বাচ্চাদের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ভালো ফর্মুলা দুধের প্রয়োজন হয়। তবে বাচ্চাদের জন্য কোন ফর্মুলা দুধ ভালো হবে বা বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ কোনটা ভালো তা অনেকেরই জানা থাকে না।
আমরা জানি, ছয় মাস পর্যন্ত নবজাতক শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ব্যতীত অন্য কোন কিছু খাওয়ানো উচিত নয়। তবে বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে দুধের অভাব পূরণ করতে ফর্মুলা দুধ দেওয়া হয়। যেমনঃ বাচ্চার মা বিশেষ রোগে আক্রান্ত হলে, বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে বুকের দুধে না পেলে অথবা কোন বাচ্চার মা মারা গেলে ফর্মুলা দুধের মাধ্যমে শিশুর দুধের অভাব পূরণ করা হয়।
এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন, ফর্মুলা দুধ বলতে কি বোঝায়, বাজারে কোন ফর্মুলা দুধ ভালো, ফর্মুলা দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা, বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ কোনটা ভালো, বিভিন্ন ধরনের ভালো ফর্মুলা দুধের নাম এবং দাম, ফর্মুলা দুধ বানানোর নিয়ম, ফর্মুলা দুধ কতক্ষণ ভালো থাকে, ফর্মুলা মিল্ক এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে।
(toc) #title=(সূচিপত্র: কোন ফর্মুলা দুধ ভালো)
ফর্মুলা দুধ কি?
ফর্মুলা দুধ হলো বাচ্চাদের পুষ্টির একটি উৎস যা মায়ের বুকের দুধের বিকল্প পুষ্টি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমরা জানি, বাচ্চার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প বা তার সমান কিছু নেই। তবে যেসব বাচ্চারা মায়ের বুকের কম পায়, তাদেরকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে মায়ের দুধের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা হয়ে থাকে।
ফর্মুলা দুধ কত রকমের হয়?
বাজারে এ তিন ধরনের ফর্মুলা কিনতে পাওয়া যায়। যথাঃ পাউডার ফর্মুলা, ঘন তরল জাতীয়/ কনসেন্ট্রেটেড লিকুইড ফরমুলা দুধ, প্রিমিক্সড, রেডি টু ইউজ ফর্মুলা।
পাউডার ফর্মুলা: এটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফর্মুলা। কারণ এর দাম তুলনামূলক কম। এটিকে আমরা গুঁড়ো দুধ বা পাউডার দুধ নামেও ডাকি। এ ফর্মুলার সাথে পানি মিশিয়ে দুধ তৈরি করা হয়।
ঘন তরল জাতীয়/কনসেন্ট্রেটেড লিকুইড ফরমুলা: এটা পাউডারের চেয়ে ঘন হয়ে থাকে। তবে এটি প্রস্তুত করতেও পানি মেশাতে হয়।
প্রিমিক্সড, রেডি-টু-ইউজ ফর্মুলা: এ ফর্মুলা দুধ একদম তৈরি থাকে। আপনাকে কেবল বোতলের মুখ খুলতে হবে এবংবাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। পানি বা অন্য কিছু মেশানোর প্রয়োজন নেই। তবে এই ধরনের ফর্মুলা দুধের দাম অনেক বেশি।
ভালো ফর্মুলা দুধ কেনার আগে যা জানবেন
ফর্মুলা দুধ নির্বাচনের আগে চারটি বিষয় বিবেচনা করতে হয়।
- বাচ্চার ওজন
- আর্লাজি সমস্যা বিবেচনা করতে হবে
- স্বাদ
- হজম
১। বাচ্চার ওজন: চিকিৎসক যখন আপনার বাচ্চার জন্য ফর্মুলা দুধ বাছাই করে দেন তখন বাচ্চার ওজন জানতে চান। আপনার বাচ্চার ওজন যদি বয়সের তুলনায় কম হয় তখন এক ধরনের ব্র্যান্ডের ফর্মুলা বাছাই করে। আবার যদি আপনার শিশুর বয়সের তুলনায় ওজন বেশি হয় তাহলে অন্য আরেক ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে বলে।
যেমন: বাচ্চার ওজন কম হলে ডাক্তার Similac অথবা Lactozen জাতীয় ফর্মুলা খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। অন্যদিকে বাচ্চার ওজন বেশি হলে Biomil অথবা NAN জাতীয় ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে।
২। আর্লাজি: যে সকল শিশুদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ফর্মুলা দুধ কেনার ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজে ফর্মুলা দুধ বাছাই করা যাবে না।
৩। স্বাদ: প্রত্যেক মানুষের স্বাদের তারতম্য হয়ে থাকে। একজন মানুষের যে খাবার জিনিস পছন্দ অন্য মানুষের সেটা পছন্দ না হতেও পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। আর তাই বিভিন্ন ভালো ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ দিয়ে বাচ্চাকে পরীক্ষা করতে হবে। বাচ্চা যেটা খেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে সেটা খাওয়াতে হবে।
৪। হজম: অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চাদের হজমের সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসকরা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এক ধরনের আর পাতলা পায়খানা হলে আরেক ধরনের ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের দুধ কোনটা ভালো
কয়েকটি ভালো ফর্মুলা দুধের নাম
- Lactogen
- Enfamil
- Similac
- Nan pro
- Aptamil Gold
- Prima
- Babycare
- Biomil
Enfamil: প্রাথমিক পর্যায়ে নবজাতক শিশুদের খাবার Enfamil পরামর্শ দেওয়া হয়।
Similac: বাংলাদেশে সেমিল্যাক খাওয়ার প্রচলন বেশি। কারণ বেশিরভাগ ডাক্তারেরা এটি এই প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
Nan pro: এতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান এবং DHA রয়েছে যা বাচ্চার বুদ্ধি বিকাশের সহায়তা করে।
Aptamil Gold: যদিও এটি একটি পুরাতন ব্র্যান্ড কিন্তু অনেক ভালো কাজ করে।
Prima: প্রাইমাতে পুষ্টি উপাদানের সাথে প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক রয়েছে। এই প্রো বায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক উপাদান গুলো উপাদান গুলো শিশুর পেটের উপকারী ও অপকারী জীবাণুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে হজমে সাহায্য করে। অনেক ডাক্তার এই ফর্মুলা দুধ খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বয়স অনুযায়ী ফরমুলা দুধের ধরন
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ বাচ্চার বয়স অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়। যেমন: প্রাইমা ব্র্যান্ড-
শিশুর বয়স | ফর্মুলা দুধের নাম | উদাহরণ |
---|---|---|
০-৬ মাস | ফর্মুলার নাম ১ | প্রাইমা ১ |
৬-১২ মাস | ফর্মুলার নাম ২ | প্রাইমা ২ |
১২–২৪ মাস | ফর্মুলার নাম৩ | প্রাইমা ৩ |
২-৫ বছর | ফর্মুলার নাম ৪ | প্রাইমা ৪ |
অর্থাৎ আপনার শিশুর বয়স যদি (০-৬) মাসের মধ্যে হয় তাহলে যে ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ কিনবেন তার পাশে ১ লেখা থাকবে। আবার বাচ্চার বয়স যদি ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে হয় তাহলে নামের পাশে ২ লেখা থাকবে। অনুরূপভাবে বয়স ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে হলে দুধের নামের পাশে ৩ দেখা থাকবে এবং অবশেষে যদি নামের পাশে ৪ থাকে নামে তাহলে বুঝবেন যে সেটা ২ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য উপযোগী।
ফর্মুলা দুধের দাম
বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ফর্মুলা দুধের ওজন ভেদে দামের পার্থক্য হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে বিভিন্ন ফর্মুলা দুধের দাম-
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
Prima 2 | 400g | 800 |
Biomil 2 | 400g | 875 |
Lactogen 2 | 400g | 850 |
Similac 2 | 400g | 905 |
Nan Optipro 2 | 400g | 1250 |
সাধারণত ফর্মুলা দুধের দাম নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর
- বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ধরন অনুসারে
- কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে
- ফর্মুলা দুধের ওজন অনুসারে
বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধের নাম
- ল্যাকটোজেন
- Similac
- Similac Gold
- প্রাইমা
- Aptamil
- Enfamil
- Nan optipro
- Biomil
১। ল্যাকটোজেন
ল্যাকটোজেনের সবথেকে ছোট প্যাকেট শুরু হয় ১৮০ গ্রাম থেকে এবং সর্বোচ্চ প্যাক ১ কেজি ৮০০ গ্রাম। ল্যাকটোজেন ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধগুলো আপনি ৩০০ টাকার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ফর্মুলাটি প্যাকেট জাত নাকি টিনের কৌটায় অথবা কোন দেশ থেকে আমদানি করা এর উপর ভিত্তি করে দামের অনেকটা তারতম্য হয়ে থাকে।
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
Lactozen 1 | 350g | 750 |
Lactozen 2 | 350g | 670 |
Lactozen 3 | 350g | 670 |
Lactozen 4 | 350g | 600 |
২। প্রাইমা
বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ প্রাইমা বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় একটি শিশু খাদ্য। ডাক্তাররা বেশিরভাগ শিশুকে এই দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। কেননা প্রাইমা দুধ মানসম্পন্ন এবং গুণগত দিক দিয়ে অনেক ভালো। মানসম্পন্ন এবং গুণগত দিক দিয়ে ভালো হওয়ার তুলনায় এই ফর্মুলা দুধের দাম অনেকটাই কম। ৪০০ গ্রাম প্রাইমা ১ দুধের দাম মাত্র ৭৫০ টাকা। আপনি বিভিন্ন ফার্মেসিতে অথবা বড় কোনো কনফেকশনারিতে প্রাইমা দুধ কিনতে পাবেন। কোনো কোনো দোকানে ৭৮০ টাকাও দাম নিয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমানে অনলাইনে অর্ডার করে এই দুধ কিনতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ সেরেলাক এর উপকারিতা | সেরেলাক কোনটা ভালো
৩। Similac
Similac (Indian) ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধগুলো ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
Similac 1 | 400g | 930 |
Similac 2 | 400g | 980 |
Similac 3 | 400g | 900 |
৪। Similac Gold
দুবাই থেকে আমদানি করা Similac Gold. এই ফর্মুলা অনেক ভালো। যাদের বাজেট একটু বেশি অর্থাৎ সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজারের মধ্যে তারা এই ফর্মুলা মিল্কগুলো কিনতে পারেন।
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
Similac Gold 1 | 800gm | 3799 |
Similac Gold 2 | 800gm | 4500 |
Similac Gold 3 | 800gm | 3549 |
Similac Gold 4 | 900gm | 3899 |
বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ কোনটা ভালো
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করব শিশুকে বা আপনার বাবুকে কোন ফর্মুলা দুধ খাওয়াবেন। এই বিষয়টা আমাদের ওয়েবসাইটে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। অনেকেই কমেন্ট করেছেন আমার বাবুর জন্য কোন ফর্মুলা দুধটা ভাল হবে বা শিশুকে কোন ফর্মুলা দুধটা দিব।
অনেক মায়েরা বলেন, শিশু বুকের দুধ পায় না, খুব কান্নাকাটি করে, ঘুমায় না, হাতচুষে, পেট ভরে না তাকে কোন ফর্মুলা দুধ দিব। আজকে তাই আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিব আপনাদের সামনে আলোচনা করব কোন ফর্মুলা দুধটা আপনার শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
আজকের আলোচনার বিষয় বাবু জন্য কোন ফর্মুলা মিল্ক টা বা ফর্মুলা দুধ সবচেয়ে ভাল হবে। এই আর্টিকেলের শুরুর মেসেজটা হল শিশুর বয়স ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, যাকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং।
অর্থাৎ ০ দিন থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াবেন। এর বাইরে এক ফোঁটা পানিও দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মধু চিনির পানি ম্রিস্রি এগুলো কিছুই দেওয়ার দরকার নেই।
বুকের দুধের মধ্যে শিশুর পানির চাহিদা পূরণ হবে। বুকের দুধ হচ্ছে আল্লাহ পাকের থেকে প্রদত্ত একটি নেয়ামত। এই নেয়ামতটা ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ এর বাইরে কোনও কিছু খাওয়াবেন না।
এখন দেখা গেল অনেক শিশুর মা রয়েছে বা বাবুদের মা রয়েছে। যাঁদের বুকে দুধ উৎপন্ন হয় না, বুকের দুধ একেবারে তৈরি হয় না। শিশু বুকের দুধ পায় না। আবার দেখা গেল যে অনেক কর্মব্যস্ত মা রয়েছে যারা শিশুকে সময় দিতে পারে না। বুকের দুধ খাওয়াতে পারে না চাকরিজীবী মা তাদের শিশুদের জন্য কিন্তু ফর্মুলা দুধ প্রয়োজন।
আবার কোন কোন শিশুর দেখা গেছে মাতৃবিয়োগ হয়েছে বা মারা গেছে তাদের ক্ষেত্রে ফর্মুলা দুধের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ফর্মুলা দুধ ডাক্তাররা সাজেস্ট করে দিবে।
কিন্তু কিছু মায়েরা ভুল করে সেই ভুল গুলো হচ্ছে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে আমরা বলি যে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর বুকের দুধ পাবে। এর আগে শিশুর বুকে যতটুকু মায়ের বুকে দুধ আসে সেই দুধ শিশুর জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু অনেক মায়েরা হাসপাতালে সিজার হয়েছে। নার্সরা সাজেস্ট করে দিয়েছে ফর্মুলাটা খাওয়ান, পাশের বাসার ভাবী বলেছে এই ফর্মুলা দুধ খাওয়ান আমার বাবুকে খাওয়াচ্ছি খুব ভালো এগুলো করা যাবে না।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক মায়েরা আছেন খুব অল্প বয়সে এক বছরের আগে শিশুকে গরুর দুধ দেওয়া শুরু করেন। এক বছর আগে কিন্তু শিশুকে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবে না। কেন খাওয়ানো যাবে না সেই বিষয়ের উপর অন্য আরেকটি লেখা আছে প্রয়োজন আপনারা আমার ওয়েবসাইতে ওই লেখাটি দেখে নিতে পারেন।
এখন আসুন ফর্মুলা দুধের কথা। অনেকে অনেক রকমের ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে চান। আবার অনেকে বলেন যে বিদেশি ফর্মুলা দুধ আমার হাসব্যান্ড বিদেশ থাকে ওখান থেকে পাঠাবে ওই ফর্মুলা দুধ খাওয়াব কেমন হবে? দরকার নেই। বিদেশি ফর্মুলা দুধের দরকার নেই।
কারণ যে ফর্মুলা দুধগুলো বাজারে রয়েছে প্রত্যেকটা ফর্মুলা দুধের মধ্যে যে উপাদানগুলো রয়েছে সেই উপাদানগুলো প্রায় সেম। এর মধ্যে কোনও তারতম্য নেই তাই আপনাকে ফর্মুলা দুধ আলাদা ভাবে চয়েস করার দরকার নেই। আপনি যেটা খাওয়াতে চান আপনি চাইলে ওটাই খাওয়াতে পারেন।
বাজারের মধ্যে অনেক রকমের ফর্মুলার দুধ পাওয়া যায়। ল্যাকটোজেন পাওয়া যায়, নান পাওয়া যায়, প্রাইমা পাওয়া যায়, বেবিকেয়ার পাওয়া যায়, এপ্টামিল পাওয়া যায়, বায়োমিল পাওয়া যায়, ইনফামিল পাওয়া যায়। যেকোন একটি ফর্মুলা দুধ আপনার শিশুর জন্য নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো কিছু নেই।
প্রত্যেকটা ফর্মুলা দুধের উপাদান গুলো একই। কিন্তু দেখা গেছে কিছু কিছু কোম্পানির ফর্মুলা দুধগুলো বাহির থেকে ইনপুট করা হয় সেগুলোর মান কিছুটা ভালো। কিন্তু এছাড়া এমন কোনও ডিফারেন্স দেখা যায় না। সেজন্যই ডাক্তার বলেন যে, আপনার শিশুকে আপনি যেকোন একটি ফর্মুলা দুধ খাওয়ালেই হবে।
বেশিরভাগ ডাক্তাররা যে ফর্মুলা দুধ সাজেস্ট করে সেটা হচ্ছে প্রাইমা ১ এবং প্রাইমা ২ ফর্মুলা দুধ। ০ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ডাক্তাররা প্রাইমা ১ সাজেস্ট করে এবং ছয় থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত প্রাইমা ২ সাজেস্ট করে।
এখন বলবেন কেন ডাক্তাররা প্রাইমা ফর্মুলা দুধ সাজেস্ট করে। সবগুলো যেহেতু একই তাহলে প্রাইমা সাজেস্ট কেন করেন, অন্যগুলো কেন করেন না। যারা বলে আমি বাবুকে বেবিকেয়ার খাওয়াচ্ছি। ঠিক আছে আপনি বেবি কেয়ার খাওয়ান, আবার যারা বলেন বায়োমিল খাওয়াচ্ছি আপনি বায়োমিল খাওয়ান।
কিন্তু বেশিরভাগ ডাক্তারের সাজেশন প্রাইমা ফর্মুলা দুধ দিয়ে থাকে। এর কারণ হল যে ফর্মুলা দুধ গুলো রয়েছে এই ফর্মুলা দুধে কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মায়ের বুকের দুধ, দুধের মধ্যে স্বাদ রয়েছে ফর্মুলা দুধের মধ্যে যদি এই স্বাদের চেয়ে বেশি স্বাদ থাকে বেশি মুখরোচক হয় তাহলে কিন্তু শিশু ফর্মুলা দুধ খাবে। ফর্মুলা দুধ শুরু করার পর থেকে আর বুকের দুধ খাবে না।
এক্ষেত্রে প্রাইমা ফর্মুলা দুধের যে স্বাদটা সেটা হচ্ছে বুকের দুধের মতোই। বুকের দুধের যে স্বাদ প্রাইমা ফর্মুলা দুধের স্বাদ একই। তাই ডাক্তার প্রাইমা দিয়ে থাকি বাবু প্রাইমা দুধ ও খাবে, বুকের দুধ খাবে।
কিন্তু আমরা বলে থাকি আপনার শিশুকে আগে ফর্মুলা দুধ দেবেন না। আগে বুকের দুধ দিবেন বুকের দুধ খাওয়ার পরে যদি শিশুর ক্ষুধা থাকে শিশু আবার খেতে চায়। সেক্ষেত্রে আপনি ফর্মুলা দুধ দিতে পারেন।
কিন্তু ছয় মাস পর্যন্ত যদি মায়ের বুকে যথেষ্ট দুধ থাকে, মা যদি চাকরিজীবী না হয়ে থাকে, শিশুকে সময় দিতে পারে সেক্ষেত্রে ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াবেন। এর বাইরে যদি শিশু মা সময় দিতে পারছেন না, মায়ের বুকের দুধ তৈরি হচ্ছে না সেক্ষেত্রে তাই প্রাইমা ১ খাওয়াতে পারেন অথবা যে কোনও ফর্মুলা মিল্ক ১ খাওয়াবেন।
৬ মাসের পর থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত আপনারা প্রাইমা ২ খাওয়াতে পারেন। এই ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে হবে। বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে পেটে ক্ষুধা থাকলে শিশু খেতে চাইলে এর পরবর্তীতে ফর্মুলা দুধ দেবেন।
অনেকে আছেন খুব অল্প বয়সে বলে যে আমি এক বছরের মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ ছাড়াতে চাচ্ছি সেটা কখনও করবেন না। শিশুকে কমপক্ষে এক বছর তো বুকের দুধ খাওয়াবেন। যদি সম্ভব হয় অবশ্যই অবশ্যই দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াবেন।
এটা আল্লাহ পাক প্রদত্ত শিশুর জন্য একটি নেয়ামত মায়ের বুকের দুধ। এই নেয়ামত থেকে আপনার শিশুকে বঞ্চিত করবেন না। বন্ধুরা আশা করি আপনারা আমাদের আজকের আলোচনা বুঝতে পেরেছেন যে শিশু জন্য ফর্মুলা দুধ কোনটা চয়েস করবেন বা কোনটা খাওয়াবেন।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ
ফর্মুলা দুধ বানানোর নিয়ম
ফর্মুলা দুধ গুলানো কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা যদি সঠিকভাবে বাচ্চাদেরকে গুলিয়ে না খাওয়ানো হয় তাহলে দেখা যাবে বাচ্চার ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এমনকি ফর্মুলা দুধের যে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেটা থেকেও তারা বঞ্চিত হতে পারে। কমবেশি যতগুলো ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ আছে সবগুলো কিন্তু একই ভাবে গুলিয়ে বা রেডি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়।
আপনারা যে যে ব্র্যান্ডে ফর্মুলা দুধ ব্যবহার করেন না কেন, প্রতিটা ব্র্যান্ডের প্যাকেট বা বক্সের মধ্যে দেখবে একটা চামচ করে থাকবে এবং এই চামচের মাপে কিন্তু আমাদেরকে ফর্মুলা দুধ তৈরি করে নিতে হবে।
কিন্ত কোনো ক্ষেত্রে যদি মনে হয় যে আপনি যে ফর্মুলা দুধের প্যাকেটটা কিনেছেন তার মধ্যে কোনো প্রকার চামচ নেই তাহলে আপনার বাসাতে যে টেবিল চামচ গুলো রয়েছে সেই টেবিল চামচের এক চামচ পরিমাণে কিন্তু আপনারা ফর্মুলা দুধ রেডি করে নিতে পারবেন।
বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধকে রেডি করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই গরম পানি নিতে হবে আর ঠাণ্ডা পানিতে কিন্তু এটাকে কখনও গোলানো যাবে না। কারণ ঠাণ্ডা পানিতে ফর্মুলা দুধ গোলানো হলে সেটা কিন্তু জমে থাকবে। যার ফলে কিন্তু দুধটা খুব ভাল ভাবে গলবে না এবং এই দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো হলে বাজার কিন্তু পেট ব্যথা হবে, ডায়রিয়া হবে বা নানা রকমের প্রবলেম দেখা দিতে পারে।
আবার ফর্মুলা দুধ কিন্তু কখনও অতিরিক্ত গরম পানিতে গলাতে হয় না। কারণ অতিরিক্ত গরম পানিতে মানে বেশি টগবগিয়ে ফুটছে। এই অবস্থায় যদি আপনি ফর্মুলা দুধ সেই গরম পানির মধ্যে দিয়ে দেন তাহলে দেখা যাবে সেই ফর্মুলা দুধের পুষ্টিগুণ সব নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই যখন আপনি বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন তখন দেখে নেবেন পানির তাপমাত্রা যেন অবশ্যই রুম টেম্পারেচারে থাকে।
আমরা নতুন মায়েরা সবচাইতে বেশি যে বিষয়ে কনফিউজড থাকি আর তা হচ্ছে যে কতটুকু দুধের জন্য কতটুকু পানি নিতে হবে। তো এটা বোঝার জন্য সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে ফিডারের ব্যবহার করা। মানে প্রতিটি ফিডারে দেখবেন যে একটা করে মিটার থাকে বা মিটার স্কেল থাকে এবং এই স্কেলের মাধ্যমে কিন্তু আমরা যে পানির মেজারমেন্ট এটা কিন্তু খুব সহজেই বুঝতে পারি।
একজন নবজাতক শিশু কিন্তু খুবই অল্প পরিমাণে ফর্মুলা দুধ খায় এবং তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিন্তু তার চাহিদা বাড়তে থাকে। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। প্রথমে অল্প করে ফর্মুলা দুধ গুলিয়ে দেখতে এবং সে যদি আরো বেশি খেতে চায় তবে আস্তে আস্তে পরিমাণটা হয়তো বাড়াতে থাকব।
তো এটা বোঝার জন্য যেটা কাজ করতে পারি তা হচ্ছে প্রতি 30ml পানির জন্যে এক চামচ পরিমাণে ফর্মুলা দুধ করব এবং প্রতি 60 ml পানির জন্য দুই চামচ পরিমাণে ফর্মুলা এবং প্রতি 90ml পানির জন্য তিন চামচ পরিমাণে ফর্মুলা দুধ। এবং এভাবে কিন্তু বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের মধ্যে ফর্মুকা দুধের পরিমাণও বাড়াতে থাকব।
আপনারা যে ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ ব্যবহার করবেন অবশ্যই খুব ভালভাবে তাদের দেয়া তথ্য ভালোভাবে পড়ে নেবেন। তাহলে আপনাদের জন্য ফর্মুলা দুধ গোলানো অনেক বেশিই সহজ হয়ে যাবে। মোটামুটি ২০ থেকে ২৫ সেকেন্ড টাইম নিয়ে খুব ভালোভাবে এগুলো ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। আর ঝাঁকি দেয়ার পর কিন্ত ফর্মুলা দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য একদম রেডি।
আর এটার টেম্পারেচার ঠিক আছে কিনা মানে বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য একদম রেডি কিনা। কারণ অতিরিক্ত বেশি গরম হলে বাচ্চার কিন্তু মুখ পুড়ে যেতে পারে সেজন্য সব সময় চেষ্টা করতে হবে একদম স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে তারপর বাচ্চাকে খাওয়াতে।
আর সেজন্য আমরা কয়েক ফোঁটা দুধ হাতের উপর দিয়ে চেক করে নিতে পারি। যদি মনে হয় যে না আমার হাত পুড়ে যাচ্ছে না কোনও প্রকার সেভাবে গরম লাগছে না তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চাকে খাওয়ালে আর কোনো প্রবলেম হবে না।
মোটামুটি এই কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে পারেন। আশা করা যায় এতে করে ফর্মুলা দুধ থেকে পুষ্টি পাওয়ার কথা তা সঠিক ভাবে পাবেন। তবে এটা ঠিক মায়ের বুকের দুধের বিকল্প কোন কিছু নেই। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে মায়ের বুকের দুধ বেশি বেশি খাওয়ানো। কিন্ত বাচ্চা যদি একেবারে মায়ের দুধ না পায় তবে সেক্ষেত্রে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে।
আরো পড়ুনঃ জ্বর হলে করণীয় কি, জেনে নিন জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
ফর্মুলা খাওয়ানোর সুবিধা - ফর্মুলা দুধের উপকারিতা
ফর্মুলা খাওয়ানোর সুবিধাগুলি নিম্নরূপ:
- পরিবারের যে কেউ বাচ্চকে খাওয়াতে পারে; সব সময় মাকে উপস্থিত থাকার দরকার নাই।
- বাচ্চা কতটা খাচ্ছে তা বোঝা সহজ হয়।
- ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের মতো বার বার খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না।
ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় কেন
- মায়ের বুকের দুধের ঘাটতি।
- মা এমন কোন ঔষুধ খাচ্ছেন যার ফলে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো নিরাপদ নয়।
- অথবা বাচ্চার অতিরিক্ত পানিশূন্যতা, জন্ডিস রয়েছে ফলে শুধুমাত্র বুকের দুধ দিয়ে ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না।
- অনেক সময় যে মায়েদের থাইরয়েডের হাইপার থাইরয়েডিজম রোগ হয় ফলে তাদের বুকে দুধ নাও আসতে পারে।
কোন ফর্মুলা মিল্কটি খাওয়ালে বাচ্চার ওজন বাড়বে
প্রত্যেক বাবা-মারই একটি সাধারণ প্রশ্ন কোন ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে বাচ্চার ওজন বাড়বে। কিন্তু আমাদের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বাচ্চার ওজন বাড়ানো নয়, প্রয়োজন বাচ্চার সার্বিক সুস্থতা। আমাদের চারপাশে অহরহ দেখতে পাই যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ খাইয়ে কোন বাচ্চা যদি মোটা হয়ে যায়। তাদের অনুকরণ করে অন্যরাও বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ খাইয়ে দেই। কিন্তু এটা কখনোই উচিত না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কারো দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কখনো কোন ফর্মুলা কেনা উচিত নয়।
চিকিৎসক একটি শিশুর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার বয়স, ওজন এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা পরীক্ষা করে একটি বিশেষ ধরনের ফর্মুলা নিয়ে বাছাই করে দেবেন। চিকিৎসকের বাছাইকৃত ফর্মুলা ছাড়া অন্য কোন ধরনের ফর্মুলা খাওয়ানো উচিত নয়। তবে ফর্মুলার কারণে যদি কোন ধরনের অসুবিধা হয় তা চিকিৎসকে বলতে হবে চিকিৎসক তা বদলে দিবেন।
আপনি যদি ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে আপনার শিশুর ওজন বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফর্মুলা মিল্ক কিনবেন।
এক বছরের শিশুর জন্য কোন ফর্মুলা মিল্ক ভালো
আপনার বাচ্চার বয়স যদি এক বছর বা তার থেকে বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি NIDO 1+ ফর্মুলা দুধ নিয়ে একটি খাওয়াতে পারেন। এট বাচ্চার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে। এতে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দৈহিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত খাওয়ানো যায়। বাচ্চার বয়স তিন বছরের বেশি হলেও NIDO 3+ খাওয়াতে হবে। এগুলো চিলি থেকে আমদানি করা।
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
NIDO 1+ Growing Up Milk | 350 g | 500tk |
NIDO 3+ Growing Up Milk | 350 g | 400tk |
তবে আপনাদের বাজেট যদি বেশি হয় তাহলে Dubai এর NIDO ফর্মুলা দুধ নিতে পারেন। কেননা এতে রয়েছে DHA এগিয়ে যা বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
ফর্মুলা দুধের নাম | ওজন | দাম |
---|---|---|
NIDO One Plus | 900g | 2960 tk |
NIDO Three Plus | 400 g | 1849 tk |
তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এসকল দুধ শুধু মাত্র এক বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের জন্য উপযোগী।
আরো পড়ুন: নেবুলাইজার মেশিনের দাম কত ২০২৪
প্যাকেটের ফর্মুলা দুধ ভালো নাকি টিনের কৌটার
একই কোম্পানি একই ওজনের ফর্মুলা দুধ প্যাকেটে এবং টিনের কৌটায় উভয় ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করে থাকে। টিনের কৌটার একটি বিশেষ সুবিধা হল বাতাস ঢোকার কোন সম্ভাবনা থাকে না। যার ফলে ফর্মুলা সুরক্ষিত থাকে এবং অনেকদিন পর্যন্ত দুধের কার্যক্ষমতা অব্যাহত থাকে।
অন্যদিকে প্যাকেটজাত ফর্মুলায় বাতাস ঢুকতে পারে না। কিন্তু প্যাকেট কাটার পর এতে বাতাস ঢোকার সম্ভাবনা থাকে তাই আপনার বাড়িতে যদি কোনো টিনের কৌটা থাকে বা এয়ার টাইট বক্স থাকে তার মধ্যে এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে।
আর যদি বাড়িতে টিনের কৌটা না থাকে তাহলে টিনের কৌটার ফর্মুলা প্রথমবার কিনে নিবেন এবংপরবর্তী সময়ে প্যাকেট ফর্মুলা কিনার পর পুরাতন টিনের কৌটায় রাখতে পারেন। তবে প্যাকেট ফর্মুলা দুধের চেয়ে টিনের কৌটার ফর্মুলা দূরের দাম সামান্য বেশি হয়।
সয়া ফর্মুলা দুধ কোন শিশুদের জন্য ভালো
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফর্মুলা দুধ বাচ্চাদের অ্যালার্জির কারণে হিসেব কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফর্মুলাতে উপস্থিত গরুর দুধের প্রোটিন কিছু বাচ্চার এলার্জির জন্য দায়ী হতে পারে। ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পর বাচ্চার পায়খানার সাথে রক্ত গেলে, গায়ে ছোপ ছোপ দাগ হলে, দুধ খাওয়ার সময় অস্থিরতা দেখা দিলে, বাচ্চা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করলে,বারবার বমি করলে অথবা ডায়রিয়া হলে বুঝবেন যে অ্যালার্জি হয়েছে। এটা একটা প্রাথমিক ধারণা। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে আসল কারণ ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
তবে গরুর দুধের প্রোটিন থেকে তৈরি ফর্মুলা দুধে এলার্জি হলে এর বিকল্প ফর্মুলা দুধ হচ্ছে সয়া ফর্মুলা দুধ। এ ধরনের ফর্মুলা দুধে এলার্জির সম্ভাবনা থাকে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সয়া ফর্মুলা দুধেও এলার্জি হতে পারে সে ক্ষেত্রে “এক্সট্রা হাইড্রোলাইজ ফর্মুলা” দুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফর্মুলা দুধের পুষ্টিমান- কোন ফর্মুলা দুধ ভালো?
দোকানে ফর্মুলা দুধ কিনতে গেলে লক্ষ্য করবেন দোকানে বিভিন্ন ব্যান্ডের হরেক রকম দুধ সাজানো রয়েছে। আপনার মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগতে পারে এত সব ব্র্যান্ডের মধ্যে কোন ফর্মুলা দুধটি ভালো? আপনাদের অবগত করার জন্য জানিয়ে রাখি যে, প্রত্যেক ব্যান্ডের ফর্মুলা দুধের গুণগত মান প্রায় একই হয়ে থাকে।
কেননা সবগুলো দুধের গুণগত মান ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) দ্বারা পরিক্ষিত। এই সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী সকল ব্র্যান্ডের জন্য ২৯ টি পুষ্টি উপাদান ফর্মুলা দুধে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। তাই ফর্মুলা দুধের প্যাকেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং বিভিন্ন মোড়ক থাকতে পারে কিন্তু ভেতরের দুধে ব্যাপক কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।
বর্তমানে DHA নামক ফ্যাটি অ্যাসিড কিছু কিছু ফর্মুলা দুধে উপস্থিত থাকে। এই DHA জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সকল ফর্মুলা দুধে এই পুষ্টি উপাদানটি থাকে না। তাই যে সকল ফর্মুলা দুধে DHA রয়েছে সেগুলো আপনি কিনতে পারেন।
এটা ছাড়া বাজারে আরও বিশেষ কিছু ফর্মুলা রয়েছে। যেমন- প্রিম্যাচিউর বেবির জন্য এক ধরনের ফর্মুলা। অন্যদিকে এলার্জির জন্য আরেক ধরনের ফর্মুলা। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন অর্গানিক ফর্মুলা বাজারে অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। শিশুর জন্য কোন ফর্মুলা দুধ ভালো হবে। তা বাছাই করার সময় সর্বপ্রথম দেখতে হবে উপাদান তালিকা।
ফর্মুলা দুধ কতক্ষণ ভালো থাকে? ফিডারের দুধ কতক্ষণ রাখা যায়
যখন পাউডার কিংবা তরল ফর্মুলা দুধের সঙ্গে পরিমাণমত পানি মেশানো হয়ে যাবে সাথে সাথে সেই দুধ ফিডারের ঢাকনা বন্ধ করে ফ্রিজের ভিতর রেখে দিন। সাধারণ তাপমাত্রায় এটাকে ঠান্ডা হতে দিবেন না।
এভাবে আপনি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ফর্মুলা দুধ সংরক্ষণ করতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর দুধ ফেলে দিন, কারণ ইতোমধ্যেই হয়তো সেটা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে গেছে।
সাথে সাথে ব্যবহারযোগ্য ফর্মুলা দুধঃ বাজারে কিছু ফর্মুলা দুধ পাওয়া যায় যেটাতে পরিমাণমত পানি আগেই থেকেই মেশানো থাকে এবং আপনি সেগুলো প্যাকেট থেকে বাহির করেই আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারবেন। যখন আপনি প্যাকেট খুলে ফেলবেন, তখন সাথে সাথে সেটা ফিডারে নিয়ে আগের মতোই ঢাকনা বন্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম করার পর অবশিষ্ট দুধ আপনাকে ফেলে দিতে হবে। কেননা এই সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ফরমুলা দুধে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ শুরু হয়ে যায়।
সাধারণ নির্দেশনাঃ প্রতিবার ফর্মুলা দুধ প্রস্তুত করে বোতলে অথবা ফিডারে সংরক্ষণ করার সময় বা ফর্মুলার কৌটা খোলার পর, একটা কাগজে দুধ তৈরির সময় এবং তারিখ লিখে রাখুন এবং সেটা ফিডারের গায়ে লাগিয়ে দিন। এতে করে পরবর্তীতে আপনার, ভুল করেও সেই দুধ শিশুকে খাওয়ানোর ঝুঁকি থাকেনা। অথবা আপনি চাইলে মোবাইলে এলার্মও দিয়ে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
ফর্মুলা মিল্ক এর ক্ষতিকর দিক
- বাচ্চার গ্যাস ও হজমের সমস্যা হতে পারে।
- রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
- দুধের চেয়ে ধীরে হজম হয়।
- যেসকল শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হয় তাদের হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি।
- যেসকল শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হয় তাদের নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা সেসকল শিশুদের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি হয় যাদেরকে শুধুমাত্র মায়ের দুধ দেওয়া হয়।
- ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ফর্মুলা দুধ খাওয়ালে শিশুদের ওজন বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অ্যালার্জি জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পায়।
- ফর্মুলা দুধ একজন নবজাতকের মস্তিষ্ক বৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটায়। যার ফলে বাচ্চা বড় হয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে।
- ফর্মুলা দুধে সোডিয়াম এবং অস্মোলারিটিও বেশি থাকে। এতে করে শিশুর পেটে গ্যাস্ট্রিক তৈরি হয় এবং বমি বমি ভাব সহ বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। গ্যাস পেটে জমার কারনে তা শিশুর পেটে ব্যাথার সৃষ্টি করে। আর যেহেতু সমস্যাটা বুঝাতে পারে না, তাই সেসময় অনবরত কান্না করতে থাকে শিশু।
পরিশেষে
এই আর্টিকেলটিতে আমি বিভিন্ন ভালো ফর্মুলা দুধ, বাচ্চাদের ফর্মুলা দুধ কোনটা ভালো এবং দাম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা কররেছি আপনারা উপকৃত হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন যে আপনার বাচ্চার জন্য কোন ফর্মুলা দুধ ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় একজন ডাক্তারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা এতে করে চিকিৎসক শিশুর অবস্থা বুঝে ভালো বলতে পারবে আপনার সন্তানের জন্য কোন ফর্মুলা দুধ ভালো।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।