বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। আর তাই প্রয়োজনের তাগিদে অথবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে অনেকেই গিয়ে থাকেন সেখানে। বেশকিছু অডিয়েন্স বন্ধু রয়েছেন যারা প্রশ্ন করেন, ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ২০২৪ সম্পর্কে। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচী, ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার সহজ মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করব। তো আপনার ভ্রমণকে সুন্দর ও প্রাণবন্ত করতে অথবা প্রয়োজন মেটাতে কিভাবে ট্রেনে চেপে পৌঁছাবেন কলকাতা শহরে সেটা সম্পর্কে নিয়ে ফেলুন সম্পূর্ণ ধারণা। সো রিড দিস আর্টিকেল।
(toc) #title=(সুচিপত্র)
কোন কোন দিন ঢাকা-কলকাতা ট্রেন চলাচল করে জেনে নিন
ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছানোর জন্য হাতে গোনা তিনটি ট্রেন পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ, ঢাকা টু কলকাতা পৌঁছানোর সহজ মাধ্যম হচ্ছে রেলপথ। যাই হোক আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে কলকাতা যেতে চান তাহলে বুধবার, শুক্রবার, শনিবার অথবা রবিবার এই চারটি দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন রওনা দিতে হবে।
একইভাবে আপনি যদি কলকাতা থেকে ঢাকা ফিরে আসতে চান সেক্ষেত্রে সোমবার, মঙ্গলবার, শুক্রবার এবং শনিবার ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা বার হিসেবে ঢাকা থেকে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে ঢাকার ট্রেন যাওয়া আসা করে।
যাহোক; ঢাকা টু কলকাতা পৌঁছানোর জন্য আপনি মূলত যে সকল ট্রেন পাবেন সেগুলো হলো-
- মৈত্রী এক্সপ্রেস
- বন্ধন এক্সপ্রেস
- মিতালী এক্সপ্রেস
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪
ঢাকা টু কলকাতা পৌঁছানোর জন্য যে ট্রেনগুলো যাওয়া আসা করে সেগুলোর নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে ভারত অর্থাৎ কলকাতা পৌঁছাতে চান সেক্ষেত্রে:
মৈত্রী এক্সপ্রেস: বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওনা দেবে ঠিক সকাল ৮:১৫ মিনিট নাগাদ (বাংলাদেশ মান সময়)। অতঃপর সেটা ভারতের কলকাতা শহরের চিৎপুর স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাবে ঠিক বিকাল ০৪:০০ মিনিট নাগাদ (ভারতীয় মান সময়)।
বন্ধন এক্সপ্রেস– বাংলাদেশের খুলনা থেকে ভারতের কলকাতা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ঠিক দুপুর ০১:৩০ মিনিটে অন্যদিকে কলকাতায় গিয়ে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ০৬:১০ মিনিটে।
মিতালী এক্সপ্রেস– বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওনা দিবে ঠিক রাত ০৯:৫০ মিনিট নাগাদ অতঃপর সেটা ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি গিয়ে পৌঁছাবে সকাল ০৭:১৫ মিনিট নাগাদ।
ট্রেন | বাংলাদেশ হতে ছাড়ে | ভারত পৌঁছায় |
---|---|---|
মৈত্রী এক্সপ্রেস | ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ০৮:১৫ (বিএসটি) | কলকাতা ১৬:০০ (আইএসটি) |
বন্ধন এক্সপ্রেস | খুলনা ১৩:৩০ (বিএসটি) | কলকাতা ১৮:১০ (আইএসটি) |
মিতালী এক্সপ্রেস | ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ২১: ৫০ (বিএসটি) | নিউ জলপাইগুড়ি ০৭:১৫ (আইএসটি) |
অপর দিকে আপনি যদি কলকাতা টু ঢাকা পৌঁছাতে চান অর্থাৎ কলকাতায় পৌঁছেছেন অতঃপর বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে এই ট্রেনগুলো মূলত রওনা দিবে নিম্ন বর্ণিত সময় সীমার মধ্যে। যথা –
কলকাতা টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪
মৈত্রী এক্সপ্রেস– ভারত এর কলকাতা শহরে চিৎপুর স্টেশন থেকে রওনা দেবে ঠিক সকাল ০৭.১০ মিনিট নাগাদ এবং ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাবে বিকাল ০৪:০৫ মিনিটে। টিকিট কাটার সময় ও যাতায়াতের সময় রেলওয়ে ওয়েবসাইট দেখে নিন।
বন্ধন এক্সপ্রেস– ভারতের কলকাতা শহরের চিৎপুর স্টেশন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ঠিক সকাল ০৭:১০ মিনিটে এবং সেটা খুলনা শহরে এসে পৌঁছাবে দুপুর ১২:৩০ মিনিট নাগাদ।
মিতালী এক্সপ্রেস– নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে এই ট্রেনটি রওনা দেবে ঠিক সকাল ১১: ৪৫ মিনিটে অতঃপর সেটা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাবে রাত ১০:৩০ মিনিটে।
ট্রেন | ভারত হতে ছাড়ে | বাংলাদেশ পৌঁছায় |
---|---|---|
মৈত্রী এক্সপ্রেস | কলকাতা ০৭:১০ (আইএসটি) | ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ১৬:০৫ (বিএসটি) |
বন্ধন এক্সপ্রেস | কলকাতা ০৭:১০ (আইএসটি) | খুলনা ১২:৩০ (বিএসটি) |
মিতালী এক্সপ্রেস | নিউ জলপাইগুড়ি ১১:৪৫ (আইএসটি) | ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ২২: ৩০ (বিএসটি) |
তো বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনে চেপে যেতে চান সেক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য কোন দিনের কোন সময় এবং কোন স্টেশনে যেতে হবে! এখন আসুন জেনে নেই- ঢাকা টু কলকাতা পৌঁছানোর ভাড়া সম্পর্কে কিছু তথ্য।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়া ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমাদের এই লেখায় তুলে ধরা হয়ছে আপনি পড়তে পারেন।
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ২০২৪
নিজ দেশ ব্যতীত অন্য আরেকটি দেশ ভ্রমণ করতে হলে উক্ত দেশের ইমিগ্রেশন বাবদ একটা ভ্রমণ ফি দিতে হয়। তাই মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস, মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের সঙ্গে ইমিগ্রেশন মূল্য সংযুক্ত থাকে। এই ট্রেনে এসি কেবিন এবং এসি চেয়ার এই দুই ধরনের আসনের ব্যবস্থা আছে।
ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছানোর ট্রেন ভাড়া মোটামুটি ৫০০ টাকা। কেননা ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার। আর কেউ যদি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নেয় কলকাতা পৌঁছানোর জন্য তাহলে এসি চেয়ারের সিট নিলে প্রতিজনকে পে করতে হবে ১৯৫৫ টাকা সেই সঙ্গে এক হাজার টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স মিলিয়ে টোটাল ২৯৫৫ টাকা।
আবার কেউ যদি এসি কেবিন সিট সিলেক্ট করেন ঢাকা টু কলকাতা পৌঁছানোর জন্য সেক্ষেত্রে প্রতিজনকে ২৯৩৫ টাকা পে করতে হবে। দিতে হবে ১০০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স অর্থাৎ মোট মিলিয়ে ৩৯৩৫ টাকা। তাহলে বুঝতেই পারছেন ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার ভাড়া ঠিক কতটুকু আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় মিলিয়ে টোটাল কত টাকা খরচ হতে পারে!
অন্যদিকে কলকাতা থেকে ঢাকা আসার জন্য এসি কেবিনের টিকিটের দাম ২০১৫ টাকা (ভারতীয় মুদ্রা)। এসি চেয়ার টিকিটের মূল্য ১৩৪৫ টাকা (ভারতীয় মুদ্রা)। এছাড়া ট্যাক্স বাবদ আরো কিছু টাকা যুক্ত হবে।
পাসপোর্ট অনুযায়ী, বয়স ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে হলে শিশুদের ক্ষেত্রে ৫০% ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। ৫ বছরের বেশি হলে পুরো ভাড়া দিতে হবে। তবে টিকিটের সঠিক মূল্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নেওয়া উচিত।
সত্যি বলতে ভাড়া বাবদে বাকি যে টাকা খরচ হবে সেটা মূলত ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী খরচ করবেন আর তাই সেক্ষেত্রে খরচের পরিমাণটাও আপনার চাহিদার উপর ভিত্তি করেই কম অথবা বেশি হবে। তাই টোটাল কত টাকা খরচ করলে আপনি ঢাকা থেকে কলকাতায় ট্রেনে করে যেতে পারবেন এবং ঘুরে ফিরে পুনরায় ফিরে আসতে পারবেন সেটা নিজেই আন্দাজ করুন।
রিলেটেড: indian visa check: জেনে নিন, ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করার নিয়ম
টিকিট কাটবেন কীভাবে?
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে কলকাতা যাওয়ার টিকিট কিনতে পারবেন। একইভাবে ভারতের কলকাতা শহরের চিৎপুর স্টেশন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে পারবেন। যদিও টিকিট কাটতে গেলে বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা বাধ্যতামূলক।
অনলাইনে মৈত্রী এক্সপ্রেস টিকিট পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি টিকিট পেতে চান, তাহলে আপনাকে স্টেশন থেকে আপনার পাসপোর্টটি নিয়ে যেতে হবে।
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম
ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন টিকিট কাটার নিয়ম হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা থেকে কলকাতা ট্রেনের টিকিট কেটে নেওয়া। আপনি মূলত প্রতিদিনের যেকোন একদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো এক সময় টিকিট কাউন্টারে গিয়ে ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
অন্যদিকে যখন আপনি কলকাতা থেকে ঢাকা ফিরে আসবেন তখন ফেয়ারলি প্লেস, কলকাতার রেল ষ্টেশন এবং ডালহৌসি স্কোয়ার থেকে কলকাতা টু ঢাকা ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবেন। সেখানে মূলত স্থানীয় সময়কাল প্রায় দশটা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত টিকিট কাউন্টার খোলা থাকে। তাই এ সময়ের মধ্যে টিকিট কাটা সম্ভবপর হবে।
আর হ্যাঁ, টিকিট কাটা খুবই সহজ একটি কাজ। এতে করে কোন রকমের ঝামেলা পোহাতে হয় না যদি আপনি সঠিক সময়ে কাউন্টারে পৌঁছান। মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা তাদের হাতে দিতে হবে আর আপনি ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছানোর টিকিট অথবা কলকাতা থেকে ঢাকা আসার টিকিট পেয়ে যাবেন হাতেনাতে। ব্যাস এতোটুকুই।
উপসংহার
তো পাঠক বন্ধুরা, ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন সময়সূচী ও ভাড়া ২০২৪ নিয়ে আমরা যে ইনফরমেশন তুলে ধরেছে আশা করছি এতোটুকুই যথেষ্ট। তবুও আপনাদের প্রয়োজনীয় কথা চিন্তা করে আলোচনার শেষ মুহূর্তে আমরা কয়েকটি প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তবে এর বাইরে যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিন। কেননা আমরা দ্রুতই সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
FAQ: ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন টিকিট নিয়ে প্রশ্নোত্তর
১. কত দিন আগে থেকে টিকিট কেনা সম্ভব?
✓ ঢাকা থেকে কলকাতার ট্রেন টিকিট যাত্রার ১০ দিন আগে থেকে কেনা যায়।
২. টিকিট বাতিল করা গেলে কি টাকা ফেরত পাওয়া যায়?
✓ হ্যাঁ, নির্দিষ্ট শর্তে টিকিট বাতিল করা হলে আংশিক টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
৩. যদি পাসপোর্ট বা ভিসার কোনো সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে কি টিকিট সংগ্রহ করা যায়?
✓ ট্রেন যাত্রার পূর্বে পাসপোর্ট ও ভিসার সকল কাগজপত্র চেক করা উচিত। কেননা সমস্যার ক্ষেত্রে যাত্রা বাতিল হতে পারে এমনকি টিকিট সংগ্রহ করাও সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
৪. অতিরিক্ত ব্যাগ ও লাগেজ এর জন্য কি কোন চার্জ দিতে হয়?
✓ হ্যাঁ, নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ব্যাগ বা লাগেজের জন্য অতিরিক্ত চার্জ ফি দিতে হয়।
৫. ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন সার্ভিসে কি কোন ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়?
✓ বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন সিনিয়র সিটিজেন) ছাড় পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি সরাসরি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নীতির উপর নির্ভর করে।
৬. ঢাকা টু কলকাতা যাত্রার সময় কি অন্য কোন সেবা পাওয়া যায়?
✓ হ্যাঁ, ট্রেনে খাবার সরবরাহ এবং অন্যান্য সেবা পাওয়া যায়।
তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা ঢাকা টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ও সময়সূচী নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আর্টিকেল সম্পর্কিত তথ্য জানতে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।