আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সাথে পাসপোর্ট এর তথ্যের মিল না থাকলে, অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়মে আবেদন করে তা সংশোধন করতে পারবেন। সারা বাংলাদেশে পাসপোর্ট সহ অন্যান্য নাগরিক সেবা সমূহ এখন অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। তথ্যভিত্তিক নিরাপত্তার জন্য নিশ্চিতভাবে যাচাই করা হয় ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট ও জন্ম সনদের তথ্যসমূহ।
কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় আমাদের পাসপোর্টের সাথে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যের মিল নেই। এমতাবস্থায় নানান জটিলতা সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। যা অনুসরণ করে এখন অনলাইনেই পাসপোর্ট সংশোধন করা যাবে।
আপনার পাসপোর্ট সংশোধন করতে চাইলে, ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম সনদ/ বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম, পাসপোর্ট সংশোধন কি কি লাগে, পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে তার বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই লেখা থেকে।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম
পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে, প্রথমেই আপনার চাহিত সংশোধনের তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র থাকতে হবে। পুরাতন এমআরপি পাসপোর্ট বা ই পাসপোর্ট উভয়ের জন্যই পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করতে অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করতে হবে।
আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ/ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট অনুসারে দিতে হবে। সংশোধনের জন্য অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার সকল কার্যক্রম একই। এখানে শুধুমাত্র ID Documents অপশনে আপনার পুরাতন পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে। সঠিকভাবে সংশোধিত পাসপোর্ট হাতে পেতে নিচের কার্যক্রম গুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হবেঃ
- অনলাইনে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করতে হবে।
- এ-চালান এর মাধ্যমে passport correction fee দিতে হবে।
- পাসপোর্টের নির্দিষ্ট কোন ভুল সংশোধনের জন্য লিখিত আবেদন পূরণ করে জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে কিংবা পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের অঙ্গীকারনামা সংগ্রহ করতে হবে। তারপর যথাযথভাবে তা পূরণ করে ও স্বাক্ষর করে আবেদনের জন্য প্রস্তুতকরন।
- আবেদনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন ফরম, পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গীকারনামা ইত্যাদি কাগজপত্র একত্রে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করতে চাইলে আরও পড়ুন: ই পাসপোর্ট করার নিয়ম।
পরবর্তীতে, পাসপোর্ট সম্পর্কিত গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তার মাধ্যমে আপনার সংশোধিত তথ্যের সত্যতা যাচাই এবং পুলিশ ভেরিফাই করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার পাসপোর্টের সংশোধিত কপিটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
পাসপোর্ট সংশোধন সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংশোধনের বিষয়ে ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বরে পাসপোর্ট সংশোধন সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এই নোটিশ প্রকাশ করেছিল। এটি পাসপোর্ট এর ভুল সংশোধনের জন্য একটি স্পষ্ট নির্দেশিকা।
এখানে পাসপোর্ট সংশোধন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্টের মধ্যে তথ্যের গরমিল থাকলে ভোটার আইডি কার্ডের প্রদত্ত তথ্য- নিজের নাম, পিতা মাতার নাম এবং বয়স আনুসারে পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে রিইস্যু আবেদন করতে পারবে।
অপ্রাপ্তবয়স্করা জন্ম নিবন্ধন কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য লিখিত আবেদন করতে হবে। সর্বশেষে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীকে একটি অঙ্গীকারনামা যথাযথভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করে জমা দিতে হবে।
বর্তমানে এই নির্দেশনাই বলবত রয়েছে। এবং পূর্বের নির্দেশিকা গুলো বাতিল করা হয়েছে।
পাসপোর্টের কি কি তথ্য সংশোধন করা যায়
পাসপোর্টের সংশোধন করার নিয়ম অনুসারে, ব্যক্তির পরিচয়বাচক তথ্যগুলো পরিবর্তন করা যায়। এক্ষেত্রে সংশোধনের আবেদন করে প্রমাণপত্রের আলোকে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব:
- নিজের নাম বাংলায়;
- নিজের নাম ইংরেজিতে;
- জন্ম তারিখ;
- পিতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে);
- মাতার নাম (ভোটার আইডি কার্ড আনুসারে);
- পেশা;
- অন্যান্য তথ্যাদি।
খেয়াল রাখবেন ই পাসপোর্ট ভুল সংশোধন আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা পেতে উপযুক্ত প্রমাণাদি জমা দেওয়া আবশ্যক।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে
ই পাসপোর্ট সংশোধন আবেদনটি পাসপোর্ট রিনিউ এর আবেদনের অনুরূপ হবে। তবে সংশোধনের আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র হিসেবে কিছু বাড়তি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। এগুলো হলোঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ/ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট। (যেমন: JSC/ JDC/ SSC/ দাখিল/ কারিগরি/ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সমমানের)।
- পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি ও মূল পাসপোর্ট।
- সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে লিখিত আবেদন।
- পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের অঙ্গীকারনামা।
- আপনি যদি বিদেশ থেকে বাংলাদেশি দূতাবাসে আবেদন করেন, তাহলে Permanent Resident Card/ Driving License/ Job ID Card/ Student ID Card ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে।
সংশোধনের বিষয়বস্তু অনুযায়ী আবেদনের পরে গােয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসকল তথ্য যাচাই করা হতে পারে।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করতে চাইলে পাসপোর্ট রি-ইস্যু আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে নতুন পাসপোর্ট করতে যত টাকা ফি দিতে হয়, পাসপোর্টের ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ রিনিউ ফি দিতে হয়।
পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়মানুসারে, পাসপোর্ট রিনিউ ফি এর পরিমাণ ৩টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা: পাসপোর্টের মেয়াদ, পৃষ্ঠা সংখ্যা ও ডেলিভারির ধরণ। এক্ষেত্রে ভ্যাট সহ সর্বনিম্ন ৪,০২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০,৩৫০ টাকা লাগবে। নিচে পাসপোর্ট সংশোধন ফি এর একটি তালিকা দেওয়া হলো:
পাসপোর্ট সংশোধন ফি | Passport Correction Fee
ডেলিভারির ধরন | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৪৮ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা | ৬৪ পৃষ্ঠা |
---|---|---|---|---|
৫ বছর | ১০ বছর | ৫ বছর | ১০ বছর | |
Regular Delivery | ৪,০২৫ টাকা | ৫,৭৫০ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
Express Delivery | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,০৫০ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
Super Express Delivery | ৮,৬২৫ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা | ১২,০৭৫ টাকা | ১৩,৮০০ টাকা |
এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে আবেদন করলে নিম্নোক্ত হারে পাসপোর্ট সংশোধন ফি দিতে হবে:
পাসপোর্টে নাম সংশোধন | Passport Name Correction
পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়মে রি-ইস্যু আবেদন করার মাধ্যমে পাসপোর্টে নাম সংশোধন করা যাবে। পাসপোর্টধারী ব্যক্তির নিজের নাম, পিতা-মাতার নামের বানান, নামের আংশিক পরিবর্তন করা যাবে। নাম সংশোধনের জন্য আবেদনপত্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ/ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। একইসাথে অঙ্গীকারনামারও প্রয়োজন হতে পারে।
পাসপোর্টে জন্ম তারিখ সংশোধন | Passport Birth Date Correction
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে পাসপোর্টের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে পারবেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে এবং NID Card না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেখাতে পারেন। সংশোধনের স্বপক্ষে প্রমাণপত্র হিসেবে জেএসসি/ জেডিসি/ এসএসসি/ এইচএসসি/ দাখিল /কারিগরি/ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সমমান সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন ফরম
পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের সর্বশেষ নির্দেশনা আনুসারে- পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধন করতে লিখিত আবেদন করতে হবে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে লিখিত আবেদনের একটি নমুনা ফরম নির্ধারিত রয়েছে। অনলাইন থেকে এই সংশোধন আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করতে পারবেন। অথবা সরাসরি পাসপোর্ট অফিস থেকেও সংগ্রহ করা যায়। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে সংশোধন ফরম ডাউনলোড করতে এই লিংকে ভিজিট করুন- Passport Correction Form Download।
সংশোধন ফরম ডাউনলোড করার পর তা প্রিন্ট করুন। তারপর যথাযথভাবে সঠিক তথ্যের আলোকে তা পূরণ করুন। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদনের সময় অন্যান্য ডকুমেন্টসের সাথে এটি জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন ফরম পূরণ করার নিয়ম
পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়মানুসারে, passport correction form নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পূরণ করতে হয়:
- আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নাম।
- পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরন (সাধারণ/জরুরী)।
- আবেদনকারীর নাম বাংলায়।
- সংশোধনের আবেদনকারীর নাম ইংরেজিতে (ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে)।
- পাসপোর্ট নাম্বার।
- পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান ও তারিখ।
- পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ।
- পাসপোর্টের বর্তমান প্রদর্শিত তথ্য (যেটি ভুল আছে) এবং চাহিত সংশোধিত তথ্যের তালিকা।
- তথ্যের ভুল প্রমাণের জন্য সংযুক্তি সমূহ/ প্রমাণাদি।
- Passport Reissue fee এর পরিমান এবং আপনি যে ফি পরিশোধ করেছেন তার বিবরন লিখতে হবে।
- এখানে ফি পরিশোধের ব্যাংকের নাম, শাখা এবং চালান নাম্বার লিখার অপশন পূরণ করতে হবে।
পরবর্তীতে বায়োমেট্রিকের জন্য ডাকা হলে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এটি জমা দিবেন।
পাসপোর্ট সংশোধনী অঙ্গিকারনামা
পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধনের জন্য অন্যান্য ডকুমেন্টসের পাশাপাশি অঙ্গীকারনামা প্রয়োজন হয়। এর জন্য কোন জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে না। জাতীয় প্রয়োজনের সকল প্রকার ফরম পাওয়া যায় form.gov.bd এই সরকারি ওয়েবসাইটে। তাছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও অঙ্গিকারনামা লিখার ফরম দেওয়া হয়েছে।
এই অঙ্গিকারনামা ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে আবেদনকারীর নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, পেশা, পাসপোর্ট নাম্বার এবং ইস্যুর তারিখ উল্লেখ করুন। তারপর ফরমে থাকা তালিকায় ভুল তথ্য এবং চাহিত সংশোধিত তথ্য পূরণ করে নিন।
শেষকথা
উপরোক্ত দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি নিজেই অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনের রূপে উপরোক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই সংগ্রহ করে নিবেন। অবশ্যই সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। অন্যথায়, পাসপোর্ট অফিসের গোয়েন্দা বিভাগ তার যাচাই করলে আইনি জটিলতার শিকার হতে পারেন।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।