অনেকেই জানতে চান সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয়। আজকের এই লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যারা মেডিকেল করাতে চান তাদের জন্য এবং মেডিকেল নিয়ে চিন্তিত তারা এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। যদি আপনি এই লেখাটি পড়েন তবে সৌদি মেডিকেল টেস্ট নিয়ে যে অজানা তথ্য আছে সেগুলো এই লেখায় আশা করি জানতে পারবেন। আর সৌদি মেডিকেল সম্পর্কিত সকল তথ্য এখানে আলোচনা করবো। যদি আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়েন তবে আপনার জন্য ১০০% উপকারী হবে বলে আমি মনে করি।
আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো সৌদি মেডিকেল আনফিট হওয়ার কারণ কি, সৌদি মেডিকেল আনফিট হলে আপনার করণীয় কি, সৌদি মেডিকেল টেস্ট কোথায় করানো হয়, মেডিকেল রিপোর্ট এর মেয়াদ কতদিন থাকে, মেডিকেল ফিট হওয়ার উপায় কি, সৌদি মেডিকেল কিভাবে চেক করবেন ইত্যাদি। তাহলে চলুন জেনে নেই সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয়
ভ্রমণ, ব্যবসা কিংবা চাকুরি যেকোনো কাজেই বা যেকোনো প্রয়োজনে আমরা দেশের বাইরে যাই না কেন, দেশের বাইরে যাওয়ার কথা আসলেই মেডিকেল টেস্ট করানোর প্রয়োজন হয়। আর অনেক ক্ষেত্রেই মেডিকেল টেস্ট বাধ্যতামূলক। বর্তমানে মেডিকেল টেস্ট করানোর পর উত্তীর্ণ হলেই কেবল ভিসা পাবেন। অনেক ক্ষেত্রে ভিসা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়।
মেডিকেল টেস্ট এর অংশ হিসেবে সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা, এক্স-রে, মলমূত্র পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা (এইচএসবিএসজি, হেপাটাইটিস - এ ও বি), টিউবারকিউলোসিস (যক্ষ্মার পরীক্ষা), এইচআইভি (এইডস-এর পরীক্ষা), ভিডিআরএল (যৌ*ন রোগ/সংক্রমণ পরীক্ষা), ম্যালেরিয়া, লেপ্রোসি, মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভবতী কিনা ইত্যাদি বিষয়ের উপর পরীক্ষা করা হয়।
মেডিকেল টেস্টে যেসকল সমস্যা থাকলে সাধারণত সৌদি যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি মেডিকেল আনফিট করে দেয়া হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
সংক্রামক রোগ
- কুষ্ঠ রোগ
- করোনা ভাইরাস
- অন্যান্য ভাইরাস জনিত সমস্যা
- চর্মরোগ খুব বেশি
- এইচআইভি পজিটিভ (এইডস)
- হেপাটাইটিস (বি) সারফেস অ্যান্টিজেন
- হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি)
- মাইক্রোফিলেরিয়া এবং ম্যালেরিয়া
অ-সংক্রামক রোগ
- শ্বাসকষ্ট
- জন্ডিস
- কিডনি সমস্যা
- লিভার সমস্যা
- হার্টের সমস্যা
- ক্যান্সার জীবানু
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
- বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার
- মানসিক এবং স্নায়বিক ব্যাধি
- হিমোগ্লোবিন 79/100di এর নিচে
আমরা জানলাম চর্ম রোগ থাকলে আনফিট করা হয়, হার্টের সমস্যা থাকে সৌদি মেডিকেল আনফিট করা হয়, শরীরের যদি জন্ডিস থাকলে আনফিট করা হয়, শ্বাস কষ্টের সমস্যা থাকলে মেডিকেলে আনফিট করা হয়, এইচআইভি রোগ থাকলে মেডিকেলে আনফিট করা হয়।
উপরে উল্লেখ করা সমস্যা গুলো যদি আপনার মাঝে বিদ্যমান থাকে তবে সমাধান না হওয়ার পর্যন্ত মেডিকেল টেস্ট করতে যাবেন না। কেননা উক্ত সমস্যা গুলোর জন্য মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট আসে।
অর্থাৎ আলোচনা করা উক্ত সমস্যা গুলো গুলিই শরীরে ধরা পরলে তা বিদেশ যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে অর্থাৎ সৌদি মেডিকেল আনফিট করা হয়। এই সকল সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আপনি মেডিকেল করার পূর্বেই প্রাইভেট ভাবে টেস্ট করে নিতে পারেন। এতে আপনার শরীরে কোনো সমস্যা ধরা পরলে তা সমাধান করতে পারবেন আগে থেকেই। এবং পরবর্তীতে চূড়ান্ত ভাবে মেডিকেল টেস্ট করলে সহজেই ফিট হতে পারবেন। আশা করছি আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারছেন সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয়।
আরো পড়ুন: ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর নাম
সৌদি মেডিকেল আনফিট হলে করণীয়
বিদেশ যাওয়ার জন্য যারা মেডিকেল টেস্ট করান তাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকার জন্য মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট চলে আসে। আবার অনেক সময় দেখা যায় কোন প্রকার সমস্যা না থাকার পরেও মেডিকেল আনফিট চলে আসে।
আপনাদের মাঝে যাদের সৌদি মেডিকেল আনফিট চলে এসেছে তাদের চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কারণ মেডিকেল রিপোর্টে যে সমস্যা আপনার মাঝে ধরা পড়বে সেটা সমাধান করে তিন থেকে ছয় মাস পরে পুনরায় মেডিকেল টেস্ট করাবেন। আশা করি আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে এবং আপনার সৌদি মেডিকেল রিপোর্টে ফিট চলে আসবে।
এছাড়াও অনেক সময় দেখা যায়, শারীরিক কোন প্রকার সমস্যা না থাকার পরেও মেডিকেল আনফিট চলে আসছে। এক্ষেত্রে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধান করে নিবেন যদি এতে কাজ না হয় তবে কিছু টাকা পয়সা লেনদেন করলে তারা আপনার মেডিকেল রিপোর্ট পুনরায় ফিট করে দিবে।
আরো পড়ুন: সৌদি মেডিকেল রিপোর্ট চেক অনলাইন - মেডিকেল রিপোর্ট চেক সৌদি
মেডিকেল ফিট হওয়ার উপায়
যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকার কারণে আপনার সৌদি মেডিকেল আনফিট আসে তবে উক্ত সমস্যার জন্য অবশ্যই চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। অবশ্যই চেষ্টা করবেন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শারীরিক সমস্যার সমাধান করা।
শারীরিক সমস্যা ঠিকঠাক হওয়ার ৩ থেকে ৬ মাস পরে আপনি পুনরায় মেডিকেল টেস্ট করালে মেডিকেল রিপোর্টে ফিট দেখাবে। যদি দেখেন কোন প্রকার সমস্যা না থাকলেও মেডিকেল রিপোর্টে আনফিট চলে আসছে তবে অবশ্যই তাদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করবেন। অনেক সময়য় দেখা যায় তাদেরকে কিছু টাকা প্রদান করলে তারা পুনরায় আপনার মেডিকেল রিপোর্ট ফিট করার ব্যবস্থা করে দিবেন।
মেডিকেল টেস্ট কোথায় করানো হয়
যে এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ করে আপনি বিদেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের মাধ্যমে মেডিকেল টেস্ট করালে দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনি মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাবেন। এজেন্সি আপনাকে যেখানে মেডিকেল টেস্ট করাতে সাজেস্ট করবে আপনি সেখানেই মেডিকেল টেস্ট করবেন। তাহলে আপনার মেডিকেল আনফিট আসার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কম থাকবে।
এছাড়াও আপনি চাইলে সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রবাস যাওয়ার জন্য সহজেই মেডিকেল টেস্ট করাতে পারবেন। বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল টেস্ট করানো হয়।
আরো পড়ুন: সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা বেতন কত ২০২৪
মেডিকেল রিপোর্ট এর মেয়াদ কতদিন থাকে
মেডিকেল টেস্ট করানোর পরে যদি ফিট চলে আছে তবে উক্ত মেডিকেল রিপোর্ট এর মেয়াদ থাকে তিন মাস পর্যন্ত। তিন মাস পর মেডিকেল রিপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই যদি আপনি বিদেশ যাওয়ার জন্যেই মেডিকেল টেস্ট করান তবে আপনাকে ৩ মাসের মধ্যে বিদেশে যেতে হবে।
একটা বিষয় মনে রাখবেন আপনার মেডিকেল টেস্ট হয়ে গেলে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাবেন। রিপোর্ট এর কাগজ ভিসা অফিসে জমা দিলেই তারা ভিসার কাজ শেষ করবে। যদি আপনি মেডিকেল রিপোর্টে আনফিট হোন তবে আপনার ভিসার কাজ বাতিল হয়ে যাবে।
লেখকের শেষকথা
আজকের এই লেখা থেকে আমরা জানলাম সৌদি মেডিকেল আনফিট কেন হয়, মেডিকেল আনফিট হলে করণীয় কি এবং মেডিকেল ফিট হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের বিষয় সম্পর্কে কোন বিষয় জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন। এই পোস্টটি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
মেডিকেল সম্পর্কে FAQ
মেডিকেল আনফিট কেন হয়?
মেডিকেল আনফিট হওয়ার প্রধান কারণ গুলো হল: চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, হার্টের সমস্যা, এইচআইভি, করোনা ভাইরাস, ক্যান্সারের জীবানু সংক্রান্ত সমস্যার কারণে মেডিকেল আনফিট হয়।
মেডিকেল টেস্ট খরচ কত টাকা?
বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট করাতে কত টাকা খরচ হয় এটার কোনো নিদিষ্ট হিসেব নেই। তবে হ্যাঁ বর্তমানে মেডিকেল টেস্ট করার জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকার কমবেশি খরচ হচ্ছে।
বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল মেয়াদ কত থাকে?
বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট করার পর মেডিকেল রিপোর্ট এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ মাস থাকে।
মেডিকেল আনফিট হলে কত দিন পর মেডিকেল করা যায়?
মেডিকেল টেস্ট করার পর যদি আপনার মেডিকেল রিপোর্টে আনফিট দেখায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আবার ৩ থেকে ৬ মাস পর আবার মেডিকেল করা যায়।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।