বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় জানতে চান অনেকেই। কেননা বিড়াল মানুষের খুবই প্রিয় একটি পোষ্য প্রাণী। আর মাঝে মাঝে কোনো না কোনো কারণে বিড়ালের আঁচর লেগে যায় শরীরে, আবার কখনো কখনো কামোড়ও খেতে হয়। তাই কমবেশি সবাই শঙ্কিত থাকেন এই বিষয়টি নিয়ে।
আজ জানাবো বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়, বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ, বিড়াল আঁচড় দেওয়ার ঠিক কতদিন পর ভ্যাকসিন দিতে হয়, বিড়াল কামড়ালে কোন ভ্যাকসিন দিতে হয়, বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি সমস্যা হয়, বিড়ালের নখের আঁচর কতটা বিপদজনক এবং বিড়াল কামড়ালে বাচ্চা হয় কিনা এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত। তাহলে আসুন জেনে নেই দুর্ঘটনাবশত আপনি যদি বিড়ালের কামড় খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হবে!
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
বিড়াল কামড়ালে টিকা দিতে হবে কিনা এই বিষয়টি মূলত ক্ষত স্থানের গভীরতার উপর নির্ভর করে। তাই বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হবে এটা জানার পূর্বে আপনাকে আরো জানতে হবে সাধারণত কতটা ক্ষত হলে এবং কি কি সমস্যা থাকলে বিড়ালের কামড়ের কারণে ইনজেকশন বা ওষুধ গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে।
সত্যি বলতে ইতোমধ্যে চিকিৎসকরা এটা জানিয়েছেন, বিড়ালের যদি কোন জটিল রোগ থেকে থাকে এবং বিড়ালের আচরে অথবা বিড়াল কামরানোর ফলে যদি শরীর থেকে রক্তপাত ঘটে সেক্ষেত্রে টিকা নেওয়া জরুরী। আর যদি শুধুমাত্র আচর লেগে থাকে তাহলে সেটা খুব একটা বিপদজনক নয়। মানে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আপনি ক্ষতস্থানটি জীবাণুনাশক কোন লিকুইড দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।
তবে যদি কখনো দুর্ঘটনাবশত বিড়ালের কামড়ে আপনার গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা বা ইনজেকশন নেওয়া সর্বোত্তম। কেননা এতে করে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং আপনি বিড়ালের কামরে আক্রান্ত জীবাণুর জন্য অসুস্থতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
বিড়াল কামড়ালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রথম টিকা দিতে হয় অর্থাৎ প্রথম দিনেই টিকা দেওয়া উচিত। কেননা এসকল প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকার জন্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে। ব্যক্তি বা শিশুদের জন্য, বিড়াল কামড়ানোর ১, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিন পর টিকা দেওয়া উচিত।
বিড়ালের কামড় থেকে সম্ভাব্য সংক্রমণ এর বিরুদ্ধে নিজেকে সুরক্ষা রাখার ক্ষেত্রে, টিকা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
যদি আপনি পূর্বে কখনো জলাতঙ্ক রোগের বিরুদ্ধে টিকা না দিয়ে থাকেন, তবে PEP টিকাদান সিরিজে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেওয়া ০৪ টি ডোজ থাকে:
পিইপি টিকা দেওয়ার সময়সূচি নিম্নরূপ:
ডোজ | দিন |
---|---|
প্রথম ডোজ | বিড়ালের কামড়ের ঘটনার দিন দেওয়া হয়। |
দ্বিতীয় ডোজ | প্রথম ডোজ দেওয়ার ৩ দিন পর। |
তৃতীয় ডোজ | প্রথম ডোজ দেওয়ার ৭ দিন পর। |
চতুর্থ ডোজ | প্রথম ডোজ দেওয়ার ১৪ দিন পরে দেওয়া হয়। |
টিকা দেওয়ার সময়
আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে যথাযথ পদক্ষেপ এবং টিকা দেয়ার সময়সূচী নির্ধারণ করতে বিড়ালের কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলাতঙ্ক হচ্ছে একটি গুরুতর এবং সম্ভাব্য মারাত্মক রোগ, তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ এবং টিকাদান অপরিহার্য।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হয়
জলাতঙ্ক হল একটি মারাত্মক ভাইরাল রোগ যা কুকুর, বিড়াল সহ সংক্রামিত প্রাণীর কামড় কিংবা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সংক্রমিত হতে পারে। মানুষের মাঝে জলাতঙ্ক এর ইনকিউবেশন সময়কাল ব্যাপকভাবে চেঞ্জ হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে থাকে যেমনঃ আচড়, কামড়ের অবস্থান এবং তীব্রতা। জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে সাধারণত ২০ থেকে ৯০ দিনের মতো সময় লাগে।
এই ২০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে, ভাইরাস সংক্রমণের স্থান (বিড়ালের লালা) থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পর্যন্ত ভ্রমণ করে। এটি মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পরে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যাথা, উত্তেজনা, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, খাবার গিলতে অসুবিধা এবং অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিড়াল কিংবা অন্য কোনো সম্ভাব্য সংক্রামিত প্রাণীর কামড়ের পর জলাতঙ্ক রোগের সম্ভাব্য লক্ষণগুলিকে উপেক্ষা না করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি উপসর্গ দেখা দেয় তবে জলাতঙ্ক প্রায় সবসময়ই মারাত্মক। যদি আপনি কোনো বিড়ালের কামড় খেয়ে থাকেন বা কোনোভাবে জলাতঙ্কের সংস্পর্শে আসার সন্দেহ করেন তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুন: কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
জলাতঙ্ক হচ্ছে একটি গুরুতর ভাইরাল রোগ যা কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্যান্য প্রাণীদের পাশাপাশি মানুষকেও প্রভাবিত করে। বিড়ালের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলি পরিবর্তিত হতে পারে, তবে হ্যাঁ আমরা এখানে সচেতন হওয়ার জন্য কিছু বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ তুলে ধরেছি:
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ আচরণগত পরিবর্তন: জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের অস্বাভাবিক আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের স্বভাব খিটখিটে, আক্রমনাত্মক অথবা অত্যধিক আকারে অস্থির স্বভাবের হতে পারে। বিকল্পভাবে, বিড়ালের মাঝে হতাশা, অলসতা কিংবা প্রত্যাহারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
অত্যধিক কণ্ঠস্বর: জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত বিড়াল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আকারে কণ্ঠস্বর করতে পারে, যেমনঃ অত্যধিক পরিমাণে মায়া, গর্জন অথবা হিস হিস করে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক হলে বিভ্রান্তি, খিঁচুনি বা লক্ষ্যহীন বিচরণ ইত্যাদি সমস্যা প্রদর্শন করতে পারে।
খাওয়া এবং পান করার অভ্যাসের পরিবর্তন: জলাতঙ্ক রোগের বিড়াল গুলি ক্ষুধা এবং পানি পান করার ধরণে পরিবর্তন অনুভব করতে পারে। এই রোগে আক্রা বিড়াল অনেক বেশি তৃষ্ণার্ত দেখা দিতে পারে অথবা সম্পূর্ণরূপে খাওয়া এবং পান না করার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ স্নায়বিক পরিবর্তন: বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালের স্নায়বিক লক্ষণগুলি প্রকাশ করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলতে চলতে হোঁচট খাওয়া বা পক্ষাঘাত, অস্থির চলাফেরা এবং সমন্বয়হীনতা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
অত্যধিক আকারে সংবেদনশীলতা প্রকাশ: জলাতঙ্ক রোগের বিড়াল শব্দ, আলো, স্পর্শ কিংবা অন্যান্য উদ্দীপনার প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হতে পারে। বিড়ালের কাছে যাওয়া মাত্রই অথবা স্পর্শ করলেই তারা অনেক বেশি আক্রমণাত্মক কিংবা ভয়ের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের আরো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকাশ পেতে পারে। যাহোক, আপনি যদি মনে করেন যে বিড়ালের মাঝে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বা এখানে আলোচনা করা কোনো লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটির সাথে মিলে যাচ্ছে, তবে দেরি না করে অবিলম্বে একজন পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জলাতঙ্ক হল মারাত্মক রোগ এবং বিড়ালের সাথে থাকা বিড়াল এবং মানুষ উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ সতর্কতা গ্রহণ অপরিহার্য।
বিড়াল কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা | বিড়াল কামড়ালে করণীয়
বিড়ালের নখের হালকা-পাতলা আচর লেগে থাকলে চিন্তার কারণ নেই এটা যেমন সত্যি। পাশাপাশি আপনি যদি বিড়ালের কাছ থেকে আঘাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থানে কিছু জিনিস লাগান তাহলে সেটা আরো বেশি ভালো। কেননা এমন অনেকেই রয়েছেন যারা বিড়ালের কামড় বা আচরের কারণে সৃষ্টি হওয়া গভীর ক্ষতকে খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। যারা এই কাজটা করেন তাদেরকে মূলত ভবিষ্যতে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ আক্রান্ত বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের কারণে মানুষের শরীরে বিপদজনক কিছু রোগের সৃষ্টি হয়।
তবে আপনি যদি সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কিছু পরামর্শ মেনে চলেন তাহলে সুস্থ থাকতে পারবেন এবং ঐ ধরনের বিপজ্জনক রোগ গুলো থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে। এর জন্য প্রথমেই-
ক্ষতটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন
ক্ষতস্থানে জীবাণুনাশক দিয়ে স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাবান এবং পানি দিয়ে বিড়ালের কামড়ের ক্ষতটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ক্ষত পরিষ্কার করলে তা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
জীবাণু ধ্বংস করতে সাবান ব্যবহার করুন
অতিরিক্ত রক্তপাত হলে অবহেলা না করে স্থানটি সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মনে রাখবেন অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক সল্যুশন জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না আর এক্ষেত্রে সাবান ভালো কাজ করে। তাই জীবাণুনাশক ব্যবহার করার পাশাপাশি ক্ষতস্থানটি সাবান পানি দিয়ে ধোয়াটাও জরুরী।
এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন
ব্যবহার করুন এন্টিবায়োটিক, কেননা বিড়ালের কামড়ের কারণে যে ব্যাকটেরিয়া জনক জীবাণুগুলো শরীরে প্রবেশ করে সেগুলোর ক্ষেত্রে স্যাভলন, ডেটল জাতীয় জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করুন
বিড়ালের কামড়ের কারণে রক্তপাতের সৃষ্টি হলে, রক্তপাত বন্ধ করার জন্য আপনি একটি পরিষ্কার কাপড় কিংবাবা টিস্যু দিয়ে মৃদুভাবে চাপ দিন। এই পদ্ধতি রক্তপাত কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মেডিক্যাল অ্যাটেনশন গ্রহণ করুন
বিড়ালের কামড় যদি গভীর অথবা বড় আকারে হয় এবং সংক্রমণের লক্ষণ দেখায় কিংবা যদি এটি একটি বিপথগামী বা অজানা বিড়ালের কামড় হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে খুবই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
একজন ডাক্তার আপনার এই বিড়ালের কামড়ের ক্ষতটি দেখবেন, প্রয়োজনে তারা আপনার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক লিখবেন এবং আপনাকে টিকা প্রদান এবং কামড়ের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে টিটেনাস কিংবা জলাতঙ্ক রোগের টিকা প্রয়োজন কিনা সেটি নির্ধারণ করবেন।
বিড়ালের কামড়ে জলাতঙ্কের লক্ষণগুলির জন্য পর্যবেক্ষণ করুন
জলাতঙ্ক রোগের যেকোনো লক্ষণ যেমন ব্যথা করা, লালভাব, ফোলাভাব, উষ্ণতা কিংবা নিষ্কাশনের মতো ক্ষতের দিকে খেয়াল রাখুন। আপনি যদি জলাতঙ্ক রোগের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো খেয়াল করেন তাহলে অতিসত্বর একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, স্বাভাবিক অবস্থায় বিড়ালকে সুস্থ মনে হলেও বিড়ালের মুখে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিড়ালের কামড় থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যায়।
যদি কখনো বিড়ালের আঁচর বা কামড়ের সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে আশা করি এই বিষয়গুলো মাথায় থাকবে।
বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন
কুকুর, বিড়ালের কামড় সহ জলাতঙ্ক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য যে ভ্যাকসিন গুলো ব্যবহার করা হয় তাদেরকে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন বলা হয়। রেবিস (জলাতঙ্ক) ভ্যাকসিনের বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ফর্মুলেশন পাওয়া যায়, তবে কিছু সাধারণ ভাবে ব্যবহৃত হয়:
- Rabisin
- RabAvert
- Quadricat
- Imovax Rabies
- NOBIVAC Feline 1-HCPCh
- HDCV (Human Diploid Cell Vaccine)
- PCEC (Purified Chick Embryo Cell Vaccine)
এই ভ্যাকসিনগুলো বিশেষভাবে রেবিস ভাইরাস (জলাতঙ্ক) বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করতে ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করার জন্যে তৈরি করা হয়েছে।
আপনি যদি বিড়াল, কুকুর বা জলাতঙ্ক বহন করার সন্দেহে অন্য কোনও প্রাণীর কামড় খেয়ে থাকেন, তবে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন তিনি আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ভ্যাকসিন এবং টিকা দেওয়ার সময়সূচী নির্ধারণ করবেন।
বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের দাম কত?
একটি বিড়াল যদি র্যাবিস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ওই বিড়ালের হাচর বা কামড়ের ফলে মানুষের শরীরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তাই সে সময় চিকিৎসকরা বিড়ালের কামড়ে জীবাণুনাশক ভ্যাকসিন হিসেবে র্যাবিস ভ্যাকসিন পুষ করেন আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে। আর বিড়ালের কামড়ের এই ভ্যাকসিনের দাম মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
তবে হ্যাঁ, আপনি চাইলে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে এটি বিনামূল্যে পেতে পারেন। তাই বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিনের দাম কত, এটা না জেনে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে উপস্থিত হন এবং ডাক্তারকে আপনার ক্ষতস্থান দেখিয়ে সঠিক পরামর্শ মেনে গ্রহণ করুন বিড়ালের কামড়ের ভ্যাকসিন।
আর হ্যাঁ, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন ধরনের টিকা থাকে। আর তাই র্যাবিস ভ্যাকসিন ছাড়াও চিকিৎসকরা অন্য কোন টিকাও দিতে পারেন চিকিৎসকরা। যে টিকা গুলো আপনার শরীরকে ওই জীবাণুর হাত থেকে প্রটেকশন যোগাবে। পাশাপাশি আরও অনেকেই এটা জানতে চান, বিড়াল জাতীয় পোষ্য প্রাণীদের টিকা কি এবং সেগুলো কেন প্রয়োগ করা জরুরি? সে বিষয়ে আলোচনা করার পূর্বে জেনে নিন বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়?
বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি সমস্যা হয় | বিড়ালের নখের আচর কি বিপজ্জনক
সাধারণত কুকুর বিড়ালের কামড়ে মানব শরীরে জলাতঙ্ক, ডিপথেরিয়া এবং ফ্লু এর মত রোগ গুলো দেখা দেয়। অতএব বিড়ালের নখের আঁচড়ের কারণে যদি আপনার শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুপ্রবেশ করে তাহলে এই রোগগুলো হবার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু পোষ্য বিড়ালকে যদি আগে থেকেই ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এত চিন্তার প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু যদি যেকোনো বিড়ালের কাছ থেকে আপনি আঘাত পেয়ে থাকেন অর্থাৎ নখের আঁচর বা কামড় লেগে থাকে সেক্ষেত্রে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়লে এবং ক্ষতের পরিমাণটা অনেক গভীর হলে সেটা বিপদজনক। এক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
বিড়াল কামরানোর পর পিইপি টিকা দেওয়ার সময়সূচী
সাধারণত বিড়ালের কামড়ের কারণে যদি শরীরে জীবাণু প্রবেশ করে এবং জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা পিইপি টিকা প্রদান করে থাকেন। ঠিক এ কারণে আলোচনার শেষ মুহূর্তে pep টিকাদান সিরিজ এর সময়সূচি সম্পর্কে কিছু তথ্য সংযুক্ত করব। তো জেনে নিন পি ই পি টিকা দেওয়ার সময়সূচী ও এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা।
PEP টিকাটি মূলত চারটি ডোজে কমপ্লিট করা হয়। প্রথম ডোজ বিড়ালের কামড় দেওয়ার দিন দেওয়া হয়ে থাকে। দ্বিতীয় জর্জ দেওয়া হয়ে থাকে প্রথম ডোজ প্রদানের ঠিক তিনদিন পর। অতঃপর সাতদিন পরবর্তী সময়ে তৃতীয় ডোজ প্রদান করা হলে টানা ১৪ দিন পরে চতুর্থ ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে।
বিড়াল কামড়ালে কি বাচ্চা হয়?
অনেক সময় দেখবেন গ্রামের দাদী নানীরা বলে থাকেন কুকুর বিড়াল কামড় দিলে পেটে বাচ্চা হবে। অর্থাৎ যদি কখনো আপনি বিড়ালের কামড় খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার পেটে বাচ্চা হবে কিনা এই নিয়ে কনফিউশনে পড়ে যান অনেকেই! আসলে একটু ভেবে দেখলে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের এ বিষয়টি মাথায় আসবে যে, এটা কখনোই সম্ভব নয়।
সাধারণত এই ধরনের প্রাণীগুলো যদি আমাদেরকে কামড়ে থাকে তাহলে কঠিন কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, এর বাইরে আর কিছু নয়। সাধারণত ছোট ছেলে মেয়েদেরকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে কুকুর বিড়াল থেকে দূরে থাকার কারণে সতর্কবার্তা হিসেবে বয়স্করা এই কথা বলে থাকেন। তাই আপনার প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না, বিড়াল কামড়ালে বাচ্চা হয় না।
শেষকথা
পাঠকগণ বিড়াল কামড়ালে ঠিক কতদিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সে সম্পর্কে আমরা আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়েছি। বিড়ালের কামড়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার সময়ে আপনার স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের কামড়ানোর পর দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আপনাকে গুরুতর সংক্রমণ কিংবা জলাতঙ্কের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে সেইফ করতে পারে।
আপনি খেয়াল রাখবেন, বিড়ালের কামড়ের টিকা দেয়ার পর কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই যা সম্পূর্ণ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়? এই বিষয় সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে সঙ্গে পরামর্শ করা গ্রহণ করা সর্বোত্তম, কেননা ডাক্তার আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতিকে মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং টিকা সংক্রান্ত যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করতে পারবেন।
আশা করছি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি আপনাদের উপকারে আসবে এবং আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে বিড়াল কামড়ালে কি সমস্যা হতে পারে এবং করণীয় কি সে সংক্রান্ত বিষয় জানতে পেরেছেন। যদি আপনাদের এ বিষয়ে আরও কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে তবে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা আপনাদের কমেন্টের যথাযথ উত্তর প্রদানের জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি।
তো পাঠক বন্ধুরা, এখন আসুন আলোচনা শেষ পর্যায়ে বিড়াল কামড়ানো নিয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর জেনে নেওয়া যাক।
সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী - FAQ
১. বিড়াল কামড় দিলে টিকা নিতে হয় কি?
হ্যাঁ, বিড়াল কামড়ের ফলে যদি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং রক্তপাত ঘটে তাহলে টিকা নিতে হয়।
২. বাচ্চা বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়?
বিড়াল বাচ্চা হোক অথবা বয়স্ক এর সঙ্গে জীবাণুর কোন সম্পর্ক নেই। তাই আপনি বড় বিড়াল কামড় দিলে যতদিন পর টিকা গ্রহণ করতেন ঠিক একইভাবে বাচ্চা বিড়ালের ক্ষেত্রেও ওই একই নিয়ম ফলো করতে হবে। এর জন্য চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
৩. বিড়ালের কামড়ে কি ইনজেকশন নিতে হয়?
হ্যাঁ, বিড়ালের কামরে ইনজেকশন নিতে হয়। কিন্তু যদি রক্তপাত না ঘটে তাহলে ইনজেকশন না নিলেও কোন সমস্যা হয় না।
৪. জলাতঙ্ক কামড়ানোর কতদিন পর টিকা দিতে হয়?
জলাতঙ্ক মূলত একটি রোগের নাম, যেটা কুকুর বিড়াল কামড়ানোর ফলে মানব শরীরে দেখা দেয়। অতএব যদি এই জীবাণু আপনার শরীরে প্রবেশ করে তাহলে মোটামুটি ২৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নেওয়াটা জরুরী।
৫. ২ সপ্তাহ পর জলাতঙ্কের ইনজেকশন নেওয়া যাবে কি?
এটা মূলত ক্ষতস্থান এবং আপনার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। দুই সপ্তাহ পর জলাতঙ্কের ইনজেকশন নেওয়া যাবে কিনা এ সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাই সর্বোত্তম।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।