অমিডন এর কাজ কি এবং অমিডন ট্যাবলেট এর উপকারিতা কি তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়েছে। অমিডন ওষুধটির নাম প্রায় সকলেই কমবেশি শুনেছি। তবে এর কার্যকারিতা ও ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই।
তাই আজকে এই আর্টিকেলটিতে অমিডন এর উপকারিতা, অমিডন কেন খায়, অমিডন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং এই ওষুধ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
অমিডন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা যেমন: বমি বমি ভাব, বদহজম, গ্যাস্ট্রিক জনিত কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
কেননা এটা একই সাথে শারীরিক সমস্যা নিরাময় করে এবং সহজলভ্য অর্থাৎ দামে অনেক সস্তা। তাই নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত যে কেউ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধ কিনে খেতে পারে।
(toc) #title=(পোষ্ট সূচিপত্র)
অমিডন এর কাজ কি
যে সকল শারীরিক সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পেলে ডাক্তার অমিডন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেগুলো হলো:
- পেটের উপরের ভাগে ফাঁপা বোধ হলে।
- পেট ভার বোধ এবং পেটের উপরের অংশে ব্যথা করলে।
- পাকস্থলী থেকে খাদ্য উপরে উঠে আসলে ও বুক জ্বালা/শুধু বুক জ্বালা করলে।
- ঢেকুর তোলা।
- ক্ষুধামন্দা।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হলে।
- খাদ্যাভাস /মাইগ্রেন /রেডিওথেরাপি হতে সৃষ্ট তীব্র বমি বমি ভাব এবং বমি প্রতিরোধে।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে অমিডন একটি কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
অমিডন ট্যাবলেট এর উপকারিতা
বমি বমি ভাব বা বমি প্রতিরোধে সহায়তা করে। দ্রুত খাদ্য হজমে সহায়তা করে। যার ফলে বদহজম এবং গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা কম হয়।
ক্ষুধামন্দা দূর হয়। কেননা অমিডন সহজে খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে। ফলে আগের থেকে বেশি খিদে পাই এবং ধীরে ধীরে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
বদহজম কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত বদহজম, বমি বমি ভাব এবং বমির চিকিৎসায় ডাক্তারেরা অমিডন ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অমিডন খাওয়ার নিয়ম
খাবার খাওয়ার অন্তত ১৫-৩০ মিনিট পূর্বে অমিডন ট্যাবলেট খেতে হয়। সাধারণত ৮ ঘন্টা পর পরই এই ওষুধ খেতে হয়। অর্থাৎ পুরো দিনে মোট তিনবার। সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে, দুপুরের খাবারের আগে এবং রাতের খাবারের আগে অমিডন ট্যাবলেট খেয়ে নিতে হবে।
যেহেতু খাবার আগে ওষুধটি খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন খালি পেটে এক গ্লাস পানি দিয়ে ওষুধটি খাওয়া হয়।
বিভিন্ন কারণে ওষুধের মাত্রা কম বেশি হতে পারে। ডাক্তার যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন ঠিক সেভাবে ওষুধ সেবন করুন অর্থাৎ প্রেসক্রিপশনের নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
কেননা মানুষের বয়স এবং অসুস্থতার ধরনভেদে অমিডন খাওয়ার নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়ে থাকে। Omidon খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ এবং সময়কাল অবশ্যই মেনে চলা উচিত।
অমিডন কিভাবে কাজ করে
মস্তিষ্কের যে স্থান বমি নিয়ন্ত্রণ করে, এই ওষুধটি মস্তিষ্কের সেই স্থানে কাজ করে। ফলে বমি বমি ভাব কেটে যায়। এছাড়া অমিডন পেটে খাবারের নড়াচড়াও বাড়ায়, যার ফলে হজমশক্তি বাড়ে।
আরো পড়ুনঃ জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
অমিডন এর দাম কত
বিভিন্ন ওষুধের কোম্পানি এবং ওষুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের ধরন ভেদে অমিডন ওষুধের দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড এর অমিডন ওষুধের দাম উল্লেখ করা হলো -মূল্য
নাম | ওষুধের ধরন | পাওয়ার | পরিমাণ | দাম |
---|---|---|---|---|
Omidon | ট্যাবলেট | 10 mg | ১ পাতায় ১৫টি | ৫২ টাকা |
Omidon | পেডিয়াট্রিক ড্রপস | 5 mg/ml | ১৫ মি.লি ড্রপ | ২৫ টাকা |
Omidon | সাসপেনশন | 5 mg/ml | ৬০ মি.লি বোতল | ৪০ টাকা |
যে সকল বাচ্চারা ট্যাবলেট খেতে পারে না তাদের জন্য পেডিয়াট্রিক ড্রপ বা সাসপেনশন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
অমিডন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সকল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, অনেক মানুষের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। অথবা কেবল ছোটখাট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে থাকে। অমিডন ট্যাবলেট এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলো :
শুষ্ক মুখ, ডায়রিয়া, ঘুম ঘুম ভাব, দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা, চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি ইত্যাদি। এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাময়িকভাবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে এবং ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
এই লক্ষণগুলোর বেশিরভাগ অস্থায়ী এবং সাধারণত সময়ের সাথে সমাধান হয়ে যায়। তবে আপনি যদি এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলির মধ্যে কোনটি সম্পর্কে বেশি চিন্তিত হন তবে সরাসরি আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
আপনি যে সমস্ত অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করছেন সে সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জানিয়ে দিন। কারণ কিছু ক্ষেত্রে এই ওষুধ দ্বারা অন্য ওষুধ প্রভাবিত হতে পারে বা অন্য ওষুধ অমিডনকে প্রভাবিত করতে পারে।
অমিডন ওষুধ খাওয়ার সময়কালীন করনীয়
এটি মাথা ঘোরা এবং ঘুমের কারণ হতে পারে। সুতরাং এমন কিছু করবেন না যার জন্য অনেক মনোযোগ প্রয়োজন। যেমন: গাড়ি চালানো। যতক্ষণ না আপনি জানেন যে এটি আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে। ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি চালানো উচিত হবে না।
এই ওষুধ খাওয়ার সময় অ্যালকোহল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন কেননা এর ফলে সাময়িকভাবে তন্দ্রা হতে পারে।
শুধুমাত্র কেউ অমিডন ওষুধ খেয়ে অনেক উপকারিতা পেয়েছে বলে তার কথা শুনে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন।
আরো পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ট্যাবলেট
অমিডন অনেক সময় ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। তাই এই ঔষধটি খেতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে যাতে দেহের মধ্যে পানি শূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
আপনার যদি আলসারে সমস্যা থাকে তাহলে এই ওষুধটি এড়িয়ে চলবেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমিডন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। নিচের সারণিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অমিডন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শতাংশের হার উল্লেখ করা হলো-
সমস্যা | সমস্যার হার শতাংশে |
---|---|
রক্তে প্রোল্যাকটিনের মাত্রা বৃদ্ধি | (১.৩%) |
মুখের শুষ্কতা | (১.৯%) |
পিপাসা, মাথাব্যথা | (১.২%) |
ঝিমুনি | (০.৪%) |
পাতলা পায়খানা | (০.২%) |
অমিডন ওষুধ খেতে ভুলে গেলে করনীয়
আপনি যদি ওষুধের একটি ডোজ মিস করেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধটি খেয়ে নিন। যাইহোক, যদি আপনার পরবর্তী ডোজের সময় হয়ে যায়, তাহলে মিস করা ডোজটি এড়িয়ে যান এবং বর্তমান সময়ের ডোজ গ্রহণ করুণ। তবে কখনোই ডোজ দ্বিগুণ করবেন না।
অমিডন খেলে কি মোটা হয়
আগেই বলেছি অমিডন আমাদের হজমে সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের রুচি বৃদ্ধি পায় এবং বেশি বেশি খাবার গ্রহণের ইচ্ছা হয়। এর ফলে মোটা হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা দেয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া শুধুমাত্র মোটা হওয়ার উদ্দেশ্যে অমিডন ট্যাবলেট মোটেও খাওয়া উচিত নয়।
অমিডন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় সতর্কতা
গর্ভবতী মহিলা অথবা ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অমিডন ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অর্থাৎ ডাক্তারের নির্দেশনা বা পরামর্শ ছাড়া তাদের অমিডন ওষুধ খাওয়ানো একেবারেই উচিত হবে না।
যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে অমিডন ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ ফোড়ার এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম | ফোঁড়া সারানোর ঔষধ
অমিডন লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত মাঝারি এবং গুরুতর লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে Omidon ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় না।
এই ওষুধটিকে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে। সাধারণত ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে এই ওষুধটি সংরক্ষণের জন্য বলা হয়ে থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত তাপ, আলো এবং আর্দ্রতা থেকে ওষুধ কে দূরে রাখতে হবে।
উপসংহার
এই omidon tablet সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনি যে কোম্পানির ওষুধ কিনেছেন সে কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে বিস্তারিত খুঁটিনাটি ভালো জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা
আশা করি, এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা অমিডন ওষুধের কাজ কি, অমিডন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম, অমিডন ওষুধ কেন খায়, অমিডন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।