ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করা যায়

ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করা যায় – অনেক আশা ও স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষ বিয়ের পর নতুন জীবনের পথ চলতে শুরু করে। জীবনের চলার পথে সকলের সংসার চাইলেও রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে মানুষ ডিভোর্সের দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ডিভোর্স এর পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করা যায়

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

ডিভোর্স সম্পর্কে কিছু কথা

ডিভোর্স সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করতে পারবেন বা ডিভোর্স নোটিস কিভাবে পাঠাতে হবে এসব বিষয়ে আপনার ধারণা না থাকলে সম্পুর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

ডিভোর্স এর কতদিন পর বিয়ে করা যায় – ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করা যায়

অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে মানুষ সংসার জীবনের শুরু করে কিন্তু পারিবারিক কলহ ও বিভিন্ন কারনে ডিভোর্সের সংখ্যা অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন অনুযায়ী ডিভোর্স এর ৩ মাস পরে মেয়েরা নতুন বিবাহ করতে পারবে। পুরুষের ক্ষেত্রে বলা হয় যে ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পর পুরুষ নতুন বিবাহ করতে পারবে

মেয়ে যদি ৩ মাস হওয়ার পূর্বে নতুন বিবাহ করে তবে তার বিরুদ্ধে চাইলে পুরুষ মামলা দিতে পারবে। অন্য দিকে যদি পুরুষ ডিভোর্স কার্যকর হওয়ার পূর্বে নতুন বিবাহ করতে চায় তবে স্ত্রী এর কাছ থাকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া নতুন বিয়ে করলে তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারবে।

পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ডিভোর্সের ০৩ মাস পরে নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। এ সম্পর্কে অবশ্যই একজন ডিভোর্সের কোনো উকিল এর মাধ্যমে পরামর্শ নিতে হবে। উকিলের পরামর্শ অনুযায়ী ডিভোর্সের পর নতুন বিয়ে করা উচিত হবে।

ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে

ডিভোর্স দেয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন না। ডিভোর্স দেয়ার পর অন্তত ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয় ডিভোর্স কার্যকর হতে। তাই আপনি যদি ডিভোর্সের পর দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান তাহলে আপনাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রেও বলা যায় যে ৯০ দিনের আগে বিয়ে করা উচিত নয়। এ ছাড়া ও ডিভোর্স এর কতদিন পর দ্বিতীয় বিয়ে করবেন একজন উকিলের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।

তিন তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার বিধান

রাগ অথবা অজ্ঞতার কারনে সমাজে প্রায়শই দেখা যায় তিন তালাক দিতে। তিন তালাকের পর যদি স্বামি ও স্ত্রী একত্রে থাকতে চায় তবে আবার তাদের বিয়ে করতে হবে। সমাজে নানান স্থানে হিল্লা বিয়ে নামক একটি প্রথা চালু আছে। ইসলামিক অনেক স্ক্লারগন হিল্লা বিয়েকে সমর্থন করেন না।

তবে আইন অনুযায়ী যদি তারা আবার একত্রে থাকতে চায় তাহলে আইন অনুযায়ী বিয়ে করতে হবে। বিবাহ পদ্ধতি – ‘১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশে ৭ (৬) ধারা অনুযায়ী তালাকের মাধ্যমে কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে, তালাক হওয়া দম্পতি আবার বিয়ে করতে চাইলে সেক্ষেত্রে তাদের নতুন করে বিয়ে করতে হবে”

ধরুন – আপনার স্ত্রীকে আপনি তালাক দিয়েছেন কিন্তু এখন আপনারা যদি দুজনেই সম্মতি ক্রমে একত্রে থাকতে চান তাহলে আপনাদের নতুন করে বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে। মুসলিম বিবাহ আইনে হিল্লা বিয়ে বলে কিছু নেই।

আরো পড়ুনঃ দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি কি

স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার নিয়ম

বিবাহ আইনে কোনো নারী কোনো কারন ছাড়া তালাক প্রদান করতে পারবেন না। তবে তিনটি উপায় এর মধ্যমে স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারবেন। তিনটি উপায় হলো –

  • কাবিনের ১৮ নাম্বার কলাম অনুযায়ী
  • খোলা তালাক
  • কোর্টের মাধ্যমে তালাক

১৮ নাম্বার কলাম অনুযায়ী তালাক

যদি কাবিন নামার ১৮ নাম্বার কলামে এই ক্ষমতা স্ত্রী কে প্রদান করা হয় তবে স্ত্রী তার স্বামিকে তালাক প্রদান করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে স্বামি কে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হবে। এলাকার মেয়র অথবা চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে।

নোটিশ পাঠানোর ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান অথবা মেয়র একটি সালিশি পরিষদ গঠন করবেন। তারা স্বামি ও স্ত্রী এর মধ্যে সমস্যা সমাধান ও সমঝোতা করার চেষ্টা করবেন। যদি সমঝোতা করতে ব্যার্থ হয় তবে পরবর্তী ৯০ দিন পর ডিভোর্স কার্যকর হবে।

খোলা তালাক

খোলা তালাক পূর্বের ১ নাম্বার নিয়মের ন্যায় নোটিশ পাঠিয়ে সালিশ এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্বামি ও স্ত্রী এর মাধ্যমে সমঝোতা থাকে দেনমোহর দেয়া নেয়ার উপর।

কোর্টের মাধ্যমে তালাক

আদালতের মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামিকে তালাক প্রদান করতে পারবে মামলা করার মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ আইনের কারণ গুলো উল্লেখ্য করতে হবে। মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ এর যে কারন গুলো উল্লেখ্য করতে পারবেন-

  1. ০৪ বা তার চেয়ে বেশী বছর ধরে যদি স্বামির কোনো খোজ না থাকে।
  2. স্বামীর কর্তৃক ২ বছর ধরে অবহেলিত হলে, ২ বছর ধরে যদি স্বামি স্ত্রীকে ভরণপোষন না দেয়।
  3. মুসলিম পারিবারিক আইন এর বিধান না মেনে একাধিক বিবাহ করলে।
  4. ০৭ বছর তা তার অধিক সময়ের কারাদন্ড হলে।
  5. স্বামী পুরুষত্বহীণ হলে।
  6. স্বামী কোনো কারন ছাড়া ০৩ বছর স্ত্রী এর দায়ীত্ব পালনে ব্যার্থ হলে।
  7. দুই বছর ধরে কুষ্ঠ রোগ অথবা যৌ- -ন রোগে আক্রান্ত থাকলে।
  8. স্ত্রীর ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করলে।
  9. স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকলে ইসলামিক শরিয়ত অনুযায়ী সমান অধিকার না দিলে।
  10. স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে।
  11. স্ত্রীকে মারধর করে স্ত্রীর জীবন দূর্বিষহ করে তুললে।
  12. স্বামী খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সাথে অনৈতিক মেলামেশা করলে। ইত্যাদি এক বা একাধিক কারণের মাধ্যমে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়া যাবে আদালতের মাধ্যমে।

তালাকের নোটিস পাঠানোর নিয়ম

তালাক দেয়ার জন্য নোটিস পাঠানো বাধ্যতামূলক। স্বামী যদি তালাক প্রদান করে তবে স্বামী স্ত্রীকে নোটিস পাঠাবে অন্যদিকে যদি স্ত্রী যদি তালাক প্রদান করতে চায় তবে স্ত্রী স্বামীকে তালাকের নোটিস পাঠাতে হবে। যদি খোলা তালাক হয়ে থাকে তাহলে উভয় তালাকের ক্ষেত্রে এলাকার মেয়র অথবা চেয়ারম্যান কে তালাকের নোটিস পাঠাতে হবে। তালাকের নোটিস নিজে লিখে অথবা যে কোনো কাজী অফিসের মাধ্যমে লিখে পাঠাতে হবে।

আরো পড়ুনঃ মোহরানা ও কাবিন এর মধ্যে পার্থক্য

ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে

অনেকেই জানতে চান যে, ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে। ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগবে এটা নির্ভর করে আপনার দেনমোহর কত টাকা সেটার উপর। বিয়ের সময় যদি সম্পুর্ণ দেনমোহর পরিশোধ না করেন তাহলে ডিভোর্স দেয়ার ক্ষেত্রে সম্পুর্ন দেনমোহর আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।

ডিভোর্স কার্যকর হতে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। এই ৯০ দিনের স্ত্রীর ভরনপোষন দিতে হবে। ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগবে এটা নির্ধারিত নয়। তবে তালাক নিবন্ধনের ফি হলো ৫০০ টাকা।

তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

তালাকের পর দেনমোহরের টাকা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। যদি সমঝোতার মাধ্যমে খোলা তালাক হয় সেখানে দেনমোহর যদি দাবি না থাকে তবে তো প্রয়োজন পরে না। তবে সকল ডিভোর্সের ক্ষেত্রে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তালাকের পর দেনমোহর এর টাকা আপনি সরাসরি আপনার স্ত্রীকে দিয়ে আসতে পারেন, চেয়ারম্যান যখন সমঝোতার চেষ্টা করবে তখন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

মেয়ে ডিভোর্স দিলে কি হয়

মেয়ে ডিভোর্স দিলে তার যথার্থ কিছু কারন থাকবে। স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহরের টাকা ও পরিশোধ করতে হবে।

লেখকের শেষকথা

ডিভোর্সের কত দিন পর বিয়ে করা যায় আর্টিকেলে ডিভোর্স সংক্রান্ত সকল উত্তর গুচ্ছ আকারে প্রকাশ করলাম। এর পরেও যদি ডিভোর্স সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন মতামত থাকে তাহলে আমাদের মন্তব্য করে জানাতে পারেন।

About sohansumona000@gmail.com

Check Also

ট্রাফিক আইন জরিমানা মোটরসাইকেল ২০২৫: জেনে নিন সব কিছু

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ সরকার নতুন ট্রাফিক আইন প্রবর্তন করেছেন। বিশেষ করে যারা ট্রাফিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *