চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে, চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়, চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি কি পরিহার করা উচিত! যারা এই সমস্যায় পতিত হয়েছেন অথবা হতে চলেছেন তাদের মনের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এগুলো। হ্যাঁ, চিকেন পক্স হলে গোসল করা যাবে। তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং সতর্ক হতে হবে।
আজকের পোস্টে আমরা চিকেন পক্স হলে কিভাবে গোসল করতে হবে, চিকেন পক্স শরীরে সাবান ব্যবহার করা যাবে কিনা, এ সময় কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এবং চিকেন পক্স হলে দ্রুত আরাম পাওয়ার উপায় কি সে সম্পর্কে জানাবো এ টু জেড। তাই বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটির পরবর্তী অংশটুকু পড়ুন। পাশাপাশি পড়তে পারেন কি খেলে থাইরয়েড ভালো হয় এ সম্পর্কিত আরো একটি পোষ্ট।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে | চিকেন পক্স শরীর গোসল করানোর নিয়ম
চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। যদি কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে অবশ্যই গোসল করা উচিত। অনেকেই অস্বস্তিকর যন্ত্রণার কারণে অথবা গায়ে পক্স ওঠার কারণে মনে করেন যে গোসল না করাটাই ভালো। কিন্তু না, এ ধারণাটা সম্পূর্ণই ভুল।
কেননা চিকেন পক্স শরীর যতটা সম্ভব ঠান্ডা রাখা উচিত। আর তাই চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে এই প্রশ্নের উত্তর হবে, হ্যাঁ অবশ্যই চিকেন পক্স হলে গোসল করা যাবে। কিন্তু ভুলেও সাবান ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি অবশ্যই এটা খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরের কোন ফোসকা কোনভাবেই গলে না যায়। বড্ড সতর্কতার সাথে গোসল করাতে হবে চিকেন পক্স রোগীকে।
অনেকেই আবার জানতে চান, চিকেন পক্স শরীরে সাবান ব্যবহার করলে কি সেটা অভ্যন্তরীণ কোন ক্ষতি করে! না আসলে গোসল করানোর সময় যদি কেউ সাবান ব্যবহার করতে যায় তাহলে চিকেন পক্স গুলো অর্থাৎ গায়ে ওঠা ফোসকা গুলো গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আর তাই এ সময় সমস্যাটা আরো বেশি বাড়তে পারে। এজন্যই সাধারণত সাবান ব্যবহারের কথা নিষেধ করা হয়।
আর হ্যাঁ আরেকটা বিষয় মাথায় রাখবেন। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন চিকেন পক্স হলে যেহেতু শরীর ঠান্ডা রাখতে হয় তাই প্রচন্ড ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো ভালো। এমনটা কিন্তু একদমই নয়। সাধারণত চিকেন পক্স শরীর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলাটা অধিক বেশি উত্তম। এতে করে রোগী যেমন আরাম পায় ঠিক একইভাবে চিকেন পক্স শরীর ঠিকঠাক থাকে। পাশাপাশি অবশ্যই ভালো নরম তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে নেওয়ার ব্যবস্থা করাটা জরুরী।
সর্বোপরি একটা কথাই বলবো চিকেন পক্স হলে সাবান দিয়ে গোসল করা যাবে না, বড্ড সতর্কতার সাথে গা মুছতে হবে যাতে করে একটাও ফোসকা না গলে এবং রোগীর যাতে অতিরিক্ত বেশি মাত্রায় ঠান্ডা না লাগে সেক্ষেত্রে করণীয় হিসেবে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। ব্যাস এতোটুকুই।
আরো পড়ুন: কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
চিকেন পক্স হলে কি কি সমস্যা হয় | চিকেন পক্স এর লক্ষণ
চিকেন পক্স অর্থাৎ জল বসন্ত। সাধারণত শরীরের যখন চিকেন পক্সের আবির্ভাব ঘটে তখন কি কি সমস্যা হয় এবং লক্ষণ হিসেবে কি কি উপসর্গ দেখা দেয় এই সব কিছু জানার প্রতি আগ্রহ থাকে অডিয়েন্সদের। কেননা এটি যেমন একটি ভয়ঙ্কর ঠিক একইভাবে অসহ্যকর অস্বস্তিকর এক সমস্যার কারণ। ঠিক এ কারণেই অল্প থেকেই সতর্কতা অবলম্বণ করাটা সর্বোত্তম।
যদি আপনি চিকেন পক্স এর লক্ষণসমূহ জানতে পারেন এবং দুই একটা লক্ষণ বুঝতেই করণীয় কাজ হিসেবে কিছু কাজ নিয়মিত করেন তাহলেই চিকেন পক্স থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমরা মূলত আর্টিকেল এর পরবর্তী অংশে চিকেন পক্স থেকে মুক্তির উপায় অর্থাৎ চিকেন পক্স হলে করণীয় কাজ কি সে সম্পর্কে খুঁটিনাটি তুলে ধরবো। এখন করুন চিকেন পক্সের লক্ষণ সমূহ:
- আক্রান্ত হবার শুরুতে হালকা ব্যথা
- শরীরে অল্প অল্প জ্বর অনুভব
- হালকা সর্দি জ্বর লেগে যাওয়া
- শরীর অনেক বেশি দুর্বল এবং খারাপ লাগা শুরু হওয়া
- শরীরে ছোট ছোট বিচি বা গুটি ওঠা
- শরীরে ওঠা বিচির ভেতরে পানি থাকা অর্থাৎ ফোসকা আকৃতির বিচি ওঠা
শরীরে যখন হালকা দুই একটা জল বসন্তের আবির্ভাব হবে ঠিক তখনই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী ওই ব্যক্তির। তো আসুন জেনে নেই চিকেন পক্স হলে করণীয় কাজ কি সে সম্পর্কে আরো কিছু।
চিকেন পক্স থেকে মুক্তির উপায় | চিকেন পক্স হলে কি করনীয়
চিকেন পক্স থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় গুলো ওকরণীয় কাজগুলো হচ্ছে:
- নিয়মিত পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করা
- অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল না করে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করা
- শরীরে ওঠা গুটি গুলো নখের সাহায্যে গলিয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকা
- নিমের পাতা পানিতে ফুটিয়ে গোসলের সময় সেই পানি ব্যবহার করা
- অতিরিক্ত জ্বর আসলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল খাওয়া
- ব্যাথার হাত থেকে মুক্তি পেতে হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর বারবার মুছে দেওয়া
- সুতি কাপড় পরিধান করা
- অতিরিক্ত চুলকানির কারণে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিছু ঔষধ খাওয়া
- খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখা
- অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার না খাওয়া
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত
চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত ওই রোগীকে যে খাবারগুলো অধিক মাত্রায় খাওয়ানো উচিত সেগুলোই সাজেস্ট করব আলোচনার এ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি চিকেন পক্স হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর তাই টিউবয়েলের পানি সহ ডাবের পানি খাওয়াতে পারেন রোগীকে। এছাড়াও চিকেন পক্স রোগীদের জন্য আরেকটি আদর্শ খাবার হচ্ছে দই। আরো রয়েছে ক্যালোরি ভিটামিন সি ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার। যেগুলো চিকেন পক্স রোগীদের মুখে স্বাদ ধরে রাখবে ঠিক একইভাবে শরীরে পুষ্টি যোগাবে।
আরো পড়ুন: জ্বর হলে করণীয় কি, জেনে নিন জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না
এই সময় সাধারণত কিছু খাবার না খাওয়াটাই সর্বোত্তম। কেননা এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে, জল বসন্তের জীবাণুর বংশ বিস্তার করতে পারে এবং আরো নানা সমস্যার আবির্ভাব ঘটাতে পারে। এজন্য অবশ্যই অবশ্যই সাজেস্টকৃত খাবারগুলো না খাওয়ানোই ভালো।
- আখরোট
- চিনা বাদাম
- কিসমিস
- মাখন
- তেল
- পনির
- নারকেল
- চকলেট
- অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার
তবে হ্যাঁ, চিকেন পক্স রোগীদের জন্য ইলিশ চিংড়ি জাতীয় মাছ এবং ফলের জুস খুবই ভালো খাবার। তবে লেবুর রস খাওয়ানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। কেননা লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড মুখের ভেতরের ক্ষতস্থানে জ্বালা যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
চিকেন পক্স এর ঔষধ
চিকেন পক্স এর তেমন কোনো ঔষধ নেই। বিষয়টা অনেকের কাছেই আশ্চর্যকর মনে হতে পারে কেননা এই সমস্যাটা অনেক বেশি অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ইতিমধ্যে এটা জানিয়েছেন চিকেন পক্সের জন্য তেমন কোন ঔষধের প্রয়োজন নেই।
ওই সময়টা যদি আক্রান্ত রোগী নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে এবং সঠিক মাত্রায় পরিমিত খাবার গুলো খায় তাহলে এমনিতেই চিকেন পক্স ঠিক হয়ে যায়। তবে রোগের তীব্রতা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গেছে এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। এজন্য আমরা সাজেস্ট করব নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার।
আর হ্যাঁ চিকেন পক্স এর ঔষধ হিসেবে আমরা ঘরোয়া একটি প্যাক বা টোটকা বিষয়টি সাজেস্ট করব আলোচনার এ পর্যায়ে। আপনার কাছে যদি তিনটি উপকরণ থেকে থাকে তাহলে বলতে পারেন এই তিনটি উপকরণ খুব তাড়াতাড়ি আপনার চিকেন পক্সের সমস্যা দূর করবে। সেগুলো হচ্ছে তিল বাটা, নিম পাতা এবং কাঁচা হলুদ।
সাধারণত এই তিনটি উপকরণ ভালোভাবে বেটে গোসলের আগে শরীরে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ব্যবহার করে আক্রান্ত স্থান জীবাণুমুক্ত করা যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া সম্ভব হয়। তাই ঘরোয়া উপায়ে চিকেন পক্স সারিয়ে তুলতে মাথায় রাখুন এই বিষয়টি।
সেই সাথে চিকেন পক্স সম্পর্কিত প্রহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সমূহ জানার মধ্য দিয়ে শেষ করুন আজকের আর্টিকেলটি। তবে হ্যাঁ আপনি যদি স্বাস্থ্য রিলেটেড আরও কিছু পোস্ট পড়তে চান তাহলে ভিজিট করতে পারেন আমাদের সাজেস্কৃত লিঙ্কে। কেননা ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই ধরনের অসংখ্য পোস্ট প্রকাশ করেছি। যেগুলো অবশ্যই আপনাদের উপকারে আসবে।
চিকেন পক্স সম্পর্কিত বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও তার উত্তর - FAQ
১. চিকেন পক্স হলে কি ডিম খাওয়া যাবে?
হ্যাঁ অবশ্যই। চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হয় আর ডিম এ রয়েছে প্রোটিন। অতএ ব চিকেন পক্স হলে ডিম খাওয়া অবশ্যই যাবে।
২. চিকেন পক্স কতদিন থাকে?
চিকেন পক্স সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী থাকে।
৩. চিকেন পপফুলের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় কত দিনে?
মোটামুটি ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৪. চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবেনা?
চিকেন পক্স হলে এমন খাবার খাওয়া যাবেনা যেগুলো শরীরের প্রদাহ বৃদ্ধি করে, শরীরে ব্যাকটেরিয়ার আগমন ঘটায় অথবা পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখে।
৫. চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়?
সাধারণত একটি মানুষের শরীরে চিকেন পক্স একবারই হয়ে থাকে। আর চিকেন পক্স শরীরে হলে এটি প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আর এর চেয়ে অস্বস্তিকর একটি অনুভূতি সেটা অবশ্যই প্রত্যেককেই ভোগ করতে হয়।
৬. বাচ্চাদের চিকেন পক্স হলে করণীয় কি?
বাচ্চাদের এবং বড়দের চিকেন পক্স হলে একই করণীয় কাজ। তবে অবশ্যই যে কোন ওষুধ খাওয়ানোর পূর্বে চিকিৎসকের স্বর্ণপূর্ণ হওয়া উচিত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।
৭. চিকেন পক্সের লোশন
চিকেন পক্স হলে শরীরে কিছু লোশন ব্যবহার করা হয়। যেমন ওকুভির। তবে এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাদের পরামর্শ নেওয়াটাই সর্বোত্তম।
৮. চিকেন পক্স হলে কি ঔষধ খেতে হবে?
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মনে করেন চিকেন পক্স হলে ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এটি আপনার ঠিক হয়ে যায় যদি রোগী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করে।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।