দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম ও ব্যথা কমানোর উপায়: যাদের দাঁতে ক্যাভিটি রয়েছে, তাদের দাঁতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যেটাকে আমরা দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের যন্ত্রণা বলে আখ্যায়িত করে থাকি। বর্তমানে যারা দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন তাদের উদ্দেশ্যেই আমাদের আজকের এই পোস্ট। কেননা আজ আমরা দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম ও ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে এমন কিছু কৌশল শেয়ার করব, যেগুলো আপনাদের জন্য বেশ উপকারী।
আলোচনা শুরু করার আগে একটা বিষয় জানিয়ে দেই। অনেকেই বলে থাকেন যে, অনেক পোকা, আমার দাঁতগুলো খেয়ে ফেলেছে। মূলত এগুলোকে পোকা বলে সম্বোধন করা হলেও এটাই হচ্ছে দাঁতের জীবাণু বা ক্যাভিটি। বিভিন্ন সময় আমাদের দাঁতে বিভিন্ন ইনফেকশন দেখা দেয় এই ক্যাভিটির কারণে। আর এজন্য সেই ইনফেকশনের হাত থেকে মুক্তি পেতে ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে বা দাঁতের এক্সট্রা কেয়ার নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
তো আজ আমরা, দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেটের নাম ও দাম জানানোর পাশাপাশি কি কি উপায়ে দাঁত সুস্থ সবল রাখা যায় এবং দাঁতের সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা যায়, সেগুলোই জানাবো আপনাদেরকে। তো আর্টিকেল শুরু থেকে পড়তে থাকুন আর জেনে নিন, দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট ও দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট এর নাম | দাঁতের ব্যথার ঔষধের নাম
দাঁতের সমস্যার উপর ভিত্তি করে দাঁতের ব্যথার ওষুধ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে আমরা এমন কিছু ঔষধের নাম সাজেস্ট করব যেগুলো দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট ওষুধ হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। আর এই প্রত্যেকটি ওষুধ আপনি নিকটস্থ যেকোনো ফার্মেসির দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। সেই সাথে আমরা আলোচনার এ পর্যায়ে দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম হিসেবে যে ঔষধ গুলো লিখছি সেগুলো আলাদাভাবে দুই সময়ে খাওয়ার পরামর্শ দিব। কেননা এতে করে আপনার অধিক বেশি উপকার মিলবে। স্বাভাবিক দাঁতের ব্যথা হলে সেক্ষেত্রে ট্যাবলেট ওষুধ হিসেবে যে ওষুধগুলো খেতে পারবেন সেগুলো হলো:
- Fenamic 500 mg/ফেনামিক 500 মি.গ্রা.
- Fenamic 250 mg/ফেনামিক 250 মি.গ্রা. এবং
- Napa One/নাপা ওয়ান
মূলত যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের জন্য দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট ওষুধ হিসেবে সবচেয়ে কার্যকরী ও উপযুক্ত ঔষধ নাপা ওয়ান। যেটা শুধুমাত্র দিনে একটা ওষুধের অর্ধেক করে খেতে পারবেন। আর যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে তারা নাপা ওয়ান একটি করে দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারবেন। তবে সকাল এবং রাতে এই দুইবার ওষুধ খেলেই খুব তাড়াতাড়ি দাঁতের ব্যথা ঠিক হয়ে যায়। আর এমনটা চিকিৎসকরা এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে সেনামিক ৫০০ এমজি ঔষধটি ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষেরা দিনে একটি করে তিনবার সেবন করতে পারবেন। অন্যদিকে ফেনামিক আড়াইশো এমজি ট্যাবলেট ওষুধটি পাঁচ থেকে ১০ বা ১৫ বছর বয়সিরা দিনের দুইবার খেতে পারবেন। তবে হ্যাঁ আমরা পরামর্শ দিব, এই ওষুধগুলো নিজেদের মর্জি মাফিক না খেয়ে চিকিৎসকের সাথে আলাপ-আলোচরিতার মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট পরামর্শ মেনে সেবন করবার।
আর দাঁত ব্যথার ট্যাবলেট এর ঔষধ হিসেবে যেগুলো সাজেস্ট করেছি যদি এগুলো খাওয়ার পরবর্তীতেও দাঁতের ব্যথা ঠিক না হয় সেক্ষেত্রে, অন্য আরো কয়েকটি ট্যাবলেট ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সেগুলো হলো:
দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম - দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট এর নাম
- Amodis 400mg
- Aroxia 12p mg
- Algirex 120mg
- Cox-E 120mg
- Ecox 120mg
- Exilok 20mg
- Etoricoxib 60mg
- Etoricoxib 90mg
- Etoricoxib 120mg
- Tory 120mg
- Torimon 90mg
- Moxacil 500
- Fabetor 90mg
দাঁতের ব্যথার ঔষধের দাম | পোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর ওষুধ এর দাম
ইতিমধ্যে আমরা দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট এর নাম হিসেবে যে ঔষধ গুলো সাজেস্ট করেছি তার প্রত্যেকটির দাম সর্বনিম্ন ৮ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে আপনি যদি দাঁতের ব্যথার ঔষধের দাম আলাদা আলাদা ভাবে জানতে চান তাহলে ঔষধ গুলোর নাম লিখে এখনই সার্চ করুন আর সঙ্গে সঙ্গে জেনে নিন উল্লেখিত ঔষধ গুলোর ইকজাক্ট মূল্য।
আরো পড়ুন: দাঁত ফাঁকা দূর করার ঘরোয়া উপায় - ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা খরচ
দাঁত ব্যথার এন্টিবায়োটিক | অ্যান্টিবায়োটিক দাঁতের ব্যথার ওষুধের নাম
সাধারণত দাঁতের ব্যথা যখন প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় তখন ব্যথা কমানোর জন্য দাঁতের ব্যথায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সেফুরোক্সিম ৫০০ ও ২৫০ mg খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও আরেকটি ওষুধ রয়েছে যেটা দাঁতের ব্যথা উপশমনে ১০০% কার্যকরী। তার নাম হচ্ছে- ফ্লুব্লাস্ট ট্যাবলেট (Flublast Tablet). যে ঔষধ গুলো আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিকটস্থ বাজার থেকে কিনে দ্রুতই খেতে পারবেন।
আরো পড়ুন: জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় | দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় | দাঁতের যন্ত্রণা কমানোর উপায়
দাঁতের ব্যথার ট্যাবলেট বা অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ না খেয়েও, প্রাকৃতিক উপায়ে শুধুমাত্র ঘরে থাকা সাধারণ কিছু উপকরণ আপনার অসহ্যকর দাতের যন্ত্রণা কমাতে সহযোগিতা করতে পারে। আর তাই দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আমরা কয়েকটি বিষয় সাজেস্ট করব।
- প্রথমত আপনার যদি দাঁতের যন্ত্রণা শুরু হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে দুইটি লবঙ্গ গুঁড়ো করে নিয়ে তাতে দুই ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। অতঃপর ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ যাবৎ আপনি যদি জিভ দিয়ে চেপে বা হাতের আঙ্গুল দিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে এই দ্রবণটি চেপে ধরে রাখেন তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যে দাঁতের ব্যথার উপশম ঘটবে।
- দ্বিতীয়তঃ একটি পেস্ট তৈরি করুন। আর এই পেজটি উপকরণ হিসেবে রাখুন গোলমরিচ ও লবণ। গোলমরিচের গুঁড়ো এবং লবণ দুইটি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগালে দাঁতের ব্যথার যন্ত্রণা কমে যায়। কেননা গোলমরিচ এবং লবন এর মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া রোধই ও এনালজরসসিক উপাদান।
- তৃতীয়ত: দাঁতের যন্ত্রণা শুরু হলে অথবা দাঁতের মাড়ি ব্যথায় ফুলে গেলে লবণ পানি দিয়ে কুলি করুন। কেননা লবণ পানি মাড়ি ফোলা দাঁতের ব্যথা গলা ব্যথা এই প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধান এনে দেয়।
- চতুর্থত: নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে উক্ত পানির ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চামচ লবণ মিক্স করুন। অতঃপর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করে ফেলুন। এতে করেও দাঁতের ব্যথার উপশম ঘটে।
- পঞ্চমত: পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খান। এটা মূলত বহুদিনের আগের একটি টিপস। বিশেষ করে আগেকার দিনের মুরুব্বীরা দাঁতের যন্ত্রণায় পেয়ারা পাতা চিবিয়ে সেই ব্যথার উপশম ঘটাতেন। তাছাড়াও পেয়ারা পাতা যদি পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করেন তাতেও বেশ কাজে আসবে কেননা পেয়ারা পাতার সিদ্ধ পানি মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- ষষ্ঠমত: দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের যন্ত্রণা অতিরিক্ত পরিমাণে হতে থাকলে পেঁয়াজ চিবিয়ে খান বা আক্রান্ত স্থানে কিছুক্ষণ রেখে দিন। দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার এভাবে পেঁয়াজ চিবিয়ে খাট তাহলে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে। কেননা পেঁয়াজের রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান।
- সপ্তমত: সঙ্গে সঙ্গে ব্যথযুদ্ধ স্থানে সরষে তেল লাগিয়ে রাখুন। কেননা সর্ষের তেল দাঁতের যন্ত্রণা কমাতে বেশি সাহায্য করে থাকে। তবে চাইলে তেলের সঙ্গে সামান্য নুন মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলে উপকার খুব দ্রুত মিলবে।
- অষ্টমত: দুর্বা খাস চিবিয়ে দাঁতের ব্যথাযুক্ত স্থানে কিছুক্ষণ যাবৎ রেখে দিন। কেননা দুর্গা খাস দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এটা প্রমাণিত হয়েছে। চাইলে দুর্বা ঘাসের রস খেতে পারেন অথবা ব্যথাযুক্ত স্থানে রেখে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও দাঁতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এছাড়াও দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে বা দাঁতের ব্যথা হলে করণীয় হিসেবে আপনি আরো যে কাজগুলো করতে পারেন সেগুলো হচ্ছে: সঠিক নিয়মের দাঁত ব্রাশ করা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
আরো পড়ুন: চাপা ভাঙ্গা ঠিক করার ট্যাবলেট | চাপা ভাঙ্গা ঠিক করার উপায়
দাঁতের ব্যথার কারণ ও দাঁতের ব্যথা সমস্যার প্রতিকার
দাঁতের ব্যথা সাধারণত খুবই সাধারণ কিছু কারণে হয়ে থাকে। তবে কারণগুলো আমাদের কাছে সাধারণ মনে হলেও মূলত দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সেগুলো হচ্ছে–
- অতিরিক্ত শক্ত ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা
- তাড়াহুড়ো করে এলোমেলো ভাবে দাঁত ব্রাশ করা
- দাঁতের ফিলিং উঠে যাওয়া
- দাঁত ফিলিং করার সময় অতিরিক্ত এনামেল কেটে ফেলা
- মারি সরে যাওয়া বা দাঁত ভেঙে যাওয়া সহজ পদ্ধতি কারণ
এছাড়াও বয়স জনিত কারণে এনামেল এর ক্ষয় হলে পরেও অতিরিক্ত দাঁতের ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই এই সমস্যা প্রতিকারের জন্য
- সঠিক নিয়মে সঠিক ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন
- ভালো মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন
- দিনে অন্তত দুইবার ধীরে ধীরে দাঁত ব্রাশ করুন
- দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যে সকল খাদ্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে সেগুলো বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন
লেখকের শেষকথা
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, দাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট এর নাম ও ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কিত আলোচনার সমাপ্তি টানছি আজ এখানেই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।