আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন আমাদের আজকের নিবন্ধনটি। কেননা আলকুশির বীজ গুড়ার উপকারিতা কি কি, আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম এবং আলকুশি বীজের অপকারিতা অথবা আলকুশি বীজের পাউডার খেলে কি হয়, আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানাবো এ টু জেড।
আর যেহেতু প্রত্যেকটি জিনিসের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে থাকে তাই অবশ্যই আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানার পাশাপাশি জেনে নেওয়া প্রয়োজন এর অপকারিতা গুলো। আর আলকুশি বীজ কিভাবে খেলে সঠিক উপকার মিলবে তা জানতে মনোযোগ সহকারে পড়ুন আমাদের দেওয়া বিষয়াবলি।
পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পড়তে পারেন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কলা খাওয়ার উপকারিতা, কাতিলা গামের উপকারিতা সম্পর্কিত হেলথ টিপস রিলেটেড আরো কিছু পোস্ট। এজন্য সাজেস্টকৃত লিঙ্কে ভিজিট করুন।
(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)
আলকুশি বীজ কি
আলকুশি বীজ একটি ঔষধি শস্যদানা। কেননা ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে বহুবছর পূর্বে এই বীজের পাউডার সাপের কামড়, বন্ধত্বের চিকিৎসা, আমাশয়সহ ডায়াবেটিস ও নির্যাস কাশির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো। তবে এই মুহূর্তে আলকুশি বীজ আরো নানা কাজে সুবিধা প্রদান করে বলে জানা গিয়েছে।
আমেরিকা দেশের সাধারণত কফের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে আলকুশি বীজটি। যেটা দেখতে একদমই শিমের বিচির মত। বলতে পারেন আলকুশি বীজ হচ্ছে শিম পরিবারের সদস্যগত উদ্ভিদ। যেটা বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে সচরাচর হয়ে থাকে।
আলকুশি বীজের বৈজ্ঞানিক নাম
আলকুশি বীজের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Mucuna Prureiens. আর এই বীজের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Valvet bean. আর হ্যাঁ, জানা গিয়েছে সচরাচর আলকুশি বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে এবং প্রতি ৫০ গ্রাম শুকনো বীজের ওজন হয়ে থাকে মোটামুটি ২৭ থেকে ৪৩ গ্রাম।
আর এই গাছে সাধারণত লালচে বেগুনি ফুল ফোটে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস নাগাদ সময়ের মধ্যে। তাই আপনি চাইলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাড়ির আনাচে-কানাচে খুঁজে বের করতে পারেন আলকুশি বীজের গাছ। পাশাপাশি সয়াবিন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে ভিজিট করতে পারেন এই লিংকে।
আলকুশি বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা
আলকুশি বীজে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিন সি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। আর তাই যদি কেউ নিয়মিত সঠিক নিয়ম মেনে আলকুশি বীজের পাউডার খায় তাহলে শরীরের এই পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ হয়। এছাড়াও আলকুশি পাউডার খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা হিসেবে আরো বেশ কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে।
যেমন ধরুন– বিষন্নতা, হতাশা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি, সাপের বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্তি সহ প্রভৃতি। মূলত আর যে সকল উপকারিতা রয়েছে সেগুলো আমরা নিচে উল্লেখ করছি। যেগুলো জানার পরবর্তীতে আলকুশি বীজ গুড়া খাওয়া আরম্ভ করতে পারেন আপনিও।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
- শারীরিক দুর্বলতা দূর করে
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়
- স্নায়বিক দুর্বলতা দূর করে
- বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দূর করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে
- বাত রোগের সমস্যায় উপশম হিসেবে কাজে আসে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- জ্বর, সর্দি, কাশি ভালো হয়
- দুশ্চিন্তা, হতাশা অবসাদগ্রস্ত তা দূর করে
- মেজাজ ফুরফুরে রাখে
- মূত্রবর্ধক ও মূত্রযন্ত্রের রোগ নিরাময় করে
- চোখের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রটেকশন যোগায়
- চর্ম রোগের সমস্যা দূর করে
- শরীরের বিভিন্ন ঘা দ্রুত ভালো করে
- ক্ষতস্থান দ্রুত সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে
- শু. ক্রা. ণু বৃদ্ধি করে
- যৌ *ন সুরক্ষায় এবং ভূমিকা রাখে
১. আলকুশি বীজ নিয়মিত খেলে যাদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা রয়েছে সেটার নিরাময় ঘটে। আপনি যদি কিছুটা রিসার্চ করেন তাহলে জানতে পারবেন, সাধারণত বন্ধ্যাত্ব এর কারণ হচ্ছে অস্বাভাবিক ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন, কম টেস্টোস্টেরন এবং প্রোল্যাকটিন। আর যারা নিয়মিত আলকুশি বীজের গুড়া সঠিক নিয়মে খায় তাদের শরীরে প্রোল্যাকটিন ধীরে ধীরে কমতে থাকে, ফলে যে সকল মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব জনিত সমস্যা রয়েছে সেটা ঠিক হয়ে যায়।
২. আলকুশি বীজের উপকারিতা হিসেবে দ্বিতীয় সুবিধা হলো নিয়মিত আলকুশি বীজের গুড়া খেলে কলেরা এবং আমাশয় জনিত সমস্যাগুলো দ্রুত ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য আলকুশি বীজের সাথে মেশাতে হয় মধু। মনে রাখবেন কলেরা দূরীকরণের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে আলকুশি বীজ।
৩. ফোড়ার সমস্যা দূর করার মাধ্যমে আলকুশি বীজ উপকার প্রদান করে থাকে। ফোঁড়া শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আর যদি আপনার ফোড়া ওঠে তাহলে ফোড়া জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আলকুশি পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি খেতে পারেন আলকুশি বীজের পাউডার।
আর হ্যাঁ, ফোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তির আরো কিছু উপায় জানতে পড়ে ফেলুন আমাদের সাজেস্টকৃত পোস্টটি, আর জেনে নিন ফোড়ার সমস্যা দূরীকরণে কোন কোন ঔষধ খাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে খুঁটিনাটি।
৪. আলকুশি বীজের উপকারিতার মধ্যে আরও রয়েছে, এটি শরীরের সক্ষমতা উন্নত করে এবং শারীরিক দুর্বলতা খুব দ্রুত দূর করে। পাশাপাশি যৌ-*ন সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে, বাত রোগের সমস্যায় উপশম হিসেবে কাজে আসে, জ্বর সর্দি কাশি ভালো হয়ে যায়, মূত্র বর্ধক ও মূত্র যন্ত্রের রোগ নিরাময় করে, চোখের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রটেকশন যোগায় এবং শরীরের বিভিন্ন ঘা বা ক্ষতস্থান দ্রুত সারিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
যেহেতু আলকুশি বীজ গুড়ার উপকারিতা, আলকুশি গাছের পাতার রসের উপকারিতা শিকড়ের উপকারিতা একাধিক, তাই আপনি চাইলে উক্ত সমস্যাগুলো নিরাময়ে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই ঔষধি গুন সম্পূর্ণ গাছ ও বীজটি।
তবে হ্যাঁ, আমরা জানি যে প্রত্যেকটি খাদ্যপণ্য, প্রত্যেকটি ঔষধ এবং প্রত্যেকটি জিনিসেরই যেমন অনেক সুবিধা অর্থাৎ উপকারিতা থাকে ঠিক একইভাবে বেশ কিছু অপকারিতাও থেকে থাকে। আর তাই অনেকেই জানতে চান আলকুশি বীজ খেলে কি কি ক্ষতি হয়, অর্থাৎ আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা সমূহ।
আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যে সকল মানুষের নিউরোপ্যাথিক, অনিয়মিত ডিবিস্পন্দন এবং সাইকোসিস এর চিকিৎসা চলছে ওই সকল মানুষদের জন্য আলকুশি পাউডার ঝুঁকিপূর্ণ। আর তাই তাদের আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
এছাড়াও আলকুশি বীজ নিয়মিত খেলে যেমন, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্যান্সার রোধ করা সম্ভব হয় এবং আরো কিছু রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিক একইভাবে, যদি কেউ পরিমাণের থেকে অতিরিক্ত আলকুশি বীজ অথবা আলকুশি বীজের গুড়া যেকোনো উপায়ে খেয়ে থাকে তাহলে এল-ডোপা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
পাশাপাশি যে সকল মহিলারা গর্ভবতী তাদের গর্ভকালীন সময়ে আলকুশি বীজ খুব একটা শুট করে না এমনকি বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কারণ আলকুশি বীজে জরায়ু উদ্দীপকের প্রভাব রয়েছে। তাই এই সময় আলকুশি বীজ খেলে অপকারিতা হিসেবে জরায়ু ফেটে র ক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এমনকি জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়। আর তাই অবশ্যই আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ মাথায় রেখে পরবর্তীতে আলকুশি বীজের উপকার পেতে সঠিক নিয়মে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আলকুশি বীজের অপকারিতা
আলকুশি বীজ খাওয়ার ফলে যেমন বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ঠিক একইভাবে অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খেলে সেটা নতুনত্ব রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি গর্ভবতী নারীদের ক্ষতি করতে পারে।
যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। আলকুশির লেভোডোপা দ্বারা সিরাম লিভারের রোগ আরো বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে আলকুশি পাউডার খাওয়া হলে, তখন এলডোপা বিভ্রান্তি, সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ এবং হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি করতে পারে।
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম | আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি বীজ সাধারণত পাউডার হিসেবে, সিমের বিচির মত রান্না করে এবং ক্যাপসুল হিসেবে প্লাস চা এর মত করে খাওয়া যেতে পারে। অনেকেই আলকুশি বীজ খাওয়ার উপায় জানতে চান। তাদের জন্য মূলত এই অংশটুকু।
এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি আলকুশি বীজের উপকারিতা পুরোপুরি ভাবে পেতে চান সেক্ষেত্রে এটি কোন নিয়ম মেনে খাবেন। তাদেরকে বলব সময় এবং পরিমাণ অনুযায়ী সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করে এই বীজ খাওয়া সর্বোত্তম।
- আলকুশি বীজ চা বানিয়ে খেতে পারবেন।
- মসলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার করে খেতে পারবেন।
- প্রতিদিন এই বীজ ১০ থেকে ১৫ টি খাওয়া উচিত আর যদি গুড়ার কথা বলেন তাহলে সর্বোচ্চ এক চা চামচ আলকুশি বীজ খাওয়া যেতে পারে একদিনে।
আর অবশ্যই, গর্ভকালীন সময় এবং ডাইবেটিসের সমস্যা থাকলে আলকুশি বীজ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।
পরিশেষে
তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আমাদের আলোচনা। আপনি যদি আলকুশি বীজ এর উপকার পেতে চান তাহলে অনলাইন থেকে এখনই অর্ডার করতে পারেন এই উপকারী পণ্যটি। যার বাজার দর প্রতি এক কেজির দাম মোটামুটি ২৭৯০ টাকা। তো আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। খুব শীঘ্রই নতুন কোন আলোচনায় দেখা হবে কথা হবে। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।