আসসালামু আলাইকুম সবাইকে আশাকরি আপনারা অনেক ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় এবং নরমেন্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম এবং নরমেন্স ট্যাবলেট এর কাজ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আশা করি পোষ্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।
নরমেনস ট্যাবলেট হলো এক ধরনের ওষুধ। যা নারীদের অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।এটি চিকিৎসক দ্বারা নির্দেশিত ওষুধ। এই ওষুধটি ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণ রোধে কাজ করে। এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে জরায়ুতে টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির চিকিৎসার জন্য নরমেনস ব্যবহার করা হয়।
গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতে নরমেনস ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে অস্বাভাবিক জরায়ু রক্তক্ষরণের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি জরায়ুতে শুক্রাণুর প্রবেশ রোধে কাজ করে। যেসকল মহিলারা ইস্ট্রোজেনের মতো অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে না তাদের জন্য গর্ভনিরোধক হিসেবে নেওয়া হয়।
আজকের আর্টিকেলের টপিক হলো নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়। এছাড়াও এই ট্যাবলেটের উপকারিতা, সাইড ইফেক্ট, খাওয়ার নিয়ম, খাওয়াকালীন বাচ্চা হয় কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জানানো হবে।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
নরমেনস ট্যাবলেট কি
নরমেনস ট্যাবলেট হলো ওষুধ কোম্পানি রেনাটা লিমিটেডের বাজারজাতকৃত একটি ওষুধ। এটি নরইথিস্টেরন এসিটেট জেনেরিক এর একটি ঔষধ। মাসিক ও জরায়ুর বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ব্যবহৃত হয়। এক পাতায় ১০ টি ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ৫ মি.গ্রা. এর প্রতিটি ওষুধের দাম ৬ টাকা।
নরমেনস ট্যাবলেট এর কাজ কি
নরমেনস হলো নারীদেহের হরমোন প্রোজেস্টেরনের একটি রূপ যা ওষুধ হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়। নরমেনস ট্যাবলেট নারীদের মাসিক বন্ধে খাওয়া হয়। কিন্ত নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় তা পরের প্যারাতে জানব। এখন নরমেনস ট্যাবলেটের কাজগুলো কি তা দেওয়া হলো:
- নরমেনস একটি সিন্থেটিক প্রোজেস্টিন। যা জরায়ুর আস্তরণ বৃদ্ধি ও ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক প্রোজেস্টেরনের মতো কাজ করে
- ওভুলেশন বা ডিম্বস্ফোটন নিয়ন্ত্রণ করে
- মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে
- গর্ভনিরোধ করে
- এন্ডোমেট্রিওসিস বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে অস্বাভাবিক যো নি রক্তপাতের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়
- পিটুইটারি গ্রন্থিকে সাহায্য করে
- মেনোরেজিয়া (যো নিপথে ঘন ঘন ও ভারী রক্তপাত) দূর করে
- ডিসমেনোরিয়া ও অ্যামেনোরিয়া (মাসিক না হওয়া) সহ মাসিকের বিভিন্ন রোগ সারায়
নরেথিনড্রোন গোত্রের সমস্ত ওষুধ একই রোগে ব্যবহারের জন্য নয়। কিছু ওষুধ শুধুমাত্র গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু আবার এন্ডোমেট্রিওসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ norix 1 pill details - norix 1 এর কাজ কি
নরমেনস ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নরমেনস ট্যাবলেট ব্যবহার করার সময় নিম্নলিখিত সাইড ইফেক্ট হতে পারে। এই সাইড ইফেক্টগুলির মধ্যে যদি কোনটি খারাপ হয় বা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত:
- তলপেট ফাঁপা
- স্তনে ব্যথা
- চুল পরা
- মাথাব্যথা
- অনিয়মিত রক্তপাত
- মাসিক অনিয়মিত
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
নরমেনস ট্যাবলেট ব্যবহার করলে কখনও কখনও নিম্নলিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:
- ব্রণ
- মাথা ঘোরা
- মুখ এবং শরীরে অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধি
- নরম স্তন
- ওজন বৃদ্ধি
নরমেনস ট্যাবলেট ব্যবহার করলে কখনও কখনও নিম্নলিখিত মারাত্মক সাইড ইফেক্ট হতে পারে :
- অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোক (সম্ভবত)
- মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, অজ্ঞান হওয়া, কথা বলায় জড়তা, তীব্র মাথাব্যথা, পায়ে তীব্র ব্যথা হয়।
- চোখের অস্বাভাবিকতা (হঠাৎ আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হ্রাস)
- দ্বিগুণ দৃষ্টি, অস্পষ্ট দৃষ্টি, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা (মাইগ্রেন), হঠাৎ করে চোখ ফুলে যাওয়া, হঠাৎ আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারানো
- অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হার্ট অ্যাটাক (সম্ভবত)
- অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধা, মারাত্মক ও গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতার কারণে ফুসফুসে রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়া (সম্ভবত)
- যকৃতের সমস্যা যেমন জন্ডিস ও লিভারের কার্যকারিতা কমে যাওয়া
- রক্তে উচ্চ শর্করা (ডায়াবেটিস), জরায়ুর টিউমারের বৃদ্ধি (ফাইব্রয়েড), যো নির সংক্রমণ, মানসিক বিষণ্নতা
যদি এটি ঘটে তবে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন। চিকিৎসক এই ওষুধটি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ তাদের মতে ওষুধের কার্যকারিতা সাইড ইফেক্ট দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকির চেয়ে বেশি। এর সাইড ইফেক্ট বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রে গুরুতর নয়।
আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম
নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
নরমেনস ট্যাবলেট বিভিন্ন কারনে খাওয়া হয়ে থাকে। কারণ ভেদে এই ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম ও ভিন্ন। এই ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট যাবেন। নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, দিনে কয় ডোজ খেতে হবে তা দেওয়া হলো:
ত্রুটিপূর্ণ জরায়ুর রক্তপাত: ১০ দিনে তিনবেলা ১টি করে মোট ৩টি খেতে হবে। ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে রক্তপাত বন্ধ হবে আশা করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা ১০ দিন পূর্ণ করতে হবে।
ত্রুটিপূর্ণ জরায়ুর রক্তপাত পুনরায় হলে:মাসিকের পরবর্তী ১৯-২৬ তম দিনের মধ্যে দুইবেলা ১টি করে মোট ২ টি। যদি এই সময় মাথাব্যথা, হৃৎস্পন্দন বাড়া, স্তনের অস্বস্তি, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি দেখা যায় তবে দিনে ২টির জায়গায় ৩টি খেতে পারেন।
মাসিক বন্ধ করতে: মাসিক শুরুর সম্ভাব্য তারিখের ৩ দিন আগে থেকে দিনে ৩ বেলা ৩টি নরমেনস ট্যাবলেট খেতে পারেন। আর এটা খাওয়া বন্ধ করলে আবার স্বাভাবিক মাসিক শুরু হবে।
সিউডো প্রেগন্যান্সির চিকিৎসায়: মাসিকের ৫ম দিন থেকে শুরু করে প্রথম কয়েক সপ্তাহ দিনে ২টি করে সেবন করবেন। তবে রক্তপাত বেশি হলে দিনে ৪-৫ টাও সেবন করা যায়। তবে কমে আসলে আবার ২টি করেই সেবন করবেন। টানা ৪/৫ মাস বা আরও বেশি সময় এটা চলবে।
মাসিকে অতিরিক্ত রক্তস্রাব বন্ধে: মাসিকের পরবর্তী ১৯-২৬ তম দিনের মধ্যে প্রতিদিন ২/৩ টি।
নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে থেকে পরামর্শ নিন তারা আপনাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন। কেউ যদি মাসিকের সমস্যার জন্য নরমেনস ট্যাবলেট খেতে চান তাহলে অবশ্যই একজন ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নরমেনস ট্যাবলেট খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নোরিক্স পিল খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়
নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়
যেহেতু নরমেনস খাওয়া হয় বেশিরভাগই মাসিক অনিয়মিত হওয়ার জন্য। তাই নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় প্রশ্নটি সবাই করে।
এর উত্তরে বলা যায় ২১ দিন একটানা নরমেনস খাওয়ার পর মাসিক হয়। তবে ২১ দিন খাওয়ার পর চিকিৎসক ৭ দিন বিরতি দিতে বলে। এই ৭ দিনের মধ্যেই মাসিক শুরু হতে পারে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে ১ মাস পরেও মাসিক হতে পারে। আবার কারও নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। অনেকেই মাসিকের সমস্যা হলে লোক মুখে শুনে শুনে এটা খান। যা মোটেই উচিত নয়। কারণ পরীক্ষা ছাড়া রোগ সবসময় নির্ণয় করা যায় না।
নরমেন্স ট্যাবলেট খাওয়া কালিন সহবাস করলে কি বাচ্চা হয়
নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় সেসব তথ্য জানা গেছে। কিন্তু এই ট্যাবলেট খাওয়া কালিন সহবাস করলে কি বাচ্চা হয়? এমন প্রশ্নটাই বেশিরভাগ মানুষ করে।
এর উত্তর হলো না। কারণ আগেই বলা হয়েছে নরমেনস গর্ভনিরোধক ওষুধ। এটি নারীর ডিম্বাশয়ে পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ করতে বাধা দেয়। ফলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
এজন্য এই ট্যাবলেট খাওয়াকালিন সহবাস করলে গর্ভধারণ হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ওষুধ সেবনের বিরতি যেন বিশাল না হয়। যেমন আজ সকাল ৮ টা, দুপুর ২ টা ও রাত ১০ টায় খেলে প্রতিদিন একই সময়ে খেতে হবে। কোনও বিরতি বা সময় বাড়ানো যাবে না।
কারণ শিডিউলের সময় বাড়লে ঐ সময় সহবাস করলে অনেক সময় গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ওষুধটি সেবনের পর যদি বমি বা ডায়রিয়ার জন্য বেরিয়ে যায় তাহলেও নতুন করে এটা সেবন করতে হবে।
আর নরমেনস খাওয়ার পর মাসিকের সমস্যা দূর হলে তথা মাসিক স্বাভাবিক কয়েক মাস চলতে থাকলে গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিতে পারবে। তবে যদি গর্ভধারণ হয়ে যায় তখন সাথে সাথে ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
লেখকের শেষকথা
নরমেনস ট্যাবলেট নারীদের মাসিক হতে দেরি হলে, ঘন ঘন মাসিক হলে, অতিরিক্ত রক্তপাত হলে বা মাসিক বন্ধে খাওয়া হয়। কিন্তু এটা শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য। কোনও শিশু, গর্ভবতী, ক্যান্সার রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, হার্ট ও কিডনির রোগীদের সেবন করা উচিৎ নয়।
নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয়? এই ট্যাবলেটের কাজ, সাইড ইফেক্ট, ট্যাবলেট খাওয়া কালিন সহবাস করলে কি বাচ্চা হয় কি না ইত্যাদি আজকে জানালাম। প্লিজ কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
দাবিত্যাগ - Disclaimer : নরমেনস ট্যাবলেট খাওয়ার কতদিন পর মাসিক হয় শিরোনামের এই লেখায় উল্লেখিত বিষয়গুলি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে। আপনার এটিকে কোনো ধরনের চিকিৎসা পরামর্শ বা বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। একটি চিকিৎসা বিকল্প হিসাবে এটি ব্যবহার করার আগে সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। আমাদের ওয়েবসাইট technicalcarebd.com এতে উল্লিখিত কিছুর জন্য দায় স্বীকার করে না।(alert-warning)
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।