রেরণ সেবা প্রদান করে। প্রবাসী ভাইদের জন্য অনেকগুলো ব্যাংকিং পণ্য বা পরিষেবা দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। যা আপনাদের ভবিষ্যৎ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করার পাশাপাশি একটি কাঠামোবদ্ধ আর্থিক পরিকল্পনা প্রদান করে। ব্র্যাক ব্যাংক আমাদের প্রবাসী ভাইদের জন্য বাংলাদেশের একটি আদর্শ ব্যাংক।
যারা ধর্মীয় বা অন্যান্য কারণে সুদ অর্জন করতে চায় না, এই হিসাবটিতে চেকবই ও এটিএম কার্ডও রয়েছে এবং নিয়মিত লেনদেনের জন্য আদর্শ। এই হিসাব টাকায় পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ব্র্যাক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য :
- ২৪ ঘন্টা এটিএম ও পিওএস ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
- সুদবিহীন (যারা ধর্মীয় কারণে সুদ চান না তাদের জন্য আদর্শ হিসাব।)
- ঘন ঘন লেনদেনে কোন বাধা নেই এই ব্যাংকে।
প্রবাসীদের জন্য কোন ব্যাংক ভালো সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ কবে থেকে প্রবাসীদের ব্যাংকে অন্য দেশের টাকা রাখার সুযোগ চালু হয়েছে?
উত্তরঃ ২০২০ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুবিধা চালু করেছে। এখন আপনি যদি প্রবাসী হয়ে থাকেন তবে ডলার, দিনার, রিয়াল ইত্যাদি পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে পারবেন।
প্রশ্নঃ ইউসিবি ব্যাংকের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ কত?
উত্তরঃ সঞ্চয় স্কীমের মেয়াদ হচ্ছে দুই থেকে দশ বছর পর্যন্ত। এবং আপনার কিস্তি বা সঞ্চয়ের পরিশোধ করতে হবে প্রতি মাসে ২০ তারিখের মধ্যেই।
প্রশ্নঃ মার্কেনটাইল ব্যাংকে সঞ্চয়ের সুবিধা কেমন?
উত্তরঃ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রয়েছে ৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক কিস্তিতে ১ থেকে যথাক্রমে ১০ বছর মেয়াদী সঞ্চয়ের সুবিধা।
লেখকের শেষকথা
উপরে দশটি ব্যাংকের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। সব ব্যাংকের এই একাউন্ট খোলা নিয়ম একই। সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১৮ এবং সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এদের মধ্যে অনেকগুলো ব্যাংকে যারা ধর্মীয় কারণে সুদ নিতে চান না, তাদের জন্য সুদবিহীন আদর্শ হিসাব রয়েছে। আমাদের কাজ হল সকল ব্যাংকের তথ্য আপনাদেরকে দেওয়া। এখন আপনাদের জন্য যে ব্যাংক ভালো হয় সে ব্যাংকে আপনারা লেনদেন করতে পারেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।