আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

হাসিবুর
লিখেছেন -
0

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত জেনে নিন বরকতময় আওয়াবিন নামাজের ফজিলত ও আমল। আসসালামু আলাইকুম, মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ‌ নামাজ বা সালাত বা সালাহ যাই বলুন না কেন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এটি একটি দৈনিক ইবাদত। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন সালাত বা নামাজ যা প্রত্যেক প্রাপ্ত নর-নারীর উপর ফরজ।

ইসলামে ইচ্ছাকৃত ফরজ নামাজ না পড়ার সাজাকে কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ হিসেবে ধরা হয়। এমনকি মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে, ৮২ বার নামাজের কথা উল্লেখ্য করেছেন তাই সকল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, সালাত বা নামাজ আদায় হিসাবে গণ্য করা হয়।

তবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ বাদেও রয়েছে বেশ কিছু নফল নামাজ। এই সালাত গুলো খুব সহজেই আদায় করে আপনিও পেয়ে যেতে পারেন লাখো নেক আমল। এমনই একটি নফল ইবাদতের নাম হচ্ছে আওয়াবিন নামাজ‌। 

অনেকেরই হয়তো অজানা আওয়াবিন এর নামাজের ব্যাপারে। আবার কারো কারো মনে প্রশ্ন, আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত, আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত কিংবা নামাজের ফজিলত গুলো কি? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই ! 

আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ অব্দি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি জানতে পারবেন এই বরকতময় নামাজ কতটা গুরুত্ব ও ফজিলতে পরিপূর্ণ। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে !

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

আওয়াবিন নামাজ কি?

আওয়াবিন নামাজ কি তার সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানা উচিত আওয়াবিন মানে কি? আওয়াবিন যার অর্থ আল্লাহর দিকে ধাবমান বা আল্লার দিকে ঝুঁকে পড়া বা আল্লার পথে যারা যেতে চান তাদেরকেই ইসলামের ভাষায় বলা হয় আওয়াবিন।

আওয়াবিন ব্যক্তির নামাজ বা সালাত বলতে‌ সহজ ভাষায়, মাগরিবের পর থেকে শুরু করে এশার নামাজের আগ অব্দি ৬ রাকাত থেকে ১২ রাকাত সালাতকে আওয়াবিন নামাজ বা সালাত বলা হয়।

আরো পড়ুন: স্বপ্নে নামাজ পড়তে দেখলে কি হয় ? ইসলাম কি বলে জেনে নিন

বরকতে সালাতুল আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত?

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে এই নামাজ কত রাকাত তা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে শরীফে বর্ণিত আছে যে, এই নামাজ দুই দুই রাকাতের নিয়তে ৬ - ২০ রাকাত অবধি আদায় করা যায়।

অর্থাৎ যেকোনো ব্যক্তি চাইলে দুই রাকাত থেকে শুরু করে ২০ রাকাত অব্দি নিজের ইচ্ছামতো এ সালাত আদায় করতে পারবে।

কিন্তু সর্বোত্তম হচ্ছে কমপক্ষে ৬ রাকাত সালাত আদায় করা।‌ আবার শুদ্ধ হাদিসে, সালাতুল দোহা এবং চাশতের নামাজকে সালাতে আওয়াবিন নামাজ বলা হয়ে থাকে।

আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী

আওয়াবিন নামাজ আদায় করার জন্য অবশ্যই আওয়াবিন নামাজের সময়সূচী সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা এই নামাজের একটি নির্দিষ্ট সময় আছে যার মধ্যে এই নামাজ আদায় করতে হবে।

মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত একটি মুরসাল হাদিসে আছে, নবী করিম সাঃ বলেছেন, 'মাগরিব এবং এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ) বলে।' [জামে সগিরঃ ২/৪২৭]

হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ করেছেন, "মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।" [মাজমাউজ জাওয়াইদঃ ৩৩৮০]

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাঃ বলেছেন, "যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।"

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

শুরুতেই আমরা জেনেছি, ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে দ্বিতীয় রোকন বা শ্রেষ্ঠতম ফরজ ইবাদত হচ্ছে সালাত। ইসলামে ফরজ ও সুন্নত সালাতে থেকে নফল সালাতের গুরুত্বও ফজিলত কোন অংশে কম নয়।

জেনে রাখা ভালো‌ আওয়াবিন নামাজ হলো একটি নফল নামাজ। যেহেতু আওয়াবিন নামাজ নামাজ একটি নফল নামাজ তাই, এ নামাজ আদায়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।‌ কিন্তু, এ‌ নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়ত করা প্রয়োজন।

আওয়াবিন নামাজের নিয়ত

হাদিস শরীফে আওয়াবিন নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অনেক ভাই ও বোনেরা সহী ও শুদ্ধ্ করার জন্য আরবিতে নিয়ত করে নামাজ আদায় করতে চান। আবার অনেকে সুন্নতে মোয়াক্কাদা হিসেবেও নামাজ টি আদায় করেন। তারা এই নিয়ত টি পাঠ করে নামাজ আদায় করতে পারেন।

আওয়াবীন নামাজের আরবি নিয়ত

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকায়াতাই ছালাতিল আওয়াবিনা সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা মনের প্রশ্ন জাগতে পারে, আমি তো আরবি নিয়ত পারি না! তাহলে, আমি কি আউয়াবিন নামাজ পাঠ করতে পারবো না? চিন্তার কোন কারণ নেই, আপনি চাইলে অবশ্যই বাংলাতেও নিয়ত করতে পারেন! 

আওয়াবিন নামাজের বাংলা নিয়ত

আমি পশ্চিম দিকে কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করছি। হে আল্লাহ, আমার নামাজ সহজ করুন কবুল করুন। আল্লাহু আকবার।

আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের

আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজের মধ্যে আওয়াবিন নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতময় নামাজ। তাই এই নামাজ কোন নিয়মে পড়তে হয় তা জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য নফল নামাজের মত, সালাতুল আওয়াবীন নামাজ ও দুই দুই রাকাত করে আদায় করা যায়।

মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় শেষে, দুই দুই রাকাত করে ‌প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে এ নামাজ পাঠ করা যায়।

তবে, মাগরিবের নামাজের পর কোন প্রকার কথাবার্তা না বলে এই নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।

আওয়াবিন নামাজের ফজিলত

ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হচ্ছে নফল নামাজ। তাই আপনি যদি দুনিয়া ও আখিরাতে, শান্তি পেতে চান তাহলে আওয়াবিন নামাজটি আপনার জন্য!

হাদিস হযরত আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত রাসূল করীম (সা.) এরশাদ করেন:- যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ৬ রাকাত নামাজ পড়বে যার মধ্যে সে যদি কোন খারাপ বাক্য উচ্চারণ না করে, তাহলে সেই নামাজ তার জন্য ১২ বছর ইবাদতের সমান করে দেয়া হবে। [ সহীহ খুযায়মা হাদিস নং - ১১৯৫]

আমাদের নবীজি একাধিক সাহাবিকে আওয়াবীন সালাত আদায় করার জন্য বলেছেন।

হযরত আম্মার বিন ইয়াসীন (রাজি.) তা'আলা থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা)বলেছেন - “যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এশার নামাজের আগে পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল গুনাহ মাফ করবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার পরিমাণও হয়।

অন্য একটি হাদিসে পাওয়া যায়, হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন - “যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করল আল্লাহতালা তার জন্য বেহেস্তের একটি ঘর প্রতিষ্ঠা করল।

আরো পড়ুনঃ দুই অক্ষরের মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (Frequently Asked Questions)

আওয়াবীনের নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

সহিস হাদিস অনুযায়ী, মাগরিবের পর আওয়াবিন নামাজ নফল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.) এ নামাজ পড়তেন বিধায় অনেক কিতাবে এ নামাজ সুন্নত হিসেবেও ধরা হয়। 

আওয়াবিন নামাজের সূরা?

সালাতুল আওয়াবীন যেহেতু একটি নফল ইবাদত তাই এই নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কোন ধরাবাধা নিয়ম নেই। আপনি দুই দুই রাকাত নিয়তে সূরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা মিলিয়ে সালাতুল আওয়াবিন নামাজ আদায় করতে পারেন।

পরিশেষে

দেখতে দেখতে চলে এলাম আর্টিকেলের একদম শেষ পর্যায়ে! আমরা আশা করছি আপনাদের আওয়াবীন নামাজ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা আপনাদের দিতে পেরেছি স্পষ্ট ভাবে। 

নামাজ, ইবাদতসহ নেক আমলের সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও আরো আপডেট পেতে আমাদের কমেন্ট বক্সে টোকা দিন এবং আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবার সহজ হবে নফল ইবাদত, ঝুলিতে জমা হবে লাখো লাখো নেকি! আপনি যদি দুশ্চিন্তায় থাকেন তবে এই লেখাটি পড়তে পারেন হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

Tags:

আপনার মতামত জানান এখানে

0 কমেন্ট

আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

কমেন্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!